ইতিহাসের সর্বোত্তম নির্বাচন করবে অন্তর্বর্তী সরকার : প্রধান উপদেষ্টা কুবিতে ‘সি’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা সম্পন্ন যৌথবাহিনীর অভিযানে গাঁজা সহ গ্রেফতার-৩ বসুন্ধরা শুভসংঘ মনপুরা উপজেলা কমিটি গঠন করা হয়েছে একটি দলকে সরিয়ে আরেকটি দলকে বসাতে গণঅভ্যুত্থান হয়নি: নাহিদ বিশ্ব ভেটেরিনারি দিবস উপলক্ষে বিতর্ক প্রতিযোগিতার ফাইনালে মাভাবিপ্রবি ভেতরে পরীক্ষা, বাইরে অপেক্ষা আর উৎকণ্ঠা রামগড়ে গরুর ঘাস খাওয়া নিয়ে সংঘর্ষ, নিহত ১ আহত ৭ কুবিতে ১২টি কেন্দ্রে একযোগে চলছে ‘সি’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা সুন্দরবনে করিম শরীফ বাহিনীর ২ সহযোগী আটক, অস্ত্র ও কার্তুজ উদ্ধার ঈশ্বরগঞ্জে ওয়াইপিএজির ত্রৈমাসিক সভা অনুষ্ঠিত ক্ষমা ও ক্ষতিপূরণের বাংলাদেশের দাবির উল্লেখ নেই পাকিস্তানের ভাষ্যে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে এনসিপির বৈঠ আজ লালপুরে বিএনপির মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত প্রকাশিত সংবাদের প্রতিবাদ বিএনপি ক্ষমতায় গেলে কৃষকদের দিন বদলে কাজ করবে : সাবেক এমপি মোশারফ বিশ্বনাথ উপজেলা প্রেসক্লাবের সাংবাদিকদের সামাজিক ভাবে হেয় ,অন্যায্য ভাবে আল্টিমেটামের তীব্র প্রতিবাদ কেন্দ্র ঘোষিত শ্রমিক যোগাযোগ পক্ষ পালন বাংলাদেশের ট্রান্সশিপমেন্ট বাতিল নিয়ে নিজেদের অবস্থান স্পষ্ট করল ভারত আনুলিয়ায় একশত পরিবারের

ভূমিহীন এবং সামাজিক নিরাপত্তা বিষয়ক আঞ্চলিক সেমিনার অনুষ্ঠিত

ভূমিহীন এবং সামাজিক নিরাপত্তা বিষয়ক আঞ্চলিক সেমিনার অনুষ্ঠিত


 

মোঃ আজগার আলী, সদর উপজেলা প্রতিনিধি সাতক্ষীরাঃ

বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চলের ভূমিহীন এবং সামাজিক নিরাপত্তা বিষয়ক আঞ্চলিক সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়েছে। আজ শনিবার ১৯শে আগষ্ট বেলা ১১টায় সাতক্ষীরা এলজিইডি কনফারেন্সে রুমে উত্তরণ আমার প্রকল্পের আয়োজনে অনুষ্ঠিত সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন উত্তরণের পরিচালক শহিদুল ইসলাম। প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন সাতক্ষীরা জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাতক্ষীরা জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আলহাজ্ব মোঃ নজরুল ইসলাম।

কেন্দ্রীয় ভূমি কমিটির সভাপতি আবুল কালাম আজাদের সঞ্চলনায় বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন সাতক্ষীরা সদর উপজেলা চেয়ারম্যান আলহাজ্ব মোঃ আসাদুজ্জামান বাবু, জেলা সমাজসেবা অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক সন্তোষ কুমার নাথ, জেলা কৃষি সম্প্রাসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো.সাইফুল ইসলাম, আশাশুনি উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান অসীম বরণ চক্রবর্তী।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে মোঃ নজরুল ইসলাম বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণে সাতক্ষীরা জেলা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত। কিন্তু আমাদের এখানে জনসংখ্যার বিচারে বরাদ্দ দেওয়া হয়। আমাদের আরও অন্যান্য বিষয়গুলো বিবেচনা করে এবং যাদের প্রয়োজন তাদের বরাদ্দ দেওয়া উচিত। জাটকা ইলিশের মৌসুমে জেলে সম্প্রদায়ের মানুষের অল্প কিছুদিন সরকারের পক্ষ থেকে সহায়তা দেওয়া হয়ে থাকে। আবার এই পেশায় জড়িত সবাই সেই সহায়তা পান না। বয়স্ক, বিধবা ও স্বামী পরিত্যাক্ত ভাতার আওতায় সবাই আসছে না। সরকার সবার জন্য ভাতার আওতায় আনার চেষ্টা করলেও এখনো সম্ভব হয়নি। আমাদের এখানে ৪০ দিনের একটি কর্মসূচি চলমান ছিলো। যখন কৃষকদের কাজ থাকে না। ইউনিয়ন পরিষদের মাধ্যমে এটি বাস্তবায়ন করে কৃষকদের একটি কাজের ব্যবস্থা করে দেয়া হয়। কিন্তু দেশের ১৩টি জেলায় এটি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে তার মধ্যে সাতক্ষীরা রয়েছে। সাতক্ষীরা ধনী জেলার শ্রেণীভুক্ত হয়েছে বলে এটি বন্ধ করার কথা বলা হয়েছে। আমরা দরিদ্র হয়ে থাকতে চাই না। কিন্তু বর্তমান প্রেক্ষাপটে ধনী জেলার তথ্য সঠিক বলে মনে করি না।

