নতুন করে যেন কোনো শিশু-কিশোর কিংবা উদ্বেলিত তরুণ-তরুণী মাদকের জালে জড়াতে না পারে, তারা যেন কৌতূহল কিংবা এক্সপেরিমেন্টেশন নিয়ন্ত্রণ করতে পারে, প্রতিকূল পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে পারে এবং বন্ধু-বান্ধব নির্বাচনে যেন সজাগ থাকে, এ জন্য মাদকের পরিণতি সম্পর্কে আগেই খোলামেলা আলোচনা করতে হবে ও আমাদের সামাজিকভাবে সচেতন হতে হবে। আমরা যদি সচেতন বা সোচ্চার না হই, অন্যকোন মাধ্যম দিয়ে কোনভাবেই মাদকে নির্মুল করা সম্ভব নয়।আর আগামীর বাংলাদেশকে দুর্বার গতিতে এগিয়ে নিতে হলে তারুণ্যকে মাদক বিমুখী করা ছাড়া অন্যকোনো বিকল্প নেই।
মাদকের হাতছানি সারা দেশে। শুধু শহরেই নয়, গ্রামেও যেমন বরমী ইউনিয়ন এর প্রত্যন্ত এলাকায় ছড়িয়ে পড়েছে এই মাদক। তার বিষাক্ত ছোবল শেষ করে দিচ্ছে তারুণ্যের শক্তি ও সম্ভাবনা। সর্বনাশা মাদক ধ্বংস করে একটি মানুষের শরীর, মন, জ্ঞানবিবেক ও জীবনের সঙ্গে জড়িয়ে থাকা তার পরিবারের সব স্বপ্নকে এবং তার উজ্জ্বল ভবিষ্যৎকে। শুধু পরিবারকে নয়, মাদকের কালো থাবা ধ্বংস করে একটি সমাজকে, একটি জাতিকে এবং পরবর্তী সময়ে ধীরে ধীরে এটি বৃহৎ আকার ধারণ করে একটি ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে হুমকির মুখে ফেলে দিচ্ছে। তরুণ তাজা প্রাণের অন্ধকারে হারিয়ে যাওয়ায় পিছিয়ে পড়ছে সমাজ। বিভিন্নভাবে, বিভিন্ন পথে, মাদক ঢুকে পড়ছে আমাদের সমাজে। আর ব্যক্তি ও পারিবারিক জীবনের অবক্ষয়, প্রত্যাশার সঙ্গে প্রাপ্তির অসামঞ্জস্যতা, হতাশা এবং মূল্যবোধের অভাবের সুযোগ নিয়ে মাদক তার হাত বাড়িয়ে দিয়েছে তরুণসমাজের প্রতি।বিশেষ করে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ৫ ই আগস্ট এর পর নড়বড়ে হয়ে যাওয়ায় ,এর সুযোগে কিছু কুচক্রী মহল ব্যপকভাবে ইয়াবাসহ অনান্য মাদক ছড়িয়ে দিচ্ছে যুব সমাজের মধ্যে।সাবেক ও বর্তমান মাদক ব্যবসায়ীরা যখন যে সরকার থাকে তাদের উচ্ছিষ্ট কিছু নেতাদের মাধ্যমে নির্বিঘ্নে ব্যবসা করার জন্য।এই উচ্ছিষ্ট নেতারা আবার মাদক ব্যবসায়ীদের আইনশৃঙ্খলা বাহেনী আটক করলে তাদের ছাড়িয়ে নিতে টাকা মধ্যেমে লিয়াজো করে।এভাবেই তারা একটি শক্ত নেটওয়ার্ক তৈয়ারি করে যাতে সহজেই এই ব্যবসা করে লাভবান হওয়া যায়।
