দরিদ্র অসহায় মানুষের মাঝে ইফতার সামগ্রী বিতরণ করল সাতকানিয়া - লোহাগাড়া মানবিক ফাউন্ডেশন। কোম্পানীগঞ্জে খালেদা জিয়ার রোগ মুক্তি ও ব্যারিস্টার মওদুদের মৃত্যুবার্ষিকীতে দোয়া ও ইফতার মাহফিল ‘গালি’ নিয়ে দেশের আইনে কী আছে? আমেরিকান কনক্রিট ইন্সটিটিউটের পক্ষ থেকে শতাধিক পথশিশু ও দুস্থদের মাঝে ইফতার বিতরণ প্রশাসনের ঢিলেঢালা আচরণে দুষ্কৃতকারীরা আশকারা পাচ্ছে : রিজভী জবিসাসের ইফতারে এক ছাতার নিছে সব ছাত্র সংগঠন ডাঃ মকবুল হোসেন এতিমখানা ও নূরানী হাফিজিয়া মাদ্রাসায় ইফতার ও দোয়া মাহফিল লোহাগড়ায় নিহত বিএনপি,যুবদল,ছাত্রদল নেতাদের স্মরণে স্মরণসভা ও ইফতার মাহফিল অনিষ্ঠত কালিগঞ্জ নলতা যুবককে গলা কেটে হত্যাচেষ্টার মূল আসামিসহ দু’জন গ্রেফতার কোম্পানীগঞ্জ সিরাজপুর ইউনিয়নে জামায়াতে ইসলামী’র উদ্যোগে ইফতার মাহফিল অনুষ্ঠিত দখলদারদের লোভের শিকারে খুলনা বিভাগের ৩৭টি নদী মৃতপ্রায় লাখো রোহিঙ্গার সঙ্গে ইফতারে জাতিসংঘ মহাসচিব আশাশুনিতে রোজা ও যাকাতের তাৎপর্য শীর্ষক সেমিনার অনুষ্ঠিত নাগেশ্বরীতে যায়দিনের ডিক্লারেশন বাতিলের প্রতিবাদে মানববন্ধন কমলগঞ্জে একতা সমাজ কল্যাণ পরিষদের ইফতার সামগ্রী পেয়ে খুশি শতাধিক পরিবার নাগরপুরে তামাক ক্ষেত থেকে ১ মহিলার মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ কেন্দ্রীয় ভাইস-চেয়ারম্যান নার্গিস বেগমকে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানালেন শার্শা উপজেলা বিএনপি কক্সবাজারে জলবায়ু উদ্বাস্তু পুনর্বাসন প্রকল্প পরিদর্শনে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস লাখাইয়ে সাংবাদিক এমএ ওয়াহেদ এর মায়ের ইন্তেকাল, বিভিন্ন মহলের শোক। জয়পুরহাটে অপ চিকিৎসায় পঙ্গুত্ববরণের অভিযোগে চিকিৎসকের বিরুদ্ধে সংবাদ সম্মেলন

শেঁকড়ের সন্ধানে ভারত থেকে বাংলাদেশে চিত্রশিল্পি অনিন্দ্য রায়

পূর্ব পুরুষদের জন্ম ও আবাসস্থল দেখতে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ থেকে থেকে নলছিটি এসেছিলেন অনিন্দ্য রায় নামে এক চিত্র শিল্পী। ঐতিহাসিক নলছিটির একসময়ে বনেদী ব্যবসায়ী স্বদেশপ্রেমী কেষ্ট মোহন নন্দীর। চার নম্বর মেয়ে প্রতিমা নন্দীর ছেলে অনিন্দ্য রায় স্বাধীনতার ৫২ বছর পর শেকড়ের খোঁজ করতে এসেছিলেন নলছিটিতে। 

নলছিটি এসে মা, দাদু-দিদার স্মৃতি বিজরিত স্থানগুলো ঘুরে চোখের জলে পূর্ব পুরুষদের পরিচিত স্বজনের আবেগ আপ্লুত করে গেলেন।

