আকাশে মেঘ আর নদীর পানির উচ্চতা বাড়লেই আতঙ্ক বাড়ে পায়রা নদী বেষ্টিত মির্জাগঞ্জ উপজেলা সহ পটুয়াখালী-বরগুনা উপকূল জুড়ে। সেই সঙ্গে আবহাওয়া অধিদপ্তরের বিপদ সংকেত আতঙ্কের তীব্রতা বাড়িয়ে দেয় কয়েক গুণ। বঙ্গোপসাগরে সৃষ্টি হওয়া গভীর নিম্নচাপ ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিলে তা আজ রাতেই পটুয়াখালী-বরগুনাসহ দেশের অন্যান্য উপকূলে আঘাত হানতে পারে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। এই নিম্নচাপের প্রভাবে গতকাল শনিবার বিকেল থেকেই শুরু হয় বৃষ্টি ও দমকা হাওয়া। আজ বিকেলের দিকে এর তীব্রতা বাড়তেই থাকে। এর ফলেই আতঙ্কিত হয়ে পড়েন মির্জাগঞ্জ উপজেলার বেড়িবাঁধ সংলগ্ন বিভিন্ন এলাকায় বসবাস করা হাজার হাজার মানুষ।
এই উপজেলার মোট ছয়টি ইউনিয়নের মধ্যে পাঁচটি ইউনিয়নই পায়রা নদীবেষ্টিত। আর এসব ইউনিয়নের নদী তীরবর্তী বেড়িবাঁধ গুলোর অবস্থা খুবই নাজুক ও নড়বড়ে। নেই কোন ব্লোক ব্যবস্থা। সামান্য স্রোতেই যেকোন সময় ভেঙ্গে যেতে পারে এই অরক্ষিত বেড়িবাঁধ। পায়রায় যেকোনো মূহুর্তে ভাসিয়ে নিয়ে যেতে পারে বসতভিটাসহ ফসলি জমি।
অপর দিকে সামনেই বর্ষা মৌসুম। আর বর্ষার শুরুতেই শুরু হয় পায়রার বিরামহীন ভাঙ্গন। তাই বর্ষা মৌসুম এলেই ভয় আর আতঙ্কে দিন কাটে এখানকার মানুষদের। কখন যেন পায়রার গ্রাসে সহায়সম্বল সবটুকু নদীতে চলে যায়। এদিকে হুমকির মুখে রয়েছে উপজেলার কাকড়াবুনিয়া বাজার ও গোলখালী স্লুইসগেট। এগুলো যেকোন জলোচ্ছ্বাস কিংবা বর্ষা মৌসুমে পূর্ণিমার জোঁ'তে যেকোনো সময় স্রোতের তোপে দুমড়েমুচড়ে বিলিয়ে যেতে পারে পায়রার বুকে।
এভাবে প্রতি বছরই বঙ্গোপসাগরের লঘু চাপের সৃষ্টি হলে চরম আতঙ্ক ও উৎকণ্ঠায় এবং বর্ষা মৌসুমে দুর্বিষহ জীবন পার করতে হয় পায়রা পারের বসতিদের। আর বর্ষা শেষে ভেঙে যাওয়া বেড়িবাঁধে নামে মাত্র মাটি দিয়ে সংস্কারের নামে বরাদ্দ লুটপাট করে সংশ্লিষ্ট- এমনই মন্তব্য করেন বেড়িবাধ এলাকায় বসবাসকারী।
সরেজমিনে দেখা গেছে, পায়রা নদীর বিরামহীন ভাঙ্গনের মুখে দিনে দিনে ছোট হচ্ছে মির্জাগঞ্জের মানচিত্র। পায়রার তীব্র স্রোতে উপজেলার পিপঁড়াখালী শাহজাহান হাওলাদার বাড়ী সংলগ্ন বেড়িবাঁধটি অরক্ষিত হওয়ায় বসতবাড়িসহ কৃষিজমি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার সম্ভাবনা আছে। এছাড়াও প্রতিনিয়তই ভাঙ্গনের কবলে নদীর গর্ভে বিলিয়ে যাচ্ছে উপজেলার গোলাখালী, চরখালী, মেহিন্দাবাদ, কাকড়াবুনিয়া, ভয়াং, রামপুর, সন্তোসপুরসহ বিভিন্ন এলাকার বেড়িবাঁধ। ইতোমধ্যে পায়রা নদী গিলে নিয়েছে সুন্দ্রা কালিকাপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়, সুন্দ্রা প্রাথমিক বিদ্যালয়, রামপুর দাখিল মাদ্রাসা।
