ঘড়ির কাঁটায় বিকাল পৌঁনে ৫টা। সোনাইমুড়ী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স জরুরী বিভাগে প্রতিপক্ষের হামলায় আহত একজন রোগী আসেন,অসহ্য যন্ত্রণায় চিৎকার করছে। নাম জুয়েল (২৭), পেশায় তিনি রং মিস্ত্রি। জরুরী বিভাগের ডাঃ উম্মে হাবিবা প্রমি হাসপাতারে নেই। তিনি পাশের বিল্ডিংয়ের ডক্টরস চেম্বারে প্রাইভেট রোগী দেখছেন।
এসময় গুরুতর আহত জুয়েল চিৎকার করছিলের ব্যাথায়। তার বৃদ্ধ মা কোহিনুর বেগম ডাক্তার খোজাখুজি করছেন।
ডাক্তার না থাকায় জরুরী বিভাগের দায়িত্বরত পিয়ন ইব্রাহিম এদিক-সেদিক ছোটাছুটি করছিলেন। পরে পাশের ডক্টরস চেম্বারে দৌড়ে গিয়ে চিকিৎসককে খবর দেন জরুরী বিভাগে রোগী এসেছে।
পরে ওই চিকিৎসকের অনুমতিতে পিয়ন নিজেই রোগীর ড্রেসিং শুরু করে দেন। প্রায় ১ ঘন্টা পরে ঐ কর্তব্যরত ডাক্তার এসে রোগীকে ভর্তি না করে ব্যবস্থাপত্র ধরিয়ে দেন। পরে রোগীর লোকজনের চাপে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ভর্তি নেন ওই ডাক্তার।
জানা গেছে, শুধু মাঝে মধ্যে নয়, সোনাইমুড়ী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স জরুরী বিভাগে নিয়মিতভাবেই এমন দায়িত্ব পালন করছেন পিওন ও বাবুর্চি। নিয়ম অনুযায়ী জরুরী বিভাগে দায়িত্বরত চিকিৎসকের ২৪ ঘন্টা সেবা দেওয়ার নিয়ম রয়েছে। কিন্তু এই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ডাক্তার থাকেন না। ডাক্তাররা তাদের কর্ম ঘন্টায় আবাসিক কোয়াটার ও ডক্টরর্স চেম্বারে ঘুমান। কোন রোগী এলেই পিওন অথবা রোগীর স্বজনেরা ডাক্তারকে ডেকে আনতে হয়। এই ঘটনা নিত্য দিনের। এ সুযোগে জরুরী বিভাগের পিওন ইব্রাহিম, জুয়েল, মোহন, শহিদ ও বাবুর্চি ওহিদুল আলম ডাক্তারদের পরিবর্তে চিকিৎসা দেন। পিওন-বাবুর্চি সার্জিক্যাল কাজ করে থাকেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় বাসিন্দা জানান, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের পিওন ইব্রাহিম কখনো কখনো অফিসিয়াল ফাইল আনানেওয়া করতে দেখা যায়। আবার কখনো কখনো দেখা যায় হাসপাতালের জরুরী বিভাগে চিকিৎসা দিচ্ছে। জরুরী বিভাগে আগত রোগীদের কাটা-ছেঁড়া স্থান সেলাই, ড্রেসিং ও ব্যান্ডেজ করতে। হাসপাতালে ডাক্তারের উপস্থিতি ছাড়াই এই বিভাগে প্রতিদিন দু-একজন করে টাকার বিনিময়ে খৎনা করান পিওন ইব্রাহিম ও বাবুর্চি ওয়াহিদুল আলম।
বাবুর্চি ওয়াহিদুল আলমের চাকরিতে যোগদানের পর থেকে এই হাসপাতালেই দায়িত্বরত আছেন। তিনি স্থানীয় হওয়ায় তার দাপটে কর্মকর্তা-কর্মচারিরা অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছেন। রোগীদের খাবার রান্না বিতরনের পাশাপাশি জরুরী বিভাগে চিকিৎসকের পরিবর্তে সেলাই-ড্রেসিং সহ বিভিন্ন চিকিৎসা দিয়ে থাকেন।
চিকিৎসা নিতে আসা উপজেলার আবির পাড়া গ্রামের বৃদ্ধ কোহিনূর বেগম জানান, তার ছেলেকে প্রতিপক্ষরা মারধোর করেছে। গুরুতর আহত অবস্থায় হাসপাতালে আসলে ডাক্তার না থাকায় পিওন ইব্রাহিম তার ছেলেকে চিকিৎসা দিয়ে ৫০০ টাকা দাবি করেন। সেই টাকা দিতে অনিহা প্রকাশ করায় তার সাথে দুর্ব্যবহার করেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক হাসপাতালে এক কর্মচারী অভিযোগ করে জানান, জরুরী বিভাগে পিওন-বাবুর্চি চিকিৎসা দেন এটা সঠিক। চিকিৎসা দিয়ে রোগীর স্বজনদের কাছে টাকা দাবি করেন। টাকা নিয়ে অনেক সময় জরুরী বিভাগের সামনে রোগীর লোকেদের সাথে হাতাহাতির ঘটনাও ঘটে।
জরুরী বিভাগের দায়িত্বরত পিয়ন ইব্রাহিম বলেন, তিনি পার্শ্ববর্তী উপজেলা বেগমগঞ্জের জনৈক জনপ্রতিনিধির লোক। ডাক্তাররাই তাকে চিকিৎসা দিতে নির্দেশ দিয়েছেন।
সোনাইমুড়ী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ইসরাত জাহানের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হয়। তবে এসকল অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি কথা বলতে রাজি হননি। প্রতিবেদ
৯ ঘন্টা ৫ মিনিট আগে
৯ ঘন্টা ১৩ মিনিট আগে
৯ ঘন্টা ২২ মিনিট আগে
৯ ঘন্টা ৩৯ মিনিট আগে
১০ ঘন্টা ৬ মিনিট আগে
১০ ঘন্টা ১৬ মিনিট আগে
১০ ঘন্টা ৫৪ মিনিট আগে
১০ ঘন্টা ৫৬ মিনিট আগে