ইতিহাসের সর্বোত্তম নির্বাচন করবে অন্তর্বর্তী সরকার : প্রধান উপদেষ্টা কুবিতে ‘সি’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা সম্পন্ন যৌথবাহিনীর অভিযানে গাঁজা সহ গ্রেফতার-৩ বসুন্ধরা শুভসংঘ মনপুরা উপজেলা কমিটি গঠন করা হয়েছে একটি দলকে সরিয়ে আরেকটি দলকে বসাতে গণঅভ্যুত্থান হয়নি: নাহিদ বিশ্ব ভেটেরিনারি দিবস উপলক্ষে বিতর্ক প্রতিযোগিতার ফাইনালে মাভাবিপ্রবি ভেতরে পরীক্ষা, বাইরে অপেক্ষা আর উৎকণ্ঠা রামগড়ে গরুর ঘাস খাওয়া নিয়ে সংঘর্ষ, নিহত ১ আহত ৭ কুবিতে ১২টি কেন্দ্রে একযোগে চলছে ‘সি’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা সুন্দরবনে করিম শরীফ বাহিনীর ২ সহযোগী আটক, অস্ত্র ও কার্তুজ উদ্ধার ঈশ্বরগঞ্জে ওয়াইপিএজির ত্রৈমাসিক সভা অনুষ্ঠিত ক্ষমা ও ক্ষতিপূরণের বাংলাদেশের দাবির উল্লেখ নেই পাকিস্তানের ভাষ্যে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে এনসিপির বৈঠ আজ লালপুরে বিএনপির মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত প্রকাশিত সংবাদের প্রতিবাদ বিএনপি ক্ষমতায় গেলে কৃষকদের দিন বদলে কাজ করবে : সাবেক এমপি মোশারফ বিশ্বনাথ উপজেলা প্রেসক্লাবের সাংবাদিকদের সামাজিক ভাবে হেয় ,অন্যায্য ভাবে আল্টিমেটামের তীব্র প্রতিবাদ কেন্দ্র ঘোষিত শ্রমিক যোগাযোগ পক্ষ পালন বাংলাদেশের ট্রান্সশিপমেন্ট বাতিল নিয়ে নিজেদের অবস্থান স্পষ্ট করল ভারত আনুলিয়ায় একশত পরিবারের

জলাবদ্ধতায় নাকাল আশাশুনির খাজরা ও বড়দলের সাত গ্রামের মানুষ, দেখার কেউ নাই

জলাবদ্ধতায় নাকাল আশাশুনির খাজরা ও বড়দলের সাত গ্রামের মানুষ, দেখার কেউ নাই


 

মোঃ আজগার আলী, সদর উপজেলা প্রতিনিধি সাতক্ষীরাঃ

জলাবদ্ধতা সাতক্ষীরাবাসির গা-সওয়া বিষয়। দিন আসে, দিন যায় বদলায় অনেক কিছু। শুধু বদলায় না জলাবদ্ধতার চিত্র। প্রতিবছর জলাবদ্ধতায় নাকাল হয় কয়েক লক্ষ মানুষ। সাতক্ষীরা জেলার আশাশুনি উপজেলার খাজরা ও বড়দল ইউনিয়নের ৭টি গ্রামের মানুষ ১৫দিন ধরে জলাবদ্ধতার কবলে পড়ে নাকানি-চুবানি খাচ্ছে।

 

