◾ নীলকন্ঠ আইচ মজুমদার
প্রতিদিন সময়ের সাথে সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে দ্রব্যের মূল্য। সে তুলনায় বাড়ছে না সাধারণ মানুষের আয়। প্রতিনিয়ত হিসেব মিলাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে সাধারণ মানুষকে। সরকারের পক্ষ থেকে বিভিন্ন যুক্তি উত্থাপন করা হলেও মানুষের মাঝে আশার সঞ্চার হচ্ছে না। বিশেষ করে মধ্যবিত্ত সমাজের অবস্থা আরো বেগতিক। সরকারের কর্তা ব্যক্তিরা মাইকে গলাফাটিয়ে বক্তব্য দিলেও কাজে আসছে না কোন কথাই বরং আপাতত দৃষ্টিতে মনে হচ্ছে সবকিছুই যেন সরকারের নিয়ন্ত্রণের বাইরে। আর যদি তা না হয় তাহলে সাধারণ মানুষের ভাবনা হল সরকার এসব নিয়ন্ত্রণ করতে পারছেনা কেন ? কারা এসবের পিছনে জড়িত ? শুধু কি করোনা ও যুদ্ধের প্রভাবেই দাম বাড়ছে ? অন্যদিকে ব্যবসায়ীদের অধিক মুনাফা অর্জন নাকি সরকারকে নির্বাচনের আছে বেকায়দায় রাখা মূল লক্ষ্য তা সরকারকেই খুঁজে বের করতে হবে। আবার সরকারের পক্ষের কিছু অসাধু ব্যবসায়ীও এসব ক্ষেত্রে কারসাজি করতে পারে বলে সাধারণ মানুষ মনে করে। সবমিলিয়ে বর্তমান অবস্থা এতটা নাজুক যে সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রার ব্যয় মেটাতে অতীতের সঞ্চয়কে নষ্ট করছে কিংবা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে ঋণ নিয়ে জীবন যাপনের জন্য প্রয়োজনীয় কাজ গুলোর সমন্বয় সাধন করছে। বাজারের নিত্যপণ্যের মধ্যে চাল ডাল তেল মসলা সিলিন্ডার গ্যাসের সমন্বয় করতে গিয়েই সারা মাসের বাজেট ব্যয় করতে হচ্ছে। করোনার প্রভাব কাটিয়ে যখন স্বাভাবিক পথে ফিরে আসছিল সারা পৃথিবীর অর্থনীতি সেসময় আবার ধাক্কা লাগে রাশিয়া- ইউক্রেন যুদ্ধ। আমদানি- রপ্তানিতে পড়ে ব্যাপক প্রভাব। কিন্তু প্রশ্ন হলো সেইসব প্রভাবের ফলেই কি কেবল সবকিছুর দাম বাড়ছে নাকি সরকারের কম নজরদারির সুযোগ নিচ্ছে ব্যবসায়ীরা ? যেভাবেই দাম বাড়–ক তা থেকে সরকার কখনও তার দায় এড়াতে পারে না। সামনে আসছে রমজান সেময় আরো বিপর্যয় আসতে পারে বাজার ব্যবস্থায় সেটা ভেবে চিন্তিত সাধারণ মানুষ। এমনিতেই আমরা কান কথা বিশ্বাস করি খুব বেশি। বাজারে বিভিন্ন পণ্যের ঘাটতি দেখো দিতে পারে এমন সংবাদের ফলে সামর্থ্যবান মানুষরা অধিক পরিমাণে পণ্য সামগ্রী ক্রয় করে ফেলে যার ফলে বাজারে চাহিদা ও যোগানের মধ্যে ভারসাম্যহীণতা দেখা দেয় এবং সে সুযোগটা নেয় অসাধু ব্যবসায়ীরা। যুদ্ধ ও করোনার ফলে আমদানিতে ব্যাপক প্রভাব পড়েছে বলে অন্যায়ভাবে বিভিন্ন পণ্যের দাম বাড়ছে প্রতিনিয়ত অথচ অনেক