নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ কমিউনিটি ব্যাংকে সড়ক দুর্ঘটনায় একই পরিবারের ৩ জনের মৃত্যু সহজ জয় দিয়ে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি সিরিজ শুরু করলো বাংলাদেশ আগামী সপ্তাহে জর্ডানের বাদশাহ’র সাথে বৈঠক বাইডেনের সাধারন ভোটারদের আস্থা রশিদ ঠিকাদার জয়পুরহাটে দুই ছাত্রীকে বিয়ে, তৃতীয়জনকে কুপ্রভাব ৪০ ফিলিস্তিনি নারীকে সুখবর দিল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সংসদীয় মনোনয়ন বোর্ডের সভা আজ কুতুবদিয়ায় খেলাঘরের ৭২তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উদযাপন কৃষ্ণচূড়ায় রঙ লেগেছে ঝড়-তুফানের আশঙ্কা , সতর্কসংকেত ৭ অঞ্চলে ট্যুরিজম বোর্ডের সঙ্গে কাজ করবে ডিএনসিসি বাংলাদেশের ‘শান্তির সংস্কৃতি’ প্রস্তাবনা গৃহীত হলো জাতিসংঘে প্রান্তিক মানুষদের মূলধারায় নিয়ে আসতে চেষ্টা করা হচ্ছে: সমাজকল্যাণ মন্ত্রী গরমে মাইগ্রেনের যন্ত্রণা প্রতিকারে যা করবেন ফের টালিউডের সিনেমায় বাঁধন চৌদ্দগ্রামে চাঁন্দিশকরায় মুয়াজ্জিনকে বিদায়ী সংবর্ধনা ও ফুলেল শুভেচছা. বড়লেখায় শ্রেষ্ঠ প্রতিষ্ঠান প্রধান নিয়াজ উদ্দিন, শ্রেষ্ঠ শিক্ষক সনজিৎ কান্তি দেব মুক্ত গণমাধ্যম সূচকে দুই ধাপ পেছাল বাংলাদেশ নাগেশ্বরীতে অসহায় পরিবারের উপর হামলা ও ভাঙচুর ৬ জনের নামে মামলা

বরকতময় স্থাপনার আল আকসার ১০ বৈশিষ্ট্য

© সংগৃহীত ছবি


◾মুফতি উবাইদুল্লাহ তারানগরী : আল আকসা, বাইতুল মোকাদ্দাস, আলকুদস, মসজিদুল হারাম যে নামেই বলি না কেন তা নিছক কোন স্থাপনা নয়। বরকতময় একাধিক স্থাপনার মিলন মোহনা। অসংখ্য নবী রাসূল এবং মনীষীদের পবিত্র ইবাদতের স্থান। প্রিয় জায়গাটি মুসলমানদের হৃদয়ের খুব গভীরে জায়গা করে নিয়েছে। উপচেপড়া ভালোবাসা এর প্রতি অহর্নিশ। উন্মুখ সারাবিশ্ব মুসলিম বাইতুল মোকাদ্দাস ও ফিলিস্তিনের বিজয় সংবাদ শোনার জন্য। নিরাপদ ভূমিতে দুরাকাত নামাজ আদায়ের জন্য। আল আকসার রয়েছে অগণিত ফজিলত। অসংখ্য গুণ-বৈশিষ্ট্য। তন্মধ্যে অনন্য ১০টি বৈশিষ্ট্যের কথা উল্লেখ করছি। 


✓ ১. আকসা প্রথম কিবলা 


সমস্ত নবী এবং রাসূলগণ বাইতুল মোকাদ্দাসের দিকে ফিরেই সালাত আদায় করেছেন।

নবীজি (সা.)ও মক্কা থাকাবস্থায় বাইতুল মোকাদ্দাসের দিকে মুখ করে নামাজ আদায় করেছেন। মদীনায় হিজরতের পরও ১৬ মাস নামাজ পড়েছেন। ২য় হিজরির শাবান মাসের মাঝামাঝি সময়ে নবীজি সাহাবাদের নিয়ে বনু সালামা গোত্রের মসজিদে জোহর মতান্তরে আসরের নামাজের ২য় বা ৩য় রাকাতে আল্লাহর পক্ষ হতে আদেশ হলে নবীজি সাহাবাদের নিয়ে নামাজেই ঘুরে যান কাবা শরীফের দিকে। যার জন্য আগে থেকেই তিনি আকাঙ্ক্ষী ও উদগ্রীব ছিলেন। যার আলোচনা সুরা বাকারায় এসেছে।সেই মসজিদকে বলা হয় মসজিদে কিবলাতাইন বা দুই কিবলার মসজিদ। সারা বিশ্বের মানুষ একমুখী হয়ে এক আল্লাহর ইবাদতের জন্য কাবা শরীফ হলো কেন্দ্রবিন্দু। প্রথম কিবলা। (সিরাতে খাতামুল আম্বিয়া: ৬৯, সিরাতে মোস্তফা) 


