চৌদ্দগ্রামে আবুল হাশেম জনকল্যাণ ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে ইফতার সামগ্রী বিতরণ দোয়ারাবাজারে সংঘর্ষে আহত যুবকের মৃত্যু চৌদ্দগ্রামে ১১ মার্চ শহীদ দিবস উপলক্ষে ছাত্রশিবিরের ইফতার ও কোরআন উপহার প্রদান নাগরপুরে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার রোগমুক্তি কামনায় ইফতার ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত অভয়নগরে পুকুরের পানিতে ডুবে দুই শিশুর মৃত্যু বেগমগঞ্জে সৌদি প্রবাসীর বাড়িতে দুর্ধর্ষ ডাকাতি, নগদ টাকা ও স্বর্ণালংকার লুট শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে লাশের মিছিল আর দেখতে চায় না দেশবাসী: জামায়াত আমির নন্দীগ্রামে ওয়ার্ড জামায়াতের ইফতার মাহফিল অনুষ্ঠিত রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফেরাতে সব ধরনের কূটনৈতিক তৎপরতা চালাচ্ছে সরকার: প্রেস সচিব প্রশ্ন ফাঁসের অভিযোগে বাধ্যতামূলক ছুটিতে কুবি শিক্ষক কাজী আনিছ নন্দীগ্রামে গণহত্যা ও স্বাধীনতা দিবস উদযাপন উপলক্ষে প্রস্তুতিমূলক সভা কুবিতে শাহবাগ ও পতিত স্বৈরাচারের দ্রুত বিচারের দাবিতে মানববন্ধন আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসর নিলেন মাহমুদউল্লাহ কুবিতে উত্তরবঙ্গ ছাত্র পরিষদের ইফতার মাহফিল কুবি বিএনসিসি প্লাটুনের ইফতার মাহফিল অনুষ্ঠিত কুবিতে মার্কেটিং বিভাগের ইফতার ও দোয়া মাহফিল সংস্কার করে দ্রুত জাতীয় নির্বাচন দিতে হবেঃ মোংলায় বিএনপি নেতা কৃষিবিদ শামীমুর রহমান ঝিনাইদহের মহেশপুর সীমান্তে বিজিবি বিএসএফ’র পতাকা বৈঠকে দুই বাংলাদশী নাগরিককে হস্তান্তর শৈলকুপায় পাওনা টাকা চাওয়াকে কেন্দ্র করে দু’পক্ষের সংঘর্ষে ২০ জন আহত ঝিনাইদহে ধর্ষকের শাস্তির দাবিতে মানববন্ধন

আমার দেখা কোটা আন্দোলন

ইবতেশাম রহমান - রিপোর্টার

প্রকাশের সময়: 24-07-2024 07:42:28 pm

কোটা আন্দোলনের নামে বাংলাদেশের মানুষ সম্মুখীন হলো এক নতুন ইতিহাসের। বহুদিন ধরে চলে আসা কোটা সংস্কারের দাবিতে সর্বশেষ ১জুলাই রাজপথে নেমে আসে দেশের সাধারণ শিক্ষার্থীরা। চলে আন্দোলন, বিক্ষোভ, অবরোধ, বাংলা ব্লকেডের মত কর্মসূচি। আপামরসাধারণ শিক্ষার্থীদের ভাষা আন্দোলনের চেতনা নিয়ে রাজপথে স্লোগান দিতে দেখেছি। শহীদ হতে দেখেছি ক্যাম্পাসে একসাথে চায়ের আড্ডায় সময় কাটানো বড় ভাই আবু সাইদ-কে। 


১৯৭২ সালে চালু হওয়া কোটা ব্যবস্থার সংস্কারের দাবিতে ২০১৮ সালের জানুয়ারি থেকে শুরু হয় 'কোটা সংস্কার আন্দোলন'। আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশ সরকারের মন্ত্রিসভা সেই বছরের ৪ অক্টোবর সরকারি চাকরিতে নবম থেকে ১৩তম গ্রেডে (যেসব পদ আগে প্রথম এবং দ্বিতীয় শ্রেণীর চাকরি বলে পরিচিত ছিলো) নিয়োগের ক্ষেত্রে কোটা ব্যবস্থা বাতিল করে প্রজ্ঞাপন জারি করে। ২০২৪ সালের ৫ জুন বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগ কর্তৃক ২০১৮ সালের ৪ অক্টোবর সরকারি চাকরিতে নারী কোটা ১০ শতাংশ, মুক্তিযোদ্ধা কোটা ৩০ শতাংশ এবং জেলা কোটা ১০ শতাংশ বাতিল করে সরকার কর্তৃক জারি করা পরিপত্র অবৈধ ঘোষণা করার পর কোটা পদ্ধতির সংস্কার আন্দোলন ২০২৪ সালে নতুনভাবে আলোচনায় আসে। 


