ঝিনাইগাতীতে অতিরিক্ত ভাড়া, একটি পরিবহনকে জরিমানা আগামীকাল পবিত্র ঈদুল আযহা মধুপুর বাস ও মাহিন্দ্র মুখোমুখি সংঘর্ষে চালকসহ দু'জন নিহত পরিবেশ দিবসে কিশোরীদের উদ্যোগে বৃক্ষরোপণ চৌদ্দগ্রামে শহীদ জামশেদের পরিবারকে জামায়াতের ঈদ উপহার মোংলায় ২ হাজার কেজি নিষিদ্ধ পলিথিন ও নেটজাল জব্দ ঢাকা-টাঙ্গাইল-যমুনা সেতু মহাসড়কে ৩০ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে যানজট ঈদুল আজহার শুভেচ্ছা জানিয়েছেন "বায়েজিদ হোসেন পিয়াস" লালপুরে জিএসডিও কুরআনের ছবক গ্রহণ বিনামৃল্যে কুরআন ও টুপি বিতারন কুরবানী | এস. এ. বিথী রহমান সৌদির সঙ্গে মিল রেখে ইসলামপুরের বিভিন্ন গ্রামে আজ ঈদ উদযাপন কুষ্টিয়ায় সেনা অভিযানে সন্ত্রাসী লিপটন ও তার তিন সহযোগী আটক ত্যাগের মহিমায় উজ্জীবিত হোক মুসলমানদের জীবন- ইঞ্জিনিয়ার ইসমাইল হোসেন জয়পুরহাটে সেনাবাহিনীর মাদকবিরোধী অভিযানে বিপুল পরিমাণ মাদক উদ্ধারসহ গ্রেপ্তার ৫ মধ্যপ্রাচ্যের সঙ্গে মিল রেখে সরিষাবাড়ীর ১৬ গ্রামে ঈদুল আজহা উদযাপন ১০ কোটি টাকার বৈধ বালু মহাল ঘিরে প্রকাশ্যে স্পিডবোর্ডে অস্ত্রের মহড়া দেশবাসীকে ঈদুল আযহার শুভেচ্ছা জানালেন ফরিদ উদ্দীন চৌধুরী সুনামগঞ্জের বিভিন্ন গ্রামে ঈদ উপহার প্রদান করেছে আব্দুল্লাহ ফাউন্ডেশন শেরপুর সরকারি কলেজ ছাত্রদল: ১৫ বছর পর নতুন কমিটি, ফিরে আসার আনন্দে উল্লাসিত নেতাকর্মীরা দৌলতদিয়া - পাটুরিয়া নৌরুটে ঘরমুখো মানুষের চাপ বাড়লেও নেই ভোগান্তি

স্মৃতিতে অম্লান শৈশবের সেই মাতৃভাষা

দেশচিত্র নিউজ ডেস্ক

প্রকাশের সময়: 12-02-2023 03:23:27 pm

ছবি: লেখক


◾ মোঃ রোমান মিয়া


শৈশবের সেই সোনালি সময়গুলো আমার জীবন থেকে বিদায় গ্রহণ করলেও, সেই শৈশবের আবেগ মাখা স্মৃতি গুলো আমার হৃদয়ে আজও চির অম্লান। আমার শৈশব কেটেছে ময়মনসিংহ জেলার, গফরগাঁও থানার লাউতৈল গ্রামে। গ্রাম্য পরিবেশে বেড়ে ওঠার কারণে প্রকৃতির সাথে আমার সম্পর্ক ছিল নিবিড়। তাই আমার গ্রামে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে আমার শৈশবের স্মৃতিবেলা।আমার শৈশবের স্মৃতি গুলোর মধ্যে সবচেয়ে আনন্দময় স্মৃতি হলো আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস একুশে ফেব্রুয়ারি। আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারী আমি কি ভুলিতে পারি! এ যেন সত্যি ভুলিবার নয়।এ যেন আমার হৃদয়- মাঝারে চির অম্লান।


বাংলা আমাদের মাতৃভাষা। আমাদের সুখ, দুঃখ, অনুভূতি প্রকাশের প্রধান মাধ্যম এই বাংলা ভাষা। আজ যেমন করে আমরা বাংলা ভাষায় আমাদের মনের ভাব প্রকাশ করতে পারছি, তা হয়তো সম্ভব হতো না। যদি না বাংলার দামাল ছেলেরা তাদের বুকের তাজা রক্ত ও প্রতিবাদের মাধ্যমে পাকিস্তানি শাসকদের বিরুদ্ধে রুখে না দাঁড়াতো। বাংলা ভাষাকে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে স্বীকৃতি পেতে যে কয়জন তাদের বুকের তাজা রক্ত ঢেলে দিয়েছেন তাদের একজন ভাষা শহীদ আব্দুল জব্বার।


আব্দুল জব্বার ১০ অক্টোবর ১৯১৯ বা বাংলা ২৬ আশ্বিন ১৩২৬ বঙ্গাব্দ ময়মনসিংহ জেলার গফরগাঁও উপজেলার পাঁচুয়া গ্রামে জন্ম গ্রহণ করেন। তিনি ১৯৫২ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি তার ক্যান্সার আক্রান্ত শাশুড়িকে চিকিৎসা করানোর জন্য তাঁর শ্বাশুড়ি কে ঢাকা মেডিক্যালে ভর্তি করান। তিনি শাশুড়িকে হাসপাতালে ভর্তি করে মেডিকেলের ছাত্র হোস্টলে রাত্রি যাপন করে দিনে শাশুড়িকে সেবা করতে চলে আসতেন।


