দরিদ্র অসহায় মানুষের মাঝে ইফতার সামগ্রী বিতরণ করল সাতকানিয়া - লোহাগাড়া মানবিক ফাউন্ডেশন। কোম্পানীগঞ্জে খালেদা জিয়ার রোগ মুক্তি ও ব্যারিস্টার মওদুদের মৃত্যুবার্ষিকীতে দোয়া ও ইফতার মাহফিল ‘গালি’ নিয়ে দেশের আইনে কী আছে? আমেরিকান কনক্রিট ইন্সটিটিউটের পক্ষ থেকে শতাধিক পথশিশু ও দুস্থদের মাঝে ইফতার বিতরণ প্রশাসনের ঢিলেঢালা আচরণে দুষ্কৃতকারীরা আশকারা পাচ্ছে : রিজভী জবিসাসের ইফতারে এক ছাতার নিছে সব ছাত্র সংগঠন ডাঃ মকবুল হোসেন এতিমখানা ও নূরানী হাফিজিয়া মাদ্রাসায় ইফতার ও দোয়া মাহফিল লোহাগড়ায় নিহত বিএনপি,যুবদল,ছাত্রদল নেতাদের স্মরণে স্মরণসভা ও ইফতার মাহফিল অনিষ্ঠত কালিগঞ্জ নলতা যুবককে গলা কেটে হত্যাচেষ্টার মূল আসামিসহ দু’জন গ্রেফতার কোম্পানীগঞ্জ সিরাজপুর ইউনিয়নে জামায়াতে ইসলামী’র উদ্যোগে ইফতার মাহফিল অনুষ্ঠিত লাখো রোহিঙ্গার সঙ্গে ইফতারে জাতিসংঘ মহাসচিব আশাশুনিতে রোজা ও যাকাতের তাৎপর্য শীর্ষক সেমিনার অনুষ্ঠিত নাগেশ্বরীতে যায়দিনের ডিক্লারেশন বাতিলের প্রতিবাদে মানববন্ধন কমলগঞ্জে একতা সমাজ কল্যাণ পরিষদের ইফতার সামগ্রী পেয়ে খুশি শতাধিক পরিবার নাগরপুরে তামাক ক্ষেত থেকে ১ মহিলার মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ কেন্দ্রীয় ভাইস-চেয়ারম্যান নার্গিস বেগমকে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানালেন শার্শা উপজেলা বিএনপি কক্সবাজারে জলবায়ু উদ্বাস্তু পুনর্বাসন প্রকল্প পরিদর্শনে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস লাখাইয়ে সাংবাদিক এমএ ওয়াহেদ এর মায়ের ইন্তেকাল, বিভিন্ন মহলের শোক। জয়পুরহাটে অপ চিকিৎসায় পঙ্গুত্ববরণের অভিযোগে চিকিৎসকের বিরুদ্ধে সংবাদ সম্মেলন শাজাহানপুরে শারিরীক প্রতিবন্ধী মেয়ে ধর্ষণের স্বীকার

ইতিহাস ও ঐতিহ্যের ঢাকা কলেজ

সম্পাদকীয় ডেস্ক - প্রতিনিধি

প্রকাশের সময়: 18-11-2024 08:02:36 am


আশিকুল হক মিল্টন : প্রতিষ্ঠার ১৮৪ বছরে পা রেখেছে ইতিহাস ঐতিহ্যের বিদ্যাপীঠ ঢাকা কলেজ।১৮৪১ সালের ২০ নভেম্বর ‘নিজেকে জানো’ মূলমন্ত্রে যাত্রা শুরু করে এই কলেজ। দীর্ঘ পথচলায় ভাষা আন্দোলন, স্বাধিকার আন্দোলন থেকে শুরু করে অসংখ্য গণতান্ত্রিক আন্দোলনের রাজসাক্ষী ঢাকা কলেজ।

