মুসলিম উম্মাহর একাত্মতা ফিলিস্তিন সংকট সমাধানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে : পররাষ্ট্রমন্ত্রী -> উপজেলা পরিষদ নির্বাচন <- হাতীবান্ধায় নির্বাচনী সংঘর্ষে চেয়ারম্যান প্রার্থী সহ আহত ১০ দলের নির্দেশনা মানছে না টেকনাফ মহিলা দলের দুই নেত্রী চকরিয়ায় পরিষ্কার-পরিছন্নতা বিষয়ে সচেতনতা বৃদ্ধিতে র‌্যালি চোখ বেঁধে টর্চার সেলে নির্যাতন, টেকনাফের ওসি প্রত্যাহারের গুঞ্জন! ধামরাই উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদ প্রার্থী আলহাজ্ব আহাম্মদ হোসেন কই মাছ প্রতীকে প্রচার প্রচারণায় ব্যস্ত সময় পার করছেন ভয়াবহ আগুনে কেড়ে নিল এক অসহায় পরিবারের সর্বস্ব ধামরাইয়ে সামাজিক সংগঠন ক্ষুদ্র সেবার উদ্যোগে বিশুদ্ধ পানি ও খাবার স্যালাইন বিতরণ বেগমগঞ্জে ট্রাক-সিএনজি সংঘর্ষে নিহত ৪ সারিয়াকান্দিতে ভোটের মাঠ থেকে সরে গেলেন দুই চেয়ারম্যান প্রার্থী ডোমারে দুই চেয়ারম্যান প্রার্থীর ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া, আহত ২০ ব্যানারে বঙ্গবন্ধু ও প্রধানমন্ত্রীর ছবি ব্যবহার করে ভোট প্রার্থনা, এমপির ভাতিজাকে শোকজ ব্রাজিলে প্রবল বৃষ্টিপাতে ৩৯ জনের মৃত্যু ডোমারে বিএনপির ভোট বর্জনের ডাক ডোমার উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ভোটগ্রহণকারী কর্মকর্তাদের সাথে মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত নীলফামারীতে সেরা প্যানেল আইনজীবী নির্বাচিত হয়েছেন ডোমারের অ্যাড. আনোয়ার হোসেন দীর্ঘ একযোগেও ভোগান্তি কমেনি ব্রিজ পুনঃনির্মাণের উদ্যোগ নেই; জনগণের ভোগান্তি চরমে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ কমিউনিটি ব্যাংকে সড়ক দুর্ঘটনায় একই পরিবারের ৩ জনের মৃত্যু সহজ জয় দিয়ে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি সিরিজ শুরু করলো বাংলাদেশ

কুরআন ও হাদীসের আলোকে ধুমপানের পরিণতি


◾মুফতি মুহাম্মাদুল্লাহ  : বর্তমান আমাদের সমাজে ধূমপান বিস্তৃত লাভ করেছে। এই ধুমপানের কারণে মানুষের ব্যক্তিসত্তা, সম্পদ, বিবেক ও সমাজ দূষিত হয়ে পড়ছে। রাস্তাঘাট, যাত্রীছাউনি, দোকানপাট, মাঠঘাট ও যানবাহনসহ সব জায়গায় ছড়িয়ে পড়েছে। এমনকি যুবক-যুবতী, শিশু-কিশোর,উঁচু-নিম্ন শ্রেণী ও বৃদ্ধ সর্বমহল এই নেশায় আসক্তির কবলে।


পরিসংখ্যান বলছে, সারাবিশ্বে প্রতি বছর তামাক প্রায় ৬০ লাখ মানুষের মৃত্যু ঘটায়। তামাকজনিত রোগে প্রতিবছর দেশে এক লাখ ৬১ হাজার মানুষের মৃত্যু হয়। যা কেবল একটি সংখ্যা নয়। হাতে হাত রেখে দাঁড়ালে এটি ২০০ কিলোমিটার দীর্ঘ মৃত মানুষের সারি।


বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) এক প্রতিবেদনে জানানো হয়, সারাবিশ্বে তামাক সেবন করে এমন মানুষের সংখ্যা ১শ’ কোটির ওপরে। এর মধ্যে প্রতিবছর যে ৬০ লাখ মানুষ মারা যায়, তার ৫০ লাখেরই মৃত্যু ঘটে তামাকের সরাসরি প্রতিক্রিয়ায়। সংস্থাটি তাদের প্রতিবেদনে জানায়, তামাক সেবনকারীদের ৮০ শতাংশই বাস করে নিম্ন ও মধ্য আয়ের দেশগুলোতে। তামাক অনেকভাবেই সেবন করা যায়। এর মাঝে অন্যতম- ধূমপান (সিগারেট, বিড়ি, হুক্কা) এবং জর্দা, সাদা পাতা, গুল ও খৈনী প্রভৃতি সেবনের মাধ্যমে।


সমাজে ছড়িয়ে পড়া এই মরণব্যাধি যেরকম আমাদের ব্যক্তিগতভাবে ক্ষতি করে, সামাজিক ক্ষতি করে, এরকম ভাবে আমাদেরকে আধ্যাত্মিকভাবেও ক্ষতি করে। এ কাজ যেরকম রাষ্ট্রীয়ভাবে অপরাধ , ব্যক্তিগতভাবে অপরাধ এই কাজ ধর্মীয়ভাবেও অপরাধ হিসেবে গৃহীত। একজন মুসলিম হিসেবে আমাদের জানতে হবে , আমাদের ধর্ম এ বিষয়ে কি বলেছে। এর ভয়াবহ শাস্তি কি হতে পারে । এর ক্ষতি কি তা আমাদের অবশ্যই জানতে হবে। এই মরণব্যাধি ধূমপানের বিষয়ে কুরআন ও হাদিস কি বলে তা নিয়ে আমি কিঞ্চিত পরিমাণ আলোচনা করবো ইনশাআল্লাহ।


১. ধূমপান আত্মহত্যার শামিল 


বিড়ি, মদ ও গাঁজা এবং যেকোনো নেশা এটা আমাদের শরীরের জন্য ক্ষতি। এটা আমাদের মরণ ডেকে আনে। তাই কেন যেন আমরা নিজেই নিজেকে হত্যা করি। আত্মহত্যা ন্যায়। এ ব্যাপারে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন ইরশাদ করেন;

'তোমরা নিজেরা নিজেদের হত্যা করোনা'

(সূরা নিসা - ২৯)


২. ধূমপান হারাম বস্তু


ধূমপান আত্মাকে মেরে ফেলে আর যে জিনিস নিজের আত্মাকে মেরে ফেলে তা আল্লাহ আমাদের উপর হারাম করেছেন। হারাম বস্তু আমাদের জন্য নিষিদ্ধ।

আল্লাহ রাব্বুল আলামীন এরশাদ করেন;

'তিনি তাদেরকে নির্দেশ দেন সৎ কর্মের, বারণ করেন অসৎকর্ম থেকে, তাদের জন্য যাবতীয় পবিত্র বস্তু হালাল ঘোষণা করেন ও নিষিদ্ধ করেন হারাম বস্তু সমূহ'

(আল আরাফ - ১৫৭)


৩. ধূমপানকারী সর্বদা পাপের বোঝা বহন করে 


যেহেতু প্রথম আয়াতে আমরা জানতে পারি বিড়ি, মদ ইত্যাদি আমাদের জন্য হারাম । তাই এ হারাম বস্তু আমাদের আহার করা আল্লাহর পক্ষ থেকে নিষেধ। একজন মুসলিম হিসেবে আমি কিভাবে আল্লাহর আদেশ অমান্য করতে পারি? আর তাছাড়া আমি একজন মুমিন হিসেবে , মুসলিম হিসেবে নিজেই নিজের উপর কষ্ট দিচ্ছি। অথচ আল্লাহ তাআলা পবিত্র কোরআন শরীফে বলেন;

'যারা মুমিন নর ও নারীকে বিনা অপরাধে কষ্ট দেয় তারা অপবাদ ও স্পষ্ট পাপের বোঝা বহন করে'

(সুরা আহযাব-৫৮)

একজন মু'মিন হিসেবে আমি নিজেকে কিভাবে দাবি করতে পারি? অথচ সর্বদা আমি একটি পাপের বোঝা বহন করছি।


