পার্বত্য অঞ্চলে সন্ত্রাসী গোষ্ঠী কুকি চিন শান্তি বিনষ্ট করছে। তাই পার্বত্য অঞ্চলে শান্তি বজায় রাখতে কাজ করছে বিজিবি। এই লক্ষ্যে সেনাবাহিনীর সঙ্গে যৌথ অভিযানে অংশ নিয়ে সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর ক্যাম্প দখল, অস্ত্র ও গোলাবারুদ উদ্ধার করা হচ্ছে। দিল্লি বিজিবি-বিএসএফ ডিজি পর্যায়ের বৈঠকে ওই দেশে কুকি চিনের কেউ থাকলে বা তাদের কোনো ক্যাম্প থাকলে তাদের তথ্য আমাদেরকে জানাতে বলা হয়েছে। কেউ আটক হলে আমাদের কাছে হস্তান্তর করার কথা বলা হয়েছে। এসব তথ্য জানিয়েছেন বিজিবির মহাপরিচালক (ডিজি) মেজর জেনারেল এ কে এম নাজমুল হাসান।
বৃহস্পতিবার বিজিবি সদর দপ্তরে ভারতের নয়াদিল্লিতে অনুষ্ঠিত বিজিবি-বিএসএফ ডিজি পর্যায়ের সীমান্ত সম্মেলন বিষয়ে সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য তুলে ধরেন বিজিবি ডিজি।
এসময় উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত মহাপরিচালক(বিএসবি) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এ কে আজাদ, অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপারেশন্স অ্যান্ড ট্রেনিং) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এ এম এম খায়রুল কবীর, সিলেট সেক্টর কমান্ডার কর্নেল জি এইচ এম সেলিম হাসান, বিজিবি সদর দপ্তরের পরিচালক(পরিকল্পনা) কর্নেল তসলিম এহসান, বিজিবি সদর দপ্তরের জিটুআই মেজর রইসুল আজম, জনসংযোগ কর্মকর্তা শরীফুল ইসলাম।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বিজিবি ডিজি বলেন, বিজিবির প্রাথমিক কাজ হচ্ছে সীমান্ত এলাকায় দায়িত্ব পালন করা। আর পার্বত্য এলাকায় সেনাবাহিনী কাজ করছে। সেনাবাহিনীর সঙ্গে বিজিবিও যৌথ অভিযান পরিচালনা করছে। বান্দরবানে বিজিবির অভিযানে থাইখোং পাড়া কুকি চিন মুক্ত করা হয়েছে। সেখান থেকে অস্ত্র, গুলি, পোশাক উদ্ধার করা হয়েছে। পার্বত্য অঞ্চলের দুর্গম ও অরক্ষিত এলাকায় ৫টি বিওপি স্থাপন ও চেকপোস্ট স্থাপন করার পরিকল্পনা রয়েছে।
কুকি চিন এর সদস্যদের কাছ থেকে অতীতে যেসব অস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে, সেগুলো অত্যাধুনিক, এসব অস্ত্র নিশ্চয় আকাশ পথে এসে তাদের হাতে পৌঁছায়নি। হয় ভারত কিংবা মিয়ানমার সীমান্ত দিয়ে আসছে, কিন্তু সেটি কিভাবে আসলো? এমন প্রশ্নের উত্তরে ডিজি বলেন, অস্ত্র কিভাবে এবং কোন পথ দিয়ে এসেছে তা নিশ্চিত না হয়ে কোন দেশকে দোষারোপ করা ঠিক হবে না। অস্ত্র বিভিন্ন দেশে তৈরি করা হয়। তবে এসব বিষয়ে আমাদের তথ্য জানাতে এবং সহায়তা করতে বিএসএফকে বলা হয়েছে। তাদের কাছে সন্ত্রাসীদের একটা তালিকা দেওয়া হয়েছে। তারা আশ্বস্থ করেছে, তাদের কোন সন্ত্রাসী গোষ্ঠী আমাদের সীমান্তে আসতে পারবে না।