কলেজটির প্রতিষ্ঠার এক চমকপ্রদ ইতিহাস রয়েছে। ইতিহাস বলে, ভারতে আধুনিক শিক্ষা বিস্তারের সাথে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি ও ব্রিটিশ শাসন নিবিড়ভাবে সম্পর্কিত। তারা ভারতীয়দের জন্য ১৭৮১ সালে কলকাতা মাদ্রাসা, ১৭৯১ সালে বারাণসীতে ‘সংস্কৃত কলেজ’ এবং ১৮০০ সালে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির কর্মচারীদের জন্য ‘ফোর্ট উইলিয়াম কলেজ’ প্রতিষ্ঠা করে। কিন্তু ‘চার্টার অ্যাক্ট-১৮১৩’ এর মাধ্যমে ব্রিটিশ সরকার ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানিকে ভারতীয়দের শিক্ষার প্রতি মনোযোগী হওয়ার নির্দেশ দেয়। ১৮১৩ সালের চার্টার অ্যাক্ট ছিল ভারতীয়দের আধুনিক শিক্ষার মূল ভিত্তি।

সেই ধারাবাহিকতায় ১৮১৭ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় হিন্দু কলেজ। এরপর প্রায় দুই দশক কেটে যায় ভারতে শিক্ষা বিস্তারের মাধ্যম ও পদ্ধতি নিয়ে নানা বিতর্কে। ১৮৩৫ সালে ব্রিটিশ পার্লামেন্টের সদস্য লর্ড ম্যাকলের ‘মিনিট অন এডুকেশন’- এ প্রস্তাব রাখা হয় ভারতের শিক্ষা হবে ইংরেজি ভাষায় এবং ইউরোপীয় জ্ঞান-বিজ্ঞানের আলোকে।

এর ফলশ্রুতিতে ভারতের গভর্নর জেনারেল লর্ড বেন্টিক ‘ইন্ডিয়ান এডুকেশন অ্যাক্ট’ প্রস্তাব করেন। এই অ্যাক্টের পরিপ্রেক্ষিতে এবং ‘জেনারেল কমিটি অব পাবলিক ইনস্ট্রাকশন’ এর প্রস্তাবে সমগ্র বাংলার প্রথম সরকারি স্কুলটি ১৫ জুলাই ১৮৩৫ সালে ঢাকায় প্রতিষ্ঠিত হয়। স্কুলটি পরিচিত ছিল ‘ইংলিশ সেমিনারি’ নামে। এই বিদ্যালয়কে কেন্দ্র করে ঢাকা হয়ে ওঠে আধুনিক শিক্ষা বিস্তারের একটি গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র।

পরবর্তী সময়ে ভারতের গভর্নর জেনারেল লর্ড অকল্যান্ড ১৮৩৯ সালে শিক্ষা বিষয়ে তার বিখ্যাত ‘মিনিট’ উপস্থাপন করেন যার পরিপ্রেক্ষিতে ১৮৪০ সালে জেনারেল কমিটি অব পাবলিক ইনস্ট্রাকশন গভর্নর জেনারেলের কাছে ঢাকায় একটি কলেজ স্থাপনের প্রস্তাব করেন। প্রস্তাব অনুমোদিত হয় এবং ১৮৪১ সালের ২০ নভেম্বর প্রতিষ্ঠিত হয় ‘ঢাকা সেন্ট্রাল কলেজ’ তথা ঢাকা কলেজ। ইংলিশ সেমিনারি স্কুল (বর্তমানে ঢাকা কলেজিয়েট স্কুল) ভবনের দ্বিতীয় তলায় তিনটি কক্ষ নিয়ে উপমহাদেশের অন্যতম প্রধান শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ঢাকা কলেজের যাত্রা শুরু হয়।

স্থানীয় ‘জনশিক্ষা কমিটি’ কলেজ ভবনের জমি ক্রয় করে। ১৮৪১ সালের ২০ নভেম্বর কলকাতার বিশপ রেভারেন্ড ড্যানিয়েল কলেজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। ভবনের নকশা তৈরি করেন কর্নেল গ্যার্সটিন। ১৯৪৬ সালে ভবনের নির্মাণকাজ সমাপ্ত হয় এবং ওই বছরের ২৫ মে ছাত্ররা নতুন ভবনে তাদের নতুন শিক্ষাজীবন শুরু করে। কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র এবং হিন্দু কলেজের শিক্ষক জে.আয়ারল্যান্ডকে প্রথম প্রিন্সিপাল নিযুক্ত করা হয়। যাত্রালগ্ন থেকেই পূর্ববঙ্গের সাংস্কৃতিক, সামাজিক ও বুদ্ধিবৃত্তিক কর্মকাণ্ডে নেতৃত্ব দেওয়ায় এখন পর্যন্ত ঢাকা কলেজ বাংলাদেশের একটি গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। ১৮৫৪ সালে স্যার চার্লস উডের ‘এডুকেশন ডেসপাচ’এর বদৌলতে ভারতীয় আধুনিক শিক্ষায় শৃঙ্খলা ও সমন্বয় তৈরি হয়। নতুন শিক্ষানীতির কারণে ১৮৫৪ সাল থেকে ঢাকা কলেজের মেধাবী ছাত্ররা সমগ্র ভারতের একমাত্র চিকিৎসা মহাবিদ্যালয় কলকাতা মেডিকেল কলেজে ডাক্তারি পড়ার সুযোগ পায় এবং ১৮৫৭ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পরই ঢাকা কলেজকে এর অধিভুক্ত করে নেওয়া হয়।


