ব্যবস্থাপনা শিক্ষা বিভাগের ইফতার ও দোয়া অনুষ্ঠিত পাবিপ্রবিতে পদ্মা ছাত্র কল্যাণ সমিতির ইফতার মাহফিল ও নবীন বরণ অনুষ্ঠিত কালিগঞ্জে কুশুলিয়া ইউনিয়ন বিএনপির উদ্যোগে ইফতার ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত ডোমারে নারীর প্রতি সহিংসতা ও ধর্ষণের প্রতিবাদে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত কোম্পানীগঞ্জে মাঠ দিবস পালিত কোম্পানীগঞ্জে ৩ দিনব্যাপী কৃষক-কৃষাণী প্রশিক্ষণ নন্দীগ্রামে ওয়ার্ড বিএনপির ইফতার মাহফিল ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ এর ৩৮ তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উপলক্ষে ইফতার মাহফিল! আদমদীঘিতে নির্বাচন অফিসের মানববন্ধন ও অবস্থান কর্মসূচি কুবিতে আছিয়ার ধর্ষকদের অতিদ্রুত বিচারের দাবিতে মৌন মিছিল থিয়েটার কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের সভাপতি ইমতিয়াজ, সম্পাদক তন্ময় আদমদীঘিতে বিস্কুটের প্যাকেটের ভিতর হেরোইন, বাসযাত্রী গ্রেপ্তার শুক্রবার একই ফ্লাইটে কক্সবাজার যাচ্ছেন ড. ইউনূস ও গুতেরেস আছিয়ার দাফন সম্পন্ন, ধর্ষকের বাড়িতে বিক্ষুব্ধ জনতার আগুন নন্দীগ্রামে পৌর জামায়াতের ইফতার মাহফিল অনুষ্ঠিত সুন্দরবন থেকে চোরাই কাঠসহ কোস্টগার্ডের হাতে আটক ১০ লতিফিয়া সংগঠন মীরের গাঁও এর উদ্যোগে এবং প্রবাসীর অর্থ প্রদান ও ইফতার সম্পূর্ণ পীরগাছায় বেসরকারি মাধ্যমিক শিক্ষক-কর্মচারী কল্যাণ সমিতির কার্যালয় উদ্বোধন ও ইফতার মাহফিল কুবি তরুণ কলাম লেখক ফোরামের দোয়া ও ইফতার সম্পন্ন প্রাচীন মহকুমা শহর রামগড়ের মর্যাদা পুনরুদ্ধার ও উন্নয়ন ভাবনা শীর্ষক মতবিনিময়

ক্রিপ্টোকারেন্সি ও প্রসঙ্গত আমাদের বাংলাদেশ

দেশচিত্র নিউজ ডেস্ক

প্রকাশের সময়: 10-07-2023 02:38:53 pm


◾ মু, সায়েম আহমাদ : বর্তমান তথ্য ও প্রযুক্তির যুগ। এই যুগে এসে পৃথিবী এগিয়ে চলেছে নিজের আপন গতিতে। সাফল্য এবং উন্নতির পথে ধাবিত হচ্ছে প্রতিনিয়ত। মানুষের জীবনের প্রত্যেক কাজকে করছে সহজ থেকে সহজতর। যা প্রাচীনকালে কঠিন রীতিনীতির মধ্য দিয়ে বাস্তবায়ন করতে হতো। ঠিক তেমনি ভাবে নিজেদের টাকা পয়সার লেনদেনকে সহজ করতেই তারা সোনার কিংবা রূপার কয়েন থেকে মুখ ফিরিয়ে এসেছিল কাগজের টাকার দিকে। আবার একই ভাবে টাকা থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়ে এমন এক মুদ্রার প্রতি দিন দিন আকৃষ্ট হচ্ছে, যার থাকবে না কোনো অস্তিত্ব। তবে হ্যাঁ এটাও ঠিক যে মানুষ তা দিয়ে কেনাবেচা করতে পারবে। আর সেটি হচ্ছে crypto-currency বা ভার্চুয়াল মুদ্রা। যা আধুনিক বিশ্বের সাথে পরিচিত। 


