ইতিহাসের সর্বোত্তম নির্বাচন করবে অন্তর্বর্তী সরকার : প্রধান উপদেষ্টা কুবিতে ‘সি’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা সম্পন্ন যৌথবাহিনীর অভিযানে গাঁজা সহ গ্রেফতার-৩ বসুন্ধরা শুভসংঘ মনপুরা উপজেলা কমিটি গঠন করা হয়েছে একটি দলকে সরিয়ে আরেকটি দলকে বসাতে গণঅভ্যুত্থান হয়নি: নাহিদ বিশ্ব ভেটেরিনারি দিবস উপলক্ষে বিতর্ক প্রতিযোগিতার ফাইনালে মাভাবিপ্রবি ভেতরে পরীক্ষা, বাইরে অপেক্ষা আর উৎকণ্ঠা রামগড়ে গরুর ঘাস খাওয়া নিয়ে সংঘর্ষ, নিহত ১ আহত ৭ কুবিতে ১২টি কেন্দ্রে একযোগে চলছে ‘সি’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা সুন্দরবনে করিম শরীফ বাহিনীর ২ সহযোগী আটক, অস্ত্র ও কার্তুজ উদ্ধার ঈশ্বরগঞ্জে ওয়াইপিএজির ত্রৈমাসিক সভা অনুষ্ঠিত ক্ষমা ও ক্ষতিপূরণের বাংলাদেশের দাবির উল্লেখ নেই পাকিস্তানের ভাষ্যে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে এনসিপির বৈঠ আজ লালপুরে বিএনপির মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত প্রকাশিত সংবাদের প্রতিবাদ বিএনপি ক্ষমতায় গেলে কৃষকদের দিন বদলে কাজ করবে : সাবেক এমপি মোশারফ বিশ্বনাথ উপজেলা প্রেসক্লাবের সাংবাদিকদের সামাজিক ভাবে হেয় ,অন্যায্য ভাবে আল্টিমেটামের তীব্র প্রতিবাদ কেন্দ্র ঘোষিত শ্রমিক যোগাযোগ পক্ষ পালন বাংলাদেশের ট্রান্সশিপমেন্ট বাতিল নিয়ে নিজেদের অবস্থান স্পষ্ট করল ভারত আনুলিয়ায় একশত পরিবারের

গান্ধীর শান্তি ও অহিংসার ধর্ম ফেরি করছে যে গান্ধী আশ্রম

গান্ধী আশ্রম



অহিংসা নীতির পুরোধা মহাত্মা গান্ধী আমৃত্যু মানুষের মধ্যে শান্তি ও অহিংসার বাণী প্রচার করে গেছেন। নোয়াখালীর জেলার  সোনাইমুড়ী উপজেলার জয়াগ ইউনিয়নে প্রতিষ্ঠিত গান্ধী আশ্রম ট্রাস্ট মানুষের মধ্যে তার রেখে যাওয়া দর্শন ফেরি করছে। প্রতিষ্ঠার ৭৬ বছর পরও গান্ধী স্মৃতি বিজড়িত এ আশ্রমটি শুধু শান্তি প্রতিষ্ঠা বা সামাজিক সম্প্রীতি বজায় রাখাই নয়, দারিদ্র বিমোচন ও সামাজিক উন্নয়নেও কাজ করে চলেছে। 


যেভাবে গড়ে ওঠে গান্ধী আশ্রম ট্রাস্টঃ

ব্রিটিশের পরাধীনতার শৃঙ্খলমুক্ত হওয়ার প্রাক্কালে অবিভক্ত ভারতে হিন্দু-মুসলিম বিভেদ ক্রমেই প্রবল হয়ে উঠে। ভারতবর্ষের বিভিন্ন স্থানে শুরু হয় ভয়াবহ সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা। কলকাতার পর ১৯৪৬ সালের অক্টোবরে নোয়াখালীতেও শুরু হয় দাঙ্গা। ভয়ঙ্কর সেই দাঙ্গার পর ‘শান্তি মিশনে’ নোয়াখালী ছুটে আসেন মহাত্মা গান্ধী। ১৯৪৬ সালের ৭ নভেম্বর নোয়াখালীর চৌমুহনী রেলস্টেশনে পদার্পণ করে সেখানেই প্রথম জনসভা করেন গান্ধীজি।


