করোনাকাল পরবর্তী গত কয়েক বছর ধরেই অর্থনৈতিক চাপ সামলাতে হচ্ছিল সরকারকে। তারমধ্যেই গত বছরের জুলাই আগস্টে ছাত্র জনতার গণঅভ্যুত্থানে দেশে রাজনৈতিন পট পরিবর্তনের পর দেশের অর্থনীতি এক নতুন চ্যালেঞ্জের মুখে। সে চ্যালেঞ্জ নিয়েই অন্তর্বর্তী সরকারের প্রথম বাজেট ঘোষণা হতে যাচ্ছে। সোমবার (০২ জুন) বেলা ৩টায় বাংলাদেশ টেলিভিশনে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রথম অর্থবছরের (২০২৫-২৬) বাজেট পেশ করবেন অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহ উদ্দিন।
আগামী ২০২৫-২৬ অর্থবছরের জন্য ৭ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকার বাজেট ঘোষণা করা হতে পারে। বাজেটে কর্মসংস্থান সৃষ্টি, মূল্যস্ফীতি কমানো, ব্যবসা-বাণিজ্য সহজ করা, অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা, আর্থিক শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনাসহ বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় এতে গুরুত্ব পাবে।
এটি হবে দেশের ৫৪তম বাজেট এবং অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রথম বাজেট। শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর ক্ষমতা গ্রহণকারী অন্তর্বর্তী সরকার অর্থনৈতিক চাপ মোকাবিলার পাশাপাশি অর্থনীতিকে স্থিতিশীলতার দিকে নিয়ে যাওয়ার ওপর জোর দেবে।
অন্তর্বর্তী সরকারের এই প্রথম বাজেট মূল্যস্ফীতি আরও কমানো, বেসরকারি বিনিয়োগ ও সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ (এফডিআই) সুবিন্যস্ত করা, আর্থিক শৃঙ্খলা পুনরুদ্ধার করা এবং বৈশ্বিক ও অভ্যন্তরীণ অনিশ্চয়তার মধ্যে সামাজিক সুরক্ষার জাল জোরদার করার মতো কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি।
অর্থ উপদেষ্টা বাংলাদেশ টেলিভিশন (বিটিভি) ও বাংলাদেশ বেতারে বেলা ৩টায় বাজেট বক্তৃতা দেবেন। বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল ও রেডিও স্টেশনগুলোকে বিটিভির সরকারি ফিড ব্যবহার করে একই সময়ে এ বক্তৃতা সম্প্রচার করার অনুরোধ করা হয়েছে।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, আগামী অর্থবছরের বাজেট কর-জিডিপি অনুপাত বাড়ানো, স্থানীয় শিল্পকে সহায়তা করা, কাঙ্ক্ষিত রাজস্ব সংগ্রহ বৃদ্ধি, নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি, এফডিআই আকর্ষণ করা, ব্যবসাবান্ধব পরিবেশ তৈরি করা, পরিপালন ব্যবধান কমানো এবং ভ্যাটের হিসাবরক্ষণ পদ্ধতি সহজ করার ওপর গুরুত্ব দেবে। এ ছাড়া ভ্যাট সংগ্রহে কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য অর্জনের জন্য সম্পূরক শুল্কের হার যৌক্তিক করতে সংশ্লিষ্ট আইনের কিছু বিধান সহজ করার সম্ভাবনা রয়েছে।
আগামী বাজেট বর্তমান অর্থবছরের ৭ লাখ ৯৭ হাজার কোটি টাকার মূল বরাদ্দ থেকে ৭ হাজার কোটি টাকা কম হতে পারে। অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলেছেন, আগামী অর্থবছরের বাজেট প্রণয়ন করা হচ্ছে সরকারের আর্থিক একত্রীকরণ, আরও বাস্তবায়নযোগ্য ও কার্যকর আর্থিক পরিকল্পনা প্রদানের অগ্রাধিকারের সঙ্গে সংগতি রেখে।
সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে অর্থ উপদেষ্টা বলেছেন, আগামী অর্থবছরের জাতীয় বাজেট সময়োপযোগী ও বাস্তবভিত্তিক হবে। অন্তর্বর্তী সরকার বাজেট প্রণয়নের সময় সব সামষ্টিক অর্থনৈতিক ও সামাজিক বিষয় বিবেচনা করেছে। তিনি বলেন, আমি এই বাজেটকে ছোট বলব না, তবে এটি অবশ্যই বাস্তবায়নযোগ্য ও সময়োপযোগী হবে। এটি সময়োপযোগী হবে; কারণ মূল্যস্ফীতি, বাণিজ্য, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ, বাণিজ্য ও ব্যবসা-বাণিজ্য সহজ করা, রাজস্ব সংগ্রহ বৃদ্ধি করার মতো বিষয়গুলো বিবেচনা করা হচ্ছে। আমরা এসব বিষয় বিবেচনা করে বাজেটকে বাস্তবভিত্তিক করছি।
প্রস্তাবিত বাজেটে ঘাটতি জিডিপির ৪ শতাংশের নিচে থাকবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, আগামী অর্থবছরের জন্য জিডিপি প্রবৃদ্ধির একটি সম্ভাব্য মাঝারি লক্ষ্যমাত্রা সাড়ে ৫ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছে, যা বর্তমান বছরের সংশোধিত ৫ দশমিক ২৫ শতাংশের সামান্য বেশি। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ অগ্রাধিকার থাকবে এবং সরকার এটিকে প্রায় সাড়ে ৬ শতাংশে নামিয়ে আনার লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে।
নিম্ন আয়ের মানুষের আর্থিক চাপ কমানোর জন্য বাজেটে সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচির সম্প্রসারণ অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে, যেখানে সুবিধাভোগীর সংখ্যা ও ভাতার পরিমাণ বাড়ানো হবে। কৃষি, স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও প্রযুক্তির মতো গুরুত্বপূর্ণ খাতগুলোকে তহবিল পাওয়ার জন্য অগ্রাধিকার দেওয়া হবে। বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) বরাদ্দ ২ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা ধরা হয়েছে, যা বর্তমান অর্থবছরের ২ লাখ ৬৫ হাজার কোটি টাকা থেকে কম।
ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ আশ্বাস দিয়েছেন, আসন্ন বাজেট ব্যবসাবান্ধব হবে এবং বিনিয়োগ, জিডিপি প্রবৃদ্ধি ও কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যে করনীতি চালু করা হবে। আগামী বাজেটের ৭ লাখ ৮৯ হাজার ৯৯৮ কোটি ৫৪ লাখ ৭৫ হাজার টাকার সংস্থানের জন্য রাজস্ব সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা ৫ লাখ ১৮ হাজার কোটি টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে, যা বর্তমান অর্থবছরের ৪ লাখ ৮০ হাজার কোটি টাকার বেশি।
১১ ঘন্টা ৬ মিনিট আগে
১ দিন ১৭ ঘন্টা ৫১ মিনিট আগে
২ দিন ১৭ ঘন্টা ৮ মিনিট আগে
৩ দিন ৩ ঘন্টা ১৮ মিনিট আগে
৫ দিন ১০ ঘন্টা ৫৪ মিনিট আগে
৮ দিন ১৮ ঘন্টা ৪৮ মিনিট আগে
১৩ দিন ৮ ঘন্টা ৪০ মিনিট আগে
১৪ দিন ১৩ ঘন্টা ৩ মিনিট আগে