শ্রীপুরে দফায় দফায় হামলা ও ভাঙচুর, অর্ধশতাধিক বাড়িঘর ও দোকানপাটে লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ
শ্রীপুরে দফায় দফায় হামলা ও ভাঙচুর, অর্ধশতাধিক বাড়িঘর ও দোকানপাটে লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ মোঃ নুরুল হুদা শ্রীপুর উপজেলা প্রতিনিধি
শ্রীপুর (মাগুরা
মাগুরার শ্রীপুরে দফায় দফায় হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনায় দুই গ্রুপের অর্ধশতাধিক বাড়িঘর ও দোকানপাটে লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। প্রতিপক্ষের অতর্কিত হামলায় এ ব্যাপক ভাঙচুর-লুটপাটের ঘটনা ঘটেছে বলে দাবি করছে উভয় পক্ষ। হামলায় ইউনিয়ন মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডেন্টের সাবেক কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা কাওছার শেখের বাড়িতে ব্যাপক হারে ভাঙচুর ও লুটপাট চালানো হয়েছে।
১৪ জুন শনিবার রাতে ও ১৫ জুন রবিবার সকালে উপজেলার সব্দালপুর ইউনিয়নের তিনটি গ্রাম আমতৈল-তারাউজিয়াল ও নোহাটায় এ ঘটনা ঘটে। এ সময় অন্তত ১০ জন নারী-পুরুষ আহত হয়েছে। তবে হামলার শিকার হয়েও জড়িতদের নিয়ে মুখ খুলতে চাননি একাধিক পরিবার। তাদের আশংকা গণমাধ্যমে কথা বললে আবারো হামলা ও ভাঙচুরের শিকার হতে পারে পরিবারের লোকজন ও বসতবাড়ি।
নাম প্রকাশ্যে অনিচ্ছুক একাধিক ভুক্তভোগীরা জানান, দীর্ঘদিন ধরেই আমতৈল, নোহাটা, তারাউজিয়াল এই তিনটি গ্রামে দুই গ্রুপের আধিপত্য বিস্তারে একাধিক সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে একটি পক্ষের নেতৃত্ব দেন
বিশিষ্ট ব্যবসায়ী রফিকুল ইসলাম মিয়া ও হারুক আহম্মেদ ও ইউপি চেয়ারম্যানের স্বামী সিরাজুল ইসলাম। অপর পক্ষের নেতৃত্ব রয়েছে ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সাধারন সম্পাদক সাচ্ছু, সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান সমির, বিএনপি নেতা লিপ্টন মিয়া, মিজানুর রহমান টিটো, কর্নেল, কবির, স্কট ও ফারুক মেম্বার।
হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনায় ভুক্তভোগীরা জানান, পূর্ব শত্রুতার জের ধরে আমতৈল, তারাউজিয়াল ও নোহাটা গ্রামের লিপ্টন মিয়া, মিজানুর রহমান টিটো, কর্নেল, কবির, স্কট ও ফারুক মেম্বারের নেতৃত্বে শনিবার রাতে প্রথম দফায় হামলা ও ভাঙচুর চালানো হয়। এর পর রবিবার সকালে আবারো একই পরিবারগুলোতে হামলা ও লুটপাটসহ অগ্নিসংযোগ করেন তারা। এতে ওই গ্রামের পলাশ, জাফর, আসাদ, বিল্লাল, জিল্লু, আলমগীর, জাহাঙ্গীর, ইকবাল, মুক্তিযোদ্ধা শেখ কাওছার আলী, মোসলেম, আজিজ, সরোয়ার, হাফিজার, বেদেনা ও আতর শেখসহ অন্তত অর্ধশতাধিক বাড়িতে ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এ সময় এখলাস শেখের স্ত্রী তার একটি ঘর পুড়িয়ে দেওয়ার অভিযোগ করেন। এছাড়াও হামলাকারীরা ঘরের দামি আসবাবপত্র, স্বর্ণালঙ্কার, চাল, ডাল, পেঁয়াজ, গরু-ছাগলও নিয়ে যায় বলে তারা জানান।
রবিবার সকালে প্রতিপক্ষের হামলায় আব্দুস সামাদ শেখ (২৪) আশিকুজ্জামান (৪৫), যমুনা (২৫), মনি (৪৫), পল্টু (৪৫), লেলিন সহ অন্তত ১০ জন মারাত্মক আহত হয়। আহতরা বর্তমানে শ্রীপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, মাগুরা ২৫০ শয্যা সদর হাসপাতাল ও ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে।
হামলায় আহত লেলিন বিশ্বাস জানান, শনিবার সন্ধ্যায় মনিকুলের দোকান এলাকায় একটি ক্লাব ঘরে যায়। সেখান থেকে আমার উপর রামদা, সড়কিসহ দেশীয় অস্ত্র নিয়ে অতর্কিত হামলা চালানোর চেষ্টা করে লিপ্টন গ্রুপের লোকজন। আমি তখন দ্রুত পালিয়ে যায়। কিন্তু রাতে আমি বাড়িতে ঘুমিয়ে ছিলাম হঠাৎ সকাল ৬ টার দিকে লিপ্টন গ্রুপের ৫০০-৬০০শ লোকজন আমার বাড়ি ঘিরে ফেলে তখন আমি পালিয়ে যেতে গিয়ে তাদের হাতে ধরা পড়ি। এসময় আমাকে ধারালো সড়কি দিয়ে উপর্যুপরি কুপিয়ে ফেলে রেখে যায়। এসময় হামলার নেতৃত্ব দেন আওয়ামী লীগ নেতার ভাই মিজানুর রহমান টিটো, কর্ণেল, টিটন, রাজন, মিরাজসহ অনেকে।
হামলার ঘটনা অস্বীকার করে পাল্টা অভিযোগ তুলে ইউনিয়ন বিএনপি নেতা লিপ্টন জানান, রবিবার ভোর সকাল ৬ টার দিকে প্রতিপক্ষের লোকজনই আগে আমাদের সামাজিক দলের সমর্থকদের বাড়িঘরে হামলা চালিয়ে অন্তত চারটি বাড়ি ভাঙচুর ও লুট করে। আমরা পরে শুধু তাদেরকে প্রতিরোধ করেছি।
এ সময় বিএনপি নেতা লিপ্টন সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান সমির হোসেন ও সাবেক ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক সাচ্ছুর নেতৃত্বে প্রতিপক্ষকে প্রতিরোধ করার কথা জানালেও সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান সমির হোসেন এ ঘটনার সাথে জড়িত নয় বলে দাবি করেছেন।
এ বিষয়ে শ্রীপুর থানা অফিসার ইনচার্জ ইদ্রিস আলী জানান, খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। সকালে সেনাবাহিনী ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়। বর্তমানে এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন রয়েছে।
মোহাম্মদ নুরুল হুদা
শ্রীপুর উপজেলা প্রতিনিধি
শ্রীপুর মাগুরা