"নলছিটি পাবলিক লাইব্রেরিতে বাংলা নববর্ষে সাংস্কৃতিক প্রতিভার উন্মেষ" কুবি'র 'এ' ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা শুরু সাংবাদিকের প্রাণনাশের হুমকির প্রতিবাদে সাতক্ষীরায় মানববন্ধন শ্রীমঙ্গলে 'কিডস ইংলিশ জোন' এর শিক্ষার্থীদের মাঝে সনদ ও ক্রেস্ট বিতরণ ঝড়-বৃষ্টি উপেক্ষা করে তজুমদ্দিনে ফিলিস্তিনের পক্ষে গণজোয়ার। জয়পুরহাটে মার্শাল আর্ট কারাতে প্রশিক্ষণার্থীদের মাঝে সার্টিফিকেট ও বেল্ট বিতরণ ইতিহাসের সর্বোত্তম নির্বাচন করবে অন্তর্বর্তী সরকার : প্রধান উপদেষ্টা কুবিতে ‘সি’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা সম্পন্ন যৌথবাহিনীর অভিযানে গাঁজা সহ গ্রেফতার-৩ বসুন্ধরা শুভসংঘ মনপুরা উপজেলা কমিটি গঠন করা হয়েছে একটি দলকে সরিয়ে আরেকটি দলকে বসাতে গণঅভ্যুত্থান হয়নি: নাহিদ বিশ্ব ভেটেরিনারি দিবস উপলক্ষে বিতর্ক প্রতিযোগিতার ফাইনালে মাভাবিপ্রবি ভেতরে পরীক্ষা, বাইরে অপেক্ষা আর উৎকণ্ঠা রামগড়ে গরুর ঘাস খাওয়া নিয়ে সংঘর্ষ, নিহত ১ আহত ৭ কুবিতে ১২টি কেন্দ্রে একযোগে চলছে ‘সি’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা সুন্দরবনে করিম শরীফ বাহিনীর ২ সহযোগী আটক, অস্ত্র ও কার্তুজ উদ্ধার ঈশ্বরগঞ্জে ওয়াইপিএজির ত্রৈমাসিক সভা অনুষ্ঠিত ক্ষমা ও ক্ষতিপূরণের বাংলাদেশের দাবির উল্লেখ নেই পাকিস্তানের ভাষ্যে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে এনসিপির বৈঠ আজ লালপুরে বিএনপির মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত

“বিশ্বকর্মা” জ্ঞান ও কর্মের প্রতীক সচ্চিদানন্দদেসদয়

আজ ৩১ ভাদ্র শনিবার । প্রতিবছর এই সময় আসেন বিশ্বকর্মা আর বিশ্বকর্মা পূজায় মেতে উঠে হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন।ছড়িয়ে দিয়ে যান  দুর্গাপুজোর গন্ধ, একরাশ ভাললাগা। কে এই বিশ্বকর্মা? স্বর্গের কারিগর - শিল্পী ও নির্মাতাদের দেবতা বিশ্বকর্মা। ব্রহ্মাপুত্র বিশ্বকর্মাই গোটা বিশ্বব্রহ্মান্ডের নকশা তৈরি করেন। ঈশ্বরের প্রাসাদের নির্মাতাও বিশ্বকর্মা। দেবতাদের রথ ও অস্ত্রও তৈরি করেছিলেন এই বিশ্বকর্মাই। মহাভারত অনুযায়ী বিশ্বকর্মা হলেন শিল্পকলার দেবতা, সকল দেবতার প্রাসাদ, সকল প্রকার অলঙ্কারের নির্মাতা।  