আশাশুনির পুইজালায় বসত ঘরের গা ঘেঁষে ১৮ মিটার আরসিসি
গার্ডার ব্রীজ নির্মাণের ফলে বসতঘর হারিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলো ক্ষতি
পূরণ দাবি করেছেন। মাটি খুঁড়ে ব্রীজের দু'পাশের ওয়াল নির্মাণের ফলে
ইতোমধ্যেই ৪টি পরিবারের একাধিক বসতঘর ও রান্না ঘর ভেঙে পড়েছে। ক্ষতি পূরণ
বা পূণর্বাসনের কোন ব্যবস্থা বা নিশ্চয়তা না থাকায় চরম বিপাকে পড়েছেন
তাঁরা। এরপর ব্রীজের দু'পাশে সংযোগ সড়ক নির্মাণ করা হলে অবশিষ্ট ঘর ছেড়ে
তাদের অন্যত্র চলে যাওয়া ছাড়া উপায় নেই তাই ব্রীজটি শেষ করার আগেই
ক্ষতিপূরণ বা পূণর্বাসনের দাবি জানিয়েছেন ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলো।
আশাশুনি
উপজেলা প্রকৌশলীর কার্যালয় থেকে জানা গেছে, শ্রীউলা ইউনিয়নের প্রত্যন্ত
অঞ্চলে যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নের কথা ভেবে ২ কোটি ৮৫ লক্ষ ৫২ হাজার ১৩৬
টাকা চুক্তি মূল্যে ১৮ মিটার দৈর্ঘ্যের একটি আর সিসি গার্ডার ব্রীজ
নির্মাণের উদ্যোগ নেয় উপজেলা প্রকৌশল অধিদপ্তর। সে মোতাবেক উর্ধ্বতন
কর্মকর্তারা ২০২২সালে মাপ জরীপ করে স্থান নির্ধারণ করেন। এরপর উপরোক্ত
চুক্তি মূল্যে বাগেরহাটের ঠিকাদার শেখ ইদ্রিস আলী ১৩/০২/২০২২ তারিখে কাজ
শুরু করেন। কিন্তু ব্রীজের দুই দিকের ওয়াল নির্মাণের জন্য মাটি খুঁড়তে
শুরু করলে স্থানীয় লোকজন বাঁধা দিতে থাকেন। কারণ উত্তর দিকে ব্রীজের ওয়াল
থেকে মাত্র ১০/১২ ফুটের ভেতরে পুইজালা গ্রামের মোঃ সাবুর আলী ও লিয়াকত
আলীর বসত ঘর এবং দক্ষিণ পাশে একই দুরত্বে থানাঘাটা গ্রামের শহর আলী ও
রাজমিস্ত্রী আদম আলীর বসত ঘর। কিন্তু পুইজালা গ্রামের ঠিকাদার আব্দুল
মান্নান ঠিকাদারের (ইদ্রিস আলী) পক্ষ হয়ে তাদের সমস্ত রকম ক্ষতি পূরণের
জন্য নিশ্চয়তা দিয়ে কাজ শুরু করান। এরপর ব্রীজের দু'পাশে মাটি খোঁড়া
শুরু হলে ধ্বস নেমে সাবুর আলী ও লিয়াকত আলীর দুটি বসত ঘর ভেঙে পড়ে। এখন
তারা বারান্দায় কোন রকমে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। একই ভাবে অপরদিকের শহর
আলী ও রাজমিস্ত্রী আদম আলীর বসতঘর ও রান্না ঘর ভেঙে পড়ায় তারা এখন ত্রিপল
টাঙিয়ে রাত্রিযাপন করেন।
ঠিকাদারের পক্ষ থেকে শুধু
দুটি ত্রিপল সহযোগিতা করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন রাজমিস্ত্রী আদম আলী।
প্রায় একই ভাবে পার্শ্ববর্তী মোটরসাইকেল চালক কাজল ক্ষতিগ্রস্ত।
ক্ষতিগ্রস্ত
