ইন্টারনেটের গতিতে দুই ধাপ এগোলো বাংলাদেশ মালয়েশিয়ায় জনশক্তি প্রেরণ বন্ধ হবে না, আশা প্রতিমন্ত্রীর গ্রামীণ মানুষের সুবিধায় তৃণমূল থেকে উন্নয়ন হচ্ছে: প্রধানমন্ত্রী কুমিল্লা চৌদ্দগ্রামে বাতিসা বসন্তপুরে যাত্রীবাহী বাস উল্টে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ৫ আহত ১৫ গাজায় নিজেদের গুলিতে পাঁচ ইসরাইল-সেনা নিহত মেট্রোরেলের ভাড়ায় পূর্ণ হারেই ভ্যাট বসছে জুলাই থেকে কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে বাস খাদে পড়ে নিহত ৫, আহত ১৫ শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস আজ তরুণদের প্রতি মহানবীর বিশেষ নির্দেশনা অ্যাস্ট্রাজেনেকার করোনা টিকায় আরেক ভয়াবহ পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া শনাক্ত টাইমস হায়ার এডুকেশন রাঙ্কিং এ দেশসেরা খুবি জলদস্যু থেকে মুক্তি পাওয়া সালেহ আহমেদ এর সাথে ফুলেল শুভেচ্ছা বিনিময় হাজী মোহাম্মদ মানিক শৈলকুপা রিপোর্টার্স ইউনিটির কমিটি গঠন সভাপতি আলমগীর অরণ্য , সাধারণ সম্পাদক টিটো মিজান ট্রাক চাপায় ঘটনাস্থলেই নিহত এক মহিলা কেতকী বাড়ী বাজারে নবনির্বাচিত চেয়ারম্যান কুতুব‌দিয়ায় এল‌পি গ‌্যাস ব্যবসায়ীকে অর্ধ লক্ষ টাকা জ‌রিমানা ঝিনাইগাতীতে কৃষি জমি নষ্ট করে রাস্তা নির্মাণের প্রতিবাদে সংবাদ সম্মেলন ২১ মে ব্যাংক বন্ধ থাকবে কক্সবাজারের যেসব এলাকায় মাতারবাড়ি সড়কে ডাকাতি ও পুলিশকে গুলি করার ঘটনায় আটক-১ উপজেলা ভূমি অফিস নবনির্মিত সৌন্দর্যবর্ধন এর শুভ উদ্বোধন করলেন, জেলা প্রশাসক মীর মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমান

ওসমান আলী গ্রেপ্তার হয়ে প্রমাণ হলো হত্যাকারী স্বামী মরে নাই

বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘জীবিত ও মৃত’ ছোটগল্পে ছায়া অবলম্বনে নির্মিত নাটক 'কাদম্বিনী' মরে প্রমাণ করেছিলো যে সে 'মরে নাই'। এবার জামালপুরের ইসলামপুর উপজেলায় ওসমান আলী (৩৫) ওরফে ওসমান নামে একব্যক্তি পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হয়ে প্রমাণ করলো স্ত্রী হত্যা মামলার আসামি  মরেনি। বরং স্ত্রী হত্যা মামলার সাজা এড়াতে আইনজীবীর মাধ্যমে আসামি ওসমান 'মারা গেছে' মর্মে আদালতকে লিখিতভাবে অবগত করা হলেও  ৬ বছর পর তাকে জীবিত গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। গ্রেপ্তারকৃত ওসমান উপজেলার বেলগাছা ইউনিয়নের মুন্নিয়াচর গ্রামে মো. বাচ্চু ফকিরের ছেলে। স্ত্রী লাকী বেগম হত্যা মামলায় সাজা এড়াতে আইনজীবীর মাধ্যমে 'মৃত্যু' সংবাদের দরখাস্ত আদালতে দাখিল করে এতদিন আত্মগোপনে ছিলো স্বামী ওসমান। মৃত আসামিকে জীবিত গ্রেপ্তারের ঘটনাটি জেলাজুড়ে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে।

বুধবার (১১ অক্টোবর) বিকেলে পাশ্ববর্তী গাইবান্ধা জেলার সাঘাটা উপজেলার যমুনা নদীর চরাঞ্চলে অভিযান চালিয়ে ওসমানকে গ্রেপ্তার করে ইসলামপুর থানা-পুলিশ। পরে রাত সাড়ে ৮টার দিকে জামালপুর পুলিশ সুপার (এসপি) কার্যালয়ে এক প্রেস ব্রিফিং করা হয়। প্রেস ব্রিফিংয়ের মূল বক্তব্য তোলে ধরেন এসপি মো. কামরুজ্জামান।

ইসলামপুর থানা সূত্রে জানা গেছে, গোপন খবরের ভিত্তিতে এসপির নির্দেশক্রমে ইসলামপুর সার্কেলের দিকনির্দেশনায় ইসলামপুর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মো. আক্রাম হোসেনের নেতৃত্বে এসআই আব্দুল্লাহ আল রাব্বীসহ একদল পুলিশ অভিযান চালিয়ে গ্রেপ্তারী পরোয়ানা মূলে আসামি ওসমানকে গ্রেপ্তার করা হয়।

