ভালুকা (ময়মনসিংহ) প্রতিনিধি:-ময়মনসিংহের ভালুকা উপজেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন স্থগিত করা হয়েছে। হাইভোল্টেজের সম্মেলন ঘিরে নব্য ও হাইব্রিড নেতারা ২০ কোটি টাকার মিশন নিয়ে মাঠে নেমেছিলেন। অবশেষে তাদের মিশন বিফলে গেছে। অতিমাত্রায় তদবির এবং পাল্টাপাল্টি অভিযোগের কারণে সোমবার সম্মেলন স্থগিত করা হয়েছে বলে নির্ভরযোগ্য সূত্র নিশ্চিত করেছে। ২ ত্যাগী এবং ২ হাইব্রিড নেতা নিজেদের পক্ষে মরিয়া হয়ে ঢাকায় অব্যাহত তদবির চালাচ্ছিলেন। এদের জ্বালায় অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছিলেন কেন্দ্রের শীর্ষ নেতারা। তবে পোয়াবারো অবস্থা ২ নেতার। দীর্ঘ দেড়যুগেরও বেশি সময় পরে আগামী ৩০ নভেম্বর বুধবার উপজেলা আওয়ামী লীগের ত্রি-বার্ষিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিলো। নতুন কমিটিতে পদ পেতে চলছিলো তুমুল প্রতিদ্বন্দ্বিতা। ২০ কোটি টাকার খেলা চলছিলো ভালুকা-ঢাকা। কলকাঠি নাড়ছিলেন দেশের শীর্ষ শিল্পপতিরা। বন বিভাগের জমি দখলের জন্য ভূমিদস্যু শিল্পপতিরা ৪ প্রার্থীকে মদদ এবং কোটি কোটি টাকা দিচ্ছিলেন। ৪ জনের যেকোনো ২ জন সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পেলে শিল্পপতিরা তাদের ব্যবহার করে ভালুকার মহাসড়কের দু’পাশে অবশিষ্ট থাকা বন বিভাগের জমি দখল করে শিল্পকারখানা গড়তে সক্ষম হবেন। এই শিল্পপতিরা বিভিন্ন সময় বিএনপি নেতাদেরও মদদ এবং টাকা দেন বলে সূত্র নিশ্চিত করেছে। সূত্র মতে, পদপ্রত্যাশী ২ শিল্পপতির আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে বয়স মাত্র ৫ বছর। একজন প্রবাসী ব্যবসায়ী। অপরজন ইতিপূর্বে বিএনপির রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত ছিলেন। এরা দু’জন তদবির করে ২০১৮ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর গঠন করা ময়মনসিংহ জেলা আওয়ামী লীগের ৭৫ সদস্যের পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে স্থান পান। এর কয়েক মাস আগে তারা সরাসরি আওয়ামী লীগের সাথে যুক্ত হন। আওয়ামী লীগের রীতিনীতি অনুযায়ী এরা কমিটিতে পদ পাওয়ার যোগ্য নন বলে সূত্র নিশ্চিত করেছে। বিষয়টি নির্বাচন কমিশনের আরপিও এবং আওয়ামী লীগের গঠনতন্ত্র বিরোধী। অন্যদিকে ময়মনসিংহের শিল্পাঞ্চল ভালুকা উপজেলা আওয়ামী লীগ এবং সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীরা তাকিয়ে ছিলেন ৩০ নভেম্বরের সম্মেলনের দিকে। সম্মেলন স্থগিত হওয়ায় নেতা-কর্মীরা নিরাশ হয়েছেন।
ভালুকা উপজেলা আওয়ামী লীগের কাঙ্খিত ত্রি-বার্ষিক সম্মেলন ঘিরে সর্বস্তরের নেতা-কর্মীদের মধ্যে চলছিলো উৎসব-আমেজ। সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক প্রার্থীরা তাদের শক্তির জানান দিচ্ছিলেন। কোটি টাকার পিভিসি, প্যানা, ফেস্টুন ও পোস্টারে ছেয়ে ফেলা হয়েছে উপজেলা সদরের পূর্ব ও পশ্চিম অংশ এবং ময়মনসিংহ-গাজীপুর চারলেন সড়কের ভালুকা অংশের শোভিত আইল্যান্ড। প্যানা এবং ফেস্টুনের কারণে চারলেন সড়কের একপাশ থেকে আরেকপাশ দেখার কোনো উপায় নেই। অর্ধশত গেট নির্মাণ করা হয়েছে উপজেলা সদর ও চারলেন সড়কের কোনো কোনো অংশে। সম্মেলনে বর্তমান এমপি আলহাজ্ব কাজিম উদ্দিন আহম্মেদ ধনু, উপজেলা আওয়ামী লীগের বর্তমান সাধারণ সম্পাদক গোলাম মোস্তফা, জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য আলহাজ্ব এম এ ওয়াহেদ, উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান ড. সেলিনা রশিদ, উপজেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আলহাজ্ব অ্যাডভোকেট মোঃ শওকত আলী প্রমুখ সভাপতি প্রার্থী ছিলেন। সংরক্ষিত আসনের মহিলা এমপি মনিরা সুলতানা মনি, উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম পিন্টু, জেলা আওয়ামী লীগের শিল্প ও বাণিজ্য সম্পাদক হাজী মোঃ রফিকুল ইসলাম, পৌর মেয়র ডা. একেএম মেজবাহ উদ্দিন কাইয়ুম, উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ওমর হায়াত খান নঈম, উপজেলা আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক কাজিম উদ্দিন আহম্মেদ প্রমুখ সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী ছিলেন। এদের মধ্যে সভাপতি পদে আলহাজ্ব কাজিম উদ্দিন আহম্মেদ ধনু ও গোলাম মোস্তফা এবং সাধারণ সম্পাদক পদে মনিরা সুলতানা মনি ও রফিকুল ইসলাম পিন্টু এগিয়ে ছিলেন। শীর্ষ ২ পদে এই ৪ নেতার মধ্যে চলছিলো তুমুল প্রতিদ্বন্দ্বিতা।