✓ ২. আকসা পৃথিবীর ২য় মসজিদ 


কাবা হলো পৃথিবীর প্রথম ঘর, প্রথম মসজিদ। এর ৪০ বছর পর নির্মিত হয় বাইতুল মোকাদ্দাস। যা পৃথিবীর ২য় মসজিদ। 

 হযরত আবুজর গিফারি (রা.) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন আমি রাসূল ( সা.) কে জিজ্ঞেস করলাম, বিশ্বের সর্বপ্রথম মসজিদ কোনটি? তিনি বলেন, মসজিদে হারাম। অতপর আমি আরজ করলাম, এরপর কোনটি? তিনি বলেন মসজিদে আকসা। আমি জিজ্ঞেস করলাম, উভয়ের নির্মাণের মধ্যে কত দিনের ব্যবধান রয়েছে? তিনি বলেন ৪০বছরের। তিনি আরও বলেন, এতো হলো মসজিদদ্বয়ের নির্মাণক্রম। কিন্তু আল্লাহতায়ালা পুরো ভূ-পৃষ্ঠকেই আমাদের জন্য মসজিদ বানিয়ে দিয়েছেন। সুতরাং যেখানেই নামাজের সময় হয় নামাজ পড়ে নাও। (মুসলিম, তাফসিরে মারেফুল কুরআন: ৭৬৫) 


✓ ৩. আকসায় দাজ্জাল প্রবেশ করতে পারবে না


কেয়ামতের পূর্বে দাজ্জাল দাপিয়ে বেড়াবে পুরো পৃথিবী। ফেতনা ছড়িয়ে ভূ-পৃষ্ঠে বিচরণ করবে।কিন্তু চারটি মসজিদ পর্যন্ত পৌঁছতে পারবে না; ১. মদীনার মসজিদ ২. মক্কার মসজিদ ৩. মসজিদে আকসা ৪. মসজিদে তূর। (তাফসিরে মারেফুল কুরআন: ৭৬৬) 


✓ ৪. আকসা বরকতময় ও মনোনিত ভূমি


আল্লাহতায়ালা বাইতুল মোকাদ্দাস ও তার আশেপাশের এলাকায় অসংখ্য বরকত রেখেছেন। সুরা বনি ইসরাইলের ১নম্বর আয়াতের খন্ডাংশে বিবৃত হয়েছে; 'বারাকনা হাওলাহু'। আমি তার আশপাশ বরকতময় করেছি। এখানে হাওল দ্বারা পুরো সিরিয়া উদ্দেশ্য। বরকত দুধরনের ১. ইহলৌকিক ২. পারলৌকিক 

ইহলৌকক বরকত হলো জমি উর্বর, ফল-ফসলের সারি সারি উদ্যান, দিগন্তজুড়ে সবুজ বিস্তীর্ণ মাঠ, ঝর্ণা ইত্যাদি।

পারলৌকিক হলো- সমস্ত নবী রাসূলের কিবলা হওয়া, আগমন ঘটা, পদভারে ধন্য হওয়া, বাসস্থান হওয়া, কবরস্থান হওয়া, পবিত্র প্রাঙ্গণে ইবাদত করে প্রভুত কল্যাণ অর্জন করা ইত্যাদি।

হাদিসে কুদসিতে এসেছে; আল্লাহ তায়ালা বলেন, হে শাম ভূমি! জনবসতিগুলোর মধ্যে তুমি আমার মনোনিত ভূ-ভাগ। আমি তোমার কাছেই স্বীয় মনোনীত বান্দাদেরকে পৌঁছে দেবো। 

 (তাফসিরে মাআরেফুল কুরআন পৃ.৭৬৬)

আল্লাহতায়ালা বলেন, হে আমার সম্প্রদায়! তোমরা সেই পবিত্র ভূমিতে প্রবেশ কর, যা আল্লাহ তোমাদের জন্য নির্ধারিত করে দিয়েছেন এবং নিজেদের পিছনের দিকে ফিরে যেয়ো না, তা হলে তোমরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে পড়বে। (সুরা মায়েদা-২১) 

অন্য জায়গায় ইরশাদ করেন,

আর তাঁকে ও লূতকে উদ্ধার করে সেই ভূখণ্ডের দিকে নিয়ে গেলাম, যেখানে বিশ্ববাসীদের জন্য বরকত রেখেছি। (সুরা আম্বিয়া-৭১)