পণ্যের দাম বেড়েছে যার মাঝে আমদানির প্রভাব তেমনভাবে পড়ার কথা না। দ্রব্যমূল্যের দাম বৃদ্ধি একট স্বাভাবিক প্রক্রিয়া কিন্তু সেটা যদি হয় লাগামছাড়া তাহলে মানুষের মাঝে অস্থিরতা তৈরি হবে এটাই স্বাভাবিক। দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির ফলে প্রত্যেকটি মানুষের উপর প্রভাব পড়বে এটাই স্বাভাবিক কিন্তু যাদের আয় বেশি তাদের তাদের বেলায় খুব একটা কষ্ট হচ্ছে না স্বাভাবিক জীবনযাত্রায়। কষ্ট হলো যাদের আয় সীমিত এবং প্রতিনিয়ত আয়ের পরিবর্তন হচ্ছে না তাদের পক্ষে হিসাব মেলানো অনেক কঠিন। মাসের শুরুতে সারা মাসের খরচের জন্য যে বরাদ্ধ রাখা হয় তা দিয়ে সারা মাসের খরচ মেটানো যাচ্ছে না যার ফলে গচ্ছিত টাকা ও ঋণের মাধ্যমে ব্যালেন্স করতে হচ্ছে নতুবা প্রয়োজনীয়তাকে জলাঞ্জলি দিতে হচ্ছে। যার ফলে পরিবারের বিশেষ প্রয়োজন মেটানোর জন্য সঞ্চয়ের যে বিষয়টি ছিল সেটি নির্বাসিত হচ্ছে। পরিবারের খরচ মেটাতে না পারার কারণে অনেকেই যেমন হতাশাগ্রস্থ হচ্ছে অন্যদিকে বিভিন্ন অপকর্মেও পা দিচ্ছে। সরকারের সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনির যেসব ব্যবস্থা রয়েছে তাও সঠিকভাবে আয়ের দিক দিয়ে নি¤œশ্রেণির মানুষের কাছে পৌঁছছে না। বিশেষ করে স্বাস্থ্য ও শিক্ষা খাতে সরকারের প্রদত্ত সেবার বাইরে মানুষকে অনেক বেশি খরচ করতে হচ্ছে। যেসব পণ্যের ক্ষেত্রে সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রায় ছাড় দেয়ার কোন সুযোগ থাকে না সেসব পণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণের বেলায় সরকারকে আরো বিশেষ ভূমিকা নিতে হবে। অন্যদিকে জনসাধারণকে কিছুটা কষ্ট স্বীকার করে মিতব্যয়ী হতে হবে এবং উৎপাদন ব্যবস্থায় বিশেষ নজর দিতে হবে। মনে রাখতে হবে আমদানি নির্ভরতা কমাতে না পারলে পণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণে আনা কষ্টসাধ্য ব্যাপার। এসমস্যা থেকে বের হয়ে আসতে হলে কেবলমাত্র সরকারের পক্ষেই সম্ভব নয় সেই সাথে জনগণকে সম্পৃক্ত হতে হবে। অন্যদিকে সরকারকেও অর্থনীতি শক্তিশালী করার জন্য রপ্তানির নতুন বাজার খুঁজে বের করতে হতে না হলে অর্থনীতির ভারসাম্য তৈরি হবে না। যেসব দেশের সাথে সুসম্পর্ক রয়েছে সে সম্পর্ক কাজে লাগিয়ে রপ্তানি বৃদ্ধি করার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। রপ্তানি বাড়াতে যত পলিসি আছে তা কাজে লাগাতে হবে। যে কথাটি না বললেই নয় তাহলো দূর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি ঘোষণা করতে হবে। তবে আশার