ব্রাজিলে প্রবল বৃষ্টিপাতে ৩৯ জনের মৃত্যু ডোমারে বিএনপির ভোট বর্জনের ডাক ডোমার উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ভোটগ্রহণকারী কর্মকর্তাদের সাথে মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত নীলফামারীতে সেরা প্যানেল আইনজীবী নির্বাচিত হয়েছেন ডোমারের অ্যাড. আনোয়ার হোসেন দীর্ঘ একযোগেও ভোগান্তি কমেনি ব্রিজ পুনঃনির্মাণের উদ্যোগ নেই; জনগণের ভোগান্তি চরমে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ কমিউনিটি ব্যাংকে সড়ক দুর্ঘটনায় একই পরিবারের ৩ জনের মৃত্যু সহজ জয় দিয়ে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি সিরিজ শুরু করলো বাংলাদেশ আগামী সপ্তাহে জর্ডানের বাদশাহ’র সাথে বৈঠক বাইডেনের সাধারন ভোটারদের আস্থা রশিদ ঠিকাদার জয়পুরহাটে দুই ছাত্রীকে বিয়ে, তৃতীয়জনকে কুপ্রভাব ৪০ ফিলিস্তিনি নারীকে সুখবর দিল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সংসদীয় মনোনয়ন বোর্ডের সভা আজ কুতুবদিয়ায় খেলাঘরের ৭২তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উদযাপন কৃষ্ণচূড়ায় রঙ লেগেছে ঝড়-তুফানের আশঙ্কা , সতর্কসংকেত ৭ অঞ্চলে ট্যুরিজম বোর্ডের সঙ্গে কাজ করবে ডিএনসিসি বাংলাদেশের ‘শান্তির সংস্কৃতি’ প্রস্তাবনা গৃহীত হলো জাতিসংঘে প্রান্তিক মানুষদের মূলধারায় নিয়ে আসতে চেষ্টা করা হচ্ছে: সমাজকল্যাণ মন্ত্রী গরমে মাইগ্রেনের যন্ত্রণা প্রতিকারে যা করবেন

আজ পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (স.)


আজ ১২ রবিউল আউয়াল, পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (স.)। মহান আল্লাহর হাবিব আখেরি মহানবী হজরত মুহাম্মদ (স.)-এঁর জন্ম ও মৃত্যুর পুণ্যস্মৃতিময় দিন। ৫৭০ খ্রিষ্টাব্দের আজকের এদিনে, অর্থাৎ ১২ রবিউল আউয়াল তিনি আরবের মক্কা নগরীতে জন্মগ্রহণ করেন। আবার ৬৩২ খ্রিষ্টাব্দের এদিনেই তিনি ৬৩ বছর বয়সে ইন্তেকাল করেন। আজকের দিনটি তাই ইসলাম ধর্মাবলম্বীদের জন্য অত্যন্ত পবিত্র ও মহিমান্বিত।

তাওহিদের মহান বাণী নিয়ে পৃথিবীতে আগমন করেন বিশ্বনবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)। সে সময় আরবের সমাজ ছিলো পৌত্তলিকতা, ঘোরতর অন্যায়–অবিচারের অন্ধকারে নিমজ্জিত। ‘আইয়ামে জাহেলিয়ার যুগ’ বলে ওই সময়টিকে চিহ্নিত করা হয়েছে। ওই অন্ধকারে মহানবী (সা.) এসেছিলেন আলোকবর্তিকার মতো। শৈশব থেকেই তিনি তাঁর সত্যবাদিতা, ন্যায়পরায়ণতা, বিচক্ষণতাসহ অনুপম চারিত্রিক গুণাবলি, অপরিমেয় দয়া–সহিষ্ণুতা, সহমর্মিতার মতো মহৎ গুণের জন্য আরব সমাজের সবার কাছে শ্রদ্ধাভাজন হয়ে উঠেছিলেন। নবুয়ত লাভের আগেই ‘আল-আমিন’ অভিধায় তাঁকে সম্মানিত করেছিল আরব সমাজ। হেরা পর্বতের গুহায় গভীর ধ্যানে নিমগ্ন থেকে তিনি ৪০ বছর বয়সে ওহি লাভ করেন। এরপর পরম করুণাময় আল্লাহর নির্দেশে দীর্ঘ ২৩ বছর কঠোর পরিশ্রম, নিষ্ঠা ও সীমাহীন ত্যাগের মাধ্যমে শান্তির ধর্ম ইসলাম তথা পবিত্র কোরআনের বাণী প্রচার করেন। আল্লাহর প্রতি অসীম ও অতুলনীয় আনুগত্য এবং ভালোবাসার পাশাপাশি মহৎ মানবিক চারিত্রিক গুণাবলির জন্য তিনি সর্বকালে সর্বজনের কাছে পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ মহামানব হিসেবে অভিষিক্ত।

‘ঈদ’ শব্দের আভিধানিক অর্থ খুশি হওয়া, ফিরে আসা, আনন্দ উদযাপন করা ইত্যাদি। আর ‘মিলাদ’ শব্দের অর্থ জন্মতারিখ, জন্মদিন, জন্মকাল ইত্যাদি। এ জন্য ‘মিলাদুন্নবী’ (স.) বলতে নবিজির আগমনকে বুঝায়। আর ‘ঈদে মিলাদুন্নবী’ (স.) বলতে বোঝায় নবী করিম (স.)-এর আগমনে আনন্দ উদযাপন করা। মহানবী হজরত মুহাম্মদ মুস্তাফা (স.) সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ মহামানব। পৃথিবীর ইতিহাসে তিনিই একমাত্র ব্যক্তি, যাঁর স্মরণ সব জাতি সব যুগে করেছে। তিনি সেই মহামানব, যাঁর নাম পবিত্র ইঞ্জিল ও তাওরাত শরিফে উল্লেখ করা হয়; যেখানে তাঁকে সম্বোধন করা হয়েছে ‘আহমদ’ নামে আর কুরআন পাকে ‘মুহাম্মদ’ নামে। (তাফসিরে ইবনে কাসির, খণ্ড-২, পৃষ্ঠা-৩২৪)। তিনি রাহমাতুল্লিল আলামিন বা সমগ্র বিশ্বের জন্য রহমতস্বরূপ। নবুয়ত লাভের আগেই তিনি সততা ও সত্যবাদিতার জন্য ‘আল আমিন’ উপাধিতে ভূষিত হন এবং বিবদমান সব সম্প্রদায় তাঁকে প্রিয় নেতা হিসাবে মেনে নেয়। সমাজসংস্কারক হিসেবেও তিনি সর্বকালের এক মহান আদর্শ।

