সমাজে পাপ বাড়লে সবার ক্ষতি
মানুষ সমাজ ছাড়া চলতে পারে না। মানুষের জীবনের নিরাপত্তা এবং জীবিকার তাগিদেই প্রাচীন যুগ থেকে চালু হয়েছে সমাজব্যবস্থা। তাই মানুষ এখন একটি সুন্দর সমাজ ও রাষ্ট্র চায়। মুসলিম, হিন্দু, খ্রিস্টান, বৌদ্ধ নির্বিশেষে সব মানুষ একটি সুখী-সমৃদ্ধ সমাজ প্রত্যাশী। কিন্তু পাপের কারণে তা দুরাশায় পরিণত হয়। মূলত পাপের কারণে মানুষের অন্তরাত্মা অন্ধকারে নিমজ্জিত হয়। মানুষ তখন নানা বিপদ-আপদে আক্রান্ত হয়ে ভালো কাজের শক্তি-সামর্থ্য হারিয়ে ফেলে। এ কারণে আল্লাহ তায়ালা কুরআনে বারবার এ সম্পর্কে সাবধানবাণী উচ্চারণ করেছেন, পাপ থেকে দূরে থাকার নির্দেশ দিয়েছেন এবং পাপের কারণে অতীত জাতিগুলোর ওপর যেসব আজাব-গজব নেমে এসেছিল, তার বিবরণ তুলে ধরেছেন সবিস্তারে। বর্ণিত হয়েছে, ‘যদি তারা মুখ ফিরিয়ে নেয়, তবে জেনে রাখো, তাদের কিছু পাপের কারণে আল্লাহ তাদের শাস্তি দিতে চান।’ (সুরা মায়েদা : ৪৯)
মানুষের পাশাপাশি সমাজের ওপরও পাপ ও পাপাচারের নেতিবাচক নানা প্রভাব রয়েছে। যা ক্রমেই সমাজকে পাপের খেলায় মত্ত করে তোলে, ধ্বংসের বীজ ছড়িয়ে দেয় সর্বত্র। সমাজে পাপাচার ও তার ক্ষতিকর প্রভাব বিভিন্নভাবে ছড়িয়ে পড়ে। পাপাচারের কারণে বিভিন্ন রোগ-ব্যাধির বিস্তার ঘটে, দূষিত হয় পরিবেশ। দেখা দেয় নিরাপত্তার অভাব, বিঘ্ন ঘটে শান্তি-শৃঙ্খলার, ভীতি ছড়িয়ে পড়ে ভয়াবহভাবে। কখনো অনাবৃষ্টি, কখনো অতিবৃষ্টি, ভূমিকম্প, ঝড়-তুফানসহ দেখা দেয় নানা প্রাকৃতিক দুর্যোগ। মানববিধ্বংসী যুদ্ধ, আগ্রাসন ইত্যাদি অস্বাভাবিকতা মানুষের পাপাচারেরই ফসল। তাই ইসলাম সব পাপ ও অন্যায়-অনাচার থেকে বাঁচার জন্য সমষ্টিগত ব্যবস্থাপনার নির্দেশনা দিয়েছে। নেকি হলো টনিকের মতো। আর গুনাহর উদাহরণ হলো বিষের মতো। আমাদের সাধারণ অভ্যাস হলো আমরা নেক কাজ খুব বেশি করি। বহু নফল নামাজ পড়ি। জিকির করি। কিন্তু গুনাহ থেকে বাঁচার ব্যাপারে কোনো গুরুত্বারোপ করি না। অথচ গুনাহ থেকে বাঁচার গুরুত্ব খুব বেশি।
গুনাহ যাতে না হয় সে জন্য গুনাহের উপায়গুলো বন্ধ করে ফেলতে হবে। গুনাহর সামনে যখন একজন মানুষ দাঁড়ায় তখন গুনাহ থেকে নিজেকে ফিরিয়ে রাখা কঠিন হয়ে পড়ে। এর চেয়ে সহজ হচ্ছে সেই গুনাহের যাতে কাছে না যেতে হয় সেই ব্যবস্থা করা। বিশেষ করে কোনো কিছুর প্রতি যদি কারও আকর্ষণ থাকে তা হলে সেটা যদি সামনে এসে যায় তা হলে তা পাশ কাটিয়ে যাওয়া কঠিন। এর চেয়ে এর মুখোমুখি যাতে না হতে হয় সে ব্যবস্থা করা ভালো। আল্লাহ বলেছেন, ‘মুমিনদেরকে বল, তারা যেন দৃষ্টি অবনত রাখে এবং লজ্জাস্থানের হেফাজত করে।’ এখানে আল্লাহ তায়ালা প্রথমে দৃষ্টি অবনত রাখতে বলেছেন। তার কারণ হচ্ছে দৃষ্টি অবনত রাখতে পারলে লজ্জাস্থানের হেফাজত অনেক সহজ হয়ে যায়।
