ইসরায়েলে নতুন করে ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে ইরান কাছের মানুষকে আলিঙ্গন করা কেন জরুরি? একদিনে আরও ২৬ জনের করোনা শনাক্ত, মৃত্যু ১ পাল্টা হামলার মুখে যাত্রী ছাড়াই বিদেশে বিমান সরিয়ে নিচ্ছে ইসরায়েল জাতীয় নির্বাচনের তারিখ নিয়ে সমাঝোতা একটি ইতিবাচক দিক : আতিকুর রহমান জামায়াতের ১নং ওয়ার্ড কর্তৃক সাধারণ সভা অনুষ্ঠিত নাগেশ্বরীতে বাণিজ্যমেলা বন্ধের দাবিতে মানববন্ধন রায়গঞ্জে মাছ ধরতে গিয়ে পানিতে ডুবে ভাই বোনের মর্মান্তিক মৃত্যু সাতক্ষীরা কালিগঞ্জে আওয়ামী লীগ নেতা মোজাহার হোসেন কান্টু গ্রেপ্তার শ্রীপুরে দফায় দফায় হামলা ও ভাঙচুর, অর্ধশতাধিক বাড়িঘর ও দোকানপাটে লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ লালপুরে জামায়াতের ঈদ পুনর্মিলনী অনুষ্ঠিত লালপুরে বিএনপির ঈদ পুনর্মিলনীতে জনতার ঢল! ঈশ্বরগঞ্জে সড়ক দুর্ঘটনায় ১ জন নিহত সাবেক সংরক্ষিত এমপি’র বাড়িতে যৌথবাহিনীর অভিযান: ইয়াবা-অস্ত্রসহ পুত্র আটক সুন্দরগঞ্জে জামায়াত কর্মী হত্যা মামলায় যুবলীগ নেতা আজম কারাগারে কালাইয়ে দুধর্ষ ডাকাতির ঘটনায় চিকন আলী নামে এক আন্তজেলা ডাকাত দলের সদস্য গ্রেপ্তার পাঁচ ব্যাংক মিলে হচ্ছে এক ব্যাংক, চাকরি হারাবেন না কর্মীরা নেতানিয়াহুর জন্য বিশ্ব আরও বিপজ্জনক হয়ে উঠেছে’ গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হককে অবরুদ্ধের প্রতিবাদে পীরগাছায় মশাল মিছিল সড়ক দুর্ঘটনায় লালপুরের যুবকের মৃত্যু

