সাতক্ষীরায় জাল নৌকা ও পর্যটক বাহী ট্রলার মেরামতের শেষ সময় পার করছেন জেলে বাওয়ালীগণ। জুন, জুলাই ও আগস্ট এই তিন মাস সুন্দরবনে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা ছিল। এসময় জেলেরা যেমন সুন্দরবনে প্রবেশ করতে পারেনি, তেমনি পর্যটকবাহী ট্রলার পর্যটক নিয়ে সুন্দরবনে প্রবেশ করতে না পারায় দিন কেটেছে কষ্টে। আগামী পহেলা সেপ্টেম্বর সুন্দরবনের দ্বার খুলে দিবেন বনবিভাগ। সেই আশায় বুক বেঁধেছে জেলারা। সময় শেষ হলে বৈধ পাশ নিয়ে সুন্দরবনে যাবেন মাছ ও কাঁকড়া আহরণ করতে। এদিকে সুন্দরবনে পর্যটকবাহী ট্রলার মেরামত করছেন ট্রলার মালিকগণ। জেলেরা জানান, তিন মাস সুন্দরবনে পর্যটক প্রবেশের উপর নিষেধাজ্ঞা থাকায় এ সময় ট্রলার নোনা পানির নোনা পোকায় খেয়ে ফেলেছে। আমরা ট্রলার মেরামত করতে সমিতি থেকে ঋণ নিয়ে ট্রলার মেরামত করছি। বুড়িগোয়ালিনীর ট্রলার মালিক আছাদুজ্জামান বলেন, এ তিন মাস সুন্দরবনে পর্যটক প্রবেশ নিষেধাজ্ঞা না দিলে আমাদের আজ সমিতির ঋণের বোঝা মাথায় চাপতো না। পাশ ছাড়ার পর যে টাকা আয় করবো সমিতির ঋণের টাকা শোধ করতে করতে নিজেদের ছেলে-মেয়েদের খেতে দিতে পারবো কীনা জানিনা।
ট্রলার মালিক শেখ মাসুম বিল্লাহ বলেন, তিন মাস সুন্দরবনে পর্যটক প্রবেশ করতে না দেওয়ায় সুদের টাকা নিয়ে সংসার চালাতে হয়েছে। সেপ্টেম্বর মাসের ১ তারিখ হতে পাশ ছাড়বে। তিনি বলেন, নোনা এলাকায় কাঠের তৈরি ট্রলার বডিতে নোনা লাগে। এতে পোকায় কাঠ সব খেয়ে ফেলে। পরবর্তীতে মেরামত করতে যেয়ে আমাদের সমিতি অথবা সুদে টাকা নিয়ে মেরামত করতে হয়। পাশ ছাড়লে পর্যটক নিয়ে সুন্দরবনের ভাড়া টেনে এই ঋণের টাকা শোধ করতে হবে।
সুন্দরবনে মাছ, কাঁকড়া আহরণ করা বন্ধ ছিল তিন মাস। তিন মাস সুন্দরবনে প্রবেশ করতে না দেওয়ায় জেলে বাওয়ালীদের সমিতির টাকা ঋণ করে সংসার চালাতে হয়েছে বলে দাবি করেন দাতিনাখালি এলাকার মাছ আহরণকারি জেলে জাহাঙ্গীর সানা।
বুড়িগোয়ালিনী এলাকার কামাল গাজি বলেন, তিন মাসে আমি প্রায় ৫০ হাজার টাকা ঋণ করে সংসার চালায়েছি। পাশ ছাড়লে কামাই করে ঋণ শোধ করবো বলে আশা আছে।
জেলেরা আরও বলেন, সুন্দরবনের অভায়রণ্যো এলাকার ১০০ ভাগের ৫২ ভাগ বন্ধ। খোলা আছে মাত্র ৩৮ ভাগ। আমাদের দাবি ৬০ ভাগ উন্মুক্ত করেতে হবে। কারণ সুন্দরবনের যেটুকু জায়গা অবমুক্ত রয়েছে সে জায়গায় আমারা দুই থেকে তিন হাজার জেলে এই অল্প জায়গায় মাছ ও কাঁকড়া আহরণ করতে পারি। এই স্বল্প জায়গাতে আবার সেভাবে মাছ, কাঁকড়া পাইনা। পাশ নিয়ে চালান উঠানো দায় হয়ে যায়।
এবিষয়ে বুড়িগোয়ালিনী এলাকার ফজলু গাজি বলেন, সুন্দরবনের মেঘনা খাল হতে ডেঙ্গিমারি খাল, লক্ষিখালী খাল, হরিখালী খালসহ দ্বিতীয় পর্যায়ে যে স্থানগুলো বন্ধ করে দিয়েছে সরকার সুন্দরবনের সে স্থান ছেড়ে দেওয়ার দাবি জানাই।
তিনি আরও বলেন, সাগর এলাকায় ৬৫ দিন মাছ ধরা বন্ধ থাকলে ও সাতক্ষীরা রেঞ্জের সুন্দরবন এলাকায় ছিল ৯০ দিন। এতে জীবিকার নির্বাহে হিম হিম খেতে হয়। এমনকি এলাকা ছেড়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে কাজের জন্য চলে যেতে হয়। উপকূলের জেলেদের দাবী আগামীতে সুন্দরবনের অভায়রণ্য এলাকার ৬০ ভাগ ও তিন মাস পাশ বন্ধ না করার আহ্বান জানান তারা।
জেলেরা আরো অভিযোগ করেন সুন্দরবনের অসাধু যে জেলেরা বিষ দিয়ে মাছ শিকার এবং ফাঁদ পেতে হরিণ শিকার করে থাকেন সেগুলোর সম্পন্ন অভায়রণ্যে এলাকায় করে থাকেন। কারণ হচ্ছে ওই সমস্ত এলাকা ফাঁকা থাকে জেলেদের আনাগোনা না থাকায় বিষ দিয়ে মাছ ধরতে এবং ফাঁদ পেতে হরিণ শিকার করতে অসাধুচক্রের সুবিধা হয়ে থাকে। সে কারণে আমরা দাবি করব অভয়ারণ্য এলাকার ৬০ ভাগ ছেড়ে দিয়ে এই উপকূলের মানুষের জীবন জীবিকা করার সুযোগ করে দিন। যাতে অসাধুচক্র বিষ দিয়ে মাছ শিকার ও ফাঁদ পেতে হরিণ শিকার করতে না পারে সুন্দরবনের এসব এলাকায়। এবিষয়ে বুড়িগোয়ালিনী স্টেশন কর্মকর্তা এবিএম হাবিবুল ইসলাম বলেন, সুন্দরবনে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে ছিল তিন মাসের জন্য। বেঁধে দেওয়া সেই সময় শেষ হয়ে যাচ্ছে। বনবিভাগ থেকে আগামী সেপ্টেম্বর মাসের এক তারিখ হতে পাশ দেওয়া হবে, পাশ নিয়ে জেলে বাওয়ালী ও পর্যটক ট্রলার পর্যটক নিয়ে সুন্দরবনের প্রবেশ করতে পারবেন।
১ ঘন্টা ৩৩ মিনিট আগে
২ ঘন্টা ২ মিনিট আগে
৪ ঘন্টা ৪৭ মিনিট আগে
১৪ ঘন্টা ৩৫ মিনিট আগে
২১ ঘন্টা ৪৪ মিনিট আগে
২২ ঘন্টা ১৫ মিনিট আগে
২২ ঘন্টা ২১ মিনিট আগে