আর এসমস্ত এলাকার বেড়িবাঁধের বর্তমান অবস্থা খুবই খারাপ। বর্ষা এলেই ভাঙ্গা বাঁধ দিয়ে জোয়ারের পানি ঢুকে প্লাবিত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে ওই সমস্ত এলাকার ফসিল জমি ও ঘরবাড়ির। বেড়িবাঁধগুলোর এমনই দূর্বস্থা পরিলক্ষিত হয়েছে যে, জলোচ্ছ্বাস তো দূরের কথা পায়রার দুই একটা ঢেউয়ের তোরেই যেকোন সময় বিলীন হয়ে যাওয়ার সম্ভবনা রয়েছে।
স্থানীয় আলী আকবর, ইমরান ও খালেকসহ উপজেলার বিভিন্ন বেড়িবাধ সংলগ্ন বাসিন্দারা বলেন, মজবুত বেড়িবাঁধ না থাকায় প্রতিনিয়ত ভাঙ্গতে ভাঙ্গতে আমাদের যা ছিলো সবই নদীতে গেছে। পায়রা নদীর সাথে লড়াই করে বেঁচে থাকতে হয় আমাদের। এখন বেড়িবাঁধের যে অবস্থা তা বৃষ্টি আসলে জোয়ারের পানিতেই ভাসিয়ে নিয়ে যাবে। তখন মাথাগোঁজার মতো ঠাই টুকুও থাকবে না। প্রতিবছর শুনি ব্লোকসহ টেকসই বেড়িবাঁধ হবে কিন্তু বাস্তবে দেখা নাই। আমাদের একটাই দাবি ত্রান নয়, আমরা ব্লোকসহ টেকসই বেড়িবাঁধ চাই।
ইউপি সদস্য মোঃ রুমান হোসেন বলেন, এলাকার বেড়িবাঁধ ভাঙ্গাচুড়া ও দূর্বল অবস্থা। বড় ধরনের কোন বন্যা বা জলোচ্ছ্বাস হলে গরীব মানুষের বাঁচার কোন উপায় থাকবে না। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে অনুরোধ যাতে এই বাঁধগুলো শক্ত করে তৈরি করা হয়।
উপজেলা চেয়ারম্যান খান মোঃ আবু বকর সিদ্দিকী বলেন, ঘূর্ণিঝড় রেমাল মোকাবেলা ও জনসাধারণের জানমালের ক্ষতি কমাতে ইতিমধ্যেই উপজেলা জুড়ে সচেতনতামূলক কার্যক্রম চালানো হচ্ছে। নদী ভাঙ্গনে উপজেলার অনেক মানুষই নিঃস্ব হয়েছে। বসতভিটাসহ ফসলি জমি হারিয়ে তারা এখন মানবেতর জীবনযাপন করছে। তাই পায়রা পাড়ের বাসিন্দাদের ও কৃষি রক্ষার্থে ব্লোকসহ টেকসই বেড়িবাঁধের নির্মাণের জন্য সংশ্লিষ্ট দপ্তরে কয়েকবার চিঠি পাঠিয়েছি এবং বারবার তাদের শরণাপন্ন হয়েছি। আশা করি খুব অল্প সময়ের মধ্যেই টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণের ব্যবস্থা নেয়া হবে..ইনশাআল্লাহ।
পটুয়াখালী পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ আরিফ হোসেন বলেন, ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে জলোচ্ছ্বাসে কোন এলাকার বেড়িবাঁধ ধ্বসে গেলে যত দ্রুত সম্ভব তা মেরামত করা হবে। আর বর্ষার আগেই ঝুঁকিপূর্ণ বেড়িবাঁধগুলো সংস্কার করা হবে। স্থায়ীভাবে ভাঙ্গন রোধের জন্য সমীক্ষা চলমান রয়েছে। রিপোর্ট হাতে পাওয়ার পরে সময়মতো আমরা কাজ করব।
৩ ঘন্টা ৪৯ মিনিট আগে
৩ ঘন্টা ৫১ মিনিট আগে
৩ ঘন্টা ৫৫ মিনিট আগে
৪ ঘন্টা ৫৫ মিনিট আগে
৯ ঘন্টা ৫৬ মিনিট আগে
১১ ঘন্টা ৫৮ মিনিট আগে
১৯ ঘন্টা ২২ মিনিট আগে