৪. ধূমপান অন্যের ক্ষতি করে যা ইসলামে নিষিদ্ধ 


দেখুন, সিগারেটের কারণে আপনার মুখ থেকে যে ধোঁয়া বের হয় তা আপনার একা নয় বরং আপনার আশেপাশের লোক, আপনার স্ত্রী, আপনার সন্তান ও আপনার সহকর্মীদেরও ক্ষতি করে। অনেকেই ধূমপান না করে ধূমপাইদের দ্বারা আক্রান্ত হন।

তাঁদের দোষ এই যে, তাঁরা একজন ধূমপায়ীর পাশে বসেছে। তাহলে দেখুন একটি ধূমপানের কারণে আপনি যেরকম নিজের ক্ষতি করছেন পাশাপাশি আপনার অধীনস্ত আপনার প্রতিবেশীদেরও ক্ষতিগ্রস্ত করছেন, পরিবেশ ক্ষতিগ্রস্ত করছেন। 

আল্লাহর নাবী সা. এরশাদ করেন;

'তুমি নিজের ক্ষতি করো না এবং অন্যের ক্ষতি করো না'

(বায়হাকি-১১৭১৮)

এজন্যই অনেক দেশে পাবলিক প্লেসে ধূমপান নিষিদ্ধ। এমনকি যেসব দেশে ইসলামের সঙ্গে কোনো সম্পর্ক নেই সেখানেও।


৫. ধূমপানে আসমানের ফেরেশতারা কষ্ট পায়


ধূমপান যেমন নিজের এবং অন্যের ক্ষতি করে, তেমনি এই ধূমপানের কারণের ক্ষতি জমিন থেকে আকাশে ছড়িয়ে পড়ে । তারপর রহমতের ফেরেশতাদের কষ্ট দেয়।

যেমনটা আল্লাহর রাসূল সা: এরশাদ করেন;

'যে ব্যক্তি রসুন, পেঁয়াজ এবং পিঁয়াজজাতীয় সবজিবিশেষ খায় সে যেন আমাদের মসজিদের কাছে না আসে, কারণ আদম সন্তানরা যে জিনিসে কষ্ট পায় তাতে ফেরেশতারা কষ্ট পায়। (বোখারী-৮৫৪)


 হে বিবেকবান! আপনারা একটু বলুন,ভাবুন_যেখানে আসমানের ফেরেস্তা সামান্য একটা পেঁয়াজের গন্ধে কষ্ট পায় সেখানে আপনার মুখ থেকে অসহ্য রকমের যেই দুর্গন্ধ ধূমপানের কারণে আসে এতে ফেরেশতারা কিভাবে সহ্য করে ? তারা কতটা কষ্ট পায় ? আর আপনি একজন মুসলিম হিসেবে আসমানের ফেরেশতাদের কষ্ট দিচ্ছেন। ভাবতে পারেন? 

 

৬. ধূমপানে স্বাস্থ্যের পাশাপাশি আর্থিক ক্ষতি রয়েছে 


এই ধূমপান আমাদের স্বাস্থ্য ও নৈতিক অনেক ক্ষতি করছি এর পাশাপাশি আমাদের অর্থনৈতিকও ক্ষতি করছে। যা প্রতি মাসে নিজের পরিবার পরিজন ছাড়াই শেষ করে দিচ্ছি। অথচ ইসলামে এই ধরনের খরচে রয়েছে দিগুন পাপ। এ যেন হারাম কাজে অপচয় করা এবং পরিবারকে সংকীর্ণতায় ঠেলে দেওয়ার শামিল।


আল্লাহ তাআলা বলেন ;

'তোমার রবের কসম তাদের সকলকে তাদের কৃতকর্ম সম্পর্কে অবশ্যই জিগ্যেসা করবো'

(সুরা আল হিজর_৯২)

তাহলে বুঝা গেল আমরা হারাম কাজে যেই অর্থ অপচয় করছি, খরচ করছি তার হিসাব কাল কেয়ামতের দিন আমাদের কাছে আল্লাহতালা নিবেন। যেমন এক হাদিসে

আল্লাহর রাসূল সা: এরশাদ করেন;

'কেয়ামতের দিন বান্দার পা নড়বে না যতক্ষণ না তাকে চারটি সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হবে: তার দেহ সম্পর্কে এবং সে কীভাবে এটি শেষ করেছিল এবং তার অর্থ সম্পর্কে, সে কোত্থেকে তা অর্জন করেছিল এবং সে কোথায় ব্যয় করেছিল?'

