অফিসে ডেকে নিয়ে সাংবাদিককে অকথ্যভাষায় গালাগাল করার অভিযোগ উঠেছে সাতক্ষীরার জেলা প্রশাসক মোস্তাক আহমেদের বিরুদ্ধে। গতকাল বুধবার সন্ধ্যার পর এ ঘটনা ঘটে।
জানা গেছে, সাংবাদিকদের অফিসে ডেকে মোস্তাক আহমেদ বলেন,‘ডিসি মোস্তাক আহমেদকে চেনেন? হু আর ইউ, ইবলিস কোথাকার।’ এমন অকথ্য ভাষা ব্যবহার করে উচ্চস্বরে গালাগাল করেন সাতক্ষীরার আহছানিয়া মিশনের সাধারণ সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান উজ্জলকে। অকথ্য ভাষায় গালাগাল করে ক্ষ্যান্ত হননি প্রায় মারতে উদ্যত হন এবং তুই-তোগারী শুরু করেন তিনি। আচমকা এ ধরনের আচরণে মোস্তাফিজুর রহমান হতভম্ব হয়ে পড়েন। পরিস্থিতি বেগতিক দেখে মোস্তাফিজুর রহমান উজ্জলকে এক পর্যায়ে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) বিষ্ণুপদ পাল ডিসির রুম থেকে বাইরে নিয়ে যান। ঘটনার পরপরই তিনি বিষয়টি সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবের সভাপতি, সাধারণ সম্পাদকসহ সাংবাদিকদের জানালে তারা ক্ষুদ্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যাক্ত করেন। একই সঙ্গে এ ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন সাতক্ষীরা আহ্ছানিয়া মিশনের কার্যনির্বাহী কমিটির সকল সদস্যরা। তারা এ ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়ে প্রতিকার দাবী করেন।
মোস্তাফিজুর রহমান উজ্জল জানান, তিনি সাতক্ষীরা আহছানিয়া মিশনের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। মিশনের ২৫ সদস্যের কার্যনির্বাহী এই কমিটির জেলা প্রশাসক ১৯৪৮ সাল থেকে পদাধিকার বলে সভাপতি। বর্তমান কমিটি চলতি বছরের ২২ মে এক সভার মাধ্যমে সাবেক জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হুমায়ূন কবির অত্র কমিটির অনুমোদন করেন। এই কমিটির বিরুদ্ধে হাইকোর্টসহ সাতক্ষীরার আদালতে ৬টি মামলা চলমান রয়েছে। যারা এসব মামলা করেছেন তাদের দ্বারা প্রভাবিত হয়ে বর্তমান জেলা প্রশাসক মোস্তাক আহমেদ কমিটির সঙ্গে কোনো ধরনের সভা না করে, নলতা কেন্দ্রীয় আহ্ছানিয়া মিশনের সঙ্গে কোনো পরামর্শ না করে গোপনে গত ৬ নভেম্বর চলমান কমিটি ভেঙে দিয়ে একটি এডহক কমিটি গঠন করেন। বিষয়টি জানবার পর মিশনের কার্যনির্বাহী কমিটির ২১ জন সদস্য বিষয়টি পূর্ণবিবেচনার দাবী জানিয়ে জেলা প্রশাসকের কাছে লিখিতভাবে একটি আবেদন করেন।
এমতাবস্থায় বাধ্য হয়ে মিশনকে রক্ষার স্বার্থে মোস্তাফিজুর রহমান উজ্জল হাইকোর্টে একটি রীট পিটিশন দায়ের করেন। হাইকোটের একটি বেঞ্চ শুনানী শেষে গত ১৫ ডিসেম্বর উক্ত এডহক কমিটি স্ট্রে করে রুল জারি করেন। এমন পরিপ্রেক্ষিতে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) বিষ্ণুপদ পাল বুধবার সকাল ১০টায় ফোন দিয়ে আমাকে বলেন, ‘‘সেকেন্ড হাফে জেলা প্রশাসক আপনাকে দেখা করতে বলেছেন।” সেই মোতাবেক বেলা ৪ টার পরপরই জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে যান তিনি। সন্ধ্যা পর্যন্ত অপেক্ষার পর অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) বিষ্ণুপদ পাল জেলা প্রশাসকের রুমে বসতে বলেন।