মৌসুমি বৃষ্টি, কপোতাক্ষ নদের জোয়ার আর মৎস্য ঘেরের লোনা পানিতে ১৫ ধরে দিন ডুবে আছে এসব গ্রামগুলো। কিন্তু প্রতিকারে কর্তৃপক্ষের তেমন কোন সাড়া মেলেনি। স্লুইস গেটের কপাট উল্টে দেওয়ায় নদীর লোনা পানি ভেতরে প্রবেশ করে নতুন এলাকা ডুবতে শুরু করে। পানিবন্দি হয়ে উপজেলার গজুয়াকাটি, ফটিকখালী, রাউতাড়া, গোয়ালডাঙ্গা, পাঁচপোতা, বাইনতলা ও দক্ষিণ বড়-দল গ্রামের মানুষ সীমাহীন দুর্ভোগের শিকার হচ্ছে। কয়েক শত পরিবারের নারী, শিশু ও বয়স্করা পড়েছেন চরম বিপদে। এরই মধ্যে গজুয়াকাটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ অধিকাংশ এলাকায় প্রাথমিক, মাদ্রাসা পানিতে ডুবে পানিবন্দি হয়ে শিক্ষার পরিবেশ বিনষ্ট হচ্ছে। অধিকাংশ বসতবাড়ির রান্না ঘরে এবং গোয়াল ঘরে পানি ঢুকে গবাদিপশু ও মানুষের খাদ্যের সমস্যা প্রকট আকার ধারণ করেছে। আগে থেকেই এ সব গ্রামে সুপেয় পানির সমস্যা ছিল, এরপর চারদিকে লোনা পানি জমায় সুপেয় পানির সমস্যা আরও তীব্র আকার ধারণ করেছে।

 

সরেজমিনে ঘুরে জানা যায়, গজুয়াকাটি গ্রামের সত্য চন্দ্র বৈদ্য ও তেজেন্দ্র নাথ বৈদ্য জানান, গত ২৮ জুন থেকে ২ জুলাই পর্যন্ত মাঝারি বর্ষণে পার্শ্ববর্তী লোনা জলের চিংড়ি ঘের প্লাবিত হয়। লোনা জলে খাজরা ইউনিয়নের গজুয়াকাটি, ফটিকখালী, রাউতাড়া এবং বড়দল ইউনিয়নের পাঁচপোতা ও বাইনতলা গ্রামের আংশিক এলাকায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। ১৫দিন অতিবাহিত হওয়ার পরও জল অপসারণ না হওয়ায় আমরা চরম ভোগান্তিতে পড়েছি। তিনি আরও জানান, আমাদের এলাকার অধিকাংশ বসতঘর মাটির তৈরী। দীর্ঘদিন জল জমে থাকায় এক এক করে ধ্বসে পড়তে শুরু করেছে। রান্না খাওয়ার যেমন সমস্যা হচ্ছে তেমন চারদিকে লোনা জলে ডুবে থাকায় গবাদিপশু নিয়ে চরম বিপাকে আছি। পশুখাদ্য (খড় গাদা) নিচে জল জমে থাকলে ভেসে যাওয়া শুরু করেছে। তাদের গোখাদ্য ও মিষ্টি জলের অভাব দেখা দিয়েছে।

 

সহকারী অধ্যাপক শিবপ্রসাদ মন্ডল জানান, জলাবদ্ধতা নিরসনে আমাদের স্থানীয় কালকির স্লুইসগেটের ভরাটি মুখ খনন করে পানি নিষ্কাশনের তড়িত ব্যবস্থা করা প্রয়োজন। বিকল্প পথ হিসেবে যদি বামনডাঙ্গা ও তুয়ারডাঙ্গা স্লুইসগেট অবমুক্ত করা যায় তবে জলাবদ্ধতা সমস্যার সমাধান হতে পারে। তবে এসব খালে নেটপাটা থাকায় সহজে সমস্যার সমাধান করা অত্যন্ত কঠিন ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। উপজেলার দক্ষিণ বড়দল কৃষক সংগঠনের সভাপতি অসিম কুমার বৈরাগীসহ স্থানীয় অনেকে জানান, খাজরা ও বড়দল এলাকা এক ফসলি আমন ধানের এলাকা। অন্যান্য এলাকায় আমন চাষের চাষাবাদ শুরু হয়েছে আর আমাদের এলাকায় লোনা জলে জলাবদ্ধতার কারণে ৭টি গ্রামের প্রায় ১২ হাজার বিঘা জমিতে আমন ধানের চাষাবাদে অনিশ্চিয়তা দেখা দিয়েছে। নিচু ঘরবাড়িতে বিষাক্ত সাপ পোকার ভয়ে অনেকেই আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পড়েছে।

 

