রাজশাহীর বাঘা উপজেলায় বিএনপি নেতার নেতৃত্বে জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী ছাত্রশিবিরের নেতাকর্মীদের বাড়িঘর ও দোকানপাটে ব্যাপক হামলা, ভাংচুর ও লুটপাট চালানো হয়েছে। নিরাপত্তাহীনতার কারণে ভুক্তভোগী পরিবারের সদস্যরা আত্মগোপনে রয়েছেন। নগদ দেড় লাখ টাকা, স্বর্ণালংকারসহ দামি জিনিসপত্র লুট করে নিয়ে গেছে হামলাকারীরা। ভাংচুর করা হয়েছে গুরুত্বপূর্ণ আসবাবপত্র। এলাকায় এখন উদ্বেগ ও আতংক বিরাজ করছে। বাউসা ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষ থেকে সম্প্রতি ভিজিএফ, ভিজিডি ও ভিজিবি কার্ড বিতরণে অনিয়ম এবং চাঁদাবাজির প্রতিবাদ করায় জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী ছাত্রশিবিরের নেতাকর্মীদের বাড়ি ঘরে এই হামলা, ভাংচুর ও লুটপাট চালানো হয়েছে জানা গেছে।
এদিকে এসব ঘটনার বিস্তারিত তুলে ধরে সোমবার (৩১ মার্চ) সন্ধ্যায় বাঘা উপজেলা সদরে অবস্থিত জাগ্রত বাঘা কাযা'লয়ে সংবাদ সম্মেলন করেছে বাঘা উপজেলা জামায়াতে ইসলামী। এসময় জামায়াত নেতারা অবিলম্বে দোষী ব্যক্তিদের গ্রেফতারসহ পাঁচ দফা দাবি তুলে ধরেছেন। দাবি বাস্তবায়ন না হলে কঠোর কম'সূচির হুশিয়ারি দেন নেতারা।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে বাঘা উপজেলা জামায়াতের সেক্রেটারি ইউনুস আলী বলেন, বাউসা ইউনিয়ন পরিষদে দীর্ঘদিন ধরে সাধারণ জনগণ ও বিভিন্ন সেবা গ্রহীতারা ইউনিয়ন পরিষদের কর্তা ব্যক্তিদের দ্বারা অন্যায়, দুর্নীতি ও হয়রানির শিকার হয়ে আসছিলেন। আর বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী এই ঘটনার নিয়মতান্ত্রিক প্রতিবাদ করে আসছিলেন। তারই ধারাবাহিকতায় গত গত ২০ মার্চ বেলা সাড়ে ১১ টায় ইউনিয়ন পরিষদের অন্যায় ও দুর্নীতির প্রতিবাদে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর বাউসা ইউনিয়ন শাখা মানববন্ধনের আয়োজন করে। কিন্তু জামায়াতের শান্তিপূর্ণ মানববন্ধনে ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি রেজাউল করিমের নেতৃত্বে একদল সন্ত্রাসী অতর্কিত হামলা করে। এ ঘটনায় জড়িতদের গ্রেফতার ও শাস্তির দাবিতে থানায় লিখিত অভিযোগ দেন জামায়াত নেতারা। পরবর্তীতে ২৩ মার্চ বাঘা থানার ওসির মধ্যস্থতায় ওই ঘটনার মীমাংসা করা হয়।
এরপর কোনো ধরনের উসকানি ছাড়াই রোববার (৩০ মার্চ) বিকেলে বাউসা ইউনিয়নের দীঘা ওয়ার্ড ছাত্রশিবিরের সেক্রেটারি সৌরভ হোসেনের ওপর অতর্কিত হামলা করে ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা। আড়ানী থেকে বাড়িতে ফেরার পথে তার ওপর এই হামলা করে তারা। বাউসা ইউনিয়ন বিএনপি'র সভাপতি রেজাউল করিমের ভাতিজা আরাফাতর নেতৃত্ব রতন, মুমিন রাজীব, আকাশ প্রমুখ এই হামলা করে।
এরপর একইদিন সন্ধ্যায় আহত সৌরভের সহকর্মী শিবির কর্মী মারুফ, মুন্না, এবং ফয়সালকে চাইনিজ কুড়াল দিয়ে কুপিয়ে যখম করে ওই হামলাকারীরা। এসময় তাদের ব্যবহৃত পাঁচটি মোটরসাইকেলও ভাঙচুর অগ্নিসংযোগ করে হামলাকারী ছাত্রদল নেতাকর্মীরা। এছাড়া বিএনপির সন্ত্রাসীরা বাউসা বাজারে অবস্থিত জামায়াত সমর্থিত বিভিন্ন ব্যবসায়ীদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা ভাঙচুর এবং নগদ অর্থ লুটপাট করে। এরমধ্যে বাউসা বাজারের ব্যবসায়ী টুটুলের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান থেকে নগদ দেড় লাখ টাকা লুট করে নিয়ে গেছে তারা। এ ঘটনায় আহত শিবির কর্মী ফয়সাল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছে।
সংবাদ সম্মেলনে আরো বলা হয়, বাউসা ওয়ার্ড জামায়াতের সভাপতি মিজানুর রহমান শিল্পীর বাড়িতে হামলা ও ভাঙচুর করে তার বাড়ি থেকে আনুমানিক দুই লাখ টাকার বাদাম লুট করে নিয়ে গেছে। শিবির কর্মী রোহানের বাড়িতে হামলা ও ভাঙচুর চালিয়ে তার বাড়ি থেকে নগদ ১০ হাজার টাকা এবং দুইটি বাইসাইকেল লুট করে নিয়ে গেছে বিএনপি সন্ত্রাসীরা। একই সময়ে শিবিরকর্মী রোহানের বাবার বাউসা বাজারে অবস্থিত স- মিলে হামলা, ভাঙচুর এবং অগ্নিসংযোগ করা হয়। এছাড়া ঈদের নামাজের পরে ইউনিয়ন যুবদলের নেতা এনামুলের নেতৃত্বে নেতাকর্মীরা সশস্ত্র অবস্থান নেন। এতে এলাকায় আতংক ছড়িয়ে পড়ে। এলাকায় এখন উদ্বেগ ও আতংক বিরাজ করছে বলেও জানান জামায়াত নেতারা।
সংবাদ সম্মেলনে পাঁচ দফা দাবি তুলে ধরা হয়। দাবি গুলো হলো: অবিলম্বে এ হামলার সঙ্গে জড়িত সন্ত্রাসীদের চিহ্নিত করে গ্রেফতার করা; ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর জন্য যথাযথ ক্ষতিপূরণ প্রদান, রাজনৈতিক প্রতিহিংসার মাধ্যমে দেশে অস্থিরতা সৃষ্টি করার চক্রান্ত বন্ধ, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে নিরপেক্ষ ও দ্রুত কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা এবং জনগণের জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিতে প্রশাসনকে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করার
দাবি জানানোহয়। দাবী বাস্তবায়ন না হলে কঠোর কম'সূচির হুশিয়ারি দেন নেতারা জামায়াত নেতারা।
তবে এ ব্যাপারে অভিযুক্ত ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি রেজাউল করিমের বক্তব্য পাওয়া যায়নি। #
বাঘা থানার ওসি আফম আছাদুজ্জামান বলেন, এ ঘটনায় এখনো অভিযোগ হয়নি। অভিযোগ পেলে আইনি ব্যবসথা নেওয়া হবে। #