প্রথম বছরেই বি.এ. পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার জন্য ঢাকা কলেজ থেকে চার জন ছাত্রকে পাঠানো হয়। যদিও একজন ছাত্র এ পরীক্ষায় অংশ নেন, যার নাম দীননাথ সেন। উচ্চশিক্ষার এ যাত্রায় ১৮৭৫ সালে ঢাকা কলেজে প্রতিষ্ঠা করা হয় স্বতন্ত্র বিজ্ঞান ভবন। এরপর দর্শন, ইতিহাস, সাহিত্য, গণিত, আইন ও বিজ্ঞান বিষয়ে উচ্চশিক্ষা গ্রহণে ঢাকা কলেজ হয়ে ওঠে পূর্ববঙ্গের আধুনিক শিক্ষার প্রাণকেন্দ্র, যা অব্যাহত থাকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা অর্থাৎ ১৯২১ সাল অবধি। ১৯০৩ সালে ঢাকা কলেজের জন্য অবকাঠামো বিষয়ে নতুন পরিকল্পনা করা হয় এবং ১৯০৪ সালে জমি অধিগ্রহণ করে ভবন নির্মাণের কাজ শুরু হয়।


এর ভিত্তিতে বঙ্গভঙ্গের পর রমনা এলাকাকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা নতুন ঢাকায় ১৯০৮ সালে ঢাকা কলেজ স্থানান্তরিত হয় কার্জন হল ও সংশ্লিষ্ট কয়েকটি অট্টালিকায়। এখানেই স্বতন্ত্র বিজ্ঞান ভবন, ছাত্রদের জন্য ঢাকা কলেজ হোস্টেল (প্রথমে ঢাকা হল নামে এবং বর্তমানে শহীদুল্লাহ হল নামে পরিচিত), অধ্যাপকদের জন্য চারটি বাসভবনসহ মনোরম প্রাকৃতিক পরিবেশে ঢাকা কলেজ রূপান্তরিত হয় একটি পূর্ণাঙ্গ আবাসিক কলেজে।


ইতোমধ্যে ১৯২১ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জীবন-প্রদীপ জ্বালাতে ঢাকা কলেজের যে মহিমাময় ত্যাগ ও অবদান ইতিহাসে তা বিরল। বস্তুত ঢাকা কলেজের সব স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি, ছাত্র, শিক্ষক, কর্মচারী, বিভিন্ন ভবন, পাঠাগার, বিজ্ঞানাগার, বই-পুস্তক ইত্যাদি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে প্রদান করা হয় বলেই ১৯২১ সালের ১৫ জুলাই বিশ্ববিদ্যালয় তার একাডেমিক কার্যক্রম শুরু করতে পারে। কলেজের বিপুল পরিমাণ জমি ও ক্যাম্পাস, হোস্টেলসহ অন্যান্য অবকাঠামো, বৈজ্ঞানিক যন্ত্রপাতি, মেধাবী ছাত্রদের জন্য বরাদ্দ করা বিভিন্ন বৃত্তি ইত্যাদিও হস্তান্তর করা হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে। অন্যদিকে ঢাকা কলেজের নতুন ক্যাম্পাস নির্দিষ্ট হয় পুরোনো হাইকোর্ট ভবনে।


