আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভায় 'আ.লীগের দোসর' আখ্যা দেওয়ায় পুষ্টি সমন্বয় কমিটির সভায় উপস্থিত হননি ইউপি চেয়ারম্যানেরা

জামালপুরের ইসলামপরে আইনশৃঙ্খলা কমিটির মাসিক সভায় আওয়াম্য লীগের দোসর আখ্যা দিয়ে ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যানদের সঙ্গে রাজনৈতিক দলের নেতারা 'অসৌজন্যমূলক' আচরণ করায় পুষ্টি সমন্বয় কমিটির  সভায় ইউপি চেয়ারম্যানেরা উপস্থিত হননি। এনিয়ে ইউপি চেয়ারম্যানেরা মুখ না খোললে তাঁদের মাঝে চাপাক্ষোভ বিরাজ করছে। তবে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. তৌহিদুর রহমান ঘটনার সত্যতা স্বীকার করেছেন।

গতকাল বুধবার (১১ ডিসেম্বর) দুপুরে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স মিলনায়তনে উপজেলা পুষ্টি সমন্বয় কমিটির  সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন উপজেলা পুষ্টি সমন্বয় কমিটির সভাপতি ও ইউএনও মো. তৌহিদুর রহমান। 

উপজেলা স্বাস্থ্য বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার ১২টি ইউপির চেয়ারম্যানগণ পদাধিকার বলে উপজেলা পুষ্টি সমন্বয় কমিটির সদস্য। প্রতিটি সভায় চেয়ারম্যানদের উপস্থিত থাকাটা গুরুত্ব রয়েছে। উপজেলা প্রশাসন ও উপজেলা স্বাস্থ্য বিভাগের আয়োজনে অনুষ্ঠিত ওই সভায় উপজেলার ১২টি ইউপির কোনো চেয়ারম্যানই উপস্থিত হননি। তবে চিনাডুলী ইউপির প্যানেল চেয়ারম্যান ফয়জুর রহমান ফারুক এবং চরপুটিমারী ইউপি সদস্য হানিফ উদ্দিন তাঁদের চেয়ারম্যানের পক্ষে প্রতিনিধি হিসেবে সভায় অংশ নেন।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গত ২০ নভেম্বর বেলা ১১টার দিকে উপজেলা পরিষদ মিলনায়তনে উপজেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটির মাসিক সভা অনুষ্ঠিত হয় ইউএনও মো. তৌহিদুর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত ওই সভায় অন্তত ১০ জন ইউপি চেয়ারম্যান উপস্থিত হন। বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের উপজেলা পর্যায়ের নেতারাও সভায় অংশ নেন। 

ইউপি চেয়ারম্যানেরা সামনের সারিতে বসেন। এনিয়ে আপত্তি তোলে রাজনৈতিক দলের কতিপয় পদধারী নেতা ইউপি চেয়ারম্যানদের সঙ্গে 'অসৌজন্যমূলক' আচরণ করেন। পরিস্থিতির বেগতিক দেখে আওয়ামী লীগ সমর্থিত অনেক ইউপি চেয়ারম্যানই পেছনের সারিতে বসতে বাধ্য হন। এক পর্যায়ে নেতারা ইউপি চেয়ারম্যানদের সঙ্গে বাগবিতণ্ডায় জড়াতে থাকলে, এসময় ইউএনও মো. তৌহিদুর রহমান পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করেন।

উপজেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটি সূত্রে জানা যায়, ১২টি ইউপির মধ্যে ১০ জন চেয়ারম্যান ওই সভায় অংশ নেন। তাঁরা হলেন, গাইবান্ধা ইউপি চেয়ারম্যান মাকছুদুর রহমান আনছারী, চরপুটিমারীর শামছুজ্জামান সুরুজ মাষ্টার, চিনাডুলীর আব্দুস ছালাম, বেলগাছার আব্দুল মালেক, চরগোয়ালিনীর শহিদুল্লাহ সরকার, নোয়ারপাড়ার ইঞ্জিনিয়ার রোমান হাসান, কুলকান্দীর আনিছুর রহমান, গোয়ালেরচরের আব্দুর রহিম, সাপধরীর শাহালম মন্ডল এবং পলবান্ধা ইউপি চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর রহমান কমল। 