১৯৪৬ সালের নভেম্বর থেকে ১৯৪৭ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত চার মাস নোয়াখালী ছিলেন মহাত্মা গান্ধী। শান্তি মিশনের অংশ হিসেবে গান্ধীজি বৃহত্তর নোয়াখালীর ৪৭টি গ্রামে ভ্রমণ ও প্রার্থনা সভার আয়োজন করেন। সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার ক্ষত, ক্ষোভ দূর করতে সব সম্প্রদায়ের মানুষদের সেখানে আমন্ত্রণ জানান তিনি।



শান্তি মিশনের অংশ হিসেবে ১৯৪৭ সালের ২৯ জানুয়ারি নোয়াখালী জেলা সদর থেকে প্রায় ৩০ কিলোমিটার উত্তরে সোনইমুড়ী উপজেলার জয়াগ গ্রামে আসেন গান্ধীজি। তার আগমণ উপলক্ষে স্থানীয় জমিদার এবং নোয়াখালী জেলার প্রথম ব্যারিস্টার হেমন্তকুমার ঘোষ নিজের স্থাবর অস্থাবর সম্পত্তি মহাত্মা গান্ধীকে দান করেন। সেখান থেকেই তিনি ‘অম্বিকা-কালীগঙ্গা দাতব্য ট্রাস্ট’ প্রতিষ্ঠা করেন।


১৯৪৭ সালের আগস্টে ভারতীয় উপমহাদেশ বিভক্ত হয়। ১৯৪৮ সালের জানুয়ারিতে উগ্রবাদী নাথুরাম গডসের হাতে খুন হন মহাত্মা গান্ধী। এরপর কয়েকজন বাদে গান্ধীর অধিকাংশ অনুসারী নোয়াখালী ছেড়ে চলে যান। যারা থেকে যান তাদের ওপর নেমে আসে পাকিস্তান সরকারের কড়াঘাত। অধিকাংশ অনুসারীকেই গ্রেফতার করে কারাগারে পাঠানো হয়। ট্রাস্টের সম্পত্তি লুট করাসহ অধিকাংশ জমি দখল করে স্থানীয় সুযোগসন্ধানীরা। সেসব জমি এখনো বেদখলে রয়েছে।


বাংলাদেশ স্বাধীনতা লাভের পর শান্তি মিশনের টিম ম্যানেজার চারু চৌধুরী কারাগার থেকে মুক্তি পান। স্বাধীন দেশে আবারও আশ্রমটি পুনঃপ্রতিষ্ঠা করার কাজ শুরু করেন।  বাংলাদেশ সরকারের জারি করা গেজেটের পর আশ্রমটি অসাম্প্রদায়িক ও অরাজনৈতিক জনকল্যাণমূলক সংস্থায় পরিণত হয়। এসময় 'আম্বিকা-কালীগঙ্গা দাতব্য ট্রাস্ট' বদলে আশ্রমের নাম রাখা হয় 'গান্ধী আশ্রম ট্রাস্ট'।


ট্রাস্টের পরিচালক রাহা নবকুমারের আলাপ

গান্ধী আশ্রম ট্রাস্টের পরিচালক এবং সিইও রাহা নবকুমার বলেন, ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের জন্মের পর থেকে এই ট্রাস্ট সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি ও শান্তির বার্তা প্রচারের সঙ্গে মানুষের জন্য কাজ করে যাচ্ছে। লক্ষ্মীপুর, ফেনী ও নোয়াখালী তিনটি জেলায় এই ট্রাস্টের যথেষ্ট প্রভাব রয়েছে।


দু'বছর আগে দুর্গাপূজা চলাকালে কুমিল্লা থেকে ছড়িয়ে পড়া সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা চলাকালে লক্ষ্মীপুর জেলার রামগঞ্জ উপজেলায় কয়েকজন দাঙ্গাকারী একটি মন্দিরে হামলা করতে উদ্যত হয়। সেসময় স্থানীয় মুসলিমদের আরেকটি দল তাদের থামায়। 


