ইয়েমেনে সৌদি রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ বিন সাইদ আল-জাবের এবং হুথি বিদ্রোহীদের রাজনৈতিক প্রধান মাহদি আল-মাশাতের চলতি সপ্তাহে সৌহার্দ্য বিনিময় করেছেন। এরপরই ইয়েমেনে যুদ্ধবিরতি নিয়ে আশা তৈরি হয়েছে।
রোববার (৯ এপ্রিল) থেকে সৌদি ও হুথি প্রতিনিধিদল হুথি নিয়ন্ত্রিত ইয়েমেনের রাজধানী সানায় শান্তি আলোচনায় বসেছে। এই শান্তি আলোচনার ফল কতটা ইতিবাচক হবে? সৌদি আরব এবং হুথি গোষ্ঠীর মধ্যে শান্তি আলোচনা কিংবা বন্দি বিনিময়ের ফলে কি আদৌ এ সংঘাতের সমাপ্তি হবে?
শান্তি প্রক্রিয়ার আলোচনায় ইয়েমেনের বেশিরভাগ উপদলকেই রাখা হয়নি, যে কারণে এমন নানা প্রশ্ন উঠছে। আলোচনার প্রধান বিষয় হলো, দুই পক্ষের মধ্যে ছয় মাসের যুদ্ধবিরতি। সৌদি সমর্থিত আন্তর্জাতিক স্বীকৃতিপ্রাপ্ত সরকার এবং ইরানের সমর্থনপুষ্ট হুথিদের মধ্যে সংঘাতের সমাপ্তি নিয়ে আলোচনা চলছে।
সানায় হুথি নিয়ন্ত্রিত বিমানবন্দর এবং হোদেইদায় লোহিত সাগরের বন্দরটি ফের চালু করা নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে কথা চলছে। সরকার নিয়ন্ত্রিত শহর তাইজ থেকে হুথিদের অবরোধ তুলে নেওয়া, হুথি গেটওয়ের মাধ্যমে সরকার নিয়ন্ত্রিত তেলের খনি থেকে তেল রপ্তানি পুনরায় শুরু করা এবং ইয়েমেনের অর্থনীতিকে চাঙা করা নিয়েও আলোচনা চলছে।
এত আলোচনা সত্ত্বেও শান্তি প্রক্রিয়া নিয়ে সংশয় রয়েই যাচ্ছে। কিন্তু কেন? একটি কারণ হলো ইয়েমেনের প্রেসিডেন্ট পরিষদ বা প্রেসিডেন্সিয়াল কাউন্সিল নিয়ে কোনো আলোচনা হয়নি। অন্য কোনো ইয়েমেনি দল যেমন সাউদার্ন ট্রানজিশনাল কাউন্সিলেরও কেউ আলোচনায় ছিলেন না।
২০১৪ সাল থেকে ইয়েমেনে গৃহযুদ্ধ চলছে। হুথি ও সরকার দেশটির প্রধান দুই রাজনৈতিক শক্তি। ২০১৪ সাল থেকে রাজধানী সানাসহ ইয়েমেনের উত্তরের অংশ দখল করে রেখেছে হুথিরা। ২০১৫ সাল থেকে সৌদির নেতৃত্বাধীন জোটে সঙ্গে তাদের লড়াই চলছে।
সৌদি নেতৃত্বাধীন নয়টি দেশের এই জোট আন্তর্জাতিক স্বীকৃতিপ্রাপ্ত সরকারের সমর্থনে এ নিয়ে হস্তক্ষেপ করার পর পরিস্থিতি আরো অশান্ত হয়ে ওঠে। এই সংঘাতের ফলে হাজার হাজার মানুষ নিজের দেশেই বাস্তুচ্যুত হয়েছেন। পাঁচ লাখের কাছাকাছি মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন।
জাতিসংঘের হিসাব অনুযায়ী, তিন কোটি ১০ লাখ জনসংখ্যার দেশটির অন্তত এক-তৃতীয়াংশ আন্তর্জাতিক সাহায্যের উপর সম্পূর্ণ নির্ভরশীল। যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশটির পরিস্থিতি বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে ভয়াবহ মানবিক সংকট হিসাবে বিবেচিত। শান্তি আলোচনা কি ঝুঁকি বাড়াতে পারে?
