ইতিহাসের সর্বোত্তম নির্বাচন করবে অন্তর্বর্তী সরকার : প্রধান উপদেষ্টা কুবিতে ‘সি’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা সম্পন্ন যৌথবাহিনীর অভিযানে গাঁজা সহ গ্রেফতার-৩ বসুন্ধরা শুভসংঘ মনপুরা উপজেলা কমিটি গঠন করা হয়েছে একটি দলকে সরিয়ে আরেকটি দলকে বসাতে গণঅভ্যুত্থান হয়নি: নাহিদ বিশ্ব ভেটেরিনারি দিবস উপলক্ষে বিতর্ক প্রতিযোগিতার ফাইনালে মাভাবিপ্রবি ভেতরে পরীক্ষা, বাইরে অপেক্ষা আর উৎকণ্ঠা রামগড়ে গরুর ঘাস খাওয়া নিয়ে সংঘর্ষ, নিহত ১ আহত ৭ কুবিতে ১২টি কেন্দ্রে একযোগে চলছে ‘সি’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা সুন্দরবনে করিম শরীফ বাহিনীর ২ সহযোগী আটক, অস্ত্র ও কার্তুজ উদ্ধার ঈশ্বরগঞ্জে ওয়াইপিএজির ত্রৈমাসিক সভা অনুষ্ঠিত ক্ষমা ও ক্ষতিপূরণের বাংলাদেশের দাবির উল্লেখ নেই পাকিস্তানের ভাষ্যে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে এনসিপির বৈঠ আজ লালপুরে বিএনপির মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত প্রকাশিত সংবাদের প্রতিবাদ বিএনপি ক্ষমতায় গেলে কৃষকদের দিন বদলে কাজ করবে : সাবেক এমপি মোশারফ বিশ্বনাথ উপজেলা প্রেসক্লাবের সাংবাদিকদের সামাজিক ভাবে হেয় ,অন্যায্য ভাবে আল্টিমেটামের তীব্র প্রতিবাদ কেন্দ্র ঘোষিত শ্রমিক যোগাযোগ পক্ষ পালন বাংলাদেশের ট্রান্সশিপমেন্ট বাতিল নিয়ে নিজেদের অবস্থান স্পষ্ট করল ভারত আনুলিয়ায় একশত পরিবারের

স্বীকৃতির ২৯ বছর পার হলেও সাতক্ষীরা নৈশ মাধ্যমিক বিদ্যালয় মাধ্যমিক স্তর এমপিওভুক্ত হয়নি

স্বীকৃতির ২৯ বছর পার হলেও সাতক্ষীরা নৈশ মাধ্যমিক বিদ্যালয় মাধ্যমিক স্তর এমপিওভুক্ত হয়নি

 


 

মোঃ আজগার আলী, সদর উপজেলা প্রতিনিধি সাতক্ষীরাঃ

৯ম ও ১০ম শ্রেণির স্বীকৃতির ২৯ বছর পার হলেও ঝরেপড়া ও কর্মজীবী শিশুদের সাতক্ষীরা জেলার একমাত্র ব্যতিক্রমধর্মী ও বিশেষায়িত নৈশকালীন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সাতক্ষীরা নৈশ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের আজও ‘মাধ্যমিক স্তর’ এমপিওভুক্ত হয়নি। ১৯৮৫ সালে বিদ্যালয়টির ‘নিম্ন মাধ্যমিক স্তর’ এমপিওভুক্ত হওয়ার পর ৯ম ও ১০ম শ্রেণির স্বীকৃতির ২৯ বছর ‘মাধ্যমিক স্তর’ প্রতিষ্ঠান এমপিওবিহীন রয়ে গেছে। মাধ্যমিক স্তর এমপিওভুক্ত না হওয়ায় দিনের বেলায় শিক্ষাবঞ্চিত শিশুদের মধ্যে শিক্ষা কার্যক্রম মারাত্মক বির্পযস্ত হয়ে পড়েছে।

 

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, সাতক্ষীরা সদর উপজেলার সাতক্ষীরা শহরের মুক্তিযোদ্ধা সড়কস্থ ঝড়েপড়া ও কর্মজীবী শিশুদের সাতক্ষীরা জেলার একমাত্র ব্যতিক্রমধর্মী ও বিশেষায়িত নৈশকালীন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ‘সাতক্ষীরা নৈশ মাধ্যমিক বিদ্যালয়’টি ১৯৭০ সালে সাতক্ষীরার প্রখ্যাত শিক্ষাবিদ এবং প্রথিতযশা সাংবাদিক আব্দুল মোতালেব প্রতিষ্ঠা করেন।

