ফুটেছে আমের মুকুল, ছড়াচ্ছে সুবাসিত ঘ্রাণ। কবির ভাষায়, ‘ফাল্গুনে বিকশিত কাঞ্চন ফুল, ডালে ডালে পুঞ্জিত আম্রমুকুল। বনে বনে ফুল ফুটেছে, দোলে নবীন পাতা।’ এ যেন বসন্ত জাগ্রত দ্বারে। রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলায় গাছে গাছে আমের মুকুলের বাহার। শীত শেষে এখন সোনালী রংগে নতুন রূপে সেজেছে প্রকৃতি। মৌ মৌ গন্ধে চারদিকে ছড়িয়ে পড়েছে মুকুলের মিষ্টি সুবাস। আমের মুকুলে তাই এখন মৌমাছির গুঞ্জন। মুকুলের মিষ্টি ঘ্রাণ যেন জাদুর মতো কাছে টানছে তাদের। গাছের প্রতিটি শাখা-প্রশাখায় তাই চলছে ভ্রমরের সুর ব্যঞ্জনা। এ দৃশ্য শুধু প্রকৃতিকে নয়, মানুষের মনকেও রাঙিয়ে তুলেছে। মুকুলের সৌরভ আর আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে বাগান মালিকরা এবার বাম্পার ফলনের স্বপ্ন দেখছেন।
গোদাগাড়ী উপজেলার গ্রামাঞ্চলে দেখা যাচ্ছে, বড় বাগান থেকে শুরু করে ছোট ও মাঝারি আকারের গাছগুলোও মুকুলে ছেয়ে গেছে। গাছের ডালপালা যেন সোনালী ও সবুজের অপরূপ মেলবন্ধনে সজ্জিত। মুকুলের সুবাস আশপাশের পরিবেশকে আরও প্রাণবন্ত করে তুলেছে।
স্থানীয় বাগান মালিক আব্দুল মালেক বলেন, “এ বছর আবহাওয়া ভালো থাকায় মুকুল আসার সময় কোনো সমস্যা হয়নি। পরিচর্যা সঠিকভাবে করলে আমরা ভালো ফলনের আশা করছি।”
গোদাগাড়ীতে খিরসাপাত, গোপালভোগ, ল্যাংড়া ও ফজলি জাতের আম সবচেয়ে জনপ্রিয়। এসব গাছে মুকুল ভালো আসায় বাগান মালিকরা অনেক বেশি আশাবাদী।
আমের মুকুল ও ফলের ভালো উৎপাদন নিশ্চিত করতে কিছু পরিচর্যার নিয়ম মেনে চলতে হয়।
মুকুল আসার সময় কীটনাশক প্রয়োগ: প্রথম স্প্রে:
মুকুল আসার ১৫-২০ দিন আগে সাইপারমেথ্রিন বা ল্যামডা সাইহ্যালোথ্রিন গ্রুপের কীটনাশক ১ মিলি প্রতি লিটার পানিতে মিশিয়ে স্প্রে করতে হবে।
একদিন পর সালফার বা ম্যানকোজেব গ্রুপের ছত্রাকনাশক ২ গ্রাম প্রতি লিটার পানিতে মিশিয়ে প্রয়োগ করতে হবে।
সেচের নিয়ম ,ফলন্ত গাছে মুকুল আসার তিন মাস আগে সেচ বন্ধ রাখতে হবে।
মুকুল ফোটার শেষ পর্যায়ে ও ফল মটরদানা হলে একবার সেচ দিতে হবে। ফুল ফোটার আগে সেচ দেওয়া যাবে না। গাছের গোড়া আগাছা মুক্ত রাখতে হবে, কারণ এসব আগাছায় পোকা বাসা বাঁধে।
স্প্রে ব্যবস্থাপনা মুকুল ৪-৬ ইঞ্চি হলে হপার পোকা দমনে ইমিডাক্লোপ্রিড গ্রুপের কীটনাশক ০.৫ মিলি প্রতি লিটার পানিতে মিশিয়ে স্প্রে করতে হবে। ম্যানকোজেব বা কার্বেন্ডাজিম গ্রুপের ছত্রাকনাশক প্রয়োগ করতে হবে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোসাঃ মরিয়ম আহমেদ বলেন, “আমাদের কৃষি অফিস থেকে বাগান মালিকদের মুকুল ও গাছের সঠিক পরিচর্যার বিষয়ে নিয়মিত দিকনির্দেশনা দেওয়া হচ্ছে। আবহাওয়া যদি অনুকূল থাকে, তাহলে এবার আমের বাম্পার ফলন হবে।