তাঁর চার বাহু, মাথায় রাজার মুকুট, হাতে জলের কলস, বই, দাাড়ির ফাঁস ও অপর হাতে একটি যন্ত্র।ধ্যান ও প্রনাম মন্ত্র অনুসারে দেবশিল্পী বিশ্বকর্মার যে চিত্র পাওয়া যায়- তাতে তিনি একাধারে মহাবীর ও দয়াদি অষ্টগুন যুক্ত । তিনি সৃষ্টির নির্মাতা ও ধাতা । তিনি মান দন্ড ধারী মহাশিল্পী। আবার তিনি মহাযোদ্ধা।  ঋক্ বেদের দশম অদ্যায়ের দুটি শ্লোকে ( ৮১, ৮২) বিশ্বকর্মাকে এ ভবে বর্ননা করা হয়েছে। সেই ভাবার্থ অনুসারে - দ্যুলোক ও ভূলোক উভয়ই প্রথমে জলাকার ও সম্মিলিত ছিল। ক্রমে উভয়েরই চতুঃসীমা যতই বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হয় তারা পরস্পর দূরবর্তী হতে হতে ক্রমে সম্পূর্ণ পৃথক হয়ে যায় । সুধীর বিশ্বকর্মা মনে মনে চিন্তা ও উত্তম রূপে নিরীক্ষণ করে এই বিরাট সৃষ্টি চক্র প্রবর্তন করেন। এই বিশ্ব তাঁরই কর্ম বলে তিনি বিশ্বকর্মা। বেদে যিনি মুখ্যতঃ বিশ্বস্রষ্টা , পুরানে তাঁকে দেখি দেবশিল্পী হিসাবে। তিনি "কর্তা শিল্প সহস্রাণাম" অর্থাৎ তিনি সহস্র শিল্পের অধিকর্তা। তিনি "দেবানাং কার্য্যসাধকঃ" অর্থাৎ দেবতাদের শিল্পের কার্য্য সাধক। বিশ্বকর্মার জন্ম বিষয়ে পুরানে নানা আখ্যানের অবতারনা করা হয়। কোনো পুরান মতে তাঁর জন্ম অষ্টবসুর অন্যতম প্রভাসের ঔরসে দেবগুরু বৃহস্পতির ভগিনী বরবর্ণিনীর গর্ভে। ব্রহ্মবৈবর্ত পুরান মতে প্রজাপতি ব্রহ্মার নাভিদেশ থেকে বিশ্বকর্মার উৎপত্তি বলে লেখা আছে। বেদে এই বিশ্বকর্মাকে অজাত পুরুষ বা সনাতন পুরুষ রূপে বর্ণনা করা হয়েছে। বিশ্বকর্মা নানান শিল্প রচনা করেন। কুবেরের মহল, স্বর্গের দেবসভা, ভগবান শ্রীকৃষ্ণের দ্বারকা পুরী, জগন্নাথের বিগ্রহ, রাবনের স্বর্ণ লঙ্কা, ভগবান শিবের ধনুক, ত্রিশূল- সব এঁনার সৃষ্টি।  বিশ্বকর্মার হস্তে দাঁড়িপাল্লাটা থাকে। দাঁড়িপাল্লাটার দুটি পাল্লা জ্ঞান ও কর্মের প্রতীক। উভয়ের সমতা বজায় রেখেছেন তিনি। এছাড়া তিনি হাতুরী ধারন করেন- যা শিল্পের সাথে জড়িত। তিনি যে শিল্পের দেবতা। হিন্দু শাস্ত্র অনুযায়ী বিশ্বকর্মা দেবতাদের শিল্পী। তিনি দেবশিল্পী নামে পরিচিত। বৃহস্পতির ভগিনী যোগসিদ্ধা তাঁর মাতা এবং অষ্টম বসু প্রভাস তাঁর পিতা। বিশ্বকর্মার বাহন হাতি। বিশ্বকর্মা