এইসব একটা দিক হলেও মাদক প্রতিরোধে দেশের নানাবিধ এলাকার এক শ্রেণীর যুব সমাজ নিজ উদ্যোগে মাদক নির্মুল এর চেষ্টা করছে। আমার খুবই ভালো লাগছে বিগত কিছুদিন ছিটপাড়া যুব কল্যাণ সংঘ, কায়েত পাড়া বন্ধু মহল, মধ্যে পাড়ারসহ কিছু সংগঠন ও বেক্তিগত উদ্যোগে এই মাদকের বিরুদ্ধে আওয়াজ তুলছে।সবাই বুঝতে পেরেছেন যে, এই ক্ষতিকর মাদক শুধু আইন শৃঙ্খলা বাহেনীর একার দ্বারা নিয়ন্ত্রণ সম্ভব নয়, আমারা যুব সমাজসহ সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে।আর বিভিন্ন মহল থেকে নিন্মরুপ সচেতনামূলক ব্যবস্থা নেওয়া উচিৎ-
১.সন্তানের প্রতি নজরদারি
প্রথমত, পিতা মাতাদের উচিত তাদের সন্তানের প্রতি সতর্ক দৃষ্টি রাখা। তাদের আচরণে কোন পরিবর্তন আসছে কিনা, সে কোন বন্ধুদের সাথে মিশছে, এসব বিষয়ে খেয়াল রাখতে হবে। কারন, বেশিরভাগ তরুন তরুনীরা সঙ্গদোষের কারণে মাদকের প্রতি আসক্ত হয়ে পড়ে।
২.মাদকের ক্ষতিকর দিক সম্পর্কে শিক্ষা
ছোটবেলা থেকেই সন্তানদের মাদকের ভয়াবহতা সম্পর্কে জানাতে হবে। তাদেরকে মাদকের ক্ষতিকর দিক, মাদক আসক্তির ঝুঁকি এবং মাদকাসক্তির পরিণতি সম্পর্কে সচেতন করতে হবে।
৩.সুস্থ পরিবেশ তৈরি
পরিবারে একটি সুস্থ ও সুন্দর পরিবেশ তৈরি করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সন্তানদের ভালোবাসা ও নিরাপত্তা অনুভব করাতে হবে। তাদের সাথে খোলামেলা আলোচনা করতে হবে এবং তাদের মনের কথা শুনতে হবে। তাহলে আপনি খুব সহজে বুঝতে পারবেন যে, আপনার পরিবারের তরুন তরুনীরা মাদকে আসক্ত হচ্ছে কিনা।
৩. বিকল্প কার্যক্রমে উৎসাহিত করা
খেলাধুলা, শিল্পকলা, সাহিত্য, স্বেচ্ছাসেবক কার্যক্রম ইত্যাদিতে সন্তানদের অংশগ্রহণের জন্য উৎসাহিত করতে হবে। এসব কার্যক্রম তাদেরকে ব্যস্ত রাখবে এবং মাদকের প্রতি আকর্ষণ কমাতে সাহায্য করবে।
৪.মাদকাসক্তির ক্ষেত্রে সহায়তা
পরিবারের কেউ যদি মাদকাসক্ত হয়ে পড়ে, তাহলে তাকে লজ্জা না দিয়ে বরং সাহায্য করতে হবে। তাকে মাদকমুক্ত কেন্দ্রে ভর্তি করিয়ে চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হবে। মনে রাখতে হবে, মাদকাসক্তি কোনো জটিল রোগ কিংবা লজ্জার বিষয় নয়।
৫.মাদক প্রতিরোধে সামাজিক ভূমিকা
মাদকের বিষাক্ত ছোঁয়া আজকের সমাজের এক বেদনাদায়ক বাস্তবতা। এই অভিশাপ ব্যক্তি, পরিবার এবং সমাজের সামগ্রিক ভিত্তিকে ক্ষয় করে ফেলছে। এই ভয়াবহতা মোকাবেলায়, আমাদের সকলের একসাথে কাজ করতে হবে। তাই আমাদের সবাইকে এক হয়ে সামাজিক ভাবে মাদক প্রতিরোধের জন্য কাজ করতে হবে।
৬.গণসচেতনতা বৃদ্ধি
মাদকের ক্ষতিকর দিক সম্পর্কে মানুষকে সচেতন করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়, সামাজিক অনুষ্ঠান এবং গণমাধ্যমে মাদকের বিরুদ্ধে বার্তা ছড়িয়ে দিতে হবে। আকর্ষণীয় স্লোগান, কার্টুন, নাটক এবং গানের মাধ্যমে এই বার্তা জনগণের কাছে পৌঁছে দিতে হবে।
