শব্দদূষণ বিধিমালা লঙ্ঘন করে ইংরেজি নববর্ষে আতশবাজি, পটকা ফুটানো ও ফানুস উড়ানো বেড়ে চলেছে। প্রতিবছর পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে দফায় দফায় অনুরোধ করা হলেও তা কাজে আসছে না। শব্দদূষণ (নিয়ন্ত্রণ) বিধিমালা, ২০০৬-এর ১৮ বিধি অনুযায়ী শব্দদূষণ দণ্ডনীয় অপরাধ হিসেবে স্মরণ করিয়ে দেওয়া হলেও কেউ মানছেন না।
নববর্ষের রাতে কয়েক ঘণ্টাব্যাপী রাজধানীসহ গোটা দেশই শব্দসন্ত্রাসে কেঁপে ওঠে। এতে নারী, শিশু, বয়স্ক ও অসুস্থ ব্যক্তিদের অসহনীয় দুর্ভোগে পড়তে হয়। সেই সঙ্গে নগরীরের পশু-প্রাণীদের মৃত্যুর ঘটনাও ঘটে চলেছে প্রতিবছর। বিধি ও নিষেধাজ্ঞাকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে প্রতিবছর নববর্ষে শব্দূষণ বেড়েই চলেছে। নববর্ষের কয়েকদিন আগে থেকেই শুরু হয় শব্দসন্ত্রাস। চলে নগরের বিভিন্ন মোড়ে ও ছাদে ছাদে চলে শব্দদূষণের উৎসব।
বায়ুমন্ডলীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্র (ক্যাপস) গত ৭ বছর ধরে ইংরেজি নববর্ষ উদযাপনে শব্দ দূষণের তীব্রতা পর্যবেক্ষণ করেছে। ক্যাপসের পর্যবেক্ষণের তথ্য বলছে, ২০১৭ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত আতশবাজি ফুটানো ও ফানুস উড়ানোর কারণে ঢাকায় শব্দদূষণ বেড়েছে ৭৪ শতাংশ। প্রতিবছর শব্দের মাত্রার তীব্রতা বা ডেসিবলও বেড়েছে। ফলে বিপজ্জনক হয়ে উঠছে পরিস্থিতি।
রাজধানীর দুই সিটির পরিসংখ্যান তুলে ধরে ক্যাপস জানায়, ৩১ ডিসেম্বর রাত ১১টা থেকে দিনগত রাত ১টার মধ্যে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি এলাকায় গড়ে শব্দের মান ৪৮ থেকে শুরু করে ৭০ ডেসিবেল পর্যন্ত পাওয়া যায়। তবে রাত ১২টা বাজার সঙ্গে সঙ্গে শব্দের মাত্রা গড়ে সর্বনিম্ন ৮৫ ডেসিবল থেকে সর্বোচ্চ ১১০ ডেসিবল পর্যন্ত বা আরও বেশি অতিক্রম করে।
ক্যাপসের পর্যবেক্ষণের তথ্যমতে, বিগত ২০১৭-১৮ সালে ৩০ ডিসেম্বর রাত ১১টা থেকে ১টা পর্যন্ত শব্দের মাত্রা ছিল ৬৫ ডেসিবল। তবে ৩১ ডিসেম্বর রাত ১১টা থেকে ১টায় আতশবাজি ও ফানুশ উড়ানোর কারণে শব্দের মাত্রা দাঁড়ায় ১১০ ডেসিবলে। সাত বছরের মধ্যে যা ছিল সর্বোচ্চ। তবে ২০১৮-১৯ সালে নববর্ষ উদযাপনের আগে শব্দের মাত্রা ছিল ৬৩ ডেসিবল, উদযাপনের সময় ১০৩ ডেসিবল। সর্বশেষ ২০২৩-২৪ সালে উদযাপনের আগে ছিল ৬০ ডেসিবল, উদযাপন সময় হয় ৮৫ ডেসিবল।
ক্যাপসের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. আহমদ কামরুজ্জামান মজুমদার জানান, ২০২৪ সালের প্রথম ঘণ্টায় শব্দদূষণ হার আগের দিনের তুলনায় ৪২ শতাংশ বেড়ে যায়। বেশিরভাগ সময় শব্দের মাত্রা ছিল ৮০ থেকে ৯০ ডেসিবলের মধ্যে। অথচ ঢাকা শহরকে মিশ্র এলাকার সঙ্গে তুলনা করলে রাতের বেলা এই শব্দের সহনীয় মাত্রা ৫০ ডেসিবসের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকবে হবে।
