কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলার ডেমুশিয়া গ্রামীণ জনপদের বিভিন্ন সড়কের চিত্র লন্ডভন্ড হয়ে গেছে। গেল আগস্ট মাসে টানা ভারি বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে সৃষ্ট স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যায় এ জনপদে সবচিত্র লন্ডভন্ড হয়ে যায়। এতে গ্রামীণ বিভিন্ন রাস্তা-ঘাট, সেতু, ফসলী জমি, ধানের বীজতলা ও মৎস্য ঘেরের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। ডেমুশিয়া ইউনিয়ন পরিষদের দেয়া তথ্যমতে গেল বন্যায় এই জনপদের প্রায় ১ থেকে দেড় কোটি টাকার মতো ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে জানা গেছে।
সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, উপজেলার ডেমুশিয়া ইউনিয়নে ৯টি ওয়ার্ডের মানুষ বন্যার পানিতে তলিয়ে গিয়ে টানা ৫ দিন ধরে নিমজ্জিত ছিল। এতে ভযাবহ বন্যায় পানির প্রবল স্রোতে বিভিন্ন গ্রামীণ রাস্তা-ঘাট ও ধানের বীজতলা, ফসলি জমিসহ মৎস্য ঘেরে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। বন্যার পানিতে তলিয়ে গিয়ে পাকা সড়ক, এইচবিবি, প্লাট সলিং, মাটির রাস্তা বানের পানির প্রবল স্রোতের তোড়ে সড়কে বড় বড় গর্ত ও ইট উঠে কাঁদা হয়ে গেছে। বিভিন্ন গ্রামের শত শত স্কুল, মাদ্রাসা ও বাজারগামী মানুষ ইউনিয়নের অন্তত ৭টি সড়ক দিয়ে কাঁদা মাড়িয়েই যাতায়াত করে আসছেন। এতে চরম ভোগান্তিতে শিকার হচ্ছে অন্তত ৮ হাজার মানুষ। বিশেষ করে সম্প্রতি অবিরাম বর্ষণে ও ভয়াবহ বন্যার কারণে ওই এলাকার রাস্তা-ঘাটের একাকার হয়ে গেছে। উন্নয়নের দিক দিয়ে দীর্ঘদিন ধরে পিছিয়ে রয়েছে ডেমুশিয়া ইউনিয়নের গ্রামীণ জনপদ। বর্তমান চেয়ারম্যান মাঈন উদ্দিন আহমদ চৌধুরী নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে জনগণের কাছে নির্বাচনী যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল তার আলোকে প্রতিটি ওয়ার্ডকে উন্নয়নের মাধ্যম ঢেলে সাজাতে বিভিন্ন প্রকল্প হাতে নেয়া হয়। প্রকল্পের কাজ শুরুর মুহুর্তে হঠাৎ ভয়াবহ বন্যার তান্ডবে সবকিছুই তছনছ হয়ে যায়।
উপজেলা প্রকৌশলী ও প্রকল্প কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ডেমুশিয়া ইউনিয়নে ২০২২-২৩ অর্থ বছরে প্রায় ২০ লক্ষ টাকার বিভিন্ন গ্রামীণ সড়ক সংস্কার ও এইচবিবি, ফ্লাট সলিং, মাটির সড়ক উন্নয়নের মাধ্যমে সম্প্রসারণ করা হয়েছিল। কিন্তু স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যায় গ্রামীণ সকল সড়কের বেহালদশা পরিণত হয়। বর্তমানে বন্যার কারণে যে সব ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তা নিরুপণ করে পরবর্তীতে দ্রুত প্রদক্ষেপ নেয়ার উদ্যোগ নেয়া হবে বলে সংশ্লিষ্ট দপ্তরের কর্মকর্তারা জানান।
ডেমুশিয়ান গ্রামীণ সড়ক দিয়ে নিয়মিত যাতায়ত করা ভুক্তভোগী স্থানীয় এক শিক্ষক আক্ষেপ করে বলেন, দাসখালী পাড়া সড়কটি দিয়ে প্রতিদিন কর্মস্থল যেতে হয়। বর্তমানে সড়কটির এমনই দশা হয়েছে, জুতা পায়ে দিয়ে চলাচল তো দূরের কথা, খালি পায়ে যাওয়াও কষ্ট সাধ্য হয়ে পড়েছে। সড়কটির দিকে সংশ্লিষ্টদের কোনো ধরণের নজরই নেই। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের যেতে চরম ভাবে দুর্ভোগের শিকার হচ্ছে। প্রশাসনের কাছে দাবি করছি যেন সড়কটি দ্রুত সংস্কার করা হোক।
ডেমুশিয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সোহরাব মোস্তফা লিমন জানান, এই ইউননিয়নের ১ থেকে ৯ নম্বর ওয়ার্ডের অধিকাংশ রাস্তা সংস্কারের অভাবে যাতায়তে অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। প্রতি বছর বর্ষা মৌসুম আসলেই গ্রামের মানুষের হাটা-চলাও বড় দুস্কর। সম্প্রতি সময়ে টানা ভারি বৃষ্টি ও ভয়াবহ বন্যার পানি নিমজ্জিত থাকায় রাস্তার এ করুণদশা পরিণত হয়েছে। দীর্ঘ সময় পার হয়ে গেলেও সংশ্লিষ্ট দপ্তর কোন ধরণের সংস্কারের উদ্যোগ নেয়নি। ফলে সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হচ্ছে। তাছাড়া পরিকল্পিত ভাবে ইউনিয়নে উন্নয়ন না হওয়ার একটাই কারণ প্রশাসনের চরম অবহেলা ও ব্যর্থতা। যার কারণে এই গ্রামীণ জনপদ দীর্ঘদিন ধরে উন্নয়ন থেকে বঞ্চিত এবং অবহেলিত।
ডেমুশিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মঈনউদ্দিন আহমদ চৌধুরী বলেন, ইউনিযনের বেশির ভাগ সড়ক অত্যান্ত নাজুক অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে। গ্রামীণ জনপদের চলাচলের জনগুরুত্বপূর্ণ রাস্তা গুলো দ্রুত মংস্কার কিংবা মেরামত করা হলে মানুষের কিছুটা হলেও দুর্ভোগ লাগব হবে। বিশেষ করে দাসখালী পাড়া, গান্ধিরপাড়া, তেচ্ছিপাড়া, ছয়কুড়িটিক্কা গ্রামের রাস্তা গুলো টানা ভারি বর্ষণ ও বন্যার কারণে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। এসব সড়ক দ্রুত সংস্কারের জন্য স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) চকরিয়া উপজেলা প্রকৌশলীকে বলা হয়েছে। যতদ্রুত সম্ভব এ সড়কটি সংস্কার ব্যাপারে উদ্যোগ নেওয়া হবে।
চকরিয়া উপজেলা প্রকৌশলী (এলজিইডি) কর্মকর্তা শাফায়াত ফারুক চৌধুরী জানান, ডেমুশিয়া ইউনিয়নের জনগুরুত্বপূর্ণ সড়ক গুলো বন্যা পরবর্তী
সরেজমিন পরিদর্শন ও সার্ভে করা হয়েছে। খুব শিঘ্রই প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে বলে তিনি জানান।
১১ ঘন্টা ৪৯ মিনিট আগে
১১ ঘন্টা ৫১ মিনিট আগে
১২ ঘন্টা ২৭ মিনিট আগে
১২ ঘন্টা ৩৩ মিনিট আগে
১৩ ঘন্টা ৪৫ মিনিট আগে
১৪ ঘন্টা ৪২ মিনিট আগে