প্রাথমিক বিদ্যালয় ও শিশুর বিকাশ

লেখক: রাসেদুল হাসান, উপজেলা নির্বাহী অফিসার, কুড়িগ্রাম সদর, কুড়িগ্রাম।





শিশুর জন্মের পর তার বিকাশ শুরু হয় তার পরিবারে। প্রতিটি শিশুর প্রথম শিক্ষক  হল তার বাবা মা । কিন্ত বর্তমান একক পরিবার কেন্দ্রিক সমাজ ব্যবস্থায় অধিকাংশ মা বাবাই তাদের শিশুর বিকাশে প্রয়োজনীয় ভূমিকা রাখতে পারছে না। প্রাথমিক বিদ্যালয় সমূহ শিশুদের বিকাশের জন্য প্রথম ও প্রধান প্রাতিষ্ঠানিক  কেন্দ্র। শিশু জন্মের পর প্রথম কথা বলতে শিখে তার মা বাবা এবং পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের কাছ  থেকে। চারপাশের লোকজনের নিকট  থেকে সে যে ধ্বনি, শব্দ এবং বাক্য শোনে তাই বলার চেষ্টা করতে থাকে। এভাবে সে রপ্ত করে  তার মায়ের ভাষা। সামাজিক বিকাশের সঙ্গে সংগতি রেখে শিক্ষার রূপকে তিনটি ভাগে ভাগ করা যায়। যথা—Informal Education বা অনানুষ্ঠানিক  শিক্ষা, Non-formal Education বা উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা এবং Formal Education বা  আনুষ্ঠানিক/প্রাতিষ্ঠানিক  শিক্ষা।  শিশুর পরিপূর্ণ বিকাশের জন্য এই তিন ধরনের  শিক্ষাই গুরুত্বপূর্ণ। আনুষ্ঠানিক শিক্ষায় বিশেষভাবে পরিকল্পিত পাঠ্যক্রম রয়েছে এবং অনানুষ্ঠানিক শিক্ষায় কোন পাঠ্যক্রম এবং কাঠামো নেই। উদাহরণস্বরূপ বলা যায় শিশুর Informal Education বা অনানুষ্ঠানিক শিক্ষা শুরু হয় তার জন্মের পর থেকেই চারপাশে ঘটে যাওয়া নানা ঘটনা এবং  চারপাশের মানুষজনের সাথে মেলামেশার মধ্য দিয়ে। সমবয়সিদের সাথে খেলাধুলা এবং মেলামেশার  মাধ্যমে প্রতিদিন অনেক অজানা বিষয় শিশু জেনে নেয়। বর্ণমালা শেখার মাধ্যমে শিশুর প্রথম Formal Education বা আনুষ্ঠানিক শিক্ষার যাত্রা শুরু হয়। তবে সত্যিকার অর্থে বিদ্যালয়ে সে তিন ধরনের শিক্ষারই সুযোগ পায়। সহপাঠীদের সাথে মেলামেশার মাধ্যমে  Informal education বা অনানুষ্ঠানিক শিক্ষার  ক্ষেত্র তৈরি হয়। বিভিন্ন ধরনের প্রতিযোগিতা এবং ব্যবহারিক বিষয়ের  মাধ্যমে বিদ্যালয় হতে সে Non-formal  Education  এর সুযোগ পায়। কোভিড-১৯ পরিস্থিতির কারণে দীর্ঘদিন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ছিল। সে সময়ে অনলাইনে শ্রেণি কার্যক্রম পরিচালিত হয়েছে। কিন্তু শিশুর পরিপূর্ণ বিকাশের জন্য  বিদ্যালয় থেকে যে তিন ধরনের শিক্ষার সুযোগ রয়েছে  প্রতিকূল পরিস্থিতির কারণে শিশুরা তা থেকে বঞ্চিত হয়েছে।  করোনা মহামারি কমে যাওয়ায় বিদ্যালয়গুলো আবার আগের ন্যায় শিশুদের কোলাহলে মুখরিত হচ্ছে।  


সমাজ পরিবর্তনের ধারাবাহিকতায় বর্তমানে পরিবারকেন্দ্রিক শিক্ষার ক্ষেত্রে  অনেক পরিবর্তন ঘটেছে। যৌথ পরিবার ভেঙ্গে একক পরিবারের বিস্তার ঘটছে । পাশাপাশি, কর্মব্যস্ততা বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে মা-বাবা এখন শিশুদের বেশি সময় দিতে পারেন না।  আগের দিনে শিশুরা তাদের দাদা-দাদি কিংবা নানা-নানির কাছ থেকে  গল্প,  কিচ্ছা কাহিনির মাধ্যমে অনেক অজানাকে জানতে পারত। তাদের মুখে নীতিকথা শোনে  নিজেদের মধ্যে একটা আদর্শ মানদণ্ডের ভিত তৈরি করে নিতে পারত। বেশিরভাগ একক পরিবারে শিশুরা  এখন দাদা-দাদি কিংবা নানা-নানিকেও কাছে পায় না। কর্মজীবী  বাবা মার  শিশুরা বেড়ে উঠছে  গৃহ পরিচারিকার তত্ত্বাবধানে।এসব কারণে টিভি কিংবা ইন্টারনেটে কার্টুন দেখা ও ভিডিও গেইমস খেলার  প্রতি  শিশুদের আসক্তি দিন দিন বেড়ে চলছে।    গ্রামের শিশুরা এখনো মুখরিত ছেলেবেলার  সুযোগ কিছুটা পেলেও শহরকেন্দ্রিক শিশুদের এই সুযোগ এখন সীমিত।   