ক্রিপ্টোকারেন্সি বলতে মূলত এক প্রকার সাংকেতিক মুদ্রাকে বুঝানো হয়ে থাকে। যার বাস্তবিক জগতে কোনো শারীরিক রূপ বা গঠন নেই। অর্থাৎ এটিকে কেউ স্পর্শ করতে পারবে না এবং পকেটেও বহন করতে পারবে না। বিভিন্ন জটিল সব অ্যালগোরিদম, ব্লক এবং ক্রিপ্টোগ্রাফি অনুসরণ করেই একেকটি কয়েন বানানো হয়। সেই সাথে ব্যাংক থেকে নর্মাল টাকার মতো তোলারো সুযোগ নেই। শুধু মাত্র অনলাইনের মাধ্যমে এর তৎপরতার সুযোগ।ক্রিপ্টোকারেন্সি যেহেতু অস্তিত্বহীন মুদ্রা। তাই এটি পিয়ার টু পিয়ার ব্যবস্থার মাধ্যমে প্রেরক থেকে সরাসরি প্রাপকের কাছে যায়। এটি ব্লকচেইনের উপর নির্ভর করে চলে। ব্লকচেইন হলো তথ্য সংরক্ষণের পদ্ধতি। এ পদ্ধতিতে বিভিন্ন ব্লকে একটির পর একটি তথ্য চেইনের মতো করে সংরক্ষণ করা হয়। ক্রিপ্টোকারেন্সির লেনদেনের তথ্য ব্লকচেইন নেটওয়ার্কের মাধ্যমে সুরক্ষিত থাকে। এছাড়া এই মুদ্রার লেনদেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণে থাকে না।যার ফলে আর্থিক ঝুঁকির প্রবণতা বেশি থাকে।


ক্রিপ্টোকারেন্সির ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, ১৯৮৩ সালে আমেরিকান ক্রিপ্টোগ্রাফার ডেভিড চৌম ক্রিপ্টোগ্রাফিক পদ্ধতিতে ডিজিটাল উপায়ে টাকা আদান প্রদানের বিষয়টি নিয়ে কাজ শুরু করেন। তখন এটির নাম ছিল ই-ক্যাশ। ১৯৯৫ সালে, তিনি ডিজিক্যাশের মাধ্যমে এটি একটি ক্রিপ্টোগ্রাফিক ইলেকট্রনিক পেমেন্টের প্রাথমিক ফর্ম বাস্তবায়নের দিকে এগুতে থাকেন। পরবর্তীতে ২০০৯ সালে সাতোশি নাকামোতো ছদ্মনামের কেউ কিংবা একদল সফটওয়্যার ডেভেলপার নতুন ধরনের ভার্চ্যুয়াল মুদ্রার প্রচলন করে। এ ধরনের মুদ্রা ক্রিপ্টোকারেন্সি নামে পরিচিতি পায়। তবে নাকামোতোর উদ্ভাবিত সে ক্রিপ্টোকারেন্সির নাম দেওয়া হয় বিটকয়েন। crypto-currency বা ভার্চুয়াল মুদ্রা বিভিন্ন ধরনের হতে পারে। তম্মধ্যে বেশ কিছু জনপ্রিয় ভার্চুয়াল মুদ্রা রয়েছে। যেমন, বিটকয়েন, ইথেরিয়াম, লাইটকয়েন, রিপল, মোনেরো, ড্যাশ, বাইটকয়েন, ডোজকয়েন ইত্যাদি। তবে এগুলোর মধ্যে বিটকয়েন সবার পূর্বসূরি ও সবচেয়ে পরিচিত। মূলত এটির সফলতা বেড়েছে বলে আরো প্রতিদ্বন্দ্বী কারেন্সির জন্ম হয়। আমাদের দেশের আইনে ক্রিপ্টোকারেন্সি স্বীকৃতি দেওয়া হয়নি। ক্রিপ্টোকারেন্সি বা বিটকয়েন অন্যান্য দেশে বৈধ হলেও আমাদের দেশে বৈধ করার পরিস্থিতি তৈরি হয়নি। ২০১৪ সালে বাংলাদেশ ব্যাংক এটিকে অবৈধ বলে ঘোষণা করেছে। তবুও দিন দিন অনেকেই এই ভার্চুয়াল লেনদেনের সাথে সম্পৃক্ত হচ্ছে। যার ফলশ্রুতিতে মানুষ বিভিন্ন অপকর্মে জড়িত পড়ছে। শুধু তাই নয় বরং এসবকিছুর ফলে আমাদের দেশের অর্থনীতিতে এর নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। এছাড়াও চীন, মরক্কো, ইকুয়েডর, বলিভিয়াসহ বিভিন্ন দেশে এটি অবৈধ বলে ঘোষণা করেছে। কিন্তু কানাডা ও যুক্তরাষ্ট্রের করের আওতায় এনে অনুমোদন দিয়েছে। 