বৈদিক দেবতা। ঋগবেদ অনুসারে তিনি সর্বদর্শী এবং সর্বজ্ঞ। তাঁর চক্ষু, মুখমন্ডল বাহু ও পদ সবদিকে পরিব্যাপ্ত। তিনি বাচস্পতি, মনোজব, বদান্য, কল্যাণকর্মা ও বিধাতা বিভিন্ন নামে ভূষিত। তিনি ধাতা, বিশ্বদ্রষ্টা ও প্রজাপতি। বিশ্বকর্মার কিছু অমর সৃষ্টি - হিন্দু পুরাণ জুড়ে রয়েছে বিশ্বকর্মার বিভিন্ন নির্মাণ। সত্য, ত্রেতা, দ্বাপর, কলি-চার যুগ ধরে ছড়িয়ে রয়েছে বিশ্বকর্মার অমর কীর্তি। সত্যযুগে বিশ্বকর্মা তৈরি করেছিলেন স্বর্গলোক। এই প্রাসাদ থেকেই দেবরাজ ইন্দ্রের মর্ত্যলোক শাসন করতেন। ত্রেতা যুগে বিশ্বকর্মা সৃষ্টি করেন সোনার লঙ্কা। দ্বাপর যুগে সৃষ্টি করেন দ্বারকা। কলিযুগে বিশ্বকর্মার অমর সৃষ্টি হস্তিনাপুর ও ইন্দ্রপ্রস্থ। পান্ডবদের থাকার জন্য এক টুকরো জমি দিয়েছিলেন ধৃতরাষ্ট্র। সেই প্রস্থে ভাইদের সঙ্গে থাকতেন যুধিষ্ঠির। পরে প্রস্থে রাজধানী নির্মাণের জন্য বিশ্বকর্মাকে আমন্ত্রণ জানান কৃষ্ণ। তৈরি হয় ইন্দ্রপ্রস্থ। এই ইন্দ্রপ্রস্থ ছিল মায়ানগরী। প্রাসাদের মাটি দেখলে মনে হত যেন স্বচ্ছ্ব জল টলটল করছে। পুকুরের স্বচ্ছ্ব জলের মধ্যে দিয়ে আয়নার মতো চকচক করতো মাটি। বিশ্বকর্মা বিশ্বভুবন নির্মাণ করেন। বিষ্ণুর সুদর্শন চক্র, শিব এর ত্রিশূল, কুবের এর অস্ত্র, ইন্দ্রের বজ্র, কার্তিকের শক্তি প্রভৃতি তিনি তৈরি করেছেন। শ্রীক্ষেত্রর প্রসিদ্ধ জগন্নাথ মূর্তিও তিনি নির্মাণ করেছেন। বিশ্বকর্মা পূজা হিন্দুদের একটি ধর্মীয় উৎসব। দেবশিল্পী বিশ্বকর্মার আশিস কামনায় এ পূজা অনুষ্ঠিত হয়। বিশ্বকর্মা চতুর্ভুজ ও গজারুপ। তাঁর আকৃতি অনেকটা কার্তিকের মতো। ভাদ্রমাসের সংক্রান্তির দিন বিশ্বকর্মার পূজা করা হয়। কলকারখানায় বেশ আড়ম্বরের সঙ্গে বিশ্বকর্মার পূজা অনুষ্ঠিত হয়। অন্যান্য দেব-দেবীর মতোই মূর্তি গড়ে অথবা ঘটে-পটে বিশ্বকর্মার পূজা করা হয়।  স্বর্ণকার, কর্মকার , স্থাপত্যশিল্প, মৃৎশিল্প প্রভৃতি শিল্পকর্মে নিযুক্ত ব্যক্তিগণও নিজ নিজ কর্মে দক্ষতা অর্জনের জন্য বিশ্বকর্মার পূজা করে থাকেন। এ সময় প্রত্যেকের ঘরে বিশেষ খাওয়া দাওয়ার  ব্যবস্থা হয় এবং কোথাও কোথাও পূজার পরে ঘুড়ি ওড়ানো হয়। বিশ্বকর্মার রচিত স্থাপত্যশিল্প বিষয়ক গ্রন্থটির নাম "বাস্তুশাস্ত্রম"। "মানসার" এবং "ময়মতম" গ্রন্থে বস্তু ও বাস্তু শব্দদুটিকে সমার্থক হিসাবে ব্যবহার করা হয়েছে। বাস্তু শব্দ থেকে 'বাস্ত' কথাটা এসেছে। ‘বাস্তু’ শব্দের অর্থ পৃথিবী। ব্যাপক অর্থে সমস্ত প্রাণীর আবাসস্থলই বাস্তু। অর্থাৎ, স্রষ্টার যে-কোনো সৃষ্টিই বাস্তু। কাজেই শুধু পরিকল্পিত মনুষ্যগৃহই নয়, দেবতা থেকে শুরু করে পৃথিবীর সমস্ত প্রাণীর আবাস কে বাস্তুু বলে। বাস্তু শাস্ত্রে বাস্তু শব্দের অর্থ ব্যাপক। এই শিল্পকে নির্মাণ শিল্পকে না-বুঝিয়ে পরিকল্পনা, নির্মাণ, চিত্র, অলংকরণ, স্বর্ণ-চর্ম-বয়নশিল্প, অস্ত্রশিল্প, পোতনির্মাণ, মূর্তিনির্মাণ প্রভৃতি ক্ষেত্রে পরিব্যাপ্ত আছে। পুরাণে উল্লেখ আছে, চারটি বেদের মতো চারটি উপবেদও আছে। উপবেদগুলি হল আয়ুর্বেদ, ধনুর্বেদ, গান্ধর্ববেদ এবং স্থাপত্যবেদ। এই উপবেদ স্থাপত্যবিদ্যা বা বাস্তুবিদ্যার রচয়িতা হলেন বিশ্বকর্মা। বলা হয় তিনি বিশ্বব্রহ্মান্ডের প্রধান বাস্তুকার। বিশ্বকর্মা রচিত এই গ্রন্থে গৃহ, মন্দির, গ্রাম, নগর, যন্ত্র প্রভৃতির বর্ণনা দেখতে পাওয়া যায়।  বিশ্বকর্মা তথা বিশ্বকর্মা ঠাকুর। ইনার জন্য সারা বছরে একদিন মাত্র নির্ধারণ করেছেন শ্রমজীবী ভক্তেরা।  ভাদ্র মাসের ৩১ তারিখে ইনি পূজিত হন।  আষাঢ়-শ্রাবণ মাসটা তুমূল বর্যাকাল।এ সময় কোনো কার্য নির্মাণ করা যায় না। ভাদ্র-আশ্বিন মাসে সমস্ত মানুষের হাতে প্রচুর টাকাপয়সা আসে, সেইসঙ্গে বৃষ্টি-বাদলার উৎপাতও নেই। অতএব নির্মাণশিল্পের স্রষ্টা তথা গুরু বিশ্বকর্মাকে স্মরণ করে ঝাঁপিয়ে পড়ো কর্মযজ্ঞে। হস্তীকে দেবশিল্পীর বাহন বলা হয় । বিশ্বকর্মার মন্ত্রে দেবশিল্পীকে "মহাবীর" বলা হয় । হস্তীর মহাবলের কথা সর্বজন সুবিদিত। এই দিকে থেকে হস্তী বাহন হিসাবে যথা উপযুক্ত । এছাড়া হাতী দিয়ে কাজ করানোর কথা অতি প্রাচীন কাল থেকেই চলে আসছে । কর্ম- কর্মেও ফলে শিল্পের বিকাশ । আর বিশ্বকর্মা হলেন শিল্পের দেবতা। তাই কর্মঠ হস্তী তাঁর বাহন । আসুন দেবশিল্পী বিশ্বকর্মার চরণে প্রার্থনা জানিয়ে বলি- ওঁ দেবশিল্পি মহাভাগ দেবানাং কার্য্যসাধক। বিশ্বকর্মন্নমস্তূভ্যং সর্বাভীষ্টপ্রদায়ক।( সচ্চিদানন্দদেসদয়,সাংবাদিক ও মানবাধিকার কর্মী)

Tag
আরও খবর
আনুলিয়ায় একশত পরিবারের

২০ ঘন্টা ৩৬ মিনিট আগে