আজ ১২/১২/২৩ ইং জামালপুর জেলা সরিষাবাড়ি উপজেলা হানাদার মুক্ত দিবস পালিত । এসময় উপস্থিত ছিলেন আলহাজ্ব ডা: মুরাদ হাসান এমপি এবং উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা(ইউএনও) শারমিন আক্তার ও সরিষাবাড়ি উপজেলা চেয়ারম্যান জনাব গিয়াস উদ্দিন পাঠান । সকালে জাতীয় সংগীতের মাধ্যমে জাতীয় পতাকা উত্তোলনের মাধ্যমে শুরু করা হয়। সরিষাবাড়ি ১৯৭১ সালের আজকের দিনে জামালপুর জেলার সরিষাবাড়ী উপজেলা শত্রুমুক্ত হয়। দীর্ঘ নয় মাস ১০ দিন রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে পাক হানাদার বাহিনীকে পরাস্ত করে বাংলা মায়ের দামাল ছেলে বীর মুক্তিসেনারা। এর পিছনে রয়েছে করুণ এক ইতিহাস- জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তাঁর প্রজ্ঞা, মেধা, অভিজ্ঞতা ও দূরদর্শিতার মাধ্যমে পাকিস্তানি সামরিক বাহিনীর ঘৃণ্য বর্বরতার বিষয়টি আগেই আঁচ করতে পারছিলেন। ৭ই মার্চ, ১৯৭১ সাল। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান জাতির উদ্যেশ্যে সরোয়ার্দী উদ্যানে ঐতিহাসিক ভাষণ দেন। এবারের সংগ্রাম, মুক্তির সংগ্রাম! এবারের সংগ্রাম, স্বাধীনতার সংগ্রাম! ওই ভাষণ শুনার পর বাংলার ছাত্র, কৃষক, শ্রমিকসহ সকল পেশাজীবি মানুষ তাঁর ডাকে সাড়া দেন। সকলেই বাংলাদেশ থেকে শত্রু মুক্ত করার জন্য মনে মনে শপথ নেন। তাই সবাই মিলে কিভাবে মুক্তিযোদ্ধা হবেন তার পরিকল্পনা করতে থাকেন। হঠাৎ ২৫ মার্চেও ভয়াল রাতে পাকিস্তানি হায়েনার দল ঘুমন্ত অসহায় বাঙালির উপর অতর্কিতে আক্রমণ চালায়। পাকিস্তানি নরপিশাচদের এমন বর্বর পৈচশিকতায় বিশ্বের সকল সভ্য জাতি নিন্দা জানাতে শুরু করে। এদিকে বাংলাদেশের সকল শ্রেণি পেশার মানুষদের নিয়ে মুক্তিযুদ্ধের ব্যাপক প্রস্তুতি শুরু হয়। তৎকালীন ভারত সরকার তথা ইন্দিরা গান্ধির সহযোগিতায় বাংলার দামাল ছেলেদের পর্যায়ক্রমে যুদ্ধের উপযোগী প্রশিক্ষণ চলতে থাকে। প্রশিক্ষণপ্রাপ্তরা মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়ে পাকিস্তানি বাহিনীর বিরুদ্ধে লড়াই করতে থাকে। জুলাই/৭১ শেষে, আরামনগর কামিল মাদ্রাসা পাকসেনা,রাজাকার ও আলবদরদের ক্যাম্প আক্রমণে মুক্তিযোদ্ধাদের সাহসিকতাপূর্ণ ভূমিকা ছিল।১০ই অক্টোবর কোম্পানী কমান্ডার লুৎফর রহমান (লুদা), কমান্ডার আব্দুর রশিদ ও কমান্ডার সুজাত আলী দারোগার যৌথ কমান্ডে সরিষাবাড়ীর বিভিন্ন এলাকার রেলব্রিজ ভাংগা শুরু করেন মুক্তিযোদ্ধারা। যাতে পাকসেনারা তাড়াতাড়ি এলাকায় ঢুকতে না পারে। সে অনুযায়ী ওই দিনই ভোর রাত্রি অনুমান ৪ ঘটিকার সময় ৩টি কোম্পানীর মুক্তিযোদ্ধারা একত্র হয়ে বাউসি রেলওয়ে ব্রিজ ভাঙার জন্য আক্রমণ করেন। পাকিস্তানি বাহিনীর সাথে মুক্তিযোদ্ধাদের তুমুল লড়াই হয়। এ লড়াইয়ে ৫ জন মুক্তিযোদ্ধাসহ আরও কয়েকজন নিহত হন। আহত হন আরও বেশি। এর কয়েকদিন পর আরামনগর বাজারে শত্রু সেনারা প্রবশে করে হিন্দুদের বাসাবাড়ি দোকান ঘর লুটতরাজ করার জন্য প্রস্তুতি নেয়। কোম্পানী কমান্ডার লুৎফর রহমান (লুদা) এর নির্দেশ মত সরিষাবাড়ীর বিভিন্ন এলাকার রেলব্রিজ ভাংগা শুরু করেন মুক্তিযোদ্ধারা। যাতে পাকসেনারা তাড়াতাড়ি এলাকায় ঢুকতে না পারে। ২৫ সেপ্টেম্বর/৭১ মাসে জগন্নাথগঞ্জ ঘাট এর স্ট্রীমার ভাঙ্গা হয়। অপরদিকে একই দিনে ভাটারার পারপাড়া গ্রামের ৭জন রাজাকার স্থানীয় হিন্দু গোয়ালদের বাড়িঘর লুটপাট চালালে স্থানীয় জনতা তাদের পাল্টা আক্রমণ করেন। এতে ২৪জন স্থানীয় জনতা শহীদ হয়। আর ৬ জন রাজাকার নিহত হয় ও ১ জন পালিয়ে যায়। ১০ই অক্টোবর/৭১, ভোর রাত্রি অনুমান ৪ ঘটিকার সময় ৩টি কোম্পানীর মুক্তিযোদ্ধা একত্র হয়ে বাউসি রেলওয়ে ব্রিজ ভাঙার জন্য আক্রমণ করেন।
১১ ডিসেম্বর/৭১ দিবাগত রাতে বিএলএফ কমান্ডার আব্দুল লতীফ বাহিনীর সংগে পাকবাহিনীর সম্মুখ যুদ্ধ হয়। এতে পাকসেনারা টিকতে না পেরে পরাজিত হয়ে পালিয়ে যায়। পরে তাদের ব্যবহৃত অস্ত্রসস্ত্র উদ্ধার করা হয়। সরিষাবাড়ী এলাকায়, লুৎফর রহমান (লুদা), ফজলুল হক, বিএলএফ কমান্ডার আঃ লতীফ,সুজাত আলী দারোগা,রশিদ এদের কোম্পানী অবস্থান নেয়। সরিষাবাড়ী থানার পিংনা ইউনিয়নের বারিপটল, মেইয়া, বাঘআছড়া, মেদুর রক্তক্ষয়ী সম্মুখ যুদ্ধে ১২জন মুক্তিসেনা শহীদ ও ৫৭জন নিরীহ বাঙ্গালির শহীদ হওয়া বিনিময়ে পাকসেনারা পরাস্ত হলে ১২ই ডিসেম্বর/৭১ শত্রুমুক্ত ও সরিষাবাড়ী স্বাধীন হয়। সেদিন থেকেই সরিষাবাড়ী পাক হানাদার মুক্ত হওয়ার মধ্য দিয়ে নতুন স্বাধীন সরিষাবাড়ীতে লাল সবুজের পতাকা উড়তে থাকে।