ঝুঁকি থাকা সত্ত্বেও চট্টগ্রামের পাহাড়ি এলাকায় অবৈধ বসতি গড়ে উঠেছে। ভারি বর্ষণে পাহাড়ের ঘরবাড়ি ধসে প্রতি বছরেই মারা যান অনেকে। মঙ্গলবার (৪ এপ্রিল) থেকে ৬ হাজার ৫শ ৫৮ অবৈধ বসতি উচ্ছেদ অভিযান শুরু করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে পাহাড় ব্যবস্থাপনা কমিটি।
সোমবার (৩ এপ্রিল) বিকালে বিভাগীয় কমিশনারের সম্মেলন কক্ষে পাহাড় ব্যবস্থাপনা কমিটির ২৬তম সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় অবৈধ বসতি উচ্ছেদের কড়া হুঁশিয়ারি দিয়েছেন চট্টগ্রামে পাহাড় ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি ও বিভাগীয় কমিশনার ড. আমিনুর রহমান। তিনি বলেন, উচ্ছেদ করতে গেলে কেউ কেউ বাঁধা দেয়। বাঁধা আসলেও অবৈধ দখলদার উচ্ছেদ করতেই হবে।
অবৈধ বসতিতে সব সুযোগ সুবিধা, গ্যাস, বিদ্যুৎ ও পানি লাইন বন্ধ করতে হবে। বৈধ ঘর না থাকলে কীভাবে এসব সংযোগ পায় সেগুলো খতিয়ে দেখা উচিত বলেও মনে করেন তিনি।
তিনি বলেন, যেভাবেই হোক পাহাড় কাটা বন্ধ করতে হবে। কখন বৃষ্টি হয় জানি না। অবৈধ বসতি থাকাটাই ঝুঁকি। সামান্য বৃষ্টিতেই ধসে পড়তে পারে। সভায় অবৈধভাবে বসবাসকারীদের তালিকাও চান তিনি।
প্রথমবারের মতো পাহাড় ব্যবস্থাপনা কমিটির সভায় যোগ দিয়ে এই কর্মকর্তা বলেন, ‘আমরা ধারাবাহিকভাবে উচ্ছেদ করবো। আজকে এক জায়গায়, কালকে আরেক জায়গায় উচ্ছেদ হবে। ২০০৭ সালে যেসব কারণে পাহাড় ধস ঘটেছিল এবং যেসব সুপারিশ করা হয়েছিল সেগুলো বাস্তবায়নের জোর দেবো। অবৈধ বসতি যেখানেই আছে সেখানে পর্যায়ক্রমে উচ্ছেদ কার্যক্রম চলবে। সার্ভিলেন্স কমিটি করবো।’
পাহাড়গুলো ব্যক্তি মালিকানাধীন কীভাবে হয়েছে তাও জানতে চান তিনি।
চট্টগ্রামের অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার মুহাম্মদ আনোয়ার পাশা বলেন, ‘বর্ষা আসছে। এখানকার পাহাড় বেলে মাটি প্রকৃতির হওয়ায় বৃষ্টি হলেই পাহাড় ধসের শঙ্কা আছে। মনিটরিং কার্যক্রম ও রেসকিউ প্ল্যানের বাইরে অ্যাকশন প্ল্যান নেওয়া দরকার। পাহাড়ে কারা আসলো, কারা গেলো, কারা এখনও আছে তার তথ্য থাকতে হবে।’
সভায় চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান বলেন, ‘তিন মাসে অনেক অভিযান পরিচালনা করেছি। পাহাড় উজাড় হচ্ছে। পরিবেশ অধিদপ্তরও ব্যবস্থা নিচ্ছে। ২-৪টি দপ্তর পাহাড় কাটাকে বলছে ড্রেসিং। কোনটি ড্রেসিং কোনটি পাহাড় কাটা তা চিহ্নিত করা প্রয়োজন। তিনি আরও বলেন, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন পাহাড় কেটে রাস্তা করছে। কাউন্সিলররাও ইচ্ছেমতো পাহাড় কাটছে। ২-১ জন কাউন্সিলর অনেক পাহাড় নষ্ট করেছে। চসিক কোনো রাস্তা করতে ড্রেসি করলেও পাহাড় কাটা যাবে না। সিডিএ’ও বিভিন্ন জায়গায় পাহাড় কাটে। এশিয়ান উইমেন ইউনিভার্সিটির ড্রেসিংয়ের নামে পাহাড় কাটা হয়েছে।’
