আধুনিক যুগে অনেকে বিবাহ টেলিফোনে সম্পন্ন করে থাকেন। অনেক সময় দেখা যায় চাকুরী বা ব্যবসায়ের কারণে বর বিদেশে অবস্থান করছেন এবং কনে দেশে বসবাস করছেন। বর ও কনের অভিভাবকরা সাধারণত এই ধরনের বিবাহের আয়োজন করে থাকেন। বিবাহের আগে বর বা কনের একে অপরের সাথে দেখা-সাক্ষাতও হয়... না। হয়ত টেলিফোনের মাধ্যমে একে অপরের সাথে কথা বলে থাকেন। মুসলিম আইনে এই বিবাহ সঠিক কিনা এ নিয়ে অনেকে বিভিন্ন রকম কথা বলে থাকেন। এই ধরনের বিবাহের আইনগত বৈধতা নিয়েও অনেকে প্রশ্ন করেন ।
সাধারণ কথায় মুসলিম আইনে বিবাহ হচ্ছে একটি দেওয়ানী চুক্তি। কোনরূপ অনুষ্ঠান পালন ছাড়াই একটি বিবাহ অনুষ্ঠিত হতে পারে। বিবাহ করতে বিশেষ কোন আচার অনুষ্ঠান পালন বাধ্যতামূলক নয়। তবে একটি মুসলিম বিবাহে কিছু শর্ত পালন করতে হয়। এগুলো হচ্ছে-
ক) বিবাহের এক পক্ষ কর্তৃক বিবাহের ইজাব বা প্রস্তাব করতে হবে এবং অপর পক্ষ কর্তৃক তা কবুল বা গ্রহণ করতে হবে।
খ) হানাফী মাযহাব অনুসারে প্রাপ্তবয়স্ক এবং সুস্থ মস্তিস্কসম্পন্ন কমপক্ষে দু'জন সাক্ষী থাকতে হবে। সাক্ষীদ্বয়ের দু'জনই পুরুষ অথবা একজন পুরুষ ও দু'জন মহিলা হতে হবে । তবে শিয়া মাযহাব অনুসারে সাক্ষীর প্রয়োজন নেই।
গ) বিবাহের সময় উচ্চারিত শব্দাবলী অবশ্যই স্পষ্ট এবং দ্বর্থহীন হতে হবে।
ঘ) বিবাহের পক্ষদ্বয়কে অবশ্যই সুস্থ মস্তিস্কসম্পন্ন ও প্রাপ্তবয়স্ক হতে হবে। কনের বয়স কমপক্ষে ১৮ বছর এবং বরের বয়স ২১ বছর হতে হবে।
ঙ) প্রস্তাব এবং উহার গ্রহণ একই বৈঠকে উচ্চারিত হতে হবে।
টেলিফোনের মাধ্যমে অনুষ্ঠিত বিবাহে যদি উপরোক্ত শর্তসমূহ পালন করা হয় তবে উক্ত বিবাহ বৈধ বলে বিবেচিত হবে। অর্থাৎ টেলিফোন বিবাহে বর অথবা কনে একপক্ষ বিবাহের প্রস্তাব বা ইজাব করবে এবং অপর পক্ষ তা গ্রহণ বা কবুল বলবে, পক্ষদ্বয় হানাফী মাযহাবের হলে বিবাহে সাক্ষী উপস্থিত থাকবে, শিয়া মাযহাবের হলে সাক্ষীর প্রয়োজন নেই, বিবাহের সময় উচ্চারিত শব্দাবলী অবশ্যই স্পষ্ট এবং দ্বর্থহীন হবে, পক্ষদ্বয় প্রাপ্তবয়স্ক ও সুস্থ মস্তিস্কসম্পন্ন হবে এবং প্রস্তাব ও গ্রহণ একই বৈঠকে (টেলিফোনের এক প্রান্ত থেকে সাক্ষীদ্বয়ের উপস্থিতিতে প্রাপ্তবয়স্ক বর বা কনে একজন বিয়ের প্রস্তাব করবে এবং অপরজন তা কবুল বলবে) উচ্চারিত হবে।
তবে টেলিফোনের মাধ্যমে অনুষ্ঠিত বিবাহে যদি রেজিষ্ট্রেশন করা না হয় তাহলে স্ত্রী বেশ কিছু সুবিধা লাভ থেকে বঞ্চিত হয়। ধরা যাক, টেলিফোনের মাধ্যমে অনুষ্ঠিত একটি বিবাহ রেজিষ্ট্রি করা হয়নি। বিবাহের পরবর্তী স্বামীর সাথে স্ত্রীর দাম্পত্য জীবনে বিভিন্ন সমস্যা দেখা দিয়েছে। এমতাবস্থায় স্ত্রী তার অধিকার আদায়ে আদালতে গেলে তেমন কোন সুবিধা পাবেন না। কারণ বিবাহ রেজিষ্ট্রি না করায় স্ত্রীর কাছে বিবাহের কোন কাবিননামা বা ডকুমেন্ট থাকে না। কাবিননামা না থাকায় স্বামী বিবাহটি অস্বীকার করতে পারে। ফলে স্ত্রী তার আইনগত অধিকার লাভ থেকে বঞ্চিত হবেন। তাই টেলিফোনে অনুষ্ঠিত প্রতিটি বিবাহ রেজিষ্ট্রি হওয়া জরুরী। অন্যথায় আদালতে এই ধরনের বিবাহ প্রমাণ করা কঠিন হয়ে পড়ে। ফলে এ ধরনের বিবাহের আইনগত কোন বৈধতা থাকে না।
১ ঘন্টা ৩৫ মিনিট আগে
১ ঘন্টা ৩৭ মিনিট আগে
১ ঘন্টা ৪০ মিনিট আগে
২ ঘন্টা ১০ মিনিট আগে
৩ ঘন্টা ৩৮ মিনিট আগে
৩ ঘন্টা ৫২ মিনিট আগে
৪ ঘন্টা ৪৮ মিনিট আগে