কিছুক্ষনের মধ্যে জেলা প্রশাসক মোস্তাক আহমেদ রুমে প্রবেশ করতেই অকথ্য ভাষায় উচ্চস্বরে গালমন্দ শুরু করেন এবং বলেন মিশনের কমিটি ভেঙে দেওয়া হয়েছে কাগজপত্র বুঝিয়ে দেননি কেন? এসব বলতে বলতে বলেন ‘ডিসি মোস্তাক আহমেদকে চেনেন? ‘হু আর ইউ’ ইবলিস কোথাকার’- তিনি রুমে অবস্থানরত অন্যদের দেখিয়ে বলেন, সাতক্ষীরায় কিছু ইবলিস আছে এ একটা ইবলিস।
মোস্তাফিজুর রহমান উজ্জল তখন তাকে নিবৃত করার চেষ্টা করেন এবং বলেন বিষয়টি আপনি ব্যক্তিগত ভাবে নিচ্ছেন কেন? তাছাড়া এডহক কমিটি মহামান্য হাইকোর্ট স্টে করে দিয়েছেন। তখন তিনি আরও ক্ষিপ্র হয়ে ওঠেন এবং অকথ্য ভাষায় গালমন্দ করেন। এমন অবস্থায় সেখানে অবস্থানরত অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) বিষ্ণুপদ পাল আমাকে বাইরে নিয়ে যান এবং চলে যেতে বলেন।
উল্লেখ্য, ১৯৫৪ সালে সাতক্ষীরা আহছানিয়া মিশনের সাধারণ সম্পাদকের নামে ৪২ শতক জমি ক্রয় করেন। গঠনতন্ত্রে মিশনের অধীনে মাদ্রাসা, এতিমখানা কাম-লিল্লাহ বোর্ডিং, হেফজখানা, লাইব্রেরী, দাতব্য চিকিৎসালয়সহ বেশ কিছু প্রতিষ্ঠানের কথা উল্লেখ করেন। মিশন প্রতিষ্ঠার পর থেকে সে মোতাবেক মিশনের কমিটির মাধ্যমে অত্র প্রতিষ্ঠানগুলি পরিচালিত হয়ে আসছিল। কিন্তু ২০১৫ সালের পর থেকে এসবের ব্যত্যয় ঘটিয়ে জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি সাবেক এমপি মীর মোস্তাক আহমেদ রবির ছত্রছায়ায় রাষ্ট্রিয় ক্ষমতা অপব্যবহার করে জেলা আওয়ামী লীগ নেতা ফিরোজ কামাল শুভ্র, জেলা শ্রমিকলীগ নেতা তোহিদুর রহমান ডাবলু, আব্দুর রব ওয়ার্ছী, আব্দুল আজিজ ও আবু শোয়েব এবেল মিশনের নীতি আদর্শকে ভুলন্ঠিত করে, মিশনের ভবন নির্মান, মাদ্রাসা, এতিমখানা দখল করে ব্যাক্তিস্বার্থ হাসিল করছে। শুধু তাই না সদস্যদের স্বাক্ষর জাল করে মিশনের রেজিস্ট্রেশন পরিবর্তন করে অঙ্গ প্রতিষ্ঠান এতিমখানা কাম লিল্লাহ বোডিং এর ফান্ড থেকে আব্দুর রব ওয়ার্ছী, আব্দুল আজিজের যোগসাজসে মিশনের কমিটির বিরুদ্ধে মামলা দায়েরকারি আবু শোয়েব এবেলের নিকট থেকে ভূয়া জমি ক্রয় করে এতিমখানার ফান্ডে রক্ষিত ৪০ লাখ টাকা উত্তোলন করা হয়েছে। এমনকি আবু শোয়েব এবেল দীর্ঘ ছয় বছর ধরে ২৪ লাখ টাকা ভাড়া না দিয়ে সাবেক এমপিদের প্রভাবে বহাল তবিয়তে ব্যবসা পরিচালনা করছে।
বিষয়টি নিয়ে সদর সহকারি কমিশনার (ভুমি) কার্যালয়ে তদন্তাধিন রয়েছে। এছাড়া সরকারি বিধি-বিধান লংঘন করে মাদ্রাসার ম্যানেজিং কমিটি গঠন করে ৭টি পদে অবৈধ নিয়োগ বানিজ্য করে প্রায় এক কোটি টাকা আত্মসাৎ সহ বিভিন্ন বিষয়য়ে জেলা প্রশাসক, দুর্নীনি দমন কমিশন, সমাজসেবা কার্যালয়সহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরে বহুবার প্রতিকার চেয়েও কোনো প্রতিকার পাওয়া যায়নি। এমনকি পরিবর্তিত প্রেক্ষাপটের পরও বিষয়গুলি প্রধান উপদেষ্টা, জনপ্রশাসন সচিবসহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরে লিখিতভাবে আবেদন জানানো হয়েছে। অথচ এসব বিষয় নূন্যতম আমলে না নিয়ে উল্টো ওই চক্রের দ্বারা প্রভাবিত হয়ে জেলা প্রশাসক আদালতকে উপেক্ষা করে অন্যায়ভাবে সাতক্ষীরা আহছানিয়া মিশনের কমিটি ভেঙে দিয়েছেন।
১১ ঘন্টা ৩১ মিনিট আগে
১১ ঘন্টা ৩৯ মিনিট আগে
১১ ঘন্টা ৪৭ মিনিট আগে
১২ ঘন্টা ৪ মিনিট আগে
১২ ঘন্টা ৩১ মিনিট আগে
১২ ঘন্টা ৪১ মিনিট আগে
১৩ ঘন্টা ১৯ মিনিট আগে
১৩ ঘন্টা ২২ মিনিট আগে