রাহা নবকুমার আরো বলেন, স্থানীয় গান্ধী আশ্রমের প্রচারিত দর্শনের কারণেই তা সম্ভব হয়েছিল। 


তিনি বলেন, ১৯৯৪ সাল থেকে গান্ধী আশ্রম সফলভাবে ২৭ হাজারের বেশি গার্হস্থ্য সহিংসতা ও পারিবারিক বিবাদের সমাধান করেছে। অসংখ্য নারী এই আশ্রম থেকে আইনি ও আর্থিক সহায়তা পায় বলেও জানান তিনি।

এখানকার অধিকাংশ মানুষ থানা বা আদালতে যাওয়ার পরিবর্তে পারিবারিক সহিংসতাসহ বিভিন্ন পারিবারিক সমস্যা নিয়ে আমাদের কাছে আসে। এর ফলে তালাকের মাধ্যমে বিবাহবিচ্ছেদের ঘটনাও অনেক কমে গেছে’—বলেন তিনি।আমাদের নারী সদস্যরা বিভিন্ন ঝগড়ার সময় মৌখিক তালাকের ঘটনায় নতুন সমাধান বের করেছে। এরকম কিছু হলে তারা দু-তিনদিনের জন্য স্বামীদের ঘর ছাড়তে বাধ্য করে। এরপর কিছুদিন বাদে তাদের স্বামীরা ঠান্ডা মাথায় ফিরে এলে বিভিন্ন কাউন্সেলিং প্রদানের মাধ্যমে সমঝোতার ব্যবস্থা করা হয়।


এক নারীর কথাঃ


জয়াগ গ্রামের ২৭ বছরের এক নারী (সামাজিক নিরাপত্তার কথা ভেবে নাম উল্লেখ করা হয়নি) জানান, তার অটোরিকশাচালক স্বামী তাকে নিয়মিত মারধর করতো। একদিন মেরে বাড়ি থেকে বেরও করে দেয়। ওই নারী বলেন, সেসময় আমি গান্ধী আশ্রমে গিয়ে বিষয়টি জানাই। তারা আমার স্বামীকে এই ঘটনার জন্য মোটা ক্ষতিপূরণ দিতে বাধ্য করে। আমি রাজি হই, কারণ এমন মানুষের সঙ্গে আমার সংসার করার ইচ্ছাও ছিল না।


গান্ধী আশ্রম ট্রাস্টের কার্যক্রমঃ


ট্রাস্টের কার্যক্রম পরিচালনায় বাংলাদেশ ও ভারত দু'দেশের সরকারের প্রতিনিধিত্বকারী একটি কমিটি গঠিত হয়। স্বাধীনতার পর ট্রাস্টের দৃষ্টিভঙ্গি, উদ্দেশ্য ও কর্মকান্ডে ব্যাপক পরিবর্তন আসে। দরিদ্র, সুবিধাবঞ্চিত ও পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর উন্নয়নের লক্ষ্যে আশ্রমটি কাজ করতে শুরু করে। 


দক্ষ জনশক্তি তৈরি করতে আশ্রমটি এখন ক্ষুদ্র ব্যবসা ব্যবস্থাপনা ও হিসাব রক্ষণের মতো বিষয়ে প্রাথমিক প্রশিক্ষণ প্রদান করে থাকে। এছাড়া প্রাতিষ্ঠানিক ঋণ-বাজারে সদস্যদের অবাধ প্রবেশসহ দুর্গতদের অর্থনৈতিক স্বচ্ছলতা নিশ্চিত করতেও কাজ করছে গান্ধী আশ্রম।ট্রাস্টের তরফ থেকে নারীদের ক্ষমতায়নের জন্য বিশেষ কর্মসূচিরও আয়োজন করা হয়। এর বাইরে নিরাপদ পানি সরবরাহ নিশ্চিতকরণের মাধ্যমে পানিবাহিত রোগ নির্মূল করাও ট্রাস্টের অন্যতম উদ্যোগ।

আরও খবর