ভালুকা আসনের এমপি আলহাজ্ব কাজিম উদ্দিন আহম্মেদ ধনু নানান কারণে সাবেক ও বর্তমান জনপ্রতিনিধিদের মধ্যে ব্যাপকভাবে গ্রহণযোগ্য। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম নায়ক কিংবদন্তি মরহুম পিতা মেজর আফসার উদ্দিন আহম্মেদ-এর ইতিহাস, ঐতিহ্য ও কর্ম ধরে রাখার শপথ নিয়ে ১৯৮৫ সালে ছাত্রলীগের রাজনীতিতে সম্পৃক্ত হন। ১৯৮৭ সালে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের রাষ্ট্র বিজ্ঞান বিভাগে সভাপতি নির্বাচিত হন। ১৯৮৯ সালে ভালুকা উপজেলা ছাত্রলীগের আহ্বায়কের দায়িত্ব পান। ১৯৯০ থেকে ১৯৯৪ সাল পর্যন্ত ছাত্রলীগের সভাপতি ছিলেন। ১৯৯৪ থেকে ২০০২ সাল পর্যন্ত উপজেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। তিনি ২০০২ সালে যুবলীগের সভাপতি নির্বাচিত হয়ে ২০১৫ সাল পর্যন্ত দায়িত্বে ছিলেন। ২০০৩ সালে উপজেলা ও পৌর আওয়ামী লীগের সদস্য হন। বর্তমানে ময়মনসিংহ জেলা, ভালুকা উপজেলা এবং পৌর আওয়ামী লীগের সদস্য। ২০০৯ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত তিনি উপজেলা পরিষদে চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেন। এর আগে তিনি মল্লিকবাড়ী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ছিলেন। দক্ষতা ও বলিষ্ঠ ভূমিকার কারণে তিনি জনপ্রতিনিধির সর্বোচ্চ স্থানে পৌঁছেছেন। দেড় ডজন প্রার্থী থাকার পরও পারিবারিক ইতিহাস-ঐতিহ্য, রাজনৈতিক দূরদর্শিতা ও বলিষ্ঠ ভূমিকার কারণে গত সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পান। তার পিতা ১৯৮৯ সালে আওয়ামী লীগের মনোনয়নে উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়ে ১৯৯১ সাল পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেন। মৃত্যুর সময় পর্যন্ত তিনি ময়মনসিংহ জেলা ও ভালুকা উপজেলা আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত ছিলেন।
ভালুকা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক গোলাম মোস্তফা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে স্বাধীনতা যুদ্ধের আগে ছাত্রলীগে যোগ দেন। দীর্ঘ ৫১ বছরের বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক জীবনের অধিকারী গোলাম মোস্তফা পর্যায়ক্রমে ভালুকা উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ও সভাপতি, যুবলীগের সভাপতি, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক, সাধারণ সম্পাদক এবং জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য নিযুক্ত হন। উপজেলা আওয়ামী লীগ এবং সহযোগী সংগঠনের উপজেলা, পৌর, ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড কমিটির নেতা-কর্মী এবং সমর্থকদের একাংশ মোস্তফার পক্ষে রয়েছেন। তিনি ২০১৪ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ছিলেন। শক্তিশালী রাজনৈতিক অবস্থানের কারণে বিদ্রোহী ও বিএনপির শক্তিশালী প্রার্থী থাকার পরও তিনি বিজয়ী হন। উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়ে উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের কারণে তিনি আরেকধাপ এগিয়ে যান। সম্মাননা লাভ করেন ময়মনসিংহ বিভাগে শ্রেষ্ঠ উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যানের। এছাড়া তিনি দেশ-বিদেশ থেকে বহু সম্মাননা অর্জন করেন। ভালুকার বিভিন্ন কলেজ, মাদ্রাসা, কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, উচ্চ বিদ্যালয়, মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ছাড়াও বিভিন্ন ধর্মীর প্রতিষ্ঠানের সাথে জড়িত ছিলেন। গোলাম মোস্তফা প্রতিষ্ঠানগুলোর উন্নয়নে ব্যাপক ভূমিকা রাখেন।
৩ ঘন্টা ৪৮ মিনিট আগে
৩ ঘন্টা ৫৫ মিনিট আগে
৫ ঘন্টা ৪৭ মিনিট আগে
১ দিন ১১ ঘন্টা ৩ মিনিট আগে
১ দিন ১৭ ঘন্টা ৪৫ মিনিট আগে
১ দিন ১৭ ঘন্টা ৫৯ মিনিট আগে
২ দিন ১ ঘন্টা ৫০ মিনিট আগে
২ দিন ৯ ঘন্টা ৫৭ মিনিট আগে