তখন ঢাকা মেডিকেল, বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে বাংলা ভাষাকে রাষ্ট্র ভাষার দাবীতে ছাত্র জনতা সোচ্চার। শ্লোগানে শ্লোগানে মুখরিত ঢাকার রাজপথ।ভাষা শহিদ আব্দুল জব্বার ২১ ফেব্রুয়ারি শাশুড়ির জন্য মেডিক্যালের গেইটের বাইরে কিছু ফল কিনতে গেলেন। ওই সময় তিনি দেখেন রাষ্ট্র ভাষার দাবী বেশ কিছু ছাত্র-জনতা ব্যানারসহ সমবেত হয়েছে এবং বাংলাকে রাষ্ট্র ভাষার দাবীতে অনবরত শ্লোগান দিয়ে যাচ্ছে। আব্দুল জব্বার আর স্থির থাকতে পারেনি তিনি অসুস্থ শাশুড়ির জন্য ফল নেওয়ার কথা ভুলে গিয়ে ব্যানার হাতে মিছিলের অগ্রভাগে এসে দাঁড়ান। ওই সময়ে পুলিশের এলোপাতাড়ি গুলাগুলি শুরু হয়, এতে আব্দুল জব্বার গুলিবিদ্ধ হয়ে পড়েন। পরবর্তীতে তাকে গুরুতর আহত অবস্থায় ঢাকা মেডিক্যালে নেওয়া হলে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে ওইদিন রাতে তিনি মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন।



ভাষা শহিদ আব্দুল জব্বার কে আজিমপুর কবরস্থানে সমাহিত করা হয়।তাঁকে আজিমপুর কবরস্থান সমাহিত করা হলেও,শহীদ আবদুল জব্বারের স্মৃতি রক্ষার্থে, তাঁর নিজ গ্রামে শহিদ মিনার নির্মাণ এবং পরবর্তীতে ২০০৮ সালে ভাষা শহীদ আবদুল জব্বার গ্রন্থাগার ও স্মৃতি জাদুঘর গড়ে তোলা হয় এবং গ্রামের নামকরণ করা হয় জব্বার নগর নামে।


ভাষা শহীদ আব্দুল জব্বারের বাড়ি আমাদের পাশের গ্রামে হওয়ায়। একুশে ফেব্রুয়ারি আসলেই যেন আমাদের সহপাঠীদের আনন্দের সীমা থাকতো না। বাড়িতে যেন মেহমানের হিরিক পরে যেত।একুশে ফেব্রুয়ারী কে ঘিরে আমাদের পরিকল্পনার শেষ থাকতো না। সবার প্রথমে বারটা এক মিনিটে শ্রদ্ধানিবেদন করেন স্থানীয় সাংসদ। তারপর একে একে শ্রদ্ধা নিবেদন করে থাকেন। আমরা বিশে ফেব্রুয়ারী রাতে ফুল সংগ্রহ করে রাখতাম যেন সকাল সকাল স্কুলে যেতে পারি। প্রতিদিনের মতো ঐদিনেও আমরা স্কুল ড্রেস পরে স্কুলে যেতাম,এবং ফুল দিয়ে পুস্পস্তবক তৈরি করে লাইন বেধে স্যার ম্যামদের নির্দেশনায় পায়ে হেঁটে হেঁটে জব্বান নগর গিয়ে সকলে মিলে ভাষা শহীদের স্মরণে শ্রদ্ধা নিবেদন করতাম।তারপর ভাষা শহীদ আব্দুল জব্বার গ্রন্থাগারে গিয়ে কেউ বই পড়তো,কেউ বা জাদুঘরে গিয়ে ভাষার বিভিন্ন প্রদর্শনীর সাথে ছবি তুলতো।একুশে ফেব্রুয়ারি উপলক্ষ্যে গ্রন্থাগার ও জাদুঘর থাকে উন্মুক্ত তাই সকলে সেখানে ঘুরে বেড়াতে পারতো।


একুশে ফেব্রুয়ারি কে কেন্দ্র করে, ভাষা শহিদদের স্মরণে জব্বার নগরে বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন হয়ে থাকে । অনুষ্ঠানের প্রথমে সকল শহিদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করা হয়।তারপর অনুষ্ঠানে থাকে একক গান, দলীয় গান, নৃত্য ও অভিনয়। অনুষ্ঠান শেষে পরিচালিত হতো মঞ্চ নাটক। যা সকল মানুষের ভাষার প্রতি ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ ফুটে উঠতো। 


জব্বার নগরে সে দিন মানুষের ঢল থাকায়, সেখানে গড়ে উঠতো মেলা, ভিন্ন ধরনের খাবার, রং বেরঙের জামা কাপড়, নানা ধরনের মাটির তৈরি জিনিসপত্র। আমরা বন্ধুরা মিলে নানা ধরনের খাবার খাইতাম, কেনাকাটা করতাম। সন্ধায় বাড়ি ফিরে আসতাম বাংলা লোকসংগীত গেয়ে গেয়ে। তাও যে আমাদের আয়োজনের শেষ ছিলো না। বাড়িতে ফিরে বাইশে ফেব্রুয়ারী আয়োজন করতাম এলাকার ছোট বড় সবাই মিলে মিনি ক্রিকেট টুর্নামেন্ট। যে খেলাকে কেন্দ্র করে ছোট-বড় সবার সাথে বন্ধন দৃঢ় হতো। এভাবেই কাটছে সময়, স্মৃতিতে অম্লান হয়ে যায় আমাদের প্রিয় মাতৃভাষা। ভালোবাসি এই মাতৃভূমিকে, ভালোবাসি এই মাতৃভাষাকে।



লেখক,

মোঃ রোমান মিয়া

গফরগাঁও , ময়মনসিংহ। 

আরও খবর