১ জুলাই

এদিন থেকে দেশের সকল পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে একযোগে শুরু হয় কোটা সংস্কারের আন্দোলন। ধীরে ধীরে আন্দোলনকারীরা নানা কর্মসূচি ঘোষণা করে। 


৭ জুলাই

শিক্ষার্থীরা 'বাংলা ব্লকেড' - এর ডাক দেয় ও দেশের বিভিন্ন মহাসড়ক অবরোধ করতে থাকে। 


১০ জুলাই

আন্দোলনের মুখে কোটাব্যবস্থা বাতিল করে মহামান্য হাইকোর্টের দেয়া রায়ে চার সপ্তাহ স্থিতাবস্থা দেওয়া হয়। প্রধান বিচারপতি শিক্ষার্থীদের ফিরে যাওয়ার অনুরোধ করেন।


১১ জুলাই

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে সর্বপ্রথম শিক্ষার্থীদের উপর পুলিশ হামলা করে। আহত হয় সাংবাদিক সহ সাধারণ শিক্ষার্থীরা। 


১৩ জুলাই

রেলপথ অবরোধ করে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। ঢাবির শিক্ষার্থীরা সন্ধ্যায় সংবাদ সম্মেলন করেন, তারা অভিযোগ করেন ‘মামলা দিয়ে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে বাধার চেষ্টা করা হচ্ছে’।


১৪ জুলাই

আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা ঢাকায় গণপদযাত্রা করে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করে। কোটা সংস্কার আন্দোলন নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া বক্তব্যের প্রতিবাদে মধ্যরাতে শিক্ষার্থীরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস এলাকায় বিক্ষোভ করে। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের হলের ছাত্রীরাও তালা ভেঙে বেরিয়ে আসেন সেদিন রাতে। 


১৫ জুলাই

কোটা আন্দোলনকে কেন্দ্র করে দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় সহ বেশ কয়েকটি জায়গায় আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ছাত্রলীগের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া হয়। শিক্ষার্থীরা প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তব্য প্রত্যাহারের দাবি জানায়। সেদিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মুখোমুখি হতে হয়েছিলো ইতিহাসের এক কালো অধ্যায়ের। 


১৬ জুলাই

দুপুর আড়াইটা থেকে তিনটার দিকে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সাথে পুলিশের সহিংসতার ঘটনা ঘটে। এ সময় পুলিশ টিয়ার গ্যাস নিক্ষেপ ও লাঠিচার্জ করে। পুলিশ গুলি চালালে আবু সাইয়িদ নামের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষার্থী আহত হয়। তাকে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। ডাক্তার সেখানে তাকে মৃত ঘোষণা করে। বিকেল নাগাদ অচল হয়ে পড়ে রংপুর মহানগরী। দফায় দফায় সংঘর্ষ হয় শিক্ষার্থী ও পুলিশের। হাজার জনতার ঢল সেদিন উপস্থিত হয়েছিলো রংপুরের পার্কের মোড়ের নাম পরিবর্তন করে 'শহীদ আবু সাইদ চত্ত্বর' ঘোষণা করতে। সেদিন আরও রক্ত দিয়েছিলো দেশের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা। 


১৭ জুলাই

দেশের সকল শিক্ষার্থীরা বিপ্লবে ফেটে পড়ে। সকল শিক্ষার্থী একত্রিত হয়ে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের হল থেকে বিতাড়িত করে দেয়। সেদিন রক্তমাখা চোখ নিয়ে শিক্ষার্থীরা খুজতে থাকে ছাত্রলীগ-কে। বেরোবিসহ দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়-কে রাজনীতি মুক্ত ক্যাম্পাস ঘোষণা করে সাধারণ শিক্ষার্থীরা। ঢাবির সকল হলগুলোও রাজনীতি মুক্ত ঘোষণা করে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করতে দেখা যায়। শিক্ষার্থীরা গায়েবী জানাজা ও কফিন মিছিল করে। রাবিতে অবরুদ্ধ হোন সেখানকার উপাচার্য। আন্দোলনকারীরা ১৮ জুলাই বৃহস্পতিবার সারা দেশে কমপ্লিট শাটডাউন (সর্বাত্মক অবরোধ) কর্মসূচি ঘোষণা করেন। 


১৮ জুলাই

দেশের সকল প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা এ আন্দোলনে মাঠে নেমে আসে। পুলিশের সাথে সংঘর্ষে প্রাণ হারান অনেকে। এদিন সরকারের নির্দেশে ৪জি মোবাইল ইন্টারনেট বন্ধ করে ইন্টারনেটের গতি কমিয়ে দেওয়া হয়। রাত ৯টার দিকে সরকার সারাদেশে সব ধরনের ইন্টারনেট সেবা বিচ্ছিন্ন করে দেয়।


