হাওর অঞ্চলে দেশীয় মাছ রক্ষায় সম্মিলিতভাবে কাজ করার বিকল্প নেই বলে জানিয়েছেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম।
তিনি বলেন, হাওর অঞ্চলে দেশীয় প্রজাতির মাছ সংরক্ষণ করতে না পারলে সামগ্রিকভাবে আমরা সবাই ক্ষতিগ্রস্ত হবো। হাওরের মৎস্যসম্পদ রক্ষায় জনপ্রতিনিধি, মৎস্যজীবী প্রতিনিধি, মৎস্য চাষি, প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সম্মিলিতভাবে কাজ করা ছাড়া কোনো বিকল্প নেই।
বৃহস্পতিবার (১৫ জুন) মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে ‘হাওর অঞ্চলে দেশীয় প্রজাতির মাছ সংরক্ষণ এবং উৎপাদন বৃদ্ধিতে করণীয়’ শীর্ষক কর্মশালায় এসব কথা বলেন তিনি। মৎস্য অধিদপ্তর এ কর্মশালা আয়োজন করে।
কর্মশালায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে শ ম রেজাউল করিম বলেন, দেশের মানুষের সামগ্রিক স্বার্থে হাওর অঞ্চলে দেশীয় প্রজাতির মাছ রক্ষাসহ মাছের উৎপাদন বাড়াতে হবে। দেশের সব মানুষের জন্য যেটা প্রয়োজন ও অনিবার্য, সেই মাছ যত্নের সঙ্গে বেড়ে ওঠার সুযোগ দিতে হবে। এ জন্য হাওরে দেশীয় মাছ রক্ষায় নিয়ম-কানুন মেনে চলতে হবে।
মৎস্য খামারিদের পোনা মাছের প্রতি, ছোট মাছের প্রতি যত্নশীল হতে হবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, বেপরোয়াভাবে পোনা মাছ ধরা যাবে না। মাছ বেড়ে ওঠার জন্য অভয়াশ্রম দিতে হবে। প্রজনন মৌসুমে মা মাছ নিধন করা যাবে না। হাওরে এমন কোনো নিষিদ্ধ জাল ব্যবহার করা যাবে না, যে জাল দিয়ে পোনা মাছ নিধন হয়। অপরদিকে হাওরে কোনো বিষাক্ত রাসায়নিক বা কীটনাশক যাতে ব্যবহার না হয়, সে বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে।
মন্ত্রী বলেন, হাওর অঞ্চলে দেশীয় প্রজাতির মাছ সংরক্ষণে স্থানীয় প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও জনপ্রতিনিধিদের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করতে হবে। মৎস্যসম্পদ রক্ষায় জনগণকে বোঝাতে হবে, সচেতন করতে হবে। প্রয়োজনে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করতে হবে। সরকার দেশে মৎস্য আইন যুগপোযোগী করেছে। মৎস্য আইনের পরিপন্থি কাজ যে করবে তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। এক্ষেত্রে কাউকে ন্যূনতম ছাড় দেওয়ার সুযোগ নেই।
তিনি বলেন, ভাত-মাছের বাঙালির ঐতিহ্য একসময় প্রায় বিলুপ্ত হয়ে গিয়েছিল। একটা সময় বলা হতো মাছের আকাল। এমনকি ইলিশ মাছও বিলুপ্ত হওয়ার পথে ছিল। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সুপরিকল্পিত নির্দেশনা ও রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থাপনায় ইলিশের উৎপাদন সব রেকর্ড অতিক্রম করে সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছেছে। বাংলাদেশের ইলিশ জিআই সনদ পেয়েছে। সারাবিশ্বের মোট ইলিশের প্রায় ৮০ শতাংশ বাংলাদেশে উৎপাদন হয়।
দেশীয় ৬৪ প্রজাতির মাছ বিলুপ্ত হয়ে গিয়েছিল জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের বিজ্ঞানীদের অব্যাহত প্রচেষ্টায় ৩৯ প্রজাতির বিলুপ্তপ্রায় দেশীয় মাছ ফিরিয়ে আনা হয়েছে। দেশীয় মাছ যাতে বিলুপ্ত না হয় সেজন্য ময়মনসিংহে লাইভ জিন ব্যাংক করা হয়েছে। কোনো অঞ্চলে কোনো মাছ বিলুপ্ত হলে লাইভ জিন ব্যাংক থেকে সে অঞ্চলে মাছের পোনা সরবরাহ করা হবে। যাতে ওই অঞ্চলে নতুন করে দেশীয় মাছের বিস্তার হতে পারে।
তিনি বলেন, খাবারের বড় জোগান দেয় মাছ। মানুষের প্রাণিজ আমিষের চাহিদার ৬০ শতাংশ জোগান দেয় মাছ। মেধা বিকাশে, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে, শিশুর পরিপূর্ণ পুষ্টির জন্য, বয়স্কদের পুষ্টির চাহিদা মেটাতে মাছ ও মাছ জাতীয় খাবারের কোনো বিকল্প নেই। এজন্য মাছ রক্ষায় সবার ভূমিকা রাখতে হবে।
শ ম রেজাউল করিম আরও বলেন, মৎস্য আহরণ বন্ধকালে মৎস্যজীবীদের ভিজিএফ বিতরণসহ বিকল্প কর্মসংস্থানের জন্য বিভিন্ন উপকরণ সহায়তা দেওয়া হচ্ছে। নির্ধারিত সময়ে মাছ ধরা বন্ধ থাকলে মৎস্যজীবীরাই লাভবান হবেন। পোনা মাছ না ধরলে মাছ বড় হওয়ারর সুযোগ পাবে। মৎস্যজীবীদের লাভের জন্যই সরকার কাজ করছে। হাওর অঞ্চলের মাছ বড় হতে না দিলে এই অঞ্চলের মৎস্যজীবীরা কীভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবেন সেটা তাদের জানাতে হবে।
কর্মশালায় সভাপতিত্ব করেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. নাহিদ রশীদ। বিশেষ অতিথি ছিলেন মৌলভীবাজার-৪ আসনের সংসদ সদস্য ও অনুমিত হিসাব সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির সভাপতি উপাধ্যক্ষ ড. মো. আব্দুস শহীদ। কর্মশালায় মুখ্য আলোচক ছিলেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো. আব্দুল কাইয়ূম। অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সিলেট বিভাগের অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার জাকারিয়া এবং সিলেট রেঞ্জের অতিরিক্ত উপ-মহাপুলিশ পরিদর্শক এম এ জলিল।
এতে স্বাগত বক্তব্য দেন মৎস্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক খ. মাহবুবুল হক। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন মৎস্য অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক অলক কুমার সাহা। কর্মশালায় আরও উপস্থিত ছিলেন- মৌলভীবাজারের জেলা প্রশাসক ড. উর্মি বিনতে সালাম, মৌলভীবাজারের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ জাকারিয়া, হবিগঞ্জের পুলিশ সুপার এস এম মুরাদআলি, সুনামগঞ্জের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ এহসান শাহ, শ্রীমঙ্গল উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ভানু লাল রায় প্রমুখ।
৪ ঘন্টা ১৯ মিনিট আগে
৪ ঘন্টা ২০ মিনিট আগে
১৭ ঘন্টা ৩৯ মিনিট আগে
১৮ ঘন্টা ৫১ মিনিট আগে
২০ ঘন্টা ৩৮ মিনিট আগে