প্রেস ব্রিফিংয়ে জানা যায়, গ্রেপ্তারকৃত ওসমান একই এলাকার মো. আব্দুর রহিম বক্সের মেয়ে লাকী বেগমকে বিয়ে করেন। ২০১২ সালের ১৯ আগষ্ট সন্ধ্যায় স্ত্রী লাকী বেগমের (২০) নিকট স্বামী ওসমান এক হাজার টাকা চান। টাকা দিতে অস্বীকার করলে লাকী বেগমের সঙ্গে ওসমানের কথা কাটাকাটি হয়। এক পর্যায়ে ওসমান স্ত্রী লাকী বেগমকে বসতবাড়ির পশ্চিম পাশে গোয়ালঘরের সংলগ্ন টিউবওয়েলপাড়ে ধারালো ছুরি দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করে। পরদিন ২০ আগষ্ট নিহত লাকী বেগমের বাবা আব্দুর রহিম বক্স বাদি হয়ে ওসমানকে আসামি দিয়ে ইসলামপুর থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। পরে ২১ আগষ্ট অভিযোগটি আমলে নিয়ে হত্যা মামলা রুজু করে পুলিশ। মামলা নম্বর ১৮। তদন্ত শেষে ২০১৩ সালের ১০ জানুয়ারি লাকী বেগমকে হত্যার দায়ে স্বামী ওসমানকে অভিযুক্ত করে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করে পুলিশ।

আদালত সূত্রে জানা গেছে, আসামি ওসমান মারা গেছে মর্মে তার আইনজীবী ২০১৭ সালের ১১ এপ্রিল  আদালতে একটি লিখিত দরখাস্ত দাখিল করেন। জামালপুরের বিজ্ঞ অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালত বরাবর দাখিলকৃত 'আসামির মৃত্যু সংবাদ প্রসঙ্গে' বিষয়ভিত্তিক ওই দরখাস্তের প্রথমাংশে উল্লেখ করা হয়, দায়রা ১৬২/১৩। বাদী- রাষ্ট্র। আসামি ওসমান আলী। ধারা ৩০২ দণ্ডবিধি।

দরখাস্তের মূল বক্তব্যে লেখা হয়, নিবেদন এই, উপরোক্ত নম্বর মোকদ্দমাটির উল্লেখিত আসামি বিগত ১০.০৪.২০১৭ তারিখে সকাল ১০ ঘটিকায় কিডনিজনিত কারণে মৃত্যুবরণ করেছেন। আসামির মৃত্যু সংবাদ অত্র দরখাস্ত বিজ্ঞ আদালতকে অবগত করানো হলো।

আসামি পক্ষের আইনজীবী একেম হারুন অর রশীদ স্বাক্ষরিত 'জাতীয় আইনগত সহায়তা প্রদান সংস্থা' লেখাসংবলিত গোলাকার সিলযুক্ত ওই দরখাস্তের শেষাংশে লেখা হয়, অতএব প্রার্থনা উপরোক্ত অবস্থাধীন প্রয়োজনীয় ব্যবস্থাগ্রহণ করতে আজ্ঞা হয়।

জামালপুর জজ আদালতের ইসলামপুর থানার ফৌজদারি মোকদ্দমার দায়িত্বপ্রাপ্ত জিআরও (জেনারেল রেকর্ডস অফিস) আব্দুর রাজ্জাক বলেন, 'মামলাটির বিচার কার্য চলাকালে ৬ বছর আগে কিডনি রোগজনিত কারণে আসামি ওসমান মারা গেছেন মর্মে আসামি পক্ষের আইনজীবী আদালতে লিখিত আবেদন দাখিল করেন। ওসমানের মৃত্যুর বিষয়টি আমলে না নিয়ে তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন আদালত।

ইসলামপুর থানার গ্রেপ্তার পরোয়ানা তামিলকারী কর্মকর্তা ও উপপরিদর্শক (এসআই) মো. আক্রাম হোসেন বলেন, 'আদালত থেকে গত ৫ এবং ৮ ফেব্রুয়ারি আসামি ওসমানের বিরুদ্ধে পৃথক দুইটি গ্রেপ্তার পরোয়ানা আসে থানায়। ইতিমধ্যে আমরা জানতে পারি, আসামি ওসমানকে 'মৃত' উল্লেখ করে আদালতে দরখাস্ত দাখিল করা হয়েছে। অবশেষে আমরা ওসমানকে গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয়েছি।'

ইসলামপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) সুমন তালুকদার বলেন, 'স্ত্রীকে হত্যার পর সাজার ভয়ে টানা ৬ বছর মারা যাওয়ার নাটক করে আসছিল আসামি ওসমান। অবশেষে গ্রেপ্তারী পরোয়ানা মূলে গ্রেপ্তাকৃত ওসমানকে রাতে আদালতে হাজির করলে সংশ্লিষ্ট বিচারক তাকে কারাগারে প্রেরণের আদেশ দেন।'

আসামি ওসমানের বাবা মো. বাচ্চু ফকির বলেন, 'হত্যাকাণ্ডে শিকার লাকী বেগমের বাবা আব্দুর রহিম বক্স বলেন, 'মামলার পর পুলিশ ওসমানকে গ্রেপ্তার করে। কিছুদিন পর আদালত থেকে জামিনে বের হয় ওসমান। আর্থিক অনটনে সংসার চালাতে হিমশিমে পড়ায় নিয়মিত মামলার খোঁজখবর নিতে পারিনি।'

বেলগাছা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান আব্দুল মালেক বলেন, 'ওসমানের মৃত্যু হয়েছে মর্মে 'মৃত্যু সনদপত্র' আমার কাছে নেওয়া হয়নি। ওই সময়ে আমি চেয়ারম্যান পদে দায়িত্বেও ছিলাম না।'

আসামি ওসমানের আইনজীবী একেম হারুন অর রশীদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি মোবাইল ফোনে বলেন, 'আমি ১০ বছর আগে মামলাটি পরিচালনা করতাম। এখন ওই মামলাটির বিষয়ে কিছুই জানি না। আসামি ওসমানের মৃত্যু সংবাদ অবগত করতে আদালতে দরখাস্তের বিষয়েও আমি অবগত নই।' 








আরও খবর