তিনি আমাদের জানান ছোটবেলা থেকে মা, মাসী ও দিদাদের কাছে নলছিটির গল্প শুনেই হৃদয়ের গভীরে লালন করেছি নলছিটিকে। আর মনে মনে ভেবেছি সুযোগ পেলেই ঘুরতে আসবো স্বজনদের ফেলে যাওয়া স্মৃতির নলছিটিতে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পরিচয় হয় নলছিটির অপূর্ব কান্তি দাস'র সাথে। তার আমন্ত্রণ পেয়েই ছুটে আসি দাদুর স্মৃতি বিজরিত নলছিটিতে। 

মায়ের মুখে গল্প শুনেছি ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে ভারতে থাকা সবাই দাদুকে নলছিটি ছেড়ে কোলকাতায় যেতে বললেও তিনি তার প্রিয় বাংলাদেশ ও নলছিটিকে ছেড়ে যাননি। পাক হানাদার বাহিনীকে রুখতে  মুক্তিযোদ্ধাদের সংগঠিত করে নলছিটির সুরক্ষার জন্য কাজ করছিলেন। তার বিপুল বিত্তবৈভব নিয়ে ইচ্ছে করলেই চলে যেতে পারতেন কোলকাতায়। সেটা না করে থেকে গিয়েছিলেন নলছিটিতে। 

১৯৭১ সালের ১১ মে তারিখে দাদু কেষ্ট মোহন নন্দীসহ নলছিটির প্রভাবশালী ধরনাঢ্য অনেককেই শান্তি আলোচনার কথা বলে থানায় ডেকে নিয়ে যায়। আলোচনার নাম করে তাদেরকে ১১ ও ১২ মে থানায় আটকে রাখে। ১৩ মে তামাক পট্টির খালের মাথায় নিয়ে দড়ি দিয়ে বেঁধে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। মা-মাসীদের মুখে দাদুর সেই দেশপ্রেমের কথা শুনেই নলছিটি আসার অদম্য ইচ্ছে জাগে হৃদয়ে। নলছিটি এসে অপুর পরিবারের সহযোগিতায় পরিচিত হতে পেরেছি মা-দাদুকে চিনতেন এমন অনেকের সাথেই। পরিচয় হয় মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশ গ্রহন করা বেশ কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে। নলছিটির মানুষদের আন্তরিকতা ও ভালোবাসা আমাকে মুগ্ধ করেছে। দাদুর সাথে শহীদ হওয়া দেশপ্রেমী পরিবার গুলোর সদস্যদের সাথে কথা হয়েছে। তার মধ্যে শহীদ দশরথ কুন্ডের ছেলে দিপক কুন্ড, নাতি রাজীব কুন্ড, শহীদ ভাসান পোদ্দার'র ছেলে নাথুরাম পোদ্দার  নাতি অরবিন্দ পোদ্দার তপু, শহীদ কার্তক ব্যানার্জির মেয়ে চায়না ব্যানার্জি, শহীদ শিক্ষক শচীন্দ্রনাথ দের ছেলে কালীপ্রসাদ দে, শিবু প্রসাদ দে, দীপক দে, যুদ্ধাহত ক্ষিতিশ দত্ত'র নাতি বিদুৎ দত্ত সহ অনেকের সাথে। 

পরিচয় হয়েছে নলছিটি থানার অফিসার ইনচার্জ মো.মুরাদ আলী, নলছিটি পৌরসভার মেয়র বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল ওয়াহেদ খান, নলছিটি থানা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডের সাবেক ডেপুটি কমান্ডার তাজুল ইসলাম চৌধুরী দুলাল, নলছিটি প্রেসক্লাবের সভাপতি এনায়েত করিম, সহ সভাপতি ইউসুফ আলী তালুকদার, নলছিটি গার্লস স্কুল অ্যান্ড কলেজের প্রধান শিক্ষক জলিলুর রহমান আকন্দ, শহীদ মুক্তিযোদ্ধার সন্তান যুব উন্নয়ন অফিসার মোহম্মদ মাহমুদ আলম জোমদ্দার, নলছিটি পৌরসভার সাবেক প্যানেল মেয়র আলমগীর হোসেন আলো, নাসির খান, সাংবাদিক শরিফুল ইসলাম পলাশ, সাইফুল ইসলামসহ আরও অনেক সাংবাদিক ও অসংখ্য ভালো মানুষের সাথে।