crypto-currency বা ভার্চুয়াল মুদ্রার যেমন সুবিধা রয়েছে ঠিক তেমনি অসুবিধাও রয়েছে। তবে সুবিধার তুলনায় অসুবিধাটাই বেশি। যেমন এসব লেনদেনে আইনগত ঝুঁকি রয়েছে। যেখানে কোন দেশ এই লেনদেনকে স্বীকৃতি দেয়নি সেখানে এটি প্রচলন বা বাস্তবায়ন করাও এক ধরনের আইনগত অপরাধ। এসব লেনদেনে আর্থিক ঝুঁকিও বিদ্যমান। কারণ কাউকে টাকা প্রদান করলে লেনদেনের ট্র্যাকিং করা সম্ভব নয়। যার ফলে, বুঝা যায় না কে-বা কাকে টাকা প্রদান করেছে। এতে করে যদি ভুল জায়গায় টাকা প্রদান করা হয় তখন সেটি পাওয়া দুষ্কর হয়ে পড়ে। ক্রিপ্টোকারেন্সি মাধ্যমে অর্থ পাচার হয় অতি সহজে। কারণ এর মাধ্যমে তথ্য আদান-প্রদানের সনাক্ত করা মুশকিল। আমাদের দেশে অর্থপাচার যুগোপযোগী সমস্যার মধ্যে অন্যতম। এর মধ্যে অনেকেই ক্রিপ্টোকারেন্সি এর মাধ্যমে বিদেশে অর্থ পাচার করছে। দেশে প্রচলিত চারটি আইনে ক্রিপ্টোকারেন্সির মাধ্যমে লেনদেন ও অর্থপাচার আইনত অপরাধ। সম্প্রতি অন্তত ১০টি অভিযানের তদন্তে অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) সাইবার পুলিশ, অ্যান্টি টেররিজম ইউনিট (এটিইউ), গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) ও র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব) ক্রিপ্টোকারেন্সির মাধ্যমে শত শত কোটি টাকা পাচারের তথ্য পেয়েছে। এছাড়াও এক ধরনের জুয়ার আসরের মতো "বিগো ও লাইকি" অ্যাপে লাইভ স্ট্রিমিং করে ভার্চুয়াল মুদ্রার মাধ্যমে আমাদের দেশ থেকে মাসে শতকোটি টাকা পাচারের অভিযোগে পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করেছে সিআইডি। চক্রটি লাইভ স্ট্রিমিংয়ের নামে তরুণ-তরুণীদের অশ্লীলভাবে উপস্থাপন করে। এই ভিডিওতে প্রলুব্ধ করা হতো যুবক, বিশেষ করে নিঃসঙ্গ প্রবাসীদের। শুধু তাই নয় বরং ভিপিএনসহ কিছু অনুমোদনবিহীন গেটওয়ে ব্যবহার করে জুয়ার সাইটে ক্রিপ্টোকারেন্সির লেনদেন চলছে অনবরত। যার ফলে দেশীয় অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। এসব ক্রিপ্টোকারেন্সির লেনদেনে হ্যাকারদের কবলে পড়তে হয়। প্রায়ই শোনা যায় যে আন্তর্জাতিক হ্যাকাররা বিভিন্ন কম্পিউটার হ্যাক করে মুক্তিপণ দাবি করে। আর সেই মুক্তিপণ পরিশোধের জন্য বলা হয় বিটকয়েন প্রদান করার জন্য। এতে করে মানুষের একদিকে যেমন হয়রানির শিকার হতে হয় অন্যদিকে আর্থিকভাবে বিপদগ্রস্ত হয়। শুধু তাই নয় বরং সন্ত্রাসী কার্যকলাপের জন্য এটি বেশ প্রচলিত। বিভিন্ন দামি ড্রাগ বা মাদকদ্রব্য, অস্ত্র অবৈধ কিছু কেনার ক্ষেত্রে ক্রিপ্টোকারেন্সি সবারই প্রথম পছন্দ হয়ে থাকে।কারণ বিটকয়েনের লেনদেনের কোনো রেকর্ড থাকে না। এ সুযোগ নিচ্ছে ডার্কনেটে মাদক বিক্রেতারাও। এর মাধ্যমে অর্থপাচার করছে কালো টাকার মালিকরা।‌ ক্রিপ্টোকারেন্সি বা ভার্চুয়াল মুদ্রায় বিনিয়োগ করা সবসময়ই ঝুকিপূর্ণ। কারণ এখানে প্রতিনিয়ত দামের ওঠানামা হয়। মার্কেটের কোনো ঠিক-ঠিকানা নেই। ইতিহাস ঘেটে দেখা যায় ০ ডলার থেকে ১০০০ ডলার এর দাম পৌছাতে কতো সময় লেগেছিলো, কিন্ত মাত্র কয়েক মাসের মাথায় এর দাম (৯০০ থেকে ৭৫০০ ডলার পর্যন্ত) আকাশচুম্বী হয়ে যায়। যদিও বাইরে থেকে এর লাভ অনেক বেশী মনে হলেও অভ্যন্তরীণ চিত্র ভিন্ন। 


