আদমদীঘিতে বিএনপির ঈদ পুর্নমিলনী উপলক্ষে কর্মী সভা আদমদীঘিতে ১২০পিস এ্যাম্পুলসহ একজন গ্রেপ্তার আশাশুনির গোয়ালডাঙ্গায় বেড়ী রাস্তা ভাঙ্গন স্থানে রক্ষা কাজ শুরু কটিয়াদীতে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ এর বিক্ষোভ মিছিল অনুষ্ঠিত নওগাঁর নিয়ামতপুরে গাছ কাটাকে কেন্দ্র করে দুই পক্ষের সংঘর্ষে নিহত ২ উন্নত বিশ্বে কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে : আসিফ নজরুল পুলিশের নতুন লোগো প্রকাশ ইসলামপুরে ১০ জুয়াড়ি আটক কারাগারে অভিনেত্রী মেঘনা আলম মিয়ানমারে ফের ভূমিকম্প বেড়েছে সবজির দাম, সংকট সয়াবিন তেলের বদলে গেল মঙ্গল শোভাযাত্রার নাম আশাশুনিতে দেল ও চড়ক পূজার ঐতিহায্য ম্লান হতে শুরু করেছে। আক্কেলপুর যৌথ অভিযানে মাদকসহ আটক ১০ বাঘায় এক কৃষককে কুপিয়ে হত্যা উপকূলে জলবায়ু অবরোধ কর্মসূচী শ্যামনগরে এসএসসি ও দাখিল পরীক্ষায় প্রথমদিনে অনুপস্থিত ৮০ জন এডভোকেট এরফানুর রহমান মহামান্য হাইকোর্ট বিভাগের আইনজীবি হিসাবে তালিকাভুক্ত হওয়ার ১০ বছর পূর্ণ হল। চিলমারীর সিমান্তে মা ও মেয়েকে উত্ত্যক্তের ঘটনায় ২ গ্রামবাসীর মাঝে সংঘর্ষ ইসলামপুরে পরীক্ষা চলাকালে খোলা রাখায় ফটোকপির দোকান সিলগালা, ২ কর্মচারী আটক

বিলুপ্তির পথে ভেন্না গাছ

ফাইল ছবি



পল্লী কবি জসীমউদ্দিন আসমানী কবিতায় লিখেছেন -


আসমানীরে দেখতে যদি তোমরা সবে চাও

রহিমুদ্দির ছোট্ট বাড়ি রসুলপুরে যাও

বাড়ি তো নয় পাখির বাসা ভেন্না পাতার ছানি

একটুখানি বৃষ্টি হলেই গড়িয়ে পড়ে পানি।


সংরক্ষণের অভাব, কেটে ফেলা, অসচেতনতাসহ বিভিন্ন কারণে হরিয়ে যাচ্ছে পরিবেশবান্ধব ও মহাঔষধি গাছ ভেন্না। কাঁটা অংশ জোড়া লাগাতে, চুলপড়া রোধে, মুখের রুচি বাড়াতে, বাত ব্যথায়, ক্ষত সারাতে, মাড়ির যে কোন সমস্যায় ভেন্না গাছ কার্যকরী ভূমিকা পালন করে। এর বীজ থেকে উৎপাদিত তেলেও রয়েছে জাদুকরী ঔষধি ক্ষমতা।


রাস্তার আশেপাশে, বনে-বাদাড়ে, বাড়ির আনাচে-কানাচে ভেন্না গাছ দেখতে পাওয়া যায়। ক্ষেত-খামারের বেড়া তৈরিতে এই গাছ বেশি লাগানো হয়। এর ডাল দাঁতের মাজন হিসেবেও ব্যবহৃত হয়। এছাড়া ভেন্নার আঠা থেকে এক ধরনের বুদবুদ তৈরি হয় যা বাচ্চাদের আনন্দ যোগায়।


কালের গর্ভে বিলুপ্তির পথে সেই ভেন্না গাছ।সংরক্ষণের অভাব, কেটে ফেলা, অসচেতনতাসহ বিভিন্ন কারণে হরিয়ে যাচ্ছে পরিবেশবান্ধব ও মহাঔষধি গাছ ভেন্না। বনজঙ্গল, রাস্তার পাশে,ঝোপঝাড় ও বাড়িঘরের আনাচে কানাচে প্রচুর পরিমাণে ভেন্না গাছ দেখতে পাওয়া যেত। কালের আবর্তনে হারিয়ে যাচ্ছে সেই গাছ।


ময়মনসিংহের নান্দাইলে এখন আর চোখে পড়েনা চিরচেনা ভেন্না গাছ। একসময় এই গ্রামবাংলার পথঘাট, লোকালয় নানা গাছগাছালি আর পত্রপল্লবে ছায়া সুনিবিড় থাকলেও রূপসী বাংলার চিরচেনা সেই রূপ আজ আর নেই।


