পানগুছি নদী তীরবর্তী ইউনিয়নগুলো যেমন- বহরবুনিয়া, পঞ্চকরণ, বারইখালী, বলইবুনিয়া, হোগলাবুনিয়া, মোরেলগঞ্জ সদর, খাউলিয়ার প্রায় ৩০ গ্রাম সহ প্রায় পুরো পৌরসভা জোয়ারের পানিতে তলিয়ে যায় । জোয়ার-ভাটার খেলায় পড়ে নারী-শিশু-বৃদ্ধসহ পথচারীরা চরম দুর্ভোগে পড়েন।
গত সপ্তাহজুড়ে অবিরাম বৃষ্টি আর নিম্নচাপের প্রভাবে জোয়ারের পানিতে দুর্ভোগ সম্পর্কে বারইখালী ইউনিয়নের ১০৯ নং উত্তর সুতালড়ী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা নার্গিস খানম বলেন, এমনিতেই আমাদের এলাকার রাস্তাঘাট কাঁচা এবং প্রায়-ই পানিতে ডুবে থাকে এমন সময় জোয়ারের পানি উঠলে স্কুলে আসার প্রবেশপথে পানি জমা হয়ে হাটু-কোমর পর্যন্ত পানি হয়ে যায়। এতে কোমলমতি শিশুরা স্কুলে আসতে পারে না। আর যারা আসে তারা ও সঠিক সময় আসতে পারে না। জোয়ারের পানিতে ভিজে যায় বই-খাতা। প্রতিনিয়তই ঘটে দুর্ঘটনা। চারদিকে থৈ থৈ পানি ও রাস্তা খারাপ থাকায় কোমলমতি শিশুদের অভিভাবকরা থাকেন দুশ্চিন্তায়।
অন্যদিকে পানগুছি নদীর দুই তীরবর্তী পৌর শহরের লঞ্চঘাট সহ উপজেলার বিস্তীর্ণ এলাকার ফসল এবং ফসলি জমি, মাছের ঘের সহ ঘরবাড়ি নষ্ট হচ্ছে প্রতিনিয়ত। উপজেলার ফেরীঘাট সংলগ্ন এলাকা, বারইখালীর কাশ্মীর, বলইবুনিয়ার শ্রেণীখালী, বহরবুনিয়ার ফুলহাতা, ঘষিয়াখালী, মোরেলগঞ্জ সদর ইউনিয়নের গাবতলা গ্রামের নতুন করে আধা কিলোমিটার কার্পেটিং রাস্তা ধসে গেছে। হোগলাবুনিয়ার বদনীভাঙ্গা, সানকিভাঙ্গা, পাঠামারা, খাউলিয়া বাজারের ব্রিজ হুমকির মুখে পতিত হয়েছে।
এছাড়াও পঞ্চকরণের দেবরাজের পানি উন্নয়ন বোর্ডের আওতাধীন ১ হাজার ২০০ মিটার অস্থায়ী বেড়িবাঁধ হুমকির মুখে রয়েছে। এদিকে দীর্ঘদিন ধরে পানগুছি নদীর ভাঙ্গনের ফলে ফসলি জমি, বাড়িঘর গাছপালা বিলীন হয়ে নদীগর্ভে চলে যাওয়ায় নিঃস্ব হয়ে পড়েছে শত শত পরিবার।
নদীর তীরবর্তী ইউনিয়ন গুলোর সংশ্লিষ্ট ইউপি চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুর রাজ্জাক মজুমদার, সদর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. হুমায়ুন কবির মোল্লা, বারইখালীর চেয়ারম্যান আব্দুল আউয়াল খান মহারাজ, হোগলাবুনিয়ার বীর মুক্তিযোদ্ধা আকরামুজ্জামান, বহরবুনিয়ার চেয়ারম্যান রিপন হোসেন তালুকদার বলেন, গত কয়েক দিনের পানির চাপে নদীর তীরবর্তী তাদের ইউনিয়নগুলো অনেক কাঁচা-পাকা রাস্তা ভেঙে গেছে।
এ বিষয়ে পৌরসভার মেয়র এসএম মনিরুল হক তালুকদার বলেন, শুধু শহর রক্ষা বাঁধ নয়, ইতোমধ্যে গাবতলা হয়ে ঘষিয়াখালী পর্যন্ত স্থায়ী বেড়িবাঁধের টেন্ডার ও কাজ শুরু হয়েছে। ২০১৭ সালে এ প্রকল্পের প্রস্তাবনা হয়েছে। এ কাজ সম্পন্ন হলে এ সমস্যা থাকবে না।
বাগেরহাট জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডে নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মাসুম বিল্লাহ বলেন, মোরেলগঞ্জ শহর সংলগ্ন রামপাল-মোংলা হয়ে ঘষিয়াখালী পর্যন্ত ৯৫ কিলোমিটার বেড়িবাঁধের জন্য সম্ভাব্যতা সমীক্ষার জন্য মন্ত্রনালয়ে প্রস্তাবনা রয়েছে। এ ছাড়াও ইতোমধ্যে পানগুছি নদীর ভাঙন হতে বাগেরহাট জেলা সদর সংলগ্ন এলাকা সংরক্ষণ এবং বিষখালী নদী পুনঃখনন শীর্ষক প্রকল্পের কাজ শুরু হয়েছে। '
তবে চলমান প্রকল্পের কাজগুলো দ্রুত শুরু এবং শেষ করতে না পারলে এ দুর্ভোগ থেকে এ এলাকার মানুষের মুক্তি মিলবে না বলে অভিমত পোষণ করেছেন সচেতনমহল।