✓ ৫. সওয়াবের উদ্দেশে আকসা ভ্রমণ জায়েজ


পৃথিবীর কোন মসজিদে শুধু সওয়াবের উদ্দেশে ভ্রমণ করা জায়েয নেই। শুধু তিনটি মসজিদ ব্যতীত। তার অন্যতম বাইতুল মোকাদ্দাস। হযরত আবু হুরায়রা (রা.) হতে বর্ণিত, রাসূল (সা.) বলেন, শুধু তিনটি মসজিদ অভিমুখে ইবাদতের নিয়তে সফর করা যাবে। আল মাসজিদুল হারাম মাসজিদুন নববী ও মাসজিদুল আকসা।

(বুখারী শরিফ হাদিস নং ১৮৬৪)


✓ ৬. আকসার মুসুল্লিদের পাপমুক্তির আশ্বাস


বাইতুল মোকাদ্দাসে যারা নামাজ পড়বে বের হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে নিষ্পাপ শিশুর মত গোনাহমুক্ত হয়ে যাবে ইনশাআল্লাহ। নিম্নোক্ত হাদিস দ্বারা এমন মুগ্ধকর লোভাতুর আশ্বাসের কথাই বিবৃত হয়েছে। 

হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রা.) হতে বর্ণিত, নবী ( সা.) বলেন, সুলাইমান ইবনে দাঊদ (আ.) বাইতুল মাকদিসের নির্মাণ কাজ শেষ করে আল্লাহ্‌তায়ালার কাছে তিনটি বিষয় প্রার্থনা করেন; আল্লাহ্‌র হুকুমমত সুবিচার, এমন রাজত্ব যা তার পরে আর কাউকে দেয়া হবে না এবং যে ব্যক্তি বাইতুল মাকদিসে কেবলমাত্র নামাজ পড়ার জন্য আসবে, তার গুনাহ যেন তার থেকে বের হয়ে যায় তার মা তাকে প্রসব করার দিনের মত। এরপর নবী (সা.) বলেন; প্রথম দুটি তাঁকে দান করা হয়েছে এবং আমি আশা করি তৃতীয়টিও তাঁকে দান করা হবে।

(ইবনে মাজাহ: হাদিস ১৪০৮) 


✓ ৭.কেয়ামতের আগে আকসা বিজয় 


প্রিয় নবী (সা.) ভবিষ্যতবাণী করে গেছেন কেয়ামতের আগে আল-আকসা (ফিলিস্তিন) বিজয়ের। হযরত উমর (রা.) জেরুজালেমসহ বাইতুল মোকাদ্দাস জয় করেছিলেন। পরে সুলতান সালাহউদ্দিন উদ্দীন আইয়ুবি (রহ.) ১১৮৭সালে আবার জয় করে ছিলেন। পরে মুসলমানদের উদাসীনতায় আবার তা হাত ছাড়া হয়ে যায়। যা অদ্বাবধি রয়েছে। তবে মুসলিম উম্মাহ আবারো তা জয়ের দ্বারপ্রান্তে ইনশাআল্লাহ। এতো শহীদান ও নিষ্পাপ রক্ত তারই ইঙ্গিত বহন করছে। 

 নবী (সা.) বলেন, কিয়ামতের পূর্বে ছয়টি বস্তূ গণনা করো। তার মধ্যে বায়তুল মাকদিস বিজয় অন্যতম। (বুখারী, অধ্যায়: কিতাবুল জিযইয়্যাহ।)

উমর ইবনুল খাত্তাব (রা.) এর শাসনামলে হিজরী ১৬ সালে বাইতুল মাকদিস বিজয়ের মাধ্যমে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামএর ভবিষ্যৎ বাণী বাস্তবায়িত হয়েছে। 


✓ ৮. আল আকসা ইসরা ও মিরাজের জ্বলন্ত সাক্ষী


বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) এর শ্রেষ্ঠ মুজেজা ইসরা ও মিরাজ শরীফ। তিনি রাতের সামান্য অংশে মসজিদে হারাম (কাবা প্রান্তর) থেকে মসজিদে আকসায় ভ্রমণ করেছেন অতপর সেখান থেকে ঊর্ধ্বগগনে ভ্রমণ করেছেন । বাইতুল মোকাদ্দাস সেই ইসরা ও মিরাজেরই স্মৃতি ধারণকারী সাক্ষ বহনকারী। 

