◾ তুষার মাহমুদ
লাখো শহীদের রক্ত দিয়ে লিখা বাংলাদেশের ইতিহাস এবং বাংলাদেশ ছাত্রলীগের ইতিহাস এক ও অভিন্ন।জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এর হাত ধরে ৪ঠা জানুয়ারি ১৯৪৮ সালে দক্ষিণ এশিয়ার সর্ববৃহৎ এবং সর্বপ্রাচীন এই ছাত্র সংগঠনের যাত্রা শুরু।
১৯০ বছরের ব্রিটিশ শাসন-শোষণের অবসান ঘটে নতুন আশা ও প্রত্যাশা নিয়ে ভারতবর্ষের শুভ সূচনা হয়।এই শুভ সূচনা খুব বেশিদিন টিকে থাকেনি।জাতিগত বিভেদের হেতু দ্বিজাতিতত্ত্বের ভিত্তিতে তৈরি হয় হিন্দুস্থান এবং পাকিস্তান।পাকিস্তান ছিল দুটি অংশে বিভক্ত- পশ্চিম পাকিস্তান আর পূর্ব পাকিস্তান। বর্তমান বাংলাদেশ ছিল পূর্ব পাকিস্তানের অন্তর্ভুক্ত। পাকিস্তান সৃষ্টির মধ্য দিয়েও শাসন-শোষণের হাত থেকে রেহাই পায়নি এই ভূখণ্ডের মানুষ।অসম্ভব স্বেচ্ছাচারী নিপীড়নের মাধ্যমে পাকিস্তানী শাসকেরা রাষ্ট্র পরিচালনা করেছে।নিজ ভূখণ্ডের মানুষদের সুবিধা দিয়ে দিনের পর দিন বঞ্চিত করে রাখে এই ভূখণ্ডের মানুষদেরকে। পশ্চিম পাকিস্তান কর্তৃক পূর্বপাকিস্তানের মানুষের উপর চরম আঘাত হানে যখন তারা এদেশের মানুষের মায়ের ভাষা বাংলাকে বাদ দিয়ে তাদের নিজস্ব ভাষা উর্দুকে রাষ্ট্র ভাষা করার প্রয়াস চালায়।।কিন্তু এদেশের ছাত্র সমাজ এই অপপ্রয়াসের তীব্র বিরোধিতা করে।বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সময়ের প্রয়োজনে ছাত্রদের নিয়ে একটি সংগঠন গড়ে তোলেন যার নাম হয় পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম ছাত্রলীগ।সময়ের পরিক্রমায় অসাম্প্রদায়িক চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে এর নাম হয় বাংলাদেশ ছাত্রলীগ।
১৯৪৮ সালের ৪ জানুয়ারি বাংলাদেশ ছাত্রলীগ প্রতিষ্ঠার পর সর্বপ্রথম মাতৃভাষা বাংলার জন্য সংগ্রাম করেছিল। আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের ভূমিকা ছিল। ১৯৫৪ সালের যুক্তফ্রন্ট নির্বাচনে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান ছাত্রলীগের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৫৪ সালের যুক্তফ্রন্ট নির্বাচনে সর্বকনিষ্ঠ মন্ত্রী ছিলেন, যাতে ছাত্রলীগ বঙ্গবন্ধুর ভ্যানগার্ড ছিল। ১৯৬২ সালের শিক্ষা আন্দোলনে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের অগ্রণী ভূমিকা ছিল।শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৬৬ সালের ৬ দফা দাবি দিয়েছিলেন, যা ছিল বাঙালি জাতির মুক্তির সনদ। এর পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশের স্বাধীনতার আন্দোলন বেগমান হয়। তৎকালীন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের আন্দোলনে বঙ্গবন্ধুকে অনুপ্রেরণা যুগিয়েছিল।
১৯৬৯ সালে ঐতিহাসিক গণঅভ্যুত্থানে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান ছাত্রলীগের ঐতিহাসিক ভূমিকা ছিল। বাংলাদেশের স্বাধীনতার জন্য পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ১৯৬৯ সালে বাংলার ছাত্রসমাজ সারাদেশে দুর্বার গণআন্দোলন গড়ে তোলে, যা গণঅভ্যুত্থানে রূপ নেয়। তৎকালীন ছাত্রলীগ নেতা তোফায়েল আহমেদ বাংলার ছাত্র সমাজের পক্ষ থেকে শেখ মুজিবুর রহমানকে ‘বঙ্গবন্ধু’ উপাধি দেন, যা ১৯৭১ সালের মহান স্বাধীনতা যুদ্ধের গতিকে ত্বরান্বিত করে।১৯৭০ সালের নির্বাচনে তৎকালীন ছাত্রলীগের ভূমিকা ছিল উল্লেখযোগ্য। তখন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভ্যানগার্ড হিসেবে ছাত্রলীগ কাজ করত। সারা বাংলাদেশে পাকিস্তানের অপশাসনের বিরুদ্ধে দুর্বার গণআন্দোলন গড়ে তুলে বাঙালি জাতির অবিসংবাদিত নেতা জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নির্বাচিত করতে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে ছাত্রলীগ ভূমিকা পালন করে।