সভায় পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিচালক হিল্লোল বিশ্বাস বলেন, পাহাড় কাটার বিরুদ্ধে ৮৪টি মামলা হয়েছে।
সভার শুরুতে পাহাড় ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্য সচিব ও অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মাসুদ কামাল বলেন, রেলওয়ের মালিকানাধীন পাহাড়েই সবচেয়ে বেশি পাঁচ হাজার ৩৩২টি পরিবার অবৈধভাবে বসবাস করে। গণপূর্ত বিভাগের মালিকানাধীন বাটালী হিল ও মতিঝর্ণা পাহাড়ে ৮৮টি, জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের পাহাড়ে ১৯৫টি, ১ নম্বর খাস খতিয়ানভুক্ত চার পাহাড়ে ১৭২টি ও ব্যক্তি মালিকানাধীন ১১টি পাহাড়ে ৭১৫টি পরিবার অবৈধভাবে বসবাস করছে। এসব পাহাড়ে বিভিন্ন সময় উচ্ছেদ অভিযান চালানো হয়। কিন্তু আবারও অবৈধ বসবাসকারীরা পাহাড়ে ফিরে যায়।
পিডিবির প্রধান প্রকৌশলী বলেন, অবৈধ বসবাসকারীদের উচ্ছেদের পর কোথাও নিলে অবৈধভাবে বসবাস আরও বাড়বে।
জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী মো. শাব্বির ইকবাল বলেন, ‘জেলা পরিষদের মালিকানাধীন সার্সন পাহাড়ে অবকাঠামো উন্নয়ন কাজ চলছে। আমরা পাহাড় না কেটে পূর্বের অবস্থাতেই উন্নয়ন কাজ করছি। জেলার যেখানেই কাজ চলছে সেখানে বলা আছে কোথাও পাহাড় কাটা যাবে না।’
বিজিবির প্রতিনিধি কর্নেল এহছান বলেন, ‘আমরা সবসময় প্রশাসনের সহায়তার জন্য প্রস্তুত আছি। শুধু নগরে নয়, ৪০০ কিলোমিটার সীমান্তেও সচেতন আছি। যেসব এলাকায় পাহাড় ধসের আশঙ্কা আছে সেখানে সতর্ক থাকছি।’
চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের স্পেশাল ম্যাজিস্ট্রেট মনীষা মহাজন বলেন, ‘মেয়র মহোদয় অবৈধ দখলদার উচ্ছেদের জন্য নির্দেশনা দিয়েছেন। চসিকে অবৈধভাবে বসবাসকারীদের তালিকা করা হয়েছে।’ এসময় বিভাগীয় কমিশনার চসিকের এই প্রতিনিধির উদ্দেশ্যে বলেন, ‘কাউন্সিলররা পাহাড় কাটছে। এগুলো দেখতে হবে।’
রেলওয়ের বিভাগীয় ভূ-সম্পত্তি কর্মকর্তা মাহবুব উল করিম বলেন, ‘উচ্ছেদ কার্যক্রম চালালেও মামলার কারণে করতে পারি না। মতিঝর্ণায় ৫ থেকে ৬ তলা ভবন উঠে গেছে। সেখানে খাড়া পাহাড় আছে। এগুলো উচ্ছেদ করতে গেলে সবাইকে নিয়ে করতে হবে। আমরা দখলদারদের তালিকা জেলা প্রশাসনে জমা দিয়েছি।’
১ ঘন্টা ৪২ মিনিট আগে
৯ ঘন্টা ৪৬ মিনিট আগে
১৩ ঘন্টা ১৩ মিনিট আগে
১৬ ঘন্টা ৮ মিনিট আগে
১ দিন ১০ ঘন্টা ১১ মিনিট আগে
১ দিন ১০ ঘন্টা ১৫ মিনিট আগে
১ দিন ১২ ঘন্টা ১৭ মিনিট আগে
১ দিন ১৩ ঘন্টা ৪০ মিনিট আগে