চৌদ্দগ্রামে আবুল হাশেম জনকল্যাণ ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে ইফতার সামগ্রী বিতরণ দোয়ারাবাজারে সংঘর্ষে আহত যুবকের মৃত্যু চৌদ্দগ্রামে ১১ মার্চ শহীদ দিবস উপলক্ষে ছাত্রশিবিরের ইফতার ও কোরআন উপহার প্রদান নাগরপুরে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার রোগমুক্তি কামনায় ইফতার ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত অভয়নগরে পুকুরের পানিতে ডুবে দুই শিশুর মৃত্যু বেগমগঞ্জে সৌদি প্রবাসীর বাড়িতে দুর্ধর্ষ ডাকাতি, নগদ টাকা ও স্বর্ণালংকার লুট শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে লাশের মিছিল আর দেখতে চায় না দেশবাসী: জামায়াত আমির নন্দীগ্রামে ওয়ার্ড জামায়াতের ইফতার মাহফিল অনুষ্ঠিত রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফেরাতে সব ধরনের কূটনৈতিক তৎপরতা চালাচ্ছে সরকার: প্রেস সচিব প্রশ্ন ফাঁসের অভিযোগে বাধ্যতামূলক ছুটিতে কুবি শিক্ষক কাজী আনিছ নন্দীগ্রামে গণহত্যা ও স্বাধীনতা দিবস উদযাপন উপলক্ষে প্রস্তুতিমূলক সভা কুবিতে শাহবাগ ও পতিত স্বৈরাচারের দ্রুত বিচারের দাবিতে মানববন্ধন আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসর নিলেন মাহমুদউল্লাহ কুবিতে উত্তরবঙ্গ ছাত্র পরিষদের ইফতার মাহফিল কুবি বিএনসিসি প্লাটুনের ইফতার মাহফিল অনুষ্ঠিত কুবিতে মার্কেটিং বিভাগের ইফতার ও দোয়া মাহফিল সংস্কার করে দ্রুত জাতীয় নির্বাচন দিতে হবেঃ মোংলায় বিএনপি নেতা কৃষিবিদ শামীমুর রহমান ঝিনাইদহের মহেশপুর সীমান্তে বিজিবি বিএসএফ’র পতাকা বৈঠকে দুই বাংলাদশী নাগরিককে হস্তান্তর শৈলকুপায় পাওনা টাকা চাওয়াকে কেন্দ্র করে দু’পক্ষের সংঘর্ষে ২০ জন আহত ঝিনাইদহে ধর্ষকের শাস্তির দাবিতে মানববন্ধন