আমাদের দৈনিক রুটিন অনেকাংশেই অনৈসলামিক। আমরা দিন শুরু করি দেরিতে আর রাতে জেগে থাকি। এটা মহাবিপদ। রাত জেগে থেকে সকালে দেরি করা ঘুম থেকে ওঠার ফলে দিনের পর দিন ফজরের নামাজ মিস হচ্ছে অনেকের। স্টুডেন্ট লাইফে এটা আরও বড় সমস্যা। আমরা যদি সাহাবিদের লাইফ স্টাইল দেখি তা হলে দেখব, তারা সব কাজ দিনেই সম্পন্ন করতেন। রাসুল (সা.) আল্লাহর কাছে দোয়া করেছিলেন, তাঁর উম্মতকে যেন সকালের প্রথম ভাগে বরকত দেওয়া হয় এবং আল্লাহ তাঁর দোয়া কবুল করেছিলেন। অনেক সময় মনে হতে পারে, রাতে তো আমার পড়া ভালো হয়। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে ভোরে পড়লে পড়া ভালো হয়। আরেকটি জিনিস হচ্ছে রাতের বেলায় পাপের ফেতনার সুযোগ অনেক বেশি। তাই আমরা চেষ্টা করব যেন রাতের বেলা তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে ভোরে উঠতে পারি।
প্রতিদিন কুরআন তেলাওয়াত করা ও কুরআনের পেছনে সময় ব্যয় করা উচিত। তা হলে এই কুরআনই আমাদের গুনাহ থেকে টেনে তুলবে। আরও চেষ্টা করতে হবে নামাজকে সুন্দর করার জন্য। আল্লাহ বলেছেন, ‘নিশ্চয়ই নামাজ মানুষকে মন্দ ও অশ্লীল কাজ হতে দূরে রাখে।’ গুনাহ থেকে বেঁচে থাকা আল্লাহর সাহায্য ছাড়া সম্ভব নয়। আল্লাহ যদি সাহায্য করেন তা হলে তা সোজা হয়ে যায়। এ জন্য ইউসুফ (আ.)-কে যখন সেই সুন্দরী উচ্চ বংশীয় মহিলা খারাপ কাজের জন্য আহ্বান করল তখন তিনি একজন নবী ও দৃঢ় চরিত্রের হওয়া সত্ত্বেও সর্বপ্রথম আল্লাহর কাছে সাহায্য চেয়েছিলেন।
গুনাহ ও গুনাহের কুফল সম্পর্কে জানাশোনা ও আলোচনা বাড়ানো দরকার। আমাদেরকে জানতে হবে কোন কোন কাজ গুনাহ। আজ অনেক মানুষ জানেই না কোন কাজ গুনাহ। এ ছাড়া আমাদের গুনাহের কুফল সম্পর্কেও জানতে হবে। তা হলে গুনাহ থেকে বেঁচে থাকা সহজ হবে। গুনাহের কুফল অনেক। যেমন হেদায়েত থেকে বঞ্চিত হওয়া, জ্ঞান কমে যাওয়া, স্মরণশক্তি কমে যাওয়া, আল্লাহর সঙ্গে দূরত্ব সৃষ্টি হয়, জীবন জটিল হয়ে পড়ে ইত্যাদি।
দৈনন্দিন বিভিন্ন জিকির রয়েছে যেগুলো গুনাহ থেকে বেঁচে থাকতে সাহায্য করে। যেমন খাওয়ার আগে বিসমিল্লাহ বলা। ঘর থেকে বের হওয়ার আগে বলা ‘বিসমিল্লাহি তাওয়াক্কালতু আলাল্লাহি লা হাওলা কুওয়াবাতা ইল্লা বিল্লাহ।’ এভাবে সব কাজের আগে দোয়া রয়েছে যেগুলো চর্চা করলে গুনাহ থেকে বেঁচে থাকা যায়। আর অতিরিক্ত কথা বলা, খাওয়া, মেলামেশা করা এগুলোর পরিমাণ কমানো। কিন্তু যে বেশি কথা বলে তার গুনাহ হওয়ার আশঙ্কা বেশি। রাসুল (সা.) বলেছেন, যে আল্লাহ ও আখেরাতে বিশ্বাস করে সে হয় ভালো কথা বলুক না হয় চুপ থাকুক। কারণ কথা বলতে বলতে এমন গুনাহ হয়ে যেতে পারে যার শাস্তি খুব সাংঘাতিক। এ ছাড়া অপ্রাসঙ্গিক বিষয় নিয়ে ব্যস্ত না হওয়া। অর্থাৎ হালাল কাজে ও কর্মসূচিতে নিজেকে ব্যস্ত রাখা। যদি আমরা পরকালীন শাস্তির ভয়ে এসব গুনাহ থেকে বেঁচে থাকতে পারি তা হলেই সামাজিক পাপাচার দূরীভূত হবে। আল্লাহ তায়ালা সবাইকে নেক হায়াত দান করুন।
৩ দিন ৭ ঘন্টা ৩১ মিনিট আগে
৪ দিন ৩২ মিনিট আগে
৪ দিন ২ ঘন্টা ৩২ মিনিট আগে
৪ দিন ১২ ঘন্টা ৮ মিনিট আগে
৫ দিন ৯ ঘন্টা ৫৫ মিনিট আগে
৬ দিন ২৮ মিনিট আগে
৬ দিন ২২ ঘন্টা ১৫ মিনিট আগে
১১ দিন ২২ ঘন্টা ৩৫ মিনিট আগে