ডোমারে প্রসূতি মায়ের মৃত্যুর ঘটনায় হাসপাতাল সিলগালা, গ্রেপ্তার-৩
চিকিৎসকের অবহেলায় নীলফামারীর ডোমার উপজেলার জনতা ক্লিনিক এন্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারে সিজারিয়ান অপারেশনের সময় বেবী আক্তার (২৮) নামে এক প্রসূতি মায়ের মৃত্যুর ঘটনায় হাসপাতালটি সিলগালা সহ নিহতের স্বামীর দায়ের করা মামলায় ৩ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
ডোমার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শায়লা সাঈদ তন্বীর নেতৃত্বে রবিবার (১৫ই জুন) দুপুরে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে প্রাথমিক সত্যতা পাওয়ায় হাসপাতালটিকে সিলগালা করা হয়।
এসময় উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ মোঃ রায়হান বারী, ডোমার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোঃ আরিফুল ইসলাম, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্যানিটারি ইন্সপেক্টর মোঃ আল-আমিন রহমান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
জানা যায়, নিহত বেবী আক্তার উপজেলার সোনারায় ইউনিয়নের বড়গাছা দরগাপাড়া এলাকার নুর আলমের স্ত্রী।
এবিষয়ে নিহতের স্বামী নুর আলম বলেন, শনিবার (১৪ই জুন) বিকালে আমার স্ত্রীর প্রসব বেদনা উঠলে আমি সহ পরিবারের লোকজন নিয়ে তাকে ডাক্তার দেখানোর জন্য জনতা ক্লিনিকে নিয়ে আসি। সেখানে ডাঃ রিজওয়ানা ইয়াসমিনকে দেখালে তিনি কিছু পরীক্ষা দেন। পরীক্ষার রিপোর্ট দেখার পর তিনি বলেন, রোগীর থলিতে পানি না থাকায় তাকে সিজার করাতে হবে। তখন আমার স্ত্রীকে সিজারের জন্য জনতা ক্লিনিকে ভর্তি করাই। সন্ধ্যা ৬টার দিকে তার সিজার হলে একটি পুত্র সন্তানের জন্ম হয়। সিজার করানোর সময় ডাঃ রিজওয়ানা ইয়াসমিন, ডাঃ নিহার রঞ্জন সাহা, ওটি বয় বিপুল সরকার উপস্থিত ছিলেন। সিজারের পর থেকেই রোগীর অবস্থা ক্রমশঃ খারাপ হতে থাকে। সিজারের ৩ ঘণ্টা পেরিয়ে গেলেও রোগীর রক্তক্ষরণ বন্ধ না হলেও ডাঃ রিজওয়ানা কোনো পদক্ষেপ গ্রহন করেননি। একপর্যায়ে রোগীর রক্তক্ষরণ বাড়তে থাকে এবং রক্তচাপ অনেক কমে যায়। এমতাবস্থায় আমার স্ত্রীর অবস্থা আশংকাজনক হলে ডাক্তাররা ক্লিনিক থেকে সটকে পরেন। তখন ডাঃ সাকিব রোগীকে দেখভাল করার সময় বলেন- রোগীর অবস্থা খুব একটা ভালোনা, দ্রুত রংপুরে নিয়ে যান। তখন আমি আমার স্ত্রীকে নিয়ে রাতেই রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাই। সেখানে জরুরী বিভাগের চিকিৎসক রবিবার (১৫ই জুন) ভোরে মৃত ঘোষনা করেন।
এর আগে, রাতে চিকিৎসকের অবহেলায় রোগীর অবস্থা আশংকাজনক হওয়ার খবর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পরলে রোগীর স্বজনরা ক্লিনিকে এসে চিকিৎসকের বিচার দাবী করেন। পরিস্থিতির অবনতি ঘটলে পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন।
এ ঘটনায় নিহত বেবী আক্তারের স্বামী মোঃ নুর আলম বাদী হয়ে ডোমার থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। ডোমার থানা পুলিশ ডাঃ নাজমুস সাকিব, সেবিকা সুমনা আক্তার ও সাবিয়া আক্তারকে গ্রেপ্তার করেছে।
এবিষয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ মোঃ রায়হান বারী বলেন, লিখিত অভিযোগ না পেলেও বিষয়টি জানার পর তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনের পর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। ক্লিনিকটি এখনো নিবন্ধন পায়নি বলেও তিনি জানান।
এব্যাপারে ডোমার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শায়লা সাঈদ তন্বী বলেন, ঘটনার প্রাথমিক সত্যতা পাওয়ায় জনতা ক্লিনিক এন্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারকে সিলগালা করা হয়েছে। সেই সাথে বিষয়টি তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।