৭.সহায়তা ও পুনর্বাসন
মাদকাসক্ত ব্যক্তিদের কে সমাজের বোঝা হিসেবে না ভেবে তাদের সুস্থ করে তোলার জন্য পদক্ষেপ গ্রহণ করা উচিত। তাদের জন্য পুনর্বাসন কেন্দ্র স্থাপন করা, থেরাপি ও কাউন্সেলিং প্রদান করা এবং সামাজিক ভাবে পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা জরুরি। সরকার, বেসরকারি প্রতিষ্ঠান এবং স্বেচ্ছাসেবক সংগঠন একসাথে কাজ করে এই লক্ষ্য অর্জনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
৮.মাদক সরবরাহ নিয়ন্ত্রণ
মাদকের সহজলভ্যতা রোধ করার জন্য আইন প্রয়োগকারী সংস্থা গুলো কে আরও কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। মাদক পাচার ও বিক্রির বিরুদ্ধে কঠোর অভিযান চালানো এবং আইনের আওতায় এনে অপরাধীদের শাস্তি প্রদান করতে হবে। সীমান্তে নজরদারি বৃদ্ধি এবং মাদক চোরাচালানের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক সহযোগিতা জোরদার করাও গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়।
৯.নৈতিক শিক্ষা
নৈতিক মূল্যবোধের শিক্ষা মাদক প্রতিরোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। শিশুদের ছোটবেলা থেকেই সৎ, ন্যায়পরায়ণ এবং জ্ঞানপিপাসু হওয়ার শিক্ষা দিতে হবে। পরিবার, স্কুল এবং সমাজের সকলেরই এই দায়িত্ব পালন করতে হবে।
আমাদের সবাইকে মনে রাখতে হবে যে, শুধু মাদক প্রতিরোধের উপায় জানলেই হবেনা, বরং সবাইকে একসাথে কাজ করতে হবে।যারা মাদকসেবী তাদের ঘৃণা বা কঠোর না হয়ে বুঝিয়ে-শুনিয়ে যত্নশীল হয়ে তাদের মাদক থেকে দূরে রাখতে হবে।আর যারা মাদক ব্যবসায়ী ও রাজনৈতিক শেল্টার দাতা তাদের প্রতি সর্বত্র কঠোর হতে হবে আইনশৃঙ্খলা বাহেনীর ও সমাজের।
যদিওবা মাদকের বিরুদ্ধে লড়াই করা একটি দীর্ঘমেয়াদী প্রক্রিয়া। তবে আমাদের সকলকে অবশ্যই ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে। যেন আমরা আমাদরে সমাজকে এই অভিশাপ থেকে মুক্ত করতে পারি। সেজন্য আমাদের সবাইকে সচেতনতা বৃদ্ধি, সহায়তা প্রদান, সরবরাহ নিয়ন্ত্রণ এবং নৈতিক শিক্ষা বৃদ্ধি করতে হবে।একটি রাস্ট্র ও সমাজ গঠনে তারুণ্য যে কি পরিমাণ শক্তি তা আমরা নানান জায়গায় দেখেছি, কিছুদিন আগেইতো আমরা ৫ই আগস্টের বিপ্লবও দেখেছি।তাই এই বাংলাদেশকে গড়তে মাদকমুক্ত তারুণ্যই হতেই হবে।
লেখক-- রনি আজিম
১ ঘন্টা ৪৯ মিনিট আগে
২ ঘন্টা ২১ মিনিট আগে
২ ঘন্টা ৩৬ মিনিট আগে
৩ ঘন্টা ৩১ মিনিট আগে
৪ ঘন্টা ৩০ মিনিট আগে
৫ ঘন্টা ৫৩ মিনিট আগে