কথা হলো হলো ইত্যেমধ্যে রিজার্ভ সংকট কাটতে শুরু করেছে। রিজার্ভ সংকট কেটে গেলে অমদানির ক্ষেত্রেও সু বাতাস বইতে থাকবে। রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধ কতটা স্থায়ী হবে তা এখন অনুমান করা যাচ্ছে না তাই রাজনৈতিক পরিস্থিতি দ্রুত শান্ত হবে একথাও হলফ করে বলা যাবে না। চলমান বিশ্ব পরিস্থিতিতে আবার অনেক দেশের পরিস্থিতির সাথে তাল মেলালে চলবে না কারন মনে রাখতে হবে একেক দেশের অর্থনৈতিক কার্যক্রমের ভিত্তি একেক রকম। বর্তমান প্রেক্ষাপটে আমাদের অর্থনীতিকে সচল রাখতে হলে সবচেয়ে আগে বাঁচাতে হবে এদেশের কৃষক সমাজকে যারা আমাদের অর্থনীতির মূল স্তম্ভ। প্রতিনিয়ত বাড়ছে বিদ্যুতের দাম যার ফলে উৎপাদিত কৃষি পণ্যের খরচও বাড়বে। কৃষকের উৎপাদিত পণ্যের খরচ যেন বৃদ্ধি না পায় এবং উৎপাদনের ন্যায্য মূল্য থেকে বঞ্চিত না হয় সেদিকে সরকারকে লক্ষ্য রাখতে হবে। সেজন্য কৃষকের উৎপাদনের উপকরণ কৃষকদের সঠিক মূল্যে সরবরাহ করতে হবে প্রয়োজনে এক্ষেত্রে সরকারকে বিশেষ উদ্যোগ নিতে হবে। এছাড়া বিদেশি রেমিট্যান্স বৃদ্ধির জন্য দূতবাসগুলোকে কাজে লাগিয়ে শ্রমের নতুন বাজার খুঁজতে হবে এবং শ্রম বাজারে যেন স্বল্প ব্যয়ে সহজে পৌঁছাতে পারে সেক্ষেত্রে সরকারের নজরদারি বাড়াতে হবে। তবে রোজাকে সামনে রেখে ইতোমধ্যে অসাধু ব্যবসায়ীরা কারসাজি করে পণ্যের দাম বৃদ্ধি করে চলছে। সমস্যাটা হচ্ছে বিশ্ববাজারের অজুহাত, কখনোও ডলার সংকট আবার গ্যাস-বিদ্যুত সংকটের অজুহাতে দাম বৃদ্ধি করা হয় কিন্তু সংকট কেটে গেলে দাম আর কমে না। বর্তমানে সরকারের উর্দ্ধতন দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তিরা আশ্বাস দিচ্ছেন যে দাম আর বাড়বে না কিন্তু ব্যাপারটা এরকম যে কে শুনে কার কথা। সর্বোপরি সামনে রোজার মাসে যেন নিত্য পণ্যের দাম স্থিতিশীল থাকে সে বিষয়ে সংশ্লিষ্ট সকলকে একসাথে কাজ করতে হবে। সেই সাথে নিত্যপণ্যের বাজার যেন জনগণের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে থাকে সে জন্য নিয়মিত বাজার মনিটরিং করতে হবে এবং নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য নিয়ে কেউ যেন কৃত্রিম সংকট তৈরি করতে না পারে সেজন্য কঠিন হস্তে বাজার মনিটরিং করতে হবে।
লেখক পরিচিতি
শিক্ষক ও গণমাধ্যমকর্মী
১ দিন ১ ঘন্টা ১৩ মিনিট আগে
৪ দিন ২ ঘন্টা ২৮ মিনিট আগে
৫ দিন ২২ ঘন্টা ১৭ মিনিট আগে
৫ দিন ২৩ ঘন্টা ৫০ মিনিট আগে
৬ দিন ২ ঘন্টা ৪০ মিনিট আগে
১৪ দিন ৬ ঘন্টা ১১ মিনিট আগে
১৯ দিন ৮ ঘন্টা ৫৭ মিনিট আগে
২০ দিন ৬ ঘন্টা ৪৬ মিনিট আগে