(তিরমিযী -২৪১৭)

আরেক হাদীসে উম্মে সালামাহ (রা.)-এর সূত্রে বর্নীত আছে , তিনি বলেন; 'আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রতিটি নেশাকারী ও দুর্বলকারী থেকে নিষেধ করেছেন' (আবু দাউদ -৩৬৮৬)

উক্ত হাদীসের মতনে 'মুফতার' শব্দ দ্বারা উদ্দেশ্য হল ঐসব কিছু যা উদাসীনতা ও শিথিলতা সৃষ্টি করে। আমরা দেখি ধূমপানের কারণে সৃষ্ট উদাসীনতা সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়ার জন্য লক্ষ্য করুন_সিগারেটের প্রভাবে মাথা ঘোরা এবং শরীরে শিথিলতা সৃষ্টি করা । তাই এই ধূমপান আমাদের জন্য সরাসরি নিষিদ্ধ।


আজকের এই আলোচনার ইতি টেনে পরিশেষে বলতে চাই; আপনি তামাকের দুর্গন্ধ, নোংরা স্বাদ এবং আপনার আঙ্গুলের উপর, আপনার জিহ্বায় ও আপনার দাঁতে এবং আপনার চোখের উপর এর খারাপ প্রভাবগুলিকে কোন পর্যায়ের মনে করেন? কোন বিবেকবান মানুষ বলবে কি এটা ভালো? সহজাতভাবে, একজন ব্যক্তি ভাল কিছু খাওয়ার আগে বা ভাল কিছু পান করার আগে বিসমিল্লাহ বলে এবং যখন শেষ করে, তখন সে আলহামদুলিল্লাহ বলে এবং বৃদ্ধির জন্য দোয়া করে। বলুন তো, সিগারেট জ্বালানোর সময় কাউকে এমন করতে দেখেছেন বা শুনেছেন? তাহলে নিশ্চয়ই এটা সর্বজন স্বীকৃত একটা নিকৃষ্ট পানীয়। 

আমরা কখনো কখনো দেখতে পাই যে, বিড়ি পানকারী নেশাখোর সে নিজেও জানে এটা তার জন্য ক্ষতিকর। তাহলে একজন বিবেকবান একজন মুসলিম হিসেবে আমরা নিজের ক্ষতি , পরিবারের ক্ষতি, সমাজের ক্ষতি ও পরিবেশের ক্ষতি কিভাবে করতে পারি ? একজন সচেতন নাগরিক হিসেবে কি আমাদেরকে এর থেকে পরিত্রাণের উপায় বের করতে হবে না? যারা এই নোংরা কাজে অংশগ্রহণ করছেন তাদেরকে দূরে সরানোর চেষ্টা করতে হবে না?


সুতরাং, সমাজে ক্যান্সারের ন্যায় বিস্তৃত এই মরণব্যাধি থেকে আমাদের বাঁচতে হবে এ বিষয়ে আমাদের সতর্ক হতে হবে পাশাপাশি অন্যকেও সচেতন করতে হবে। একজন মুসলিম হিসেবে ধর্মীয়ভাবে এই নিষিদ্ধ কাজ থেকে আমাদের দূরে রাখতে হবে । আল্লাহ তাআলার ভয়াভয় শাস্তির কথা আমাদের মাথায় রাখতে হবে। নিজেরা সুস্থ থাকি, অন্যকেও সুস্থ রাখার চেষ্টা করি। সুস্থ সমাজ গড়ে তুলি। 

আল্লাহ তাআলা আমাদের উপরোক্ত আলোচনা বোঝার ও পরিপূর্ণ আমল করার তৌফিক দান করুন। আমীন ইয়া-রব।



লেখক, মুফতি মুহাম্মাদুল্লাহ 

শিক্ষক ও গবেষক 

সদস্য, বাংলাদেশ নবীন লেখক ফোরাম

আরও খবর