 

এই বিদ্যালয়ের শিশুরা পিছিয়ে পড়া, সুবিধাবঞ্চিত, প্রান্তিক ও অনগ্রসর, ঝরেপড়া, পথশিশু এবং দিনের বেলায় শিক্ষাবঞ্চিত কর্মজীবী। তারা দিনের বেলায় কাগজ কুড়ায় ও বাসায় কাজ করে, বাদাম ও আইসক্রীম বিক্রি করে, রিক্সা-ভ্যান চালায়, হোটেল-রেস্তোরাঁ, হাট-বাজার-দোকান-মাছের আড়ৎ, ওয়েল্ডিং-মেশিনারী-কল-কারখানা, ছাপাখানা, কাঠমিস্ত্রী-রঙমিস্ত্রী-রাজমিস্ত্রীর হেলপার ও দিন মজুরীর কাজ করে বাবা-মায়ের সংসার চালায় এবং জীবন ও জীবিকা নির্বাহ করে। রাতের বেলায় তারা সাতক্ষীরা নৈশ বিদ্যালয়ে লেখাপড়া করে।

 

এই বিদ্যালয়ে ১ম শ্রেণি হতে ১০ম শ্রেণি পর্যন্ত লেখাপড়ার সুযোগ রয়েছে এবং প্রতিবছর তারা প্রাথমিক সমাপনি, জেএসসি ও এসএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করছে।

 

এই বিদ্যালয়ের সাবেক প্রবীণ শিক্ষক মোঃ আতাহার আলী খান জানান, ১৯৮৫ সালে বিদ্যালয়টির ‘নিম্ন মাধ্যমিক স্তর (১ম শ্রেণি হতে ৮ম শ্রেণি পর্যন্ত)’ এমপিওভুক্ত হয় এবং ১৯৯৪ সালে সাংবাদিক ও মানবাধিকার কর্মী এডঃ দিলীপ কুমার দেব-এর ব্যক্তিগত প্রচেষ্টায় ‘সাতক্ষীরা নৈশ মাধ্যমিক বিদ্যালয়’টি মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড, যশোর হতে ‘৯ম ও ১০ম শ্রেণি’ পর্যন্ত স্বীকৃতি লাভ করে। কিন্তু ‘৯ম ও ১০ম শ্রেণি’ স্বীকৃতির ২৯ বছর পার হলেও ‘মাধ্যমিক স্তর’ প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত হয়নি। মাধ্যমিক স্তর এমপিওভুক্ত না হওয়ায় দিনের বেলায় শিক্ষাবঞ্চিত শিশুদের মধ্যে শিক্ষা দান মারাত্মক ব্যাহত হচ্ছে এবং সার্বিক শিক্ষা ব্যবস্থাপনা বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে।

 

মোঃ আতাহার আলী খান জানান, অপর দিকে এডঃ দিলীপ কুমার দেব-এর উদ্যোগে শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের ৩ কোটি ৪১ লাখ টাকা বরাদ্দের সাতক্ষীরা নৈশ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ৪ তলা একাডেমিক ভবন নির্মাণ কাজ প্রায় শেষ হলেও বিদ্যালয়ের শুধুমাত্র ‘৯ম ও ১০ম শ্রেণির মাধ্যমিক স্তর’ আজও এমপিওভুক্ত হয়নি।

 

বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক (ব্যবসায় শিক্ষা) মোঃ রফিকুল ইসলাম বলেন, বিনা পারিশ্রমিকে ৭ বছর কাজ করার পর আমি ২০১৩ সালের ৩জুন মাধ্যমিক স্তরে নিয়োগ পেয়ে বিদ্যালয়ে নিয়মিত পাঠদান করে আসছি। কিন্তু নিয়োগের ১০ বছর পার হলেও প্রতিষ্ঠান ‘মাধ্যমিক স্তর (৯ম ও ১০ম শ্রেণি)’ এমপিওভুক্ত না হওয়ায় আমি চরমভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছি। আর্থিক অনটনে আমার দিন কাটছে।

 

বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক (গ্রন্থগারিক) শেখ আমিনুল ইসলাম বলেন, অবৈতনিক শিক্ষক হিসাবে ৬বছর কাজ করার পর আমাকে ২০১৩ সালের ৩জুন মাধ্যমিক স্তরে নিয়োগ দেয়া হয়। কিন্তু শুধু মাত্র ‘৯ম ও ১০ম শ্রেণির স্তর’ এমপিওভুক্ত না হওয়ায় আমি পরিবার নিয়ে আর্থিক কষ্টে আছি।

 

প্রধান শিক্ষক শিখা বাণী ম-ল বলেন, ১৯৯৪ সালে সাতক্ষীরা নৈশ মাধ্যমিক বিদ্যালয়টি ‘৯ম ও ১০ম শ্রেণি স্বীকৃতি লাভ করে। কিন্তু স্বীকৃতির ২৯বছর পার হলেও সাতক্ষীরা জেলার একমাত্র ব্যতিক্রমধর্মী ও বিশেষায়িত নৈশকালীন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সাতক্ষীরা নৈশ মাধ্যমিক বিদ্যালয়টির ‘মাধ্যমিক স্তর’ এমপিওভুক্ত হয়নি। বিদ্যালয়টি ১৯৮৫ সালে ‘নিম্ন মাধ্যমিক স্তর’ এমপিওভুক্ত হয়। ‘মাধ্যমিক স্তর’ এমপিওভুক্ত না হওয়ায় দিনের বেলায় শিক্ষাবঞ্চিত শিশুদের মধ্যে শিক্ষা কার্যক্রম মারাত্মক বির্পযস্ত হয়ে পড়েছে। শুধুমাত্র ননএমপিও ‘৯ম ও ১০ম শ্রেণির মাধ্যমিক স্তর’ বিশেষ বিবেচনায় এমপিওভুক্তি একান্ত প্রয়োজন। প্রধান শিক্ষক আরও বলেন, বিদ্যালয়ে কারিগরি শিক্ষা এবং উচ্চ মাধ্যমিক স্তর চালু করে কারিগরি শিক্ষা বিস্তারের প্রচেষ্টা থাকলেও ‘মাধ্যমিক স্তর’ এমপিওভুক্ত না হওয়ায় কোন কিছু সম্ভব হচ্ছে না। তিনি বলেন, ‘৯ম ও ১০ম শ্রেণির মাধ্যমিক স্তর’ এমপিওভুক্ত হয়নি অথচ শিক্ষা মন্ত্রণালয়েরই আর্থিক বরাদ্দে বিদ্যালয়ের ৪তলা বিশিষ্ট একাডেমিক ভবনের অবকাঠমো নির্মাণ শেষের পথে।

 

সাতক্ষীরা মানবাধিকার উন্নয়ন সংগঠন ‘নিজ অধিকার’-এর প্রতিষ্ঠাতা নির্বাহী পরিচালক সাংবাদিক এডভোকেট ড. দিলীপ কুমার দেব জানান, বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সর্বশেষ এমপিও নীতিমালা-২০২১ এর ৩.৩ ধারায় ‘নৈশকালীন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহ বিশেষ প্রতিষ্ঠান হিসেবে বিবেচিত হবে’ ও ‘বিশেষ প্রতিষ্ঠানসমূহ শিক্ষা মন্ত্রণালয় এমপিওভুক্তির আওতায় আনতে পারবে’ এবং ২২ ধারায় ‘বিশেষায়িত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তির ক্ষেত্রে বিশেষ বিবেচনায় শর্ত শিথিলযোগ্য’ উল্লেখিত এই ধারা অনুযায়ী সাতক্ষীরা জেলার একমাত্র বিশেষায়িত নৈশকালীন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সাতক্ষীরা নৈশ মাধ্যমিক বিদ্যালয়-এর শুধুমাত্র ননএমপিও ‘মাধ্যমিক স্তর’ পরিবর্তনের মাধ্যমে ‘বিশেষ বিবেচনায়’ এমপিওভুক্তি করা সম্ভব।

 

সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হুমায়ুন কবির বলেন, বিদ্যালয়টি শিক্ষা হতে ‘ঝরেপড়া রোধ’ ও ‘সার্বজনীন শিক্ষা’ বিস্তারে বিশেষ ভূমিকা পালন করছে। শিশু অধিকার প্রতিষ্ঠায় শিক্ষায় অনগ্রসর, ঝরেপড়া ও কর্মজীবী শিক্ষাবঞ্চিত শিশুদের উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত করে মানবসম্পদে পরিণত করা এই ব্যতিক্রমধর্মী ও বিশেষায়িত নৈশকালীন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটির একমাত্র উদ্দেশ্য। একারণে বিদ্যালয়টির ‘মাধ্যমিক স্তর’ বিশেষ বিবেচনায় এমপিওভুক্তি একান্ত প্রয়োজন।

Tag
আরও খবর