আল্লাহতায়ালা বলেন, পবিত্র মহান সে সত্তা, যিনি তাঁর বান্দাকে রাতে নিয়ে গিয়েছেন আল মাসজিদুল হারাম থেকে আল মাসজিদুল আকসা পর্যন্ত, যার আশপাশে আমি বরকত দিয়েছি, যেন আমি তাকে আমার কিছু নিদর্শন দেখাতে পারি। তিনিই সর্বশ্রোতা, সর্বদ্রষ্টা। (বনী ইসরাইল:১)


✓ ৯. আকসা হাশরের ময়দান হবে

আল আকসা ফিলিস্তিন এই দেশ ও আশপাশের শহর হবে হাশরের ময়দানের সূচনা। হযরত মাইমুনা (রা.) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন আমি রাসূলুল্লাহ (সা.) কে বললাম, হে আল্লাহর রাসূল!বাইতুল মোকাদ্দাস সম্পর্কে কিছু বলুন, তিনি বলেন বাইতুল মোকাদ্দাস হলো হাশরের ময়দান, পুনরুত্থানের জায়গা। তোমরা সেখানে নামাজ আদায় করো। কারণ , বাইতুল মাকদিসের এক রাকাতে অন্য মসজিদের তুলনায় এক হাজার রাকাতের সওয়াব।,,,

(মুসনাদে আহমদ)


✓  ১০. আকসা দখল ও অধিকার গ্রহণ

তীন ধর্মের তীর্থস্থান হিসেবে পরিচিত পবিত্র আল আকসা নগরীর নির্লজ্জ দখলবাজি যুগ যুগ ধরে চলছে। মুসলমানরা শক্তি সামর্থ্যের গুণ-বৈশিষ্ট অর্জন করে আল্লাহর তাওফিকে দেরিতে হলেও তা মুক্ত করছে। এ নগরীর মত রক্তস্নাত, হৃদয়বিদারক, ত্যাগের ইতিহাস আর কোন ভূখণ্ডে নিয়ে নেই। পবিত্র এই নগরীর স্থাপনাগুলো দুইবার পরিপূর্ণ ধংস করা হয়। ৫২বার আক্রমণ করা হয়, ৪৪বার উদ্ধার করা হয় এবং ২৩বার অধিকৃত হয়। সবচেয়ে দুঃখের ও হৃদয়ছেঁড়া ইতিহাসের নির্মম দিন হলো ৯ই জুলাই ১০৯৯সাল। পোপ আরবান ২য় ১০৯৫ সালে উস্কানিমূলক বক্তব্য দিয়ে ইউরোপজুড়ে তোলপাড় সৃষ্টি করে। আওয়াজ উঠায় ঈসা মসিহের কথিত কবর ও আল আকসা মুসলমানদের কবল থেকে রক্ষা করতে হবে। কিছু মুসলিমের মোনাফিকি ও উদাসীনতায় ১০৯৯সালে ক্রসেডারদের দখলে চলে যায় প্রিয় আল আকসা। চালায় নারকীয় হত্যাযজ্ঞ। হাঁটু সমান রক্তের বন্যায় ভেসে যায় মুসলিমের কর্তিত অঙ্গন-প্রত্যঙ্গ। অতপর সালাউদ্দিন আইয়ুবি (রহ.) এর পুনরুদ্ধারের পর আবার দখলে নেয় অভিশপ্ত জায়নবাদি ইসরাইলি ইহুদি। অদ্যাবধি তাদের দখলেই। মুসলমানরা রক্তের নাজরানা এখনো দিয়ে যাচ্ছে। সম্প্রতি ৭ই অক্টোবর হামাস যোদ্ধাদের ঐতিহাসিক 'তুফান' অপারেশনের পর থেকে ফিলিস্তিনি ভূখণ্ড গাজায় নেমে এসেছে ইতিহাসের বর্বরোচিত ভয়াবহ হামলা। মুহুর্মুহু বোমা ও গোলা বর্ষণ। অনবরত বিমান হামলায় গাজা এখন মৃত্যুপুরী। পুড়ছে গাজা জ্বলছে ফিলিস্তিন। ইহুদিদের হামলা থেকে রক্ষা পাচ্ছে না স্কুল, কলেজ, মাদরাসা, মসজিদ, বিশ্ববিদ্যালয়। এমনকি হাসপাতাল পর্যন্তও। দেশে দেশে চলছে বিক্ষোভ দোয়া-কুনুতে নাজেলার আমল। আল্লাহ তায়ালা তাদের সহায় হোন এবং পৃথিবীকে নিরাপদ করে দিন। 


লেখক: মুফতি উবাইদুল্লাহ তারানগরী

শিক্ষক; জামিয়া ইবনে আব্বাস রা সামান্তপুর জয়দেবপুর গাজীপুর সিটি।


আরও খবর