আইনশৃঙ্খলা সভায় অংশ নেওয়া নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক সরকারি কর্মকর্তা বলেন, 'আইনশৃঙ্খলা সভায় বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের বেশকিছু নেতা অংশ নেন। ইউপি চেয়ারম্যানদের মধ্যে অনেকেই মিলনায়তনের সামনের সারিতে বসেন। এনিয়ে নেতাদের মধ্য থেকে অনেকেই ইউপি চেয়ারম্যানদের উদ্দেশ্য করে বলেন, 'আওয়ামী লীগের দোসরেরা এখানে কীভাবে সামনে সারিতে বসেন। তারা স্বৈরাচার সরকারের দোসর। প্রশাসনের আয়োজিত এই সভায়  স্বৈরাচারের দোসরদের বসতে দেওয়া হবে না।

চরপুটিমারী ইউপি চেয়ারম্যান শামছুজ্জামান সুরুজ মাষ্টার বলেন, 'আইনশৃঙ্খলা সভায় আমাদের সঙ্গে যা ঘটেছে, তা অত্যন্ত নিন্দনীয়। এর চেয়ে বলার কিছু নেই।'

পাথর্শী ইউপি চেয়ারম্যান ইফতেখার আলম বাবলু বলেন, 'আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভায় যাওয়ার পথে মোবাইল ফোনে এক সহকর্মী জানান, সেখানে ইউপি চেয়ারম্যানদের সঙ্গে অসৌজন্যমূলক আচরণ করা হচ্ছে। পরে রাস্তা থেকে ফিরে এসেছি। পুষ্টি সমন্বয় কমিটির সভায় যাওয়া হয়নি।'

জামালপুর জেলা বিএনপির বন-পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক ও ইসলামপুর পৌর বিএনপির সাবেক সভাপতি জয়নাল আবেদীন সরকার বলেন, 'ইউপি চেয়ারম্যানদের সঙ্গে অসৌজন্যমূলক আচরণ করা হয়নি। বরং তাঁদেরকে সম্মান জানিয়ে বলা হয়েছে, আপনারা দীর্ঘদিন ধরে স্বৈরাচার সরকারকে মদদ জোগিয়েছেন। কোনো নেতা-কর্মীকে সম্মান দেননি। এখন থেকে নেতা-কর্মীদের সম্মান দিয়ে কথা বলবেন। মানুষকে সম্মান দিতে শেখুন।'

উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক নুরুল ইসলাম নবাব বলেন, 'কোনো ইউপি চেয়ারম্যানকে অসম্মানজনক কথা বলা হয়নি। তারা যে স্বৈরাচারী আওয়ামী লীগের দোসর ছিলো, মানুষের ভোটাধিকার হরণে শেখ হাসিনাকে সহযোগিতা করেছে, সেটাই আইনশৃঙ্খলা সভায় আলোচনা করা হয়েছে।'

উপজেলা পুষ্টি সমন্বয় কমিটির সদস্যসচিব ও উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা ক্তার এএএম আবু তাহের বলেন, 'পুষ্টি সমন্বয় কমিটির সভার বিষয়ে প্রত্যাক ইউপি চেয়ারম্যানকে অবগত করা হয়েছে। মাত্র দুইটি ইউপির চেয়ারম্যানেরা তাঁদের প্রতিনিধি সভায় পাঠিয়েছেন। শোনেছি, গত আইনশৃঙ্খলা সভায় আওয়ামী দোসর আখ্যা দিয়ে চেয়ারম্যানদের সঙ্গে কিছু নেতা কথা-কাটাকাটি করেছেন। এনিয়ে চেয়ারম্যানেরা পুষ্টি সমন্বয় কমিটির সভায় অংশ নাও নিতে পারেন।'

ইউএনও মো. তৌহিদুর রহমান বলেন, 'আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভায় রাজনৈতিক দলের কতিপয় নেতা ইউপি চেয়ারম্যানদের সঙ্গে অসৌজন্যমূলক আচরণ করেছে। চেয়ারম্যানদের হুমকিও দেওয়া হয়েছে। মনে হয়, সেকারণেই উপজেলা পুষ্টি সমন্বয় কমিটির সভায় চেয়ারম্যানেরা উপস্থিত হননি। তাঁদেরকে কাজে ফিরাতে সময় লাগবে। আমরা চেষ্টা করছি, জনপ্রতিনিধিরা যাতে নির্বিঘ্নে তাঁদের কাজ করতে পারেন। পাশাপাশি রাজনৈতিক দলের নেতাদেরও ধৈর্য ধরতে হবে। তবেই আমরা নতুনভাবে দেশটাকে বির্নিমাণ করতে পারব।'

উল্লেখ্য, ১২টি ইউপির চেয়ারম্যান মধ্যে শুধু কুলকান্দী ইউপি চেয়ারম্যান আনিছুর রহমান বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত। বাকীরা আওয়ামী লীগের গুরুত্বপূর্ণ পদে রয়েছেন।