এবারের সীমান্ত সম্মেলনে আলোচনার প্রথম তালিকায় সীমান্ত হত্যা ছিল জানিয়েছে ডিজি বলেন, বিএসএফ এর সঙ্গে সম্মেলনে, সম্মেলনের পরে ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীসহ যত সংস্থার সঙ্গে বৈঠক হয়েছে, সব জায়গায় সীমান্ত হত্যা নিয়ে বলেছি। তারা সব সময় আশা দেয়। তবে এবার ওনারা বিষয়টি দেখবেন বলে আশ্বস্থ করেছেন। দুই বাহিনীর মধ্যে সংযোগ সৃষ্টি হলে এটি কমে আসবে বলে আমিও মনে করি। অন্যায়ভাবে আমাদের দেশের নিরীহ কেউ যদি সীমান্তে মারা যায়, তা আমাকেও ব্যথিত করে।
আরেক প্রশ্নের জবাবে মেজর জেনারেল এ কে এম নাজমুল হাসান বলেন, জাতীয় নির্বাচনকে ঘিরে বিজিবির বিশাল পরিকল্পনা রয়েছে। আমরা অনেক আগ থেকে প্রস্তুতি নেওয়া শুরু করেছি। সকল ধরনের প্রস্তুতি গ্রহণ করেছি এবং করছি। সীমান্ত পথে মাদকের বড় বড় চালান আসার প্রসঙ্গেতিনি বলেন, প্রায় সাড়ে চার হাজার কিলোমিটার সীমান্তে বিওপি রয়েছে মাত্র ৮১৭টি। এক একটি বিওপির মাঝখানে ৫-৬ কিলোমিটার জায়গা ফাঁকা থাকে। তবে মাদক মিয়ানমার থেকে নদী পথে বেশি আসে। আমরা সেসব জব্দও করছি। আমরাই আইসের সর্বোচ্চ চালান জব্দ করেছি।
ডিজি বলেন, বিজিবি কাউকে টিকিট দিয়ে সীমান্ত পারস্পরিক সম্মতির ভিত্তিতে বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী এলাকায় বন্ধ থাকা উল্লেখযোগ্য পাঁচটি কাজ চালু করার ব্যাপারে অনুমোদন পাওয়া গেছে। সেগুলো হলো-রামগড় স্কুল ভবন নির্মাণের অসম্পন্ন কাজ, তিন বিঘা করিডোর এলাকায় ঝালংগী পকেট ও ভিতরবাড়ি পকেট এলাকায় বিদ্যুৎ সংযোগ স্থাপন, শেরপুরের ভোগাই নদীর তীর সংরক্ষণ, জকিগঞ্জে কুশিয়ারা নদী ও রহিমপুর খালের সংযোগস্থল পুনঃখনন এবং নেত্রকোনার ভবানীপুর সীমান্তে ১ দশমিক ৪৪ কিলোমিটার রাস্তা পাকাকরণ।
সংবাদ সম্মেলনে বিজিবি-বিএসএফের সম্মেলনের গৃহীত সিদ্ধান্তের বিষয়ে তিনি বলেন, আন্তঃসীমান্ত অপরাধ; যেমন-মাদকপাচার, অনুপ্রবেশ, মানবপাচার, স্বর্ণ, অস্ত্র, জাল মুদ্রার নোট প্রভৃতি চোরাচালান রোধে সমন্বিত সীমান্ত ব্যবস্থাপনা পরিকল্পনা কার্যকরভাবে বাস্তবায়নে উভয়পক্ষ গুরুত্বারোপ করেছে। উল্লেখযোগ্য বেশ কয়েকটি অপরাধের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের সম্পর্কে উভয়পক্ষ তথ্য আদান-প্রদান করেছে। এ বিষয়ে ভবিষ্যতে অপরাধীদের সম্পর্কে প্রাপ্ত তথ্য তাৎক্ষণিকভাবে মাঠপর্যায়ে শেয়ার করতেও উভয়পক্ষ সম্মত হয়। আন্তর্জাতিক সীমানা লঙ্ঘন করে উভয় দেশের নাগরিকদের অবৈধভাবে সীমান্ত অতিক্রম রোধে সীমান্তবর্তী এলাকায় জনসচেতনতামূলক কার্যক্রম অব্যাহত রাখার ব্যাপারে দুই পক্ষ গুরুত্বারোপ করেছে। বাংলাদেশে সীমান্তের অভ্যন্তরে ভারতের কিছু সংখ্যক অপ্রত্যাশিত টেলিযোগাযোগ নেটওয়ার্কের নেতিবাচক প্রভাবের কথা তুলে ধরেন এবং এ বিষয়ে বিএসএফকে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানান।
১ ঘন্টা ৪২ মিনিট আগে
৫ ঘন্টা ৫১ মিনিট আগে
৫ ঘন্টা ৫৩ মিনিট আগে
১৯ ঘন্টা ১১ মিনিট আগে
২০ ঘন্টা ২৩ মিনিট আগে
২২ ঘন্টা ১১ মিনিট আগে