◾ মোতালেব হোসাইন
মাটি ও মানুষের দেশ বাংলাদেশ। এদেশের উর্বর মটিতে সোনার ফসল ফলে। কৃষিপ্রধান এই দেশে জাতীয় উন্নতি ও সমৃদ্ধির জন্য কৃষি ব্যবস্থার আধুনিকায়ন এখন সময়ের দাবি, আজ বিশ্ব অর্থনীতির দ্বিতীয় পরাশক্তি চীন। তাদের শক্তিশালী অবস্থানে কৃষির যে ভূমিকা রয়েছে, তা চীনাদের একটি প্রবাদের মাধ্যমে বোঝা যায়। আর সে প্রবাদটি হলো ‘জাতীয় উন্নতি ও সমৃদ্ধি হলো গাছের মতো' কৃষি তাঁর মূল শিল্পতার শাখা হলো কৃষি আর বাণিজ্য হলো তাঁর পাতা। মূলে যদি ক্ষত দেখা যায় তা সব গাছকে ধ্বংস করে। কৃষিকে চীনারা যেভাবে ভেবেছে বাংলাদেশ সেভাবে ভাবতে না পারলেও কৃষির উন্নয়নে নানা পদক্ষেপ নিয়েছে, যা এখন স্পষ্ট।
যদিও বর্তমান সরকার কৃষি উন্নয়নে নানা পদক্ষেপ ইতিমধ্যে হাতে নিয়েছে, দিচ্ছে ভর্তুকি। তবুও যেন কোথায় ঘাটতি রয়েই গেছে। বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের প্রকাশিত তথ্য পর্যালোচনা করে দেখা যায় যে, এক দশক আগেও কৃষিতে জিডিপির অবদান বেশ ভালোই ছিল, কিন্তু তা ক্রমেই কমে আসছে। ২০১০-১১ অর্থবছরে কৃষিতে জিডিপির অবদান ছিল ১৮ দশমিক ১ শতাংশ, যা গত ২০১৯-২০ অর্থবছরে তা কমে এসে দাঁড়ায় ১৩ দশমিক ৪৪ শতাংশ। গত অর্থবছরে (২০২০-২১) অর্থবছরে আরও কমে এসে দাঁড়ায় প্রায় ১২ শতাংশে। এটি আমাদের জন্য দুঃখজনক। এই খাতকে আরো গুরুত্ব দিতে হবে। কারণ বর্তমান বিশ্বের ধনী দেশগুলোর অর্থনৈতিক ইতিহাস দেখলেই বুঝা যায় যে তারা শিল্পে উন্নত হওয়ার আগে কৃষিতে উন্নতি লাভ করেছিলো এবং তারা এখনো আধুনিক কৃষি ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে এগিয়ে যাচ্ছে। তাই এটা সত্যি যে, মান্ধাতা আমলের কৃষিব্যবস্থা আধুনিকায়নের মাধ্যমেই বাংলাদেশের জাতীয় উন্নতি সম্ভব।
যশোরের বিভিন্ন অঞ্চলের কৃষকদের সাথে কথা বলে এবং মাঠ পর্যায়ে তাঁদের কৃষিকাজ গুলো পর্যবেক্ষণ করে জানা যায়,তারা বর্তমানে বিভিন্ন রকমের হর্টিকালচারাল ক্রপ ( বেগুন,লাউ,পাতাকপি,ফুলকপি,সরিষা, পেঁয়াজ, রসুন,পটল,বরবটি) উৎপাদনের ক্ষেত্রে আধুনিক কৃষি প্রক্রিয়া ব্যবহার করার চেষ্টা করছে যার ফলে বর্তমানে অধিক পরিমাণে ফলন পাচ্ছে এবং কৃষক লাভবান হচ্ছে।এমতাবস্থ্ায় তাদেরকে যদি অধিক পরিমাণে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা যায় এবং তাদের মাঝে আধুনিক কৃষি ব্যবস্থাপনা ছড়িয়ে দেওয়া যায়,তবে তারা সমপরিমাণ জমি ব্যবহার করে আরো অধিক পরিমাণে পণ্য উৎপাদন করতে সক্ষম হবে। এ কথা সত্য যে, দেশের ক্রমহ্রাসমান ফসলের জমির বিপরীতে ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার চাহিদার যোগান দেয়া অনেক ক্ষেত্রেই সম্ভব হচ্ছে না। যার ফলে বিদ্যমান সীমিত আবাদি জমির সর্বোচ্চ ব্যবহারের প্রয়োজন এবং বিজ্ঞানসম্মতভাবে মাটি, পানি,পরিবেশ, আবহাওয়া উপযোগী কৃষিপণ্য উৎপাদন, গবেষণা এমনকি সার্বিক কৃষি ব্যবস্থাকে ঢেলে সাজানোর দরকার।