পরিশেষে, ক্রিপ্টোকারেন্সি বা ভার্চুয়াল মুদ্রা যেসব দেশে লেনদেনের অনুমোদন দিয়েছে তাদের ঝুঁকি মোকাবিলার কৌশলগুলো পর্যালোচনা করে দেশের জনগণের নিকট বার্তা পৌঁছে দিতে হবে। এই লেনদেনের সাথে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। যারা আউটসোর্সিং বা ফ্রিল্যান্সিং এর সাথে জড়িত তাদের প্রতি বিশেষ নজর রাখতে হবে। কারণ তাঁদেরকে অনেক সময় সেবাগ্রহিতারা ভার্চ্যুয়াল মুদ্রা দিয়ে থাকেন। যার ফলশ্রুতিতে এভাবে কেউ কেউ ভার্চ্যুয়াল মুদ্রা লেনদেনে জড়িয়ে পড়ছেন। বিদেশে অর্থ পাচার বন্ধে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে আরো বেশি কঠোর হতে হবে। বিশেষ করে, বিগো, লাইকি, টিকটক, স্ন্যাকভিডিওসহ এজাতীয় আ্যাপস গুলো বন্ধ করতে হবে। কারণ এগুলোর মধ্যে দিয়ে এসব লেনদেন বেড়ে চলছে। প্রত্যেক নাগরিককে দেশীয় আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল ও মান্য করতে হবে। ক্রিপ্টোকারেন্সি সুফল ও কুফল সম্পর্কে গণসচেতনতামূলক প্রচারণা চালাতে হবে। প্রয়োজনে সংবাদপত্র ও রেডিও-টেলিভিশনে গণপ্রচারণা চালাতে হবে। তাই আসুন ক্রিপ্টোকারেন্সিকে না বলি, অর্থ পাচার বন্ধ করি। কারণ এই ক্রিপ্টোকারেন্সির লেনদেনে দেশের অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। আর সেজন্যই আগামীর সমৃদ্ধ সোনার বাংলা গড়তে দেশের প্রতি ভালোবাসা ও শ্রদ্ধাশীল হতে হবে।



লেখক: মু, সায়েম আহমাদ

তরুণ কলাম লেখক ও সংগঠক 

আরও খবর