১৯ জুলাই

শিক্ষার্থীদের আন্দোলন রোধ করতে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ ঢাকায় অনির্দিষ্টকালের জন্য সব ধরনের সভা-সমাবেশ ও মিছিল নিষিদ্ধ ঘোষণা করে। দেশের সকল রেলযোগাযোগ অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়। ঢাকার উত্তরা, মোহাম্মদপুর, বাড্ডা পল্টনসহ কয়েকটি এলাকায় পুলিশের সঙ্গে আন্দোলনকারীদের সারাদিন দফায় দফায় সংঘর্ষ, পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। সারাদেশে কারফিউ জারি ও সেনা মোতায়েন করে সরকার। মধ্যরাতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক নাহিদ ইসলামকে আটক করা হয়। শিক্ষার্থীরা ৮ দফা দাবি জানান। 


২০ জুলাই

সেনাবাহিনীকে দেশের বিভিন্ন অংশে কারফিউর অংশ হিসেবে টহল দিতে দেখা যায়। দুপুর ১২টা থেকে ২টা পর্যন্ত কারফিউ শিথিল রেখে পুনরায় কারফিউ শুরু হয়। রবি ও সোমবার বাংলাদেশে সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয়। কারফিউর মধ্যেই যাত্রাবাড়ী, রামপুরা-বনশ্রী, বাড্ডা, মিরপুর, আজিমপুর, মানিকনগরসহ ঢাকার বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভকারীদের সাথে পুলিশের সংঘর্ষ হয়। 


২১ জুলাই 

রাষ্ট্রপক্ষের করা লিভ টু আপিলের প্রেক্ষিতে সকাল ১০টার দিকে বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্টে কোটা নিয়ে আপিল বিভাগের শুনানি শুরু হয়। সব পক্ষের শুনানি শেষে দুপুর ১টার দিকে রায় ঘোষণা করা হয়। রায়ে হাইকোর্টের দেওয়া রায় বাতিল করা হয় ও সরকারি চাকরিতে মেধার ভিত্তিতে ৯৩ শতাংশ নিয়োগ দেওয়ার নির্দেশ প্রদান করা হয়। 


২২ জুলাই

শিক্ষার্থীরা আরও ৪ দফা দাবি জানিয়ে ৪৮ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দিয়ে ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ কর্মসূচি স্থগিত করেন, তারা জানান “আমাদের চার দফার মধ্যে রয়েছে - ৪৮ ঘন্টার মধ্যে ইন্টারনেট চালু, ক্যাম্পাসগুলো থেকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী প্রত্যাহার করে ক্যাম্পাস চালু, সমন্বয়ক ও আন্দোলনকারীদের নিরাপত্তা প্রদান এবং কারফিউ প্রত্যাহার, যারা নয় দফা দাবি ও শাটডাউন অব্যাহত রেখেছে তাদের সাথে আমাদের নীতিগত কোন বিরোধ নেই। নিজেদের মধ্যে কোন যোগাযোগ না থাকায় আমরা তাদের সাথে কথা বলতে পারছি না"। 


২৩ জুলাই

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় কোটা সংক্রান্ত একটি প্রজ্ঞাপন জারি করে। যাতে সরকারি চাকরিতে নিয়োগের ক্ষেত্রে মেধাভিত্তিক ৯৩ শতাংশ, মুক্তিযোদ্ধা, শহীদ মুক্তিযোদ্ধা ও বীরাঙ্গনাদের সন্তানদের জন্য পাঁচ শতাংশ, ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর জন্য এক শতাংশ এবং শারীরিক প্রতিবন্ধী ও তৃতীয় লিঙ্গের জন্য এক শতাংশ কোটা নির্ধারণের কথা বলা হয়।


২৪ জুলাই

৬দিন বন্ধ থাকার পর সীমিত আকারে চালু হয় দেশের ইন্টারনেট সংযোগ। খবর পাওয়া যায় আন্দোলনে ১৯৭ জন শিক্ষার্থী নিহত হয়েছেন ও ১০০০ এর বেশি আন্দোলনকারী আটক হয়েছেন। 


কোটা আন্দোলনে সাধারণ শিক্ষার্থীরা বিজয়ী হয়েছে। দিতে হয়েছে প্রাণ। জাতির দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন হয়েছে। এই দুর্বল জাতির দামাল ছেলেরা আবারো প্রমাণ করেছে, আমরা আমাদের ন্যায্য অধিকার আদায়ে সর্বদা প্রস্তুত। 

আরও খবর