নলছিটি এসে সব থেকে কি ভালো লেগেছে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন মা এবং দাদুর স্মৃতি বিজরিত বাড়িটির কাছে গিয়ে মনে হলো যেন আমার অতীত খুজে পেয়েছি। দাদুর খননকরা পুকুরটি ভরাট করে ফেলা হয়েছে। গোলাঘর সুগন্ধা নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। তারপরও দাদুর একটা স্মৃতি এখনও অম্লান হয়ে আছে। যে ঘরটিতে সুপারি রং করা হতো সেটি আজও কালের স্বাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। সেখান থেকে এক টুকরো ইট আর কিছুটা মাটি সংগ্রহ করে নিয়েছি কোলকাতা নিয়ে যাওয়ার জন্য। সুগন্ধা নদীর তীরে দাঁড়িয়ে চোখের জলে স্মরণ করেছি পূর্ব পুরুষদের ফেলে যাওয়া ইতিহাস আর ঐতিহ্য। এর সাথে ঘুরতে গিয়েছিলাম নলছিটির কুলকাঠি ইউনিয়নের ঐতিহাসিক কাপুড়িয়া বাড়ি পরিদর্শনে। সেখান যে ঐতিহাসিক নিদর্শন আছে তা সরকারি ভাবে রক্ষণাবেক্ষণ করা হলে ওটি হতে পারে একটি পর্যটন কেন্দ্র। ওই ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আক্তারুজ্জামান ভাইকে অনুরোধ করে এসেছি যাতে নিদর্শন গুলো রক্ষার জন্য একটা কিছু করেন। সাংবাদিক মিলন দা এবং ডিবিসি নিউজের ঝালকাঠি জেলা প্রতিনিধি অলোক সাহাকে প্রতি অনুরোধ করেছি ঐতিহাসিক এই বাড়িটিকে নিয়ে একটি প্রতিবেদন তৈরি করে সরকারের দৃষ্টিতে আনার জন্য। কাপুড়িয়া বাড়িটি পর্যটন কেন্দ্র হলে বিভিন্ন প্রান্ত থেকে একদিন হাজার হাজার মানুষের ভিড় জমবে এখানে।

তবে সব থেকে ভালো লেগেছে নলছিটির সব মানুষের ভালোবাসা এই ভালোবাসা ও স্মৃতির টানে আবার হয়তোবএকদিন ফিরে আসবো নলছিটিতে।

তিনি বলেন ভালো লাগার পাশাপাশি একটা কষ্ট আছে হৃদয়ে নলছিটির মানুষ এতো ভালো এবং এখানে অনেক প্রভাবশালী মানুষ থাকা সত্ত্বেও মহান মুক্তিযুদ্ধে আত্মত্যাগ করা সেই অকুতোভয় মানুষ গুলো আজও স্বীকৃতি না পাওয়ার বিষয়টি। কারন বদ্ধ ভূমির শহীদ বেদিতে সেইসব দেশপ্রেমিকদের নাম শহীদ হিসেবে লেখা থাকলেও সরকারি ভাবে তাদের স্বীকৃতি দেয়া হয়নি। আমি যেনে কষ্ট পেয়েছি মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকায় ওইসব বীর শহীদদের নাম নেই। সবার কাছে অনুরোধ থাকবে যে মানুষ গুলো সেদিন তাদের সম্পদের পাহাড় নিয়ে ভোগবিলাসে মত্ত থাকার জন্য দেশ ছেড়ে না গিয়ে বাংলাদেশের স্বাধীনতার জন্য প্রাণ উৎসর্গ করেছিলেন তাদের জন্য কিছু একটা করবেন। নলছিটির সকল মানুষের ভালোