◾ নিউজ ডেস্ক
বৈশ্বিক নিয়ম অনুযায়ী সম্ভাব্য ঝুঁকি মোকাবিলায় এখন ব্যাংকগুলোকে প্রয়োজনীয় মূলধন সংরক্ষণ করতে হয়। কিন্তু ২০২১ সাল শেষে দেশের ১৪টি ব্যাংক প্রয়োজনীয় মূলধন সংরক্ষণ করতে পারেনি। বরং মূলধন ঘাটতি ঢাকতে নিয়েছে ডেফারেল নামক বিশেষ সুবিধা। যেখানে অতিরিক্ত সময় দেওয়া হয়েছে ১০ বছর পর্যন্ত।
ব্যাংকগুলো হলো--সোনালী, রূপালী, জনতা, অগ্রণী, এবি, বেসিক, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী, আইএফআইসি, মিউচ্যুয়াল ট্রাস্ট, ন্যাশনাল, ওয়ান, সাউথ বাংলা অ্যাগ্রিকালচার, সাউথইস্ট ও স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংক।
ঋণের বিপরীতে প্রয়োজনীয় প্রভিশন সংরক্ষণের বিধান কৌশলে এড়িয়ে যাচ্ছে কিছু ব্যাংক। এতে মূলধন ঘাটতি থেকে সাময়িক মুক্তি পেলেও দীর্ঘমেয়াদি ঝুঁকির মুখে পড়ে যাচ্ছে ব্যাংকগুলো। প্রভিশন সংরক্ষণে দুই থেকে ১০ বছর পর্যন্ত অতিরিক্ত সময় (ডেফারেল) দেওয়া হয়েছে। প্রতি বছর সমান ভাগে ভাগ করে এই বকেয়া প্রভিশন সংরক্ষণের জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সঙ্গে চুক্তি করেছে ব্যাংকগুলো। এর ফলে কমে এসেছে প্রভিশন ঘাটতিতে থাকা ব্যাংকের সংখ্যা ও সামষ্টিক পরিমাণ।
নিয়ম অনুযায়ী, ঋণের মানভেদে শূন্য দশমিক ২৫ থেকে ১০০ শতাংশ পর্যন্ত প্রভিশন সংরক্ষণের বিধান রয়েছে। যেসব ব্যাংক তা রাখতে পারে না, তাদের ব্যাংকের মূলধন থেকে সেই ঘাটতি সমন্বয় করা হয়। ফলে ব্যাংকের মূলধন কমে যায়। পাশাপশি যেসব ব্যাংক পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত তারা ঘাটতি রেখে শেয়ারহোল্ডারদের লভ্যাংশ দিতে পারে না। এই দুই সমস্যা সমাধানে ডেফারেল নামক অস্ত্র ব্যবহার করছে ব্যাংকগুলো। এতে কাগজে কলমে সাময়িক সমাধান হলেও দীর্ঘমেয়াদে হুমকির সম্মুখীন হবে এসব ব্যাংক।
ব্যাংকের বার্ষিক প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, ২০২১ সাল শেষে সোনালী ব্যাংকের প্রভিশন ঘাটতির পরিমাণ ছিল সাত হাজার ৪৬৮ কোটি টাকা। কিন্তু তারা পুরোপুরি প্রভিশন রাখতে ব্যর্থ হয়েছে ব্যাংকটি। চার হাজার ৯২১ কোটি টাকা রাখলেও বকেয়া রয়েছে দুই হাজার ৫৪৭ কোটি টাকা। এই টাকা পরিশোধে অতিরিক্ত সময় চেয়ে নিয়েছে ব্যাংক। একইভাবে রূপালী ব্যাংকের প্রভিশন ঘাটতি ছিল পাঁচ হাজার ১৫৫ কোটি টাকা। যার মধ্যে সংরক্ষণ হয়েছে দুই হাজার ৬৪ কোটি কোটি টাকা, বাকি তিন হাজার ৯১ কোটি টাকা মূলধন সংরক্ষণ না করে ডেফারেল সহায়তা নিয়েছে ব্যাংকটি। একই সময়ে জনতা ব্যাংকের প্রভিশন ঘাটতি ছিল ১৯ হাজার ৪৬১ কোটি টাকা, যার মধ্যে ব্যাংকটি আট হাজার ৬৬১ কোটি টাকা রাখতে সক্ষম হয়েছে। বাকি ১০ হাজার ৮০০ কোটি টাকা রাখার জন্য অতিরিক্ত সময় চেয়ে নিয়েছে তারা। আলোচ্য সময়ে অগ্রণী ব্যাংকের প্রভিশন ঘাটতি ছিল ১০ হাজার ৩৭ কোটি টাকা, যার মধ্যে পাঁচ হাজার ২৪ কোটি টাকা সংরক্ষণ করলেও বাকি পাঁচ হাজার ১৩ কোটি টাকা রাখার জন্য অতিরিক্ত সময় দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
বেসরকারি খাতের এবি ব্যাংকের প্রভিশন ঘাটতি ছিল পাঁচ হাজার ১১৭ কোটি টাকা। যেটি রাখার জন্য ২০২৯ সাল পর্যন্ত সময় নিয়েছে ব্যাংকটি। বেসিক ব্যাংক তাদের প্রভিশন সংরক্ষণের জন্য সময় নিয়েছে ১০ বছর। সুতরাং চার হাজার ৭৯৭ কোটি টাকার প্রভিশন রাখার জন্য ২০৩২ সাল পর্যন্ত সময় পাবে ব্যাংকটি। ২০২১ সাল শেষে ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের প্রভিশন ঘাটতির পরিমাণ ছিল ২১০ কোটি টাকা। এই টাকা সংরক্ষণে অতিরিক্ত তিন বছর সময় নিয়েছে বেসরকারি খাতের ব্যাংক। আইএফআইসি ব্যাংকের প্রভিশন ঘাটতি ছিল ৫১৩ কোটি টাকা, যা পরিশোধ করার জন্য ২০২৫ সাল পর্যন্ত সময় নিয়েছে তারা।
বেসরকারি খাতের আলোচিত ন্যাশনাল ব্যাংক ২০২১ সাল শেষে পাঁচ হাজার ৮০২ কোটি টাকার প্রভিশন ঘাটতিতে ছিল। এর মধ্যে তারা সংরক্ষণ করেছে মাত্র এক হাজার ৪৩৫ কোটি টাকা। বাকি চার হাজার ৩৬৭ কোটি টাকা রাখার জন্য ২০৩১ সাল পর্যন্ত অতিরিক্ত ৯ বছর সময় নিয়েছে ব্যাংকটি। একইভাবে মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক ২৫৭ কোটি টাকা প্রভিশন সংরক্ষণের জন্য তিন বছর, ওয়ান ব্যাংক ৯৭৮ কোটি টাকা সংরক্ষণের জন্য পাঁচ বছর, সাউথ বাংলা অ্যাগ্রিকালচার ব্যাংক ৫৬ কোটি টাকা সংরক্ষণের জন্য তিন বছর, সাউথইস্ট ব্যাংক ১১৮ কোটি টাকা রাখার জন্য এক বছর এবং স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংক ১৪৮ কোটি টাকা রাখার জন্য অতিরিক্ত তিন বছর সময় নিয়েছে।
ব্যাংকগুলো গ্রাহকদের যে পরিমাণ ঋণ বিতরণ করে তার বেশিরভাগই আমানতকারীদের অর্থ। আমানতকারীদের অর্থ যেন কোনোভাবে ঝুঁকিতে না পড়ে সে জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে নানা বিধিনিষেধ আরোপ করা আছে। এর একটি হলো সঞ্চিতি সংরক্ষণ। নিয়ম অনুযায়ী, ব্যাংকের অশ্রেণিকৃত বা নিয়মিত ঋণের বিপরীতে দশমিক ২৫ থেকে পাঁচ শতাংশ হারে প্রভিশন রাখতে হয়। নিম্নমান বা সাব-স্ট্যান্ডার্ড ঋণের বিপরীতে রাখতে হয় ২০ শতাংশ, সন্দেহজনক ঋণের বিপরীতে ৫০ শতাংশ ও মন্দ বা কুঋণের বিপরীতে ১০০ শতাংশ প্রভিশন সংরক্ষণ করতে হয়।
এ বিষয়ে বিশ্বব্যাংক বাংলাদেশ অফিসের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন বলেন, ‘বিষয়টা আমানতকারীদের জন্য বড় ঝুঁকি। সাধারণ আমানতকারীরা যদি না জানে তারা যে ব্যাংকে টাকা রাখছে তার ভিত্তি দুর্বল, তাহলে তাদের প্রতারিত হওয়ার সুযোগ থাকে।’
৫ দিন ৯ ঘন্টা ৪ মিনিট আগে
৬ দিন ৮ ঘন্টা ৩০ মিনিট আগে
৬ দিন ১৯ ঘন্টা ৪১ মিনিট আগে
৭ দিন ১৭ ঘন্টা ৫৪ মিনিট আগে
৮ দিন ১৬ ঘন্টা ৪৫ মিনিট আগে
৯ দিন ১১ ঘন্টা ২৪ মিনিট আগে
১০ দিন ১৩ ঘন্টা ৫৯ মিনিট আগে
১০ দিন ১৪ ঘন্টা ১ মিনিট আগে