 ৩০-৩৫ বছর আগে আমরা যারা গ্রামে বেড়ে উঠেছি সেই সময়ে যোগাযোগ ব্যবস্থা এখনকার মত উন্নত ছিল না। তবে সকাল বেলায় ধান ক্ষেতের পাশ দিয়ে পায়ে হেঁটে দল বেঁধে স্কুলে যাওয়ার মধ্যেও  বিশাল আনন্দের সঞ্চার হতো । স্কুলের অবকাঠামোগত অবস্থাও এখনকার মত এত উন্নত ছিল না। এখনকার মত বছরের প্রথম দিনেই নতুন বই পাওয়া যেত না। বর্তমানে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে  অবকাঠামোগত ব্যাপক উন্নয়ন সাধিত হয়েছে। পাশাপাশি যুক্ত হয়েছে মাল্টিমিডিয়া শ্রেণি কার্যক্রমের সুবিধা।  প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার মাধ্যমে  মেধাবী  শিক্ষকদের নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে। নতুন নিয়োগপ্রাপ্ত শিক্ষকদের মধ্যে অধিকাংশই বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে  স্নাতক/স্নাতকোত্তর ডিগ্রিধারী। শিক্ষা ব্যবস্থাকে ৪টি স্তরে ভাগ করা যায়। যথা- প্রাথমিক,  মাধ্যমিক,  উচ্চমাধ্যমিক এবং উচ্চশিক্ষা। শিক্ষা ব্যবস্থার ভিত্তিতে রয়েছে প্রাথমিক শিক্ষা ব্যবস্থা। শিশুর মানসিক, প্রাক্ষোভিক, নৈতিক, সামাজিক  বিকাশ শুরু হয় প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে।  চারিত্রিক গুণাবলির  গঠনও শুরু হয় প্রাথমিক পর্যায় থেকেই। যে শিশু প্রাথমিক স্তরে নিজেকে পরবর্তী স্তরের জন্য  প্রস্তুত করতে পারে না সে অনেকে ক্ষেত্রেই  পরবর্তী স্তরে নিজেকে খাপ খাইয়ে নিতে পারে না এবং পরবর্তীতে ঝরে পড়ে। উন্নত-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গঠনে দরকার মেধাবী ও  আদর্শ চারিত্রিক গুণাবলিসম্পন্ন নাগরিক।  শিক্ষার উদ্দেশ্য শুধুমাত্র পুথিগত বাক্য মুখস্ত করানো  নয়। প্লেটো শিক্ষাকে সনাক্ত করেছেন ন্যায় বিচার অর্জনের উপায় হিসেবে। শিক্ষার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উদ্দেশ্য হল নৈতিকতা এবং অন্তর্নিহিত মহত্ত্বের বিকাশ ঘটানো। জোহান হেইনরিখ পেস্তালতজির মতে, “শিক্ষা হলো মানুষের অন্তর্নিহিত শক্তির স্বাভাবিক, সুষম ও প্রগতিশীল বিকাশ”। আর তাই শ্রেণি কক্ষে পাঠ্যসূচির অন্তর্ভুক্ত বিষয়ে পাঠদানের পাশাপাশি শিশুর চরিত্র গঠনের জন্য শিক্ষক তথা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের  ভূমিকা অপরিহার্য।  হেনরি এডামস তার বিখ্যাত উক্তিতে বলেছিলেন  “একজন শিক্ষক সামগ্রিকভাবে প্রভাব ফেলে, কেউ বলতে পারে না তার প্রভাব কোথায় গিয়ে শেষ হয়”। 


একজন শিক্ষক একজন শিক্ষার্থীর উপর যেভাবে ইতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারেন তা অন্য কেউ পারে না।


বর্তমান ক্রমপরিবর্তনশীল সমাজ ব্যবস্থায় শিশুর বিকাশে পরিবারের প্রভাব আগের চেয়ে কমতে থাকায় শিক্ষক ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রভাবকের দায়িত্ব পালনের প্রয়োজনীতা ক্রমান্বয়ে বাড়ছে। তাই সম্মানিত শিক্ষকগণের  এই পরিস্থিতে অগ্রনী ভূমিকা রাখতে হবে।  তথ্য প্রযুক্তি নির্ভর দেশপ্রেমিক, নীতিবান আগামী প্রজন্ম গড়ে তুলতে হলে প্রাথমিক পর্যায় থেকেই আমাদের সর্বাধিক গুরুত্ব দিতে হবে। শিক্ষক, অভিভাবকসহ  সকলের সমন্বিত প্রচেষ্টার মাধ্যমেই  আগামী দিনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে  সফলতা অর্জন সম্ভবপর । 





আরও খবর