তবে শব্দের মাত্রা এত তীব্র যে শিল্প এলাকার জন্য নির্ধারিত শব্দের মাত্রা ৭০ ডেসিবলও অতিক্রম করে। ক্যাপসের হিসাবে দেখা গেছে, গত ৭ বছরে ৩১ ডিসেম্বর রাত ১১টা থেকে ১টা (১ জানুয়ারি) পর্যন্ত গড়ে ৯০ শতাংশ সময়ে শব্দের মাত্রা ৭০ ডেসিবল অতিক্রম করেছে। যা মানবস্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর।
শব্দদূষণ প্রতিরোধ বিষয়ে সুপারিশ জানিয়ে অধ্যাপক ড. আহমদ কামরুজ্জামান মজুমদার বলেন, নববর্ষ উদযাপনের সময় পশু-পাখি এবং বন্যপ্রাণীর নিরাপত্তার জন্য সুরক্ষা পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে। শব্দদূষণ (নিয়ন্ত্রণ) বিধিমালা এবং অন্যান্য পরিবেশ সুরক্ষা আইনের কার্যকর প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে। দূষণ নির্ধারণ এবং তার প্রভাব কমানোর জন্য গবেষণায় আরও বেশি তহবিল বরাদ্দ করতে হবে।
তবে অভিজ্ঞ মহল বলছেন, শব্দদূষণ বেড়ে যাওয়ার কারণ শব্দও যে দূষণ ঘটাতে পারে সে বিষয়ে সচেতন নন বেশিরভাগ মানুষ। তাছাড়া পরিবারিকভাবেও শিশু কিশোরদের সচেতন করা হয় না। সামাজিক অবক্ষয়ও এ বিষয়ে বড় কারণ। আইন মানা নিয়ে অনীহা, সরকারের নির্দেশনা উপেক্ষা, বিচারহীনতা, সামাজিক ন্যায়বিচার না থাকার কারণে শব্দদূষণ বিপজ্জনক পর্যায়ে চলে গেছে।
এমন পরিস্থিতিতে বরাবরের মতোই ইংরেজি নববর্ষে আতশবাজি ও পটকা ফোটানোসহ ফানুস ওড়ানো থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানিয়ে শুক্রবার (২৭ ডিসেম্বর) পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় থেকে সংবাদ বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়েছে। উপপ্রধান তথ্য অফিসার দীপংকর বর স্বাক্ষরিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ইংরেজি নববর্ষে আতশবাজি ও পটকা ফোটানো শাস্তিযোগ্য অপরাধ বলে গণ্য হবে। তাই এ ধরনের কর্মকাণ্ড থেকে সবাইকে বিরত থাকতে অনুরোধ করা হচ্ছে।
বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, থার্টি ফার্স্ট নাইটে দেশব্যাপী আতশবাজি ও পটকা ফোটানো হয়ে থাকে, যা বিদ্যমান শব্দদূষণ ও বায়ুদূষণে ভিন্ন মাত্রা যোগ করে। এর আগে এক থার্টি ফার্স্ট নাইটে আতশবাজির শব্দে ভয় পেয়ে হৃদ্রোগে ভুগতে থাকা এক শিশুর মৃত্যু হয় বলে খবরে প্রকাশিত হয়েছে।
১ ঘন্টা ৩১ মিনিট আগে
২ ঘন্টা ৫৭ মিনিট আগে
৩ ঘন্টা ১৪ মিনিট আগে
৩ ঘন্টা ৩৭ মিনিট আগে
৫ ঘন্টা ১৫ মিনিট আগে
১২ ঘন্টা ২৮ মিনিট আগে
২০ ঘন্টা ৩৮ মিনিট আগে
২০ ঘন্টা ৫০ মিনিট আগে