বার্লিনে ইয়েমেন পলিসি সেন্টারের পরিচালক মারওয়া বাব্বাদ মনে করেন, যুদ্ধের অবসান ঘটানো এই শান্তি আলোচনার লক্ষ্য নয়। তিনি ডয়চে ভেলেকে জানিয়েছেন, ইয়েমেনের শান্তি নিয়ে মধ্যস্থতা নয় বরং ওমানের উচিত ছিল আন্তঃসীমান্ত হামলার অবসানের বিষয়ে হুথিদের রাজি করানো। সৌদি ও হুথিদের মধ্যে সম্পর্ক যাতে আরো সহজ হয়, তা দেখা উচিত ছিল ওমানের।
আঞ্চলিক বৈরী শক্তিগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক মেরামতের চেষ্টা করছে সৌদি আরব। টানা সাত বছর শীতল সম্পর্কের পর মার্চ মাসেই চীনের মধ্যস্থতায় ইরান ও সৌদির মধ্যে সমঝোতা হয়েছে৷ তারপর ইয়েমেনে শান্তি প্রচেষ্টা শুরু হয়। এটা সবারই জানা যে সৌদি আরব ইয়েমেনের এই ব্যয়বহুল ছায়াযুদ্ধ থেকে বেরিয়ে আসতে রীতিমতো আগ্রহী হয়ে উঠেছে।
সানা সেন্টার ফর স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজের এক গবেষক আবদুল ঘানি আল-ইরিয়ানি ডিডাব্লিউকে জানান, ইয়েমেনকে দাবার গুটি হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। এই অঞ্চলে স্থিতাবস্থা এবং নিরাপত্তা বজায় রাখা নিয়ে দীর্ঘমেয়াদি স্বার্থ রয়েছে সৌদি আরবের। এই উদ্দেশ্য তারা পূরণের চেষ্টা করছে।
তার কথায়, অন্য সব পক্ষের বদলে হুথিদের ইয়েমেনের প্রতিনিধিত্ব করার অধিকার দিয়েছে সৌদি। রাজনৈতিক ক্ষমতার ভাগাভাগিতে অনিচ্ছুক হুথিদের কারণে এই অঞ্চলে আরো বেশি অস্থিরতা তৈরি হতে পারে বলেই আশঙ্কা তার। বর্তমান আলোচনার ফলে হয়তো দেশে অস্থিরতা বাড়তে পারে। কারণ অন্য দল হুথিদের নিয়ন্ত্রণে থাকতে রাজি হবে না।
২০১৭ সাল থেকে নিজস্ব এজেন্ডা অনুসরণ করে আসা ইয়েমেনের দক্ষিণাঞ্চলের একটি দলের কথা উল্লেখ করেন তিনি৷ সাউদার্ন ট্রানজিশনাল কাউন্সিল বা এসটিসি একতরফাভাবে বিচ্ছিন্নতার ঘোষণা করতে পারে। ফলে ইয়েমেনে অস্থিরতা আরো বাড়তে পারে বলে মনে করেন তিনি।
তিনি জানান, সমগ্র দক্ষিণাঞ্চলের নিয়ন্ত্রণ নিতে এসটিসি যেমন প্রস্তুত নয়, হুথিরাও কিন্তু সম্পূর্ণ উত্তরাঞ্চলের নিয়ন্ত্রণ নিতে প্রস্তুত নয়। সবমিলিয়ে ইয়েমেন এমন পরিস্থিতির মুখোমুখি। নতুন সরকারি সংস্থা হিসেবে হুথি বা এসটিসির আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি নিয়েও সংশয় রয়েছে এই গবেষকের। ফলে আন্তর্জাতিক বিনিয়োগে নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে।
শান্তির জন্য পুনর্গঠন, বোঝাপড়া এবং অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার প্রয়োজন। ব্রাসেলসে ইউরোপীয় ইনস্টিটিউট অফ পিসের ইয়েমেন সংক্রান্ত একজন উপদেষ্টা হিশাম আল ওমিসি। সৌদি আরব ও হুথিদের মধ্যেএকচেটিয়া শান্তি আলোচনা নিয়ে সংশয় রয়েছে তারও।
তিনি বলেন, 'ইয়েমেনের ৩৩৩টি জেলাসহ ২১টি প্রদেশ রয়েছে। প্রত্যেকটির আলাদা সমস্যা রয়েছে। সবাইকে নিয়ে না চললে, কোনো শান্তি প্রক্রিয়া স্থায়ী হবে না। শান্তি প্রক্রিয়ার জন্য ইয়েমেনের পুনর্গঠন পরিকল্পনা, সবার সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে সমন্বয় করা প্রয়োজন। অর্থনীতিকে চাঙা করা প্রয়োজন। আস্থা অর্জনের কোনো পরিকল্পনা ছাড়াই আমরা এই শান্তি আলোচনা নিয়ে এতকিছু বলে চলেছি।'
জাতিসংঘের মধ্যস্থতায় বন্দি বিনিময় প্রক্রিয়ার ফলে যদিও খানিকটা আশার আলো রয়েছে। মার্চ মাসে ইয়েমেনি সরকার ৭০৬ জন হুথি বিদ্রোহীকে মুক্তি দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। হুথি বিদ্রোহীরা বিনিময়ে ১৮১ জন বন্দিকে মুক্তি দেওয়ার কথা জানিয়েছে।
বৃহস্পতিবার (১৩ এপ্রিল) সকাল পর্যন্ত, প্রথম ১৪ জন বন্দি বিনিময় করা হয়েছে। সরকারি প্রতিনিধি দলের মুখপাত্র মজিদ ফাদায়েল টুইটারে এ কথা জানিয়েছেন।
২ দিন ৪১ মিনিট আগে
২ দিন ৮ ঘন্টা ২৪ মিনিট আগে
৪ দিন ১৬ ঘন্টা ১৯ মিনিট আগে
৫ দিন ১৬ ঘন্টা ৪০ মিনিট আগে
৫ দিন ১৬ ঘন্টা ৫৫ মিনিট আগে
৫ দিন ১৮ ঘন্টা ৯ মিনিট আগে
৭ দিন ১৭ ঘন্টা ৩০ মিনিট আগে
৯ দিন ১৩ ঘন্টা ৫৮ মিনিট আগে