কক্সবাজারে আট কেন্দ্রে ভোট ডাকাতির কথা প্রকাশ্য জনসভায় স্বীকার করা উখিয়ার হলদিয়াপালং ইউপি চেয়ারম্যান ও যুবলীগ নেতা ইমরুল কায়েসের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে কারণ দর্শাও নোটিশ প্রদান করেছেন স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়।
কক্সবাজার জেলা প্রশাসন সূত্র জানায়, স্থানীয় সরকার বিভাগের ১২ জুলাইর কারন দর্শানো নোটিশটি ১৮ জুলাই পৌঁছেছে। নোটিশটি স্থানীয় সরকার বিভাগের ওয়েবসাইটেও প্রকাশ করা হয়েছে। নোটিশ পাওয়ার ২০ দিনের মধ্যে জেলা প্রশাসনের মাধ্যমে নোটিশের জবাব দিতে বলা হয়েছে চেয়ারম্যান ইমরুলকে।
মন্ত্রণালয়ের ইউপি-১ শাখার সিনিয়র সহকারী সচিব জেসমিন প্রধান স্বাক্ষরিত নোটিশে বলা হয় ‘আমি ভোট ডাকাতি করেছি বলেই আপনি উপজেলা চেয়ারম্যান এবং কক্সবাজার সদর উপজেলা পরিষদের নির্বাচনে ‘আট কেন্দ্রে ভোট ডাকাতি করেছি’এমন অসত্য বানোয়াট বক্তব্য দেওয়ায় স্থানীয় সরকার (ইউনিয়ন পরিষদ) আইন অনুযায়ী কেন ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে না সে মর্মে কারণ দর্শানো হয়েছে।
গত ৬ জুন কক্সবাজার পৌরসভার ৭ নম্বর ওয়ার্ডের তারাবনিয়াছড়া এলাকায় পৌরসভা নির্বাচনের এক সভায় বক্তব্য দিতে গিয়ে হলদিয়াপালং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এস এম ইমরুল কায়েস চৌধুরী কক্সবাজার সদর উপজেলা চেয়ারম্যান কায়সারুল হক জুয়েলকে উদ্দেশ্য করে বলেন, ২০১৯ সালে কক্সবাজার সদর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে আমি ৮টি কেন্দ্রে ভোট ডাকাতি করেছি বলেই আপনি উপজেলা চেয়ারম্যান। ‘২০১৯ সালে অনুষ্ঠিত কক্সবাজার সদর উপজেলা নির্বাচনে আমি ৮টি কেন্দ্রে ভোট ডাকাতি করেছিলাম। তা না হলে আপনি জুয়েল উপজেলা চেয়ারম্যান হতে পারতেন না। উল্লেখ্য কায়সারুল হক জুয়েল আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকা প্রতীকের প্রার্থী ছিলেন।
ইতোমধ্যে উখিয়া যুবলীগের যুগ্ম সম্পাদক সম্পাদক ও ইউপি চেয়ারমানের নিজেই সরাসরি ইভিএম ‘ভোট ডাকাতি’তে জড়িত মর্মে স্বঘোষিত স্বীকারোক্তি মূলক দেওয়া বক্তব্যের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ও দেশী-বিদেশী মিডিয়ায় ভাইরাল হয়।
কক্সবাজার জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা এস এম শাহাদাত হোসেন জানিয়েছেন, গত ৬ জুন রাতে কক্সবাজার পৌরসভার অনুষ্ঠিত নির্বাচন উপলক্ষে নৌকা প্রতীকের মেয়র প্রার্থী মাহবুবুর রহমান চৌধুরীর পক্ষে উখিয়া উপজেলার হলদিয়াপালং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এস এম ইমরুল কায়েস চৌধুরী এক সভায় বক্তৃতা করেছিলেন। পৌরসভার ৭ নম্বর ওয়ার্ডের তারাবনিয়াছড়া এলাকার এক নির্বাচনী সমাবেশে ইমরুল কায়েস চৌধুরী প্রতিপক্ষ মেয়র প্রার্থী মাসেদুল হক রাশেদের ছোট ভাই কায়সারুল হক জুয়েলকে (কক্সবাজার সদর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান) উদ্দেশ করে বলেছিলেন, ‘২০১৯ সালে অনুষ্ঠিত কক্সবাজার সদর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে আমি আটটি কেন্দ্রে ভোট ডাকাতি করেছিলাম। তা না হলে আপনি জুয়েল উপজেলা চেয়ারম্যান হতে পারতেন না।
ইউপি চেয়ারম্যানের‘ভোট ডাকাতি’র বক্তব্যটির ভিডিও দেশে-বিদেশে ভাইরাল হয়ে পড়ায় ৮ জুন নির্বাচন কমিশন ইউপি চেয়ারম্যান ইমরুলের বিরুদ্ধে তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নিতে সরকারের স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়কে নির্দেশ দিয়েছিল। এর পরিপ্রেক্ষিতে স্থানীয় সরকার বিভাগের নির্দেশে কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক তদন্ত করে প্রতিবেদন পাঠায় মন্ত্রণালয়ে। এরপরই ইউপি চেয়ারম্যান ইমরুল কায়েস চৌধুরীর কাছে কারণ দর্শানোর নোটিশটি পাঠানো হয়।
কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মুহম্মদ শাহীন ইমরান বলেন, মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনায় অভিযুক্ত চেয়ারম্যানের বক্তব্যের বিষয়ে তদন্ত করা হয়। সাক্ষ্য-প্রমাণে যা পাওয়া গেছে তা উল্লেখ করে প্রতিবেদন সংশ্লিষ্ট দপ্তরে পাঠানো হয়েছে।
জেলা প্রশাসনের স্থানীয় সরকার বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক নাসিম আহমেদ বলেন, মন্ত্রণালয়ের স্থানীয় সরকার বিভাগের চিঠিটি মঙ্গলবার আমার হস্তগত হয়েছে। নিৰ্দ্দেশনা মোতাবেক আমরা উখিয়া উপজেলার হলদিয়া পালং ইউনিয়দ পরিষদের চেয়ারম্যান এস,এম ইমরুল কায়েস চৌধুরীকে ২০ কর্মদিবসে জবাব দিতে জানিয়ে দিয়েছি।
উখিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইমরান হোসাইন সজিব জানান, কারণ দর্শানো নোটিশের কথা আমি শুনেছি, তবে আমি এখনো অফিসিয়াল কোন পত্র পায়নি।
কক্সবাজারের জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত সূত্রে জানা গেছে, হলদিয়াপালং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে স্থানীয় লোকজনকে মারধর, ঘরবাড়ি ভাঙচুরসহ অত্যাচার-নিপীড়নের বিষয়ে ইতিমধ্যে বেশ কয়েকটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। ইতিমধ্যে একটি মামলায় এলাকার লোকজনকে মারধর করা থেকে বিরত থাকার মুচলেকা দিয়ে তিনি আদালতের জামিনপ্রাপ্ত হয়েছেন। অপরদিকে এলাকার ব্যবসায়ীদের নানা অজুহাতে ট্রেড লাইসেন্স না দেওয়ার কারণে ওই চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে রিট মামলাও দায়ের করা হয়েছে।
উখিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও রত্নাপালং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নুরুল হুদা জানান, জামায়াত – বিএনপির সাথে আঁতাত করে চেয়ারম্যান ইমরুল কায়েস চৌধুরী বর্তমান সরকারের ভাবমূর্তি নষ্ট করার জন্য এবং নির্বাচন কমিশন তথা ইভিএমকে প্রশ্নবিধ করার লক্ষে প্রকাশ্য জনসভায় তিনি এই বির্তকিত বক্তব্য প্রদান করেছেন। কারন তার পরিবার নব্য আওয়ামী লীগ। উল্লেখ্য তার পিতা মাহমুদুল হক চৌধুরী জেলা জাতীয় পাটির সভাপতি ছিলেন।
অভিযোগ সম্পর্কে জানতে অভিযুক্ত হলদিয়া পালং ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ইমরুল কায়েস চৌধুরীকে ফোন করা হলেও রিসিভ না করায় বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।
উল্লেখ্য, উখিয়ার আলোচিত ও সমালোচিত ইউপি চেয়ারম্যান ইমরুল কায়েস চৌধুরী উখিয়া উপজেলা যুবলীগের যুগ্ম সম্পাদক এবং সদ্য অনুষ্ঠিত উখিয়া উপজেলা যুবলীগের সম্মেলনে সভাপতি পদ প্রত্যাশী ও সভাপতি প্রার্থী ছিলেন।
তিনি গত ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে হলদিয়া পালং ইউনিয়নের আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকার প্রার্থী অধ্যক্ষ শাহ আলম বিরুদ্ধে বিদ্রোহী প্রার্থী হয়ে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়ে হন।
৪ দিন ২১ ঘন্টা ১৯ মিনিট আগে
৯ দিন ৪ ঘন্টা ৫ মিনিট আগে
১৩ দিন ২৩ মিনিট আগে
১৪ দিন ২১ ঘন্টা ৪০ মিনিট আগে
১৫ দিন ৪ ঘন্টা ০ মিনিট আগে
১৬ দিন ২১ ঘন্টা ১৭ মিনিট আগে
২০ দিন ১৯ ঘন্টা ২৭ মিনিট আগে
২২ দিন ৪ ঘন্টা ৩ মিনিট আগে