চলো একদিনের জন্য, হারিয়ে যাই অরণ্যে

এম জামশেদ আহমেদ
চলো একদিনের জন্য হারিয়ে যাই অরণ্যে-প্রতিপাদ্য নিয়ে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় প্রাক্তন ছাত্র-ছাত্রী সমিতি-৮২সমিতির আয়োজনে গত ২৫ ডিসেম্বর দিনব্যাপী বার্ষিক বনভোজন বিপুল উৎসাহ উদ্দীপনায় সম্পন্ন হয়েছে। এবারের গন্তব্য বনপাহাড় পরিবেষ্টিত প্রকৃতির লীলাভূমি খাগড়াছড়ি জেলার রামগড় উপজেলা। ফেনী নদী দিয়ে বিভক্ত এপারে সাবেক মহকুমা রামগড় আর ওপারে ভারতের আরেক মহকুমা ত্রিপুরার সাব্রুম। ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি বিজড়িত এই স্থানটি তৎকালীন বৃটিশ সরকার ১৯২০ সালে মহকুমা হিসেবে উন্নীত করে। ১৯৮৩ সালে মহকুমা বিলুপ্ত হয়ে উপজেলায় উন্নীত হয়। শতাব্দী প্রাচীন ইতিহাস ও ঐতিহ্যে সমুজ্জ্বল পার্বত্য সীমান্তবর্তী উপজেলাটি সত্যেই অপরুপ। আমরা চবি-৮২ সমিতির ৭০ জন সদস্য ও পরিবারের সদস্য সকাল সাড়ে টায় চট্টগ্রাম নগরীর কাজীর দেউড়ি সমিতির কার্যালয় সিজেকেএস শপিং কমপ্লেক্স হতে দুইটি বাসে যাত্রা শুরু করি। বাসে সকালের নাস্তা পরিবেশন করা হয়। সামান্য বিচ্যুতির কারনে দুপুর ১২ টা ১৫ মিনিটে রামগড় পৌঁছেছি।  ভেন্যু ছিল রামগড় কৃষি গবেষণা কেন্দ্র রিসোর্ট। ছোট্ট টিলার উপর নির্মিত রিসোর্টটি বেশ গোছানো। সেখানে প্রথমে সকলে ফ্রেশ হয়ে হালকা বিস্কুট ও চা পান করি। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন প্রাক্তন ছাত্রী রামগড় উপজেলা নিবাহী কর্মকর্তা মমতা আফরিন ফুলের তোড়া দিয়ে আমাদেরকে বরণ করে নেন। আমাদের সাথে পরিচিত হন। তিনি বলেন, আপনারা সকলে আমার স্যার। তাঁর সাথে আমরা ফটোসেশন করি। ইউএনওর বাড়ি পার্শ্ববর্তী মিরসরাই উপজেলার করেরহাট ইউনিয়নে। বনভোজন কমিটির আহবায়ক ও এই ভ্রমণ অভিজ্ঞতার লেখক জামশেদ আহমেদের বাড়ীও মিরসরাইয়ে। এলাকা প্রীতি বাড়তি আন্তরিকতা যোগ হয়েছে। তাঁর অভ্যর্থনায় আমরা মুগ্ধ হযেছি। এসময় জাকির হোসেনের তত্বাবধানে এবং এটিএম হামিদুল হক চৌধুরী, গোলাম হোসেন ও সুরজিৎ বড়–য়ার পৃষ্ঠপোষকতায় তৈরীকৃত বার্ষিক বনভোজন-২০২৪ ও চবি-৮২ সমিতির লগো সম্বলিত টি-শার্ট বিতরণ করা হয়। অতঃপর বাস দুটোতেই বেড়ানোর উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পড়ি।



বাস থেকে নেমে বিজিবি স্মৃতিস্তম্ভ দেখা হয়। বৃটিশ  আমলে এখানে সৈনিকদের জন্য একটি ক্যাম্প গড়ে উঠে। যাহা কালক্রমে ইপিআর, বিডিআর হয়ে আজকের বিজিবি। স্মৃতিস্তম্ভের পাদদেশে আহবায়ক জামশেদ আহমেদ মুক্তিযুদ্ধের সময় রামগড়ের গুরুত্ব নিয়ে সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন। সেখানে ফটোসেশন করা হয়।

ইতিহাসের সাক্ষী এসডিওর বাংলো দেখা হয়। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের প্রথম দিকে এই বাংলোটাতে অবস্থান করেন তৎকালীন পার্বত্য চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক। ১৯৭১ সালের ২ রা মে রামগড় পতন পর্যন্ত এখান থেকে তিনি পাকহানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে মুক্তিযোদ্ধাদের সংঘটিত করেন এবং স্বাধীন বাংলা সরকারের অধীনে প্রশাসনিক কার্য্যক্রম পরিচালনা করেন।

তৎকালীন স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র্র দেখা হয়। এসডিওর এ বাংলোটিতে চট্টগ্রামের কালুরঘাট বেতার কেন্দ্রের ১ কিলোওয়াট শক্তিসম্পন্ন ট্রান্সমিটার বসিয়ে কিছুদিন স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের অনুষ্ঠান সম্প্রচার করা হয়। অতঃপর রিসোর্টে ফিরে সকলে মিলে একসাথে দুপুরের ভুরিভোজ সারলাম।

সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে অতিথি শিল্পীদের মনোজ্ঞ দেশাত¦বোধক গান, আঞ্চলিক গান পরিবেশিত হয়। আবৃতি শিল্পী মইনুল হাসান চৌধুরী যোশেফের মিসেস নিশাত হাসিনা শিরীন কবিতা আবৃতি করেন। যোশেফ-নিশাত দম্পতি উভয়েই কবি। যোশেফ লিখেন আর নিশাত আবৃতি করেন। আবৃতি, গান সকলে উপভোগ করেন। কেউবা গানের সাথে নেচে মেতে উঠেন। মাহমুদুল হাসান (রসায়ন, কাপকোর অবরসপ্রাপ্ত ডিজিএম) আধ্যাত্মিক বিষয়ে আলোকপাত করেন। অনুষ্ঠান সঞ্চালনায় ছিলেন জসিম উদ্দিন মাহমুদ। পুরো সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের পৃষ্ঠপোষকতা করেন অধ্যাপক শিল্পী কাবেরি সেনগুপ্ত। তিনি আসেননি অথচ পৃষ্ঠপোষকতা করেছেন, নির্ধারিত চাঁদা দিয়েছেন। তিনি অসাধারন, তাঁর প্রতি স্যালুট।

পরবর্তীতে টানটান উত্তেজনায় র‌্যাফল ড্র অনুষ্ঠিত হয়, পরিচালনায় ছিলেন প্রিন্সিপাল নুরুল আমিন। তাকে সহযোগিতা করেন নাহিদ আক্তার ঝুলন, সুরজিত বড়ুয়া, নাজমুল আলম জুয়েল। এরিমাঝে কখন যে সারাদিন শেষ হয়ে সন্ধ্যা হয়ে যায় টেরই পাওয়া যায়নি। সময় না থাকায় মহিলাদের চেয়ার প্রতিযোগিতা, পুরুষদের বাস্কেটবল প্রতিযোগিতা বাতিল করতে হয়েছে।



অতঃপর মাগরিবের নামাজ পড়ে বাস দু’টোতে প্রত্যেকের জন্য নির্ধারিত আসন গ্রহণ করি। চারশ মিটার দূরত্বে যাত্রা বিরতি করে সবাই নেমে পড়ি। নির্মাণাধীন রামগড় স্থলবন্দর ও বাংলাদেশ-ভারত মৈত্রী সেতু দেখি। সেতুর এ পাশে সীমান্ত চৌকিতে ব্যারিকেড দেওযা আছে। একজন বিজিবি সদস্য আমাদের জানালেন, স্যার ব্যারিকেডের ভিতরে আসা যাবেনা। বাসে উঠে পড়লাম। নাস্তা পরিবেশন করা হলো। হেঁয়াকো, ফটিকছড়ি, হাটহাজারী হয়ে রওয়ানা। রাত ৯ টায় চট্টগ্রাম ফিরে এলাম। ঐতিহাসিক স্থান পরিদর্শন, খাওয়া-দাওয়া, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, র‌্যাফেল ড্র, ফটোসেশন ইত্যাদি সবকিছু মিলিয়ে আমরা সকলে একদিনের জন্য যেন অরণ্যে হারিয়ে যাই। রামগড় পরিসংখ্যান কর্মকর্তা ওয়াহিদুজ্জমান, যার অক্লান্ত পরিশ্রম, গাইডলাইন ও প্রচেষ্টায় আমাদেও দিনব্যাপী ভ্রমণ সফল হয়। তাঁর প্রতি চবি-৮২ সমিতির পক্ষ থেকে কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি। শুধুমাত্র জসিম উদ্দিন মাহমুদের একটি মোবাইল ফোনের বদৌলতে তিনি কাজটি করেছেন। সতীর্থ বন্ধু জসিম উদ্দিন মাহমুদের  প্রতিও সমিতির কৃতজ্ঞতা। পরিশেষে অংশগ্রহণকারী সকল সদস্যদের প্রতি বিশেষ কৃতজ্ঞতা, যাদের অকুন্ঠ সমর্থন, সহযোগিতায় ভ্রমণ সফল হয়েছে।

# এম জামশেদ আহমেদ, আহবায়ক, বনভোজন ২০২৪ উদযাপন কমিটি, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় প্রাক্তন ছাত্র-ছাত্রী সমিতি-৮২

Tag
আরও খবর