বাংলাদেশের গ্রামগঞ্জের আনাচে-কানাচে নানা ধরনের ওষুধি উদ্ভিদ পাওয়া যেত। তাদের অন্যতম হচ্ছে ভেরেন্ডা বা ভেন্না। আমাদের দেশে ভোজ্যতেলের তালিকায় ভেরেন্ডা একটি পরিচিত নাম। ভেন্না বা রেড়ি,বৈজ্ঞানিক নাম (Ricinuscommunis) বহুবর্ষজীবী উদ্ভিদ। ভেরেণ্ডার সংস্কৃত নাম এরণ্ড। ইংরেজিতে এই গাছকে castor beanঅথবা castor oil plant বলে।


ভোজ্য তেল হিসেবে এর অনেক কদর ছিল। ভেরেন্ডা গাছ দেখতে অনেকটা পেঁপে গাছের মত। ভেরেন্ডা গাছ ১০-১৫ ফুট লম্বা হয়। সবচেয়ে বড়পাতা উদ্ভিদগুলোর মধ্যে একটি হলো ভেরেন্ডা গাছ। গজানোর সময় কোন শাখা প্রশাখা থাকে না আর একটু বড় হলে শাখা প্রশাখা চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ে। এই গাছ বিনা চাষেই বর্ষাকালে গজায়। বনেবাদাড়ে আপনিতে জন্মে। মার্চ-এপ্রিল মাসে বীজ বপন করতে হয়। গাছে ফুল ও ফল হয় আগস্ট-সেপ্টেম্বরে। ভেড়েন্ডা জলা জায়গায় বাঁচে না। হেমন্ত ও শীতকালে ফুল ও ফল ধরা শুরু করে। সবুজ ফলের গায়ে নরম নরম কাঁটা থাকে। কাঁটা এতোই নরম যে গায়ে ফোঁটে না। অনুকূল পরিবেশ পেলে সারা বছরই ফল ধরে। বিভিন্ন প্রজাতির মধ্যে বোম্বাই ও স্থানীয় জাতের ভেন্নাই আমাদের দেশে বেশি দেখা যায়।


ভেরেন্ডা গাছগুলো সাদা, কালো ও লালচে বর্ণের হয়ে থাকে। হেমন্ত ও শীতকালে ফুল ও ফল হয়। অনুকূল পরিবেশে সারা বছরেই ফুল ও ফল ধরে। গাছের বয়স ২-৩ মাস হলেই শাখায় শাখায় ফুলের কাঁদি হয়। প্রতিটি কাঁদিতে দেড় থেকে দুই শতাধিক ফল ধরে। প্রতিটি ফলে ৩-৪ টি দানা বীজ হয়। কাঁদিগুলো পাকলে হাল্কা কালচে চকচকে বাদামী বর্ণের হয়ে থাকে। তখন গাছ থেকে কাঁদিসহ ফল ছড়িয়ে নিয়ে রোধে শুকিয়ে বীজ সংগ্রহ করা হয়। বীজগুলো রোধে শুকিয়ে সরিষা অথবা তিল তিসির সাথে মিশিয়ে মেশিনে ভাঙিয়ে ভোজ্য তেল তৈরি করা হয়।


ভেন্না আমাদের দেশের গরিব মানুষের ভোজ্যতেল। এ ছাড়া রোগব্যাধি নিরাময়ে এ তেল ব্যবহার করা হয়। ভেন্নার গাছ জ্বালানি হিসেবে, বাড়ির আঙ্গিনার বেড়া ও সবজির মাচায় ব্যবহার করা যায়।


পরিবেশবাদীরা মনে করেন, দেশ থেকে বিলুপ্ত প্রায় এসব উপকারী ওষুধি বৃক্ষগুলো রক্ষা করতে সচেতন মহলকে এগিয়ে আসতে হবে। এ ব্যাপারে গণসচেতনতাও প্রয়োজন। প্রয়োজন সরকারের বিশেষ উদ্যোগ।


অবসরপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মো.আব্দুল মোতালেব বলেন, ‘আমাদের সময়ে প্রতিটি বাড়ির আঙিনায়, পুকুরপাড়ে, ঝোপঝাড়ে সর্বত্রই ভেন্নাগাছ ছিল। চৈত্র মাসে জখন মেলা বসত তখন গাছ থেকে সংগৃহীত ভেন্না নিয়ে সবাই মেলায় নিয়ে জেত বিক্রির জন্য। কিন্তু আজ আর তেমন চোখে পড়েনা।’


নান্দাইল উপজেলা কৃষি অফিসার মোহাম্মদ আনিসুজ্জামান বলেন, ‘ভেন্না গাছের গুণাগুণ না জানার কারণে অযত্ন-অবহেলায় হারিয়ে গিয়েছে। ওষুধি বৃক্ষ ভেন্নাকে রক্ষা করতে হলে আমাদের সবাইকে ভেন্না গাছ রোপণের উদ্যোগ নিতে হবে।’

Tag
আরও খবর