সাবুর আলী, লিয়াকত আলী, শহর আলী ও আদম আলী সাংবাদিকদের জানান, আমাদের
প্রতিবেশী ঠিকাদার আব্দুল মান্নান আম্ফানে খোলপেটুয়া নদীর বাঁধ ভেঙে যখন
এলাকায় জোয়ার ভাটা চলমান ছিল সেসময় কয়েক জন লোক নিয়ে মাপজোক করে চলে
যায়। পরে জেনেছি এখানে ব্রীজ নির্মাণ করা হবে। ব্রীজ নির্মাণ হলে আমাদের
ঘরবাড়ি ভাঙতে হবে কি না জানতে চাইলে মান্নান সরদার বলেন কোন সমস্যা হবে
না। আর হলে আমি দেখবো। কাজ শুরুর সময় বাঁধা দিলে মান্নান সরদার বলেন
ইদ্রিস আলীর সাথে কথা বলে ব্যবস্থা করা হবে। এ নিয়ে আমরা উপজেলা নির্বাহী
কর্মকর্তা বরাবর আবেদন করলে সেখানেও মান্নান সব দেখবে বলে আমাদের ফেরত
নিয়ে আসে। ইদানিং তার সাথে ক্ষতিপূরণের কথা বলতেই সে আর কথা না বলে
এড়িয়ে চলছেন। এখন ব্রীজের স্লাব তৈরির কাজ চলছে। আগামী ৩১ /০৫/২০২৪
তারিখের মধ্যে কাজটি শেষ করতে হবে।
সংযোগ সড়ক
নির্মাণ করা হলে আমাদের ঘরবাড়ি ছাড়া আর কোন উপায় নেই। তারা বলেন এতো
জায়গা থাকতে এই প্রত্যন্ত অঞ্চলে আমাদের ঘর ভেঙে ব্রীজ নির্মাণ না করে
একটু সরিয়ে করলে কি ক্ষতি হতো? আর আমাদের ঘর ভেঙে যদি ব্রীজটি নির্মাণ অতি
জরুরী হয়ে থাকে তবে আমাদের ক্ষতি পূরণের ব্যবস্থা করা হোক।
এ
ব্যাপারে ইউপি চেয়ারম্যান প্রভাষক দিপংকর বাছাড় দীপু বলেন, এতো জায়গা
রেখে মানুষের ঘরবাড়ি ভেঙে ব্রীজ নির্মাণের প্রয়োজনীয়তা বোধগম্য নয়।
এছাড়া
নদী পথে ব্রীজের মালামাল সরবরাহ না করে তারা আমাদের ইটের সোলিং রাস্তা
গুলোকে আরও নষ্ট করে দিয়েছে। মানুষের সুবিধা অসুবিধা বিবেচনা না করে ইচ্ছে
মতো কাজ করা ঠিক হয়েছে কিনা জানিনা। ক্ষতিগ্রস্ত মানুষ গুলো যেভাবে
ক্ষতিপূরণ অথবা পূণর্বাসনের আওতায় আসবে তার ব্যবস্থা করতে সংশ্লিষ্ট
কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করছি।
এ ব্যাপারে
আশাশুনি উপজেলা প্রকৌশলী মোঃ নাজিমুল ইসলামের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন,
আমার আগের কর্মকর্তার আমলে বরাদ্দ হয়েছে। চলমান বরাদ্দে ক্ষতিগ্রস্তদের
ক্ষতি পূরণের কোন ব্যবস্থা নেই। ঠিকাদারকে আপাতত কয়েক দিন কাজ বন্ধ রাখতে
বলা হয়েছে। আব্দুল মান্নান সরদার কি বলেছেন বা কি প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন
জানা নেই। সেখানকার পরিস্থিতি নিয়ে জেলা নির্বাহী প্রকৌশলী স্যারের সাথে
কথা বলবো।প্রয়োজনে স্যার ঘটনাস্থলে গিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের সাথে কথা
বলে পরবর্তী পদক্ষেপ নেবেন।###