এজন্য কৃষি গবেষণায় প্রাপ্ত বিষয় গুলোকে দ্রুততম সময়ে মাঠ পর্যায়ের কৃষকদের মধ্যে পৌঁছে দিতে হবে এবং কৃষকদের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি করে তাদেরকে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে সেগুলো কে যথোপযুক্ত ব্যবহারের উপযুক্ত করে তুলতে হবে। শুধু কৃষি পণ্য উৎপাদন করলেই হবে না, পণ্যগুলোকে যথাযথভাবে প্রক্রিয়াকরণের প্রয়োজন ও এখন সময়ের দাবি। কেননা কৃষকরা যদি কৃষি পণ্য প্রক্রিয়াকরণের মাধ্যমে সেগুলোকে বাজারজাতকরণ করতে না পারে, সংরক্ষণ করে রাখতে না পারে তবে অনেকসময় কম মূল্যে বিক্রি করে দিতে হবে নতুবা পণ্য নষ্ট হবে। যার ফলে কৃষক তথা দেশের জাতীয় অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
বাংলাদেশে উৎপাদিত খাদ্যশস্যের প্রায় ৫০-৬০% নষ্ট হয়ে যায় পোস্ট হারভেস্ট ও প্রক্রিযাকরনের বিভিন্ন পর্যায়ে। আমরা যদি শুধুমাত্র ফলের দিক বিবেচনা করি তাহলে একটি পরিসংখ্যান থেকে দেখতে পাই, বাংলাদেশে কৃষকরা প্রচুর পরিমাণে ফল উৎপাদন করছে কিন্তু ফসল কাটার পর উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ না করার কারণে ফলমূলের প্রায় ২৫ থেকে ৫০ শতাংশ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। আর্থিক দিক থেকে মূল্যায়ন করা হলে মোট লোকসান অর্থনীতিতে একটি উল্লেখযোগ্য ক্ষতি প্রতিফলিত করে। যার মোট মূল্য দাঁড়ায় ৬.১২০ থেকে ৮.১৬০ মিলিয়ন টাকা । এ ধরনের পরিস্থিতি শুধু জাতীয় আয়ই কমায় না, অপুষ্টি ও আর্থ-সামাজিক সমস্যার দিকেও নিয়ে যায়। ফসল কাটার পর লোকসানের প্রধান কারণগুলি হল অনুপযুক্ত ফসল কাটা,বাছাইকরণ ও প্যাকেটজাতকরণ, রুক্ষ হ্যান্ডলিং, দুর্বল পরিবহন এবং স্টোরেজ সিস্টেম।
সরকারী এবং বেসরকারী উভয় খাতকে আরো দক্ষ অবকাঠামো উন্নয়ন বাজার এবং বিতরণ চ্যানেলগুলি অর্জনের জন্য ফসল কাটার পরে সিস্টেমের উন্নতি এবং আধুনিকীকরণের জন্য গবেষণা সম্প্রসারণে প্রচুর প্রচেষ্টা ও বিনিয়োগ করতে হবে। কৃষক, ব্যবসায়ী এবং ভোক্তাদের সুবিধার জন্য বিশেষ করে সরকারি খাতে গবেষণা ও সম্প্রসারণ কার্যক্রম ঘনিষ্ঠভাবে সমন্বয় করতে হবে।
এগ্রো প্রোডাক্ট প্রসেসিং টেকনোলজি ব্যবহার করে দেশে উৎপাদিত কৃষিপণ্যকে উন্নত মানের প্রক্রিয়াকরণের মাধ্যমে দেশের খাদ্য চাহিদা মিটিয়ে বিদেশে রপ্তানি করতে হবে। এতে যেমন বৈদেশিক মুদ্রা অর্জিত হবে তেমন সৃষ্টি হবে নতুন নতুন কলকারখানা, কর্মসংস্থান,কমে আসবে দারিদ্রতার হার এবং দেশের অর্থনীতিতে নিয়ে আসবে আমূল পরিবর্তন।
লেখক: মোতালেব হোসাইন
শিক্ষার্থী, এগ্রো প্রোডাক্ট প্রসেসিং টেকনোলজি বিভাগ।
যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়
১ দিন ৯ ঘন্টা ২২ মিনিট আগে
২ দিন ৯ ঘন্টা ২২ মিনিট আগে
৬ দিন ১৮ ঘন্টা ৫৭ মিনিট আগে
৯ দিন ২ ঘন্টা ৫৯ মিনিট আগে
১৫ দিন ১৪ ঘন্টা ৫৫ মিনিট আগে
১৬ দিন ৭ ঘন্টা ৫৩ মিনিট আগে
১৭ দিন ৫ ঘন্টা ২৫ মিনিট আগে
১৮ দিন ৬ ঘন্টা ৩৮ মিনিট আগে