১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে ছাত্রলীগের হাজার হাজার নেতাকর্মী শহীদ হয়। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণে ছাত্রলীগের নেতৃত্বে সারা বাংলাদেশে ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ গঠিত হয়। নূরে আলম সিদ্দিকী, তোফায়েল আহমেদ-সহ তৎকালীন ছাত্রলীগ নেতারা ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ গঠন করেন। ছাত্রলীগের নেতৃত্বে প্রতিটি জেলায়, উপজেলায়, ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড পর্যায়ে ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ গঠিত হয়। তৎকালীন ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের নেতারা স্বাধীনতাযুদ্ধে প্রত্যক্ষভাবে অংশগ্রহণ করেছিল।
জাতিকে স্বাধীনতা যুদ্ধে উদ্বুদ্ধ ও যুক্ত করার ক্ষেত্রে ছাত্রলীগের অবদান অনস্বীকার্য। ছাত্রলীগের বহু নেতাকর্মী যুদ্ধে শহীদ হন।
এছাড়া স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলন, ১/১১ এর সময় শেখ হাসিনাসহ ছাত্র-শিক্ষকদের মুক্তির দাবিতে গণ-আন্দোলন গড়ে তুলেছিল বাংলাদেশ ছাত্রলীগ। ২০০৮ সালে নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামীলীগের নিরঙ্কুশ বিজয় অর্জনে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে মাঠে কাজ করেছে।২০১৪ সালে বিএনপি জামাত জোট সরকারের নৈরাজ্য ও তাদের দ্বারা অগ্নি সন্ত্রাস রুখতে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ শেখ হাসিনার বিশ্বস্ত ভ্যানগার্ড হিসেবে মাঠে কাজ করেছে এবং নির্বাচনে জয় লাভ করেছে।২০১৮ সালে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামীলীগের ব্যাপক জনপ্রিয়তা এবং নিরঙ্কুশ বিজয়ের লক্ষ্যে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা জনমত এবং সাধারণ মানুষকে উদ্বুদ্ধ করেছে।
২০২০ সালে ছাত্রলীগ কোভিড-১৯ প্রতিরোধে সচেতনতামূলক কার্যক্রম পরিচালনা করে।এর মধ্যে ছিল দরিদ্র মানুষদের মাঝে ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ,মোবাইল ফোনে চিকিৎসকদের স্বাস্থ্যসেবা, অসুস্থ মানুষের বাড়িতে ওষুধ পৌঁছে দেওয়া, পবিত্র রমজানের ইফতার,বিনা পয়সায় অ্যাম্বুলেন্স সার্ভিস চালু ইত্যাদি। ক্যাম্পাস, মসজিদ, বাজার ও মোড়ে মোড়ে হাত ধোয়ার জন্য সাবান ও পানির ব্যবস্থাও করা হয়েছে বিভিন্ন স্থানে। এছাড়া দেশের বিভিন্ন স্থানে কৃষকদের কষ্টের ধান যাতে মাঠেই নষ্ট না হয় তার পরিপ্রেক্ষিতে বিনামূল্যে ধান কেটে দিয়েছেন বিভিন্ন অঞ্চলের নেতা-কর্মীগণ।এছাড়াও মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনার ঘোষিত স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মানে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ স্মার্ট সারথি হয়ে কাজ করে যাবে বলে প্রত্যয় ব্যক্ত করেছে এবং সে লক্ষ্যে কাজ শুরু হয়েছে।
বহু আন্দলোন ও সংগ্রামের পথ পাড়ি দিয়ে, এদেশের ইতিহাস ও ঐতিহ্যকে সমৃদ্ধ করে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ ৭৫ বছরে পদার্পণ করেছে।বয়স বাড়ার সাথে সাথে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ হয়ে উঠছে আরো তরুণ,আরো দূর্দম, আরো দুর্বিনীত।
লেখক
তুষার মাহমুদ
সভাপতি
বাংলা বিভাগ ছাত্রলীগ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়।
১৯ ঘন্টা ১০ মিনিট আগে
৫ দিন ৪ ঘন্টা ৪৫ মিনিট আগে
৭ দিন ১২ ঘন্টা ৪৭ মিনিট আগে
১৪ দিন ৪৪ মিনিট আগে
১৪ দিন ১৭ ঘন্টা ৪২ মিনিট আগে
১৫ দিন ১৫ ঘন্টা ১৪ মিনিট আগে
১৬ দিন ১৬ ঘন্টা ২৭ মিনিট আগে
১৯ দিন ২২ ঘন্টা ৪৪ মিনিট আগে