তিনি আরও বলেন, সরকারের সদিচ্ছার কারণে বিভিন্ন সামাজিক নিরপত্তা বিধানের মধ্য দিয়ে এবং অন্যান্য কর্মসূচির মাধ্যমে আমাদের দারিদ্রতা, অতিদারিদ্রতার সংখ্যা অনেক হ্রাস পেয়েছে। সাতক্ষীরার মানুষ দরিদ্র হিসেবে থাকতে চায় না। কিন্তু সঠিক তথ্য থাকতে হবে। সরকারের কাছে সঠিক তথ্য প্রেরণ করতে জনপ্রতিনিধি, সামাজিক সংগঠন, এনজিও প্রতিনিধিসহ সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করতে হবে। সরকারি সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির ভাতাভোগী যাতে শতভাগ হয় সে বিষয়ে আমাদের কাজ করতে হবে।

দেশের অভুতপূর্ব উন্নয়ন হয়েছে উল্লেখ করে মোঃ নজরুল ইসলাম আরো বলেন, দেশে দুর্নীতি না থাকলে আরও দ্রুত গতিতে এগিয়ে যেত।

তিনি আরও বলেন, পত্রিকায় দেখেছি সাতক্ষীরার ছয়টি উপজেলাকে ভূমিহীন মুক্ত করা হয়েছে। এ তথ্য সঠিন না হলে আমাদের জন্য কিছুটা ক্ষতি হবে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভূমিহীনদের ভূমি এবং গৃহহীনদের গৃহ দেওয়ার চেষ্টা করে যাচ্ছেন। ভূমিহীনমুক্ত দেখিয়ে দিলে আমাদের এখানে বরাদ্দ আরো কম আসবে তখন এই জেলার মানুষ ক্ষতিগ্রস্থ হবেন।

তিনি আরো বলেন, পরিসংখ্যানের তথ্যের বিভ্রান্তির কারণে ৪০ দিনের কর্মসূচি হারিয়েছি। সাতক্ষীরাকে ১২টি জেলার মধ্যে সমৃদ্ধ জেলা হিসাবে চিহ্নিত করা হয়েছে বলে বক্তাদের দেওয়া বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় তিনি বলেন এটি হয়ে থাকলে সংশোধনের জন্য প্রতিবাদ না করলে ভবিষ্যতে সরকারের বিভিন্ন সাহায্য সহানুভূতি থেকে আমরা বঞ্চিত হব।

সেমিনারে বক্তব্য রাখেন জেলা নাগরিক কমিটির আহ্বায়ক ও জেলা ভূমি কমিটির সভাপতি এডঃ আজাদ হোসেন বেলাল, খুলনা জেলা ভূমি কমিটির সাধারণ সম্পাদক বিশিষ্ঠ সাংবাদিক ও গবেষক গৌরাঙ্গ নন্দী, মানবাধিকারকর্মী মানব চন্দ্র দত্ত, সাতক্ষীরা জেলা পরিষদের সদস্য এডঃ শাহনেওয়াজ পারভীন মিলি, দক্ষিণের মশালের সম্পাদক অধ্যক্ষ আশেক-ই-এলাহী, প্রথম আলোর নিজস্ব প্রতিবেদন কল্যাণ ব্যানার্জি, জনকন্ঠের মিজানুর রহমান, সমকাল ও এটিএন বাংলার এম কামরুজ্জামান, দেশটিভি ও বিডিনিউজের শরীফুল্লাহ কায়সার সুমন, খলিষখালী ইউপি চেয়ারম্যান অধ্যাপক সাবির হোসেন, কাশিমাড়ি ইউপি চেয়ারম্যান আনিছুজ্জামান আনিছ, ডুমুরিয়া ইউপি চেয়ারম্যান হুমায়ুন কবির, আটুলিয়া ইউপি চেয়ারম্যান আবু সালেহ বাবু, সাতক্ষীরার পৌরসভার সমাজ উন্নয়ন কর্মকর্তা মোঃ জিয়াউর রহমান, জেলা মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের প্রোগ্রাম অফিসার ফাতেমা জোহরা, জেলা মহিলা পরিষদের সাধারণ সম্পাদক জোৎস্না দত্ত, সাবেক পৌর কাউন্সিলর নারী নেত্রী ফরিদা আক্তার বিউটি, আশাশুনি উপজেলা ভূমি কমিটির সভাপতি রফিকুল ইসলাম, তালা উপজেলা নাগরিক কমিটির সাধারণ সম্পাদক শফিকুল ইসলাম, তালা উপজেলা ভূমি কমিটির সাধারণ সম্পাদক  আচিন্ত কুমার সাহা, কালিগঞ্জ উপজেলা ভূমি কমিটির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডঃ জাফরুল্লাহ ইব্রাহিম, দেবহাটা উপজেলা ভূমি কমিটির সভাপতি আমজাদ হোসেন, ডুমুরিয়া উপজেলা ভূমি কমিটির সম্পাদক সেলিম আকতার স্বপন, জেলা নাগরিক কমিটির যুগ্ম সদস্য সচিব আলী নুর খান বাবুল, অধ্যাপক রেজাউল করিম, ইসমত আরা, নুর জাহান বেগম প্রমুখ। সেমিনার পেপার উপস্থাপন করেন উত্তরণ আমার প্রকল্পের সমন্বকারী মনিরুজ্জামান জমাদ্দার।