খাজরা ইউপি চেয়ারম্যান শাহ নেওয়াজ ডালিম কালকি স্লুইসগেট গেইটের পলিমাটি অপসারণ করার চেষ্টা করতে গিয়ে গত রোববার দিবাগত রাতে কপোতাক্ষ নদের লোনা পানি উল্টো ভেতরে প্রবেশ করে দক্ষিণ বড়দল ও গজুয়াকাটি প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ বসতবাড়িতে পানি ঢুকে গেছে। এর মধ্যে নতুন করে জোয়ার তোলা হবে বলে গুজব ছড়িয়ে পড়ায় পানিবন্দি মানুষের মধ্যে নতুন করে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। বিকল্প পথে পানি নিষ্কাশিত না হলে ভোগান্তি চরমে পৌঁছে যাবে। তারা বলেন এমনিতেই খাল, বিল ও পুকুরে কানায় কানায় পানি জমে আছে।

 

উপসহকারি কৃষি কর্মকর্তা জানান, ধান চাষের ভরা মৌসুম। দ্রুত পানি নিষ্কাশন করা না হলে এ এলাকার ধান্য চাষে ব্যাপক প্রভাব পড়বে। তাছাড়া পানিতে নিমজ্জিত কাঁচা ও আধা পাকা ঘরবাড়ি ও গৃহপালিত পশুর চরম ক্ষতি হবে। তিনি আরও বলেন, এখনো উঁচু এলাকায় কয়েকটি পুকুরে মিষ্টি পানিতে ডুবে আছে। নতুন করে জোয়ার তুললে ঘরবাড়ি পানিতে ডুবে যাবে।

 

ইউপি চেয়ারম্যান শাহ নেওয়াজ ডালিম বলেন, রাতে পলিতে ভরাট হওয়া কারকির স্লুইস গেটের পাটাতন ডুবে থাকায় তা তোলা হয়েছে। রাতে নদীর জোয়ার বন্দ করা সম্ভব না হওয়ায় জোয়ারের পানি ভেতরে প্রবেশ করলেও সকালে গেট দিয়ে আর যাতে নতুন করে ভেতরে নদীর পানি প্রবেশ না করে তার ব্যবস্থা করা হয়েছে।

 

সচেতন এলাকাবাসীর জানান, গেটের সামনের এলাকা অনেটা পলি জমে ভরাট হয়ে গেছে, তা ছাড়া বিল এলাকার খাল ও আবাদি জমি নিচু হওয়ায় খাল খনন না করা পর্যন্ত কালকির গেট দিয়ে পানি নিষ্কাশন করা অত্যান্ত দূরহ ব্যাপার।

 

আশাশুনি উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান অসীম বরণ চক্রবর্তী বলেন, আশাশুনি উপজেলার খাজরা ইউনিয়নের ফটিকখালী, গজুয়াকাটিসহ বেশ কয়েকটি জলাবদ্ধতা কবলিত গ্রামের পরিবারগুলো মানবেতর জীবন যাপন করছে। ইতোমধ্যে স্থানীয় সংসদ সদস্য অধ্যাপক ডা. আ. ফ. ম রুহুল হককে জলাবদ্ধতার কারণে জনদুর্ভোগের বিষয়টি জানানো হয়েছে। তিনি পানি উন্নয়ন বোর্ডকে দ্রুত সমস্যা সমাধানে ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছেন।

 

এ ব্যাপারে কোন পাউবো, জেলা প্রশাসনসহ ঊর্ধ্বতন কোন কর্তৃপক্ষের এগিয়ে আসতে বা প্রতিকারে ব্যবস্থা গ্রহণে এলাকায় দেখা যায়নি। অবৈধভাবে সুকৌশলে লোনা পানি উত্তোলনকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ, খালে অবৈধ নেটাপাটা অপসারণ করে এলাকার পানি নিষ্কাশন নিশ্চিত করে আমন ধান চাষীদের পাশে দাঁড়াতে ডা. আ.ফ.ম রুহুল হক-এমপি, সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক, পাউবো কৃষিসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন এলাকার ক্ষতিগ্রস্তসহ সচেতন এলাকাবাসী।

Tag
আরও খবর