আজকের প্রজন্মের অনেকেই জিজ্ঞেস করেন, কার্জন হলের পূর্বপাশের সড়কটি কেন কলেজ রোড নামে পরিচিত, কারণ এ সড়কটির নামকরণ করা হয়েছিল তখন, যখন কার্জন হল ছিল ঢাকা কলেজ। ১৯৪৩ সালে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে আহত সৈনিকদের পুনর্বাসনের জন্য হাইকোর্টের কলেজ ভবনটি ছেড়ে দিতে হয়। তখন কলেজটি লক্ষ্মীবাজারে অবস্থিত ইসলামিক ইন্টারমিডিয়েট কলেজে (বর্তমান সরকারি কবি নজরুল কলেজ) স্থানান্তরিত হয়।


পরে লক্ষ্মীবাজার থেকে সিদ্দিক বাজারে অবস্থিত মরহুম খান বাহাদুর আব্দুল হাই’র একটি ব্যক্তিগত ভবনে কলেজের দাপ্তরিক ও একাডেমিক কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়। এছাড়া কয়েকটি বাড়ি ভাড়া নিয়ে কলেজের হোস্টেল তৈরি করা হয়। ১৯৫৫ সালে বর্তমান ক্যাম্পাসে নতুন অবকাঠামোয় নতুনরূপে শুরু হয় ঢাকা কলেজের অভিযাত্রা।


নৈসর্গিক সৌন্দর্যের এক অপার লীলাভূমি ঢাকা কলেজ ১৮.৫৭ একর জমির ওপর অবস্থিত। এর সম্মুখভাগে রয়েছে সুদৃশ্য বাগান, লন টেনিস ও বাস্কেটবল খেলার মাঠ। পশ্চিম প্রান্তে রয়েছে আটটি ছাত্রাবাস ও মসজিদ। কলেজের মূল ভবনের পেছনে এবং ছাত্রাবাসের সম্মুখে রয়েছে দুটি বিশাল খেলার মাঠ ও একটি পুকুর।


পুকুর পাড়ে কলেজের ক্যান্টিন ও জিমনেসিয়াম। পূর্ব-দক্ষিণ প্রান্তে অর্থাৎ প্রধান গেটের সামনে শহীদ মিনার, আইসিটি ভবন, উদ্ভিদবিদ্যা ভবন, অধ্যক্ষের বাসভবন ও শিক্ষকদের জন্য একটি আবাসিক ভবন। এছাড়া শহীদ মিনারের পাশেই সদ্য নির্মিত হয়েছে একটি ১০তলা একাডেমিক ভবন। কলা ও সামাজিক বিজ্ঞান, ব্যবসায় শিক্ষা এবং বিজ্ঞান অনুষদের অধীনে ১৯টি বিভাগ রয়েছে ঢাকা কলেজে। ১৯টি বিভাগেই স্নাতক (সম্মান) ও স্নাতকোত্তর কোর্স চালু আছে।


২০১০ সালের ১ আগস্ট থেকে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিষয়ে স্নাতকোত্তর ছাত্রদের জন্য ননক্রেডিট কোর্স চালু আছে। অধ্যক্ষ, উপাধ্যক্ষসহ বিভিন্ন বিভাগে ২২০ জন শিক্ষক আছেন। কর্মরত শিক্ষকদের মধ্যে অনেকেই পিএইচডি ও এমফিলসহ অন্যান্য উচ্চতর ডিগ্রিধারী।


ঢাকা কলেজে অনেক খ্যাতিমান পণ্ডিত ও শিক্ষাবিদ অধ্যাপনা করেছেন। ঢাকা কলেজের অনেক শিক্ষার্থী স্ব স্ব ক্ষেত্রে অবদানের জন্য জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে খ্যাতি অর্জন করেছেন।


ভাষা আন্দোলন, মহান মুক্তিযোদ্ধসহ জাতীয় ও ছাত্র আন্দোলন গুলোতে ঢাকা কলেজের অবদান অপরিসীম। ১৯৬২ সালের গণবিরোধী শিক্ষানীতি বাতিল আন্দোলন এবং ১৯৬৯ ও ১৯৯০এর গণঅভ্যুত্থান এবং ২০২৪ এর জুলাই বিপ্লবে ঢাকা কলেজের ছাত্র-শিক্ষকরা স্মরণীয় ভূমিকা পালন করে নজির স্থাপন করেছেন। 


উচ্চ মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে একটি সফল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হিসেবে ঢাকা কলেজ নিরন্তর অবদানে সগৌরবে সমুজ্জল।


লেখক: আশিকুল হক মিল্টন 

শিক্ষার্থী,ঢাকা কলেজ।

আরও খবর