সেমিনারে অন্যান্য বক্তরা বলেন, বর্তমান সরকার ভূমিহীন ও গৃহহীনদের জন্য অনেক কিছু করেছেন। সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় অনেক মানুষের মুখে হাসি ফুটানো গেছে। শতভাগ বয়স্ক ভাতা, বিধবা, মাতৃত্ব ভাতা করার চেষ্টা করছেন। তারপরও কিছু অসাধু মানুষ দুর্নীতি করে সরকারের বদনাম করার চেষ্টা করছে। একই মানুষ সরকারের বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা নিচ্ছে। আবার কেউ একবারও পাচ্ছে না। এজন্য ডাটাবেজ জরুরী। ডাটাবেজ হলে দুর্নীতি কমানো সম্ভব হবে এবং ভূমিহীন ও গৃহহীনদের সঠিক সংখ্যা জানা যাবে। তাদের বরাদ্দ ও সামাজিক নিরাপত্তার কর্মসূচির আওতায় আনা সহজ হবে।

মুক্ত আলোচনায় বক্তারা বলেন, দেশে প্রতিদিন ভূমিহীন বাড়ছে। দেশের অধিকাংশ টাকা গুটি কয়েকজন মানুষের হাতে চলে যাচ্ছে। বিধবা ভাতা যেটা দেওয়া হয় সেটা খুবই কম। দুর্নীতি বন্ধ করতে সকলের সমন্বয় দরকার।

সেমিনারের বক্তারা বলেন, গত ১৫ বছরে বাংলাদেশে অভুতপূর্ব উন্নয়ন হয়েছে। কিন্তু এই উন্নয়নের সুফল সবাই সমানভাবে ভোগ করে না এবং সবাই সমানভাবে উন্নয়নের সুযোগ পায় না। যেকারণে আয় বৈষম্য দিন দিন বাড়ছে। ফলে দেশের প্রান্তিক ও পিছিয়ে পড়া জনগোষ্টীর মানুষ উন্নয়নের সুফল থেকে অনেকাংশে বঞ্চিত হচ্ছে। বক্তারা আরো বলেন প্রান্তিক ও পিছিয়ে পড়া জনগোষ্টীর মানুষের প্রতি সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেওয়ার জন্যই সরকার সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। ২০১৬-১৭ অর্থ বছরে এই কর্মসূচিতে বাজেট বরাদ্দ ১৩ দশমিক ৩ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ২০২২-২৩ অর্থ বছরে ১৬ দশমিক ৭৫ শতাংশ করা হয়েছে। প্রতি বছরই বরাদ্দ বাড়ছে। কিন্তু বাজেট বাড়লেও এই কর্মসূচির একটি বড় অংশ সরকারী কর্মচারীদের অবসর ভাতা, সঞ্চয়পত্রের সুদসহ যারা দরিদ্র নয় এমন মানুষের অনুকুলে চলে যাচ্ছে।

সাতক্ষীরা এখন ধনী জেলা হিসেবে চিহ্নিত হওয়ার তথ্যের সমালোচনা করে বক্তারা বলেন, বাস্তব চিত্র একেবারে ভিন্ন। একের পর এক ঝড় জলোচ্ছ্বাস জলাবদ্ধতাসহ প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় এখানকার দারিদ্র পরিস্থিতির উন্নয়ন হয়নি বরং চিংড়ি চাষ ও সুন্দরবনে মাছ ধরাসহ অন্যান্য সম্পদ আহরণে কড়াকড়ির কারণে কর্মসংস্থানের সুযোগ সংকুচিত হওয়ায় লাখ লাখ মানুষ কাজের সন্ধানে অন্য জেলায় চলে যেতে বাধ্য হচ্ছে। বক্তারা সাতক্ষীরা জেলার সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির পরিধি বাড়ানোর দাবী জানান এবং পরিসংখ্যানের বিভিন্ন অবাস্তব তথ্যের সমালোচনা করে তা সংশোধনের জন্য এখনই সকলকে সোচ্চার হওয়ার আহবান জানান।

Tag
আরও খবর