মহানবী (স.) যে রাতে জন্মগ্রহণ করেন, ওই রাতে পারস্যের রাজপ্রাসাদে প্রবল ভূকম্পনের সৃষ্টি হয়; যাঁর ফলে তৎক্ষণাৎ ওই প্রাসাদের ১৪টি গম্বুজ ভেঙে পড়ে। মহানবী (স.)-এর জন্মের দিন পারস্য তথা ইরানের আগুন নিভে যায়, যা হাজার বছর ধরে প্রজ্বলিত ছিলো। [বায়হাকি, দালাইলুন নবুয়্যাহ্ (প্রথম খণ্ড) পৃষ্ঠা-১২৬]  মহানবী (স.)-এঁর জন্মদিন হওয়ার কারণে প্রতি সোমবার সিয়াম (রোজা) পালন করা মুস্তাহাব। নবীকে (স.) সোমবারের রোজা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন, ‘এদিনে আমি জন্মগ্রহণ করেছি এবং এদিনে আমাকে নবুওয়াত দান করা হয়েছে (সহিহ্ মুসলিম : ১১৬২)। আগে উল্লেখিত হাদিসের আলোকে উম্মতে মুহাম্মদি হিসাবে পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবিতে আমাদের করণীয় হলো, এদিনে সব মুসলিমের রোজা পালন করা, তাঁর প্রতি অধিক পরিমাণে দরুদ ও সালাম প্রেরণ করা। অন্য এক হাদিসে নবী করিম (স.) বলেন, ‘সোমবার ও বৃহস্পতিবার বান্দার আমলনামা আল্লাহর দরবারে উপস্থাপন করা হয়। সুতরাং রোজা অবস্থায় আমার আমলনামা উপস্থাপন করা হোক, এটাই আমি পছন্দ করি।’ (সুনানে তিরমিজি :৭৪৭)। তাই মহানবী (স.)-এর জন্মের দিনে নফল রোজা রাখা প্রকৃত নবিপ্রেমের বহিঃপ্রকাশ।

বিশ্বনবী মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) হলেন বিশ্ব শান্তির অগ্রদূত। তার সার্বজনীন শান্তির বার্তা দুনিয়ার সর্বত্র ছড়িয়ে দিতে হবে। সমাজে সাম্য ও সম্প্রীতি প্রতিষ্ঠায় তার আদর্শের কোনো বিকল্প নেই। আল্লাহ তা‘আলা পবিত্র কোরআনুল কারীমে বলেছেন, আমি আপনাকে পুরো জগদ্বাসীর জন্য রহমতস্বরূপ প্রেরণ করেছি। (সূরা আম্বিয়া, আয়াত-১০৭)। জীবনের সর্ব ক্ষেত্রের জন্যই প্রিয়নবী (সা.) আমাদের আদর্শ। কোরআন মাজীদে আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন, রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর জীবনেই তোমাদের জন্য রয়েছে উত্তম আদর্শ। (সূরা আহজাব, আয়াত-২১)।

মানবেতিহাসের এক যুগসন্ধিকালে, অন্ধকারতম সময়ে তিনি মহান আল্লাহর বাণী নিয়ে আগমন করেন। তাঁর উদাত্ত আহ্বান, নিষ্ঠাপূর্ণ কর্মসাধনা, উচ্চতম নীতি-আদর্শ ও অমলিন পবিত্র-মাধুর্যের মাধ্যমে তিনি অল্প দিনে এক আলোকোজ্জ্বল ও সর্বোন্নত জীবনব্যবস্থা বাস্তবায়ন করেন। তিনি অজ্ঞতা, কুসংস্কার এবং অনাচার, পাপাচার ও বিশ্বাসহীনতার কলুষ দূরীভূত করে শান্তি, সভ্যতা, নিরাপত্তা ও মানবিক মর্যাদার এক নূতন পথ রচনা করেন। তাই তিনি সর্বশ্রেষ্ঠ নবী, সাইয়্যেদুল মুর্সালিন ও খাতামুন্ নাবিয়্যিন। এখানে যে কথাটিকে অধিক গুরুত্ব দিতে হবে তা হলো, মহানবী (স.)-এঁর জন্মের ঘটনার চেয়েও তাঁর আদ্যোপান্ত জীবনাদর্শ আমাদের জীবন চলার পথে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ পাথেয়। এটা সব যুগ ও মানুষের জন্য সর্বদা অনুসরণীয় ও অনুকরণীয়। পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (স.) উপলক্ষে আমরা সবাইকে জানাই মোবারকবাদ। মহান আল্লাহ তায়ালা আমাদের নেক মকসুদ পূরণ করুন এবং অসৎ বাসনা ধ্বংস করুক। আমীন। ছুম্মা আমীন।

(লেখক : এম. কে. দোলন বিশ্বাস, দৈনিক সংবাদের সাবেক সহসম্পাদক।) 

আরও খবর