ইতিহাসের সর্বোত্তম নির্বাচন করবে অন্তর্বর্তী সরকার : প্রধান উপদেষ্টা কুবিতে ‘সি’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা সম্পন্ন যৌথবাহিনীর অভিযানে গাঁজা সহ গ্রেফতার-৩ বসুন্ধরা শুভসংঘ মনপুরা উপজেলা কমিটি গঠন করা হয়েছে একটি দলকে সরিয়ে আরেকটি দলকে বসাতে গণঅভ্যুত্থান হয়নি: নাহিদ বিশ্ব ভেটেরিনারি দিবস উপলক্ষে বিতর্ক প্রতিযোগিতার ফাইনালে মাভাবিপ্রবি ভেতরে পরীক্ষা, বাইরে অপেক্ষা আর উৎকণ্ঠা রামগড়ে গরুর ঘাস খাওয়া নিয়ে সংঘর্ষ, নিহত ১ আহত ৭ কুবিতে ১২টি কেন্দ্রে একযোগে চলছে ‘সি’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা সুন্দরবনে করিম শরীফ বাহিনীর ২ সহযোগী আটক, অস্ত্র ও কার্তুজ উদ্ধার ঈশ্বরগঞ্জে ওয়াইপিএজির ত্রৈমাসিক সভা অনুষ্ঠিত ক্ষমা ও ক্ষতিপূরণের বাংলাদেশের দাবির উল্লেখ নেই পাকিস্তানের ভাষ্যে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে এনসিপির বৈঠ আজ লালপুরে বিএনপির মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত প্রকাশিত সংবাদের প্রতিবাদ বিএনপি ক্ষমতায় গেলে কৃষকদের দিন বদলে কাজ করবে : সাবেক এমপি মোশারফ বিশ্বনাথ উপজেলা প্রেসক্লাবের সাংবাদিকদের সামাজিক ভাবে হেয় ,অন্যায্য ভাবে আল্টিমেটামের তীব্র প্রতিবাদ কেন্দ্র ঘোষিত শ্রমিক যোগাযোগ পক্ষ পালন বাংলাদেশের ট্রান্সশিপমেন্ট বাতিল নিয়ে নিজেদের অবস্থান স্পষ্ট করল ভারত আনুলিয়ায় একশত পরিবারের

বরিশালে পুলিশ কর্মকর্তাকে ঘুস দিতে গিয়ে গাজা মাদক ব্যবয়াসী গ্রেপ্তার।


 বরিশালে মাদক উদ্ধারসহ শীর্ষস্থানীয় ব্যবসায়ীদের গ্রেপ্তারে বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশ নড়েচড়ে বসেছে। ধারাবাহিক অভিযানে গত এক পক্ষকালে অন্তত শতাধিক মাদক ব্যবসায়ীকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। সেই সাথে উদ্ধার করে গাঁজা, ইয়াবাসহ ফেন্সিডিলের ছোট-বড় অসংখ্য চালান। বিশেষ করে চার থানা কোতয়ালি, কাউনিয়া, বন্দর এবং বিমানবন্দর পুলিশ টার্গেট করে চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ীদের পাকড়াও করায় অনেকে মধ্যে চরমাকারে ভীতি কাজ করছে। ফলশ্রুতিতে আতঙ্কগ্রস্ত মাদক বিক্রেতারা অপাতত বাণিজ্য বন্ধ রেখে আত্মরক্ষার্থে গাঢাকা দিয়েছে, আবার কেউ কেউ বরিশালের বাইরে নিরাপদ স্থান খুঁজে নিয়েছে। কিন্তু বিস্ময়কর বিষয় হচ্ছে, পুলিশের এই অধিক তৎপরতার মধ্যেও থেমে নেই কোতয়ালি থানাধীন শহরের ১৩ নং ওয়ার্ডের রিফিউজি কলোনীর আলোচিত মাদকবিক্রেতা ত্রিশোর্ধ্ব রফিকুল ইসলাম ওরফে রিফিউজি রফিক। সে প্রতিনিয়ত বটতলা ফাঁড়ি আওতাধীন এলাকার বাসায় বসে মণকে মণ গাঁজাসহ ইয়াবা বেচা-কেনা করছে।স্থানীয় সূত্র জানায়, সপ্তাহ দুয়েক আগে বরিশাল পুলিশ মাদক উদ্ধার এবং বেচা-বিক্রিতে জড়িতদের গ্রেপ্তারে জোর তৎপরতা শুরু করলে নগরীসহ মেট্রোপলিটনের আওতাধীন অনেক বিক্রেতা আত্মরক্ষার্থে গাঁঢাকা দিলেও রফিককে এলাকাতেই অবস্থান করতে দেখা যায়। এবং সে মাদক বাণিজ্য চালাতে থাকে দেদার। কোতয়ালি মডেল থানা, বটতলা ফাঁড়ি এবং গোয়েন্দা পুলিশের কঠোর নজরদারির মধ্যেও রফিকের রমরমা মাদক বাণিজ্য স্থানীয় সুশীলমহলকে ভাবিয়ে তুলেছে। এক্ষেত্রে অনেকে বটতলা ফাঁড়ি পুলিশের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছে। যদিও ফাঁড়ি পুলিশের ইনচার্জ এইচ এম সজল বলছেন, রিফিউজি রফিক বরিশাল নগরীর আলোচিত মাদক বিক্রেতাদের একজন। একাধিক মাদক মামলার আসামি রফিক পুলিশের টার্গেটে আছে, সে যে কোনো সময় পুলিশের জালে আসতে পারে।অবশ্য স্থানীয় সুধীমহলও আলোচ্চ্য মাদকবিক্রেতা রফিককে গ্রেপ্তারপূর্বক আইনের আওতায় নিয়ে আসার জোর দাবি জানিয়েছে। তাদের অভিযোগ, একজন মাদক বিক্রেতা পুরো আলেকান্দা এলাকার বাতাসে মাদকের বিষ ছড়িয়ে দিয়েছে। তার বিক্রিত মাদক সেবনের ফলে স্থানীয় কিশোর-যুবসমাজের বড় একটি অংশ নেশাগ্রস্ত হয়ে পড়েছে। সুতরাং কালবিলম্ব না করে চিহ্নিত এই মাদকবিক্রেতার বিরুদ্ধে অ্যাকশন নিয়ে রিফিউজি কলোনীসহ আশপাশ এলাকাসমূহকে মাদক মুক্তকরণে শীর্ষ পুলিশ কর্মকর্তা মো. সাইফুল ইসলামের হস্তক্ষেপ কামনা করেছে।অবশ্য পুলিশ কমিশনার এর আগেই বরিশাল নগরীকে মাদকমুক্ত করতে চার থানা ও গোয়েন্দাসহ মাঠপুলিশকে নেশাদ্রব্য বিক্রেতাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থাগ্রহণে কঠোর নির্দেশনা দিয়ে রেখেছেন। সপ্তাহ দুয়েক আগে শীর্ষ পুলিশ কর্তার হুঁশিয়ারির পর মাঠপুলিশ শহরের মাদক বিক্রেতাদের ধরতে চিরুনি অভিযান শুরু করে, যা এখনও চলমান আছে।মাঠপুলিশের একটি সূত্র জানায়, রিফিউজি রফিকের বিরুদ্ধে মাদক সংক্রান্ত অন্তত ৬টির বেশি মামলা আছে। সে ওই এলাকায় একটি বহুতল ভবন নির্মাণ করে দেদারছে মাদক বাণিজ্য চালাচ্ছে। এই মাদক বিক্রেতাকে ধরতে পুলিশের একাধিক টিম মাঠে কাজ করছে, রিফিউজি কলোনীতে প্রবেশের আগেই সে অন্যত্র পালিয়ে যাওয়ায় অভিযানে সফলতা আসছে না। স্থানীয়রাও অভিন্ন তথ্য দিয়ে বলছে, ধুরন্ধর রফিক রফিক মাদক বিক্রিতে বেশ পটু, সে তার বাণিজ্য নির্বিঘ্ন করতে ২০২০ সালে গোয়েন্দা পুলিশের তৎকালীন উপ-পরিদর্শক (এসআই) মহিউদ্দিন মাহিকে ঘুস দিতে গিয়ে বেকায়দায় পড়েছিল। চৌকশ পুলিশ কর্মকর্তা মহিউদ্দিন তাকে গ্রেপ্তার করে এবং পরক্ষণে তার দেওয়া স্বীকারোক্তিতে রিফিউজি কলোনীতে অভিযান চালিয়ে দুই কেজি গাঁজার একটি চালান উদ্ধার করে। এরপরে রফিক জামিনে বেরিয়ে ফের মাদক বাণিজ্য শুরু করে।কোতয়ালি মডেল থানা পুলিশের সহকারি উপ-পরিদর্শক পদমর্যাদার এই কর্মকর্তা বরিশালটাইমসকে জানান, রফিকের বিরুদ্ধে মাদক সংক্রান্ত অর্ধডজন মামলা চলমান আছে। ঘটনাবলীতে তাকে বেশ কয়েকবার গ্রেপ্তার করা হলেও সে জামিনে মুক্ত হয়ে মাদক বাণিজ্য চালাতে থাকে।স্থানীয় একাধিক সূত্র জানায়, পুলিশের চলমান মাদকবিরোধী অভিযানের মধ্যেও রফিক রিফিউজি কলোনীসহ আশপাশ এলাকাসমূহে মাদকের বিস্তার ঘটাচ্ছে। প্রতিদিন তার বাসায় অন্তত ১০০ বেশি লোক যাতায়াত করে এবং তারা সকলে মাদক সংগ্রহের উদ্দেশে আসে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, রফিকের কাছে যারা মাদক নিতে যাচ্ছে তারা অধিকাংশই পার্শ্ববর্তী পাড়া-মহল্লার বাসিন্দা কিশোর-যুবক।অভিযোগ আছে, রিফিউজি কলোনীর একাধিক সিন্দা রফিকের মাদকবিক্রিতে প্রতিবাদ জানিয়ে বেইজ্জতি হয়েছেন। এবং রফিক স্থানীয় একাধিক ব্যক্তি মাদক দিয়ে ফাঁসনোর ভয় দেখানোর ফলে এখন আর তার বিরুদ্ধে কেউ প্রতিবাদ করছেন না। যার দরুন রফিকের বাণিজ্য এখন তুঙ্গে।মাদক বিক্রেতাদের একটি সূত্র জানায়, পক্ষকাল ধরে পুলিশ মাদক উদ্ধার এবং জড়িতদের গ্রেপ্তারে অভিযান শুরু করলে বড় বড় ব্যবসায়ীরা গাঢাকা দেয়। আবার কেউ কেউ বরিশালের বাইরে আত্মগোপন করে আছেন। কিন্তু রফিক রিফিউজি কলোনীতেই অবস্থান করছে, ছড়াচ্ছে মাদকের বিষ।জানা গেছে, রফিকের মাদক বিক্রি সংক্রান্ত তথ্য সংগ্রহে গিয়ে বরিশালের কয়েকজন সংবাদকর্মী হেনস্তা হয়েছেন। রফিক এবং তার স্ত্রী গালিগালাজ করাসহ সংবাদকর্মীদের দেখে নেওয়ার হুমকিও দিয়েছেন। আবার এও শোনা যাচ্ছে, কথিত এক সাংবাদিক তার কাছ থেকে মাসোহারা নিয়ে নেপথ্যে থেকে মাদক বিক্রিতে উৎসাহিত করছে। মূলত এই কারণে সে মাদক বিক্রেতা হয়েও সংবাদকর্মীদের সাথে ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ করার সাহস পাচ্ছে।মাঠপুলিশ বলছে, মাদকবিরোধী অভিযোনে ইতিমধ্যে অনেকে গ্রেপ্তার হয়েছে, হচ্ছে। আবার কেউ কেউ পুলিশের সাথে যোগাযোগ করে আর মাদক বাণিজ্য করবে না জানিয়ে এলাকা ছেড়েছে। কিন্তু রফিক সম্পর্কে যে তথ্য-উপাত্ত্ব মিলেছে, তাতে তাকে আইনের মুখোমুখি হতেই হবে।সূত্রগুলো জানায়, মাদক ইস্যুতে পুলিশ কমিশনার জিরো ট্রলারেন্স ঘোষণা দিয়েছেন, মাঠপুলিশ তা বাস্তবায়নে তৎপর আছে। এরপরেও রফিক রিফিউজি কলোনী মাদকে সয়লাব করে ফেলেছে, এলাকাবাসী এতে অশান্তি থাকলেও কিছু বলতে পারছে না। কারণ কেউ কিছু বলতে গেলেই রফিক তাকে হুমকি-ধামকিসহ মাদক মামলায় ফাঁসানোর ভয় দেখাচ্ছে। ফলে তার মাদক বাণিজ্য রমরমাভাবে চললেও এখন আর স্থানীয়রা প্রতিবাদ করছে না।স্থানীয় সুশীলমহলের তরফে দাবি এসেছে, আলোচিত মাদক বিক্রেতা রফিককে গ্রেপ্তার করে জলদি আইনের আওতায় নিয়ে আসার। এবং এই দাবি বাস্তবায়নে স্থানীয়রা পুলিশ কমিশনারের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেনএক্ষেত্রে পুলিশ কর্তার ভাষ্য হচ্ছে, মাদক ইস্যুতে মাঠপুলিশ জিরো ট্রলারেন্সে কাজ করছে, রফিক কেনো কোনো মাদক ব্যবসায়ীই আইনের উর্ধ্বে নয়। তাদের আজ নতুবা কাল পুলিশের জালে আসতেই হবে।পুলিশ কমিশনারের এমন বক্তব্য প্রতীয়মাণ হয় যে মাঠপুলিশ মাদক উদ্ধার ইস্যুতে দৌঁড়ের ওপর আছে। অবশ্য কোতয়ালি মডেল থানা পুলিশের একাধিক কর্মকর্তাও এই তথ্যের সত্যতা স্বীকার করেছেন। বলছেন, প্রতিদিনই মাদক উদ্ধার অভিযান পরিচালনা করতে হচ্ছে, এতে চিহ্নিত মাদক বিক্রেতারা গ্রেপ্তারও হচ্ছে। তবে বড় বড় ব্যবসায়ীরা পুলিশের ভয়ে পালিয়ে নিরাপদ স্থানে কোথাও আশ্রয় নিয়েছে। আবার রফিকসহ অনেকে বাসাবাড়ি অবস্থান নিয়ে মাদক বাণিজ্য চালাচ্ছে, কিন্তু তাদের শেষরক্ষা হবে না।রিফিউজি রফিক প্রসঙ্গে জানতে চাইলে কোতয়ালি মডেল থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আনোয়ার হোসেন বরিশালটাইমসকে বলেন, এই ব্যক্তির বিরুদ্ধে অসংখ্য মামলা বিচারাধীন আছে। শুনেছি, সে না কী রিফিউজি কলোনীর বাসায় অবস্থান নিয়ে মাদক বাণিজ্য চালাচ্ছে। তাকে ধরতে মাঠপুলিশকে নির্দেশনা দেওয়া আছে।শীর্ষ পুলিশ কর্মকর্তা ও থানার ওসির সাথে কথা বলে যে ধারনা পাওয়া গেলো তাতে গাঁজা রফিক সহসায়ই রেহাই পাচ্ছে না। তবে পুলিশের এত তৎপরতার মধ্যেও রফিককে রোহিত করা যাচ্ছে না। বরং সে পুরো আলেকান্দা এলাকায় মাদকে সয়লাব করে ফেলেছে। সঙ্গত কারণে স্থানীয়রা রফিকের খুঁটির জোর নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে।এমতাবস্থায় বরিশাল মাঠপুলিশ আলোচিত মাদকবিক্রেতা রফিকের বিরুদ্ধে কেমন অ্যাকশন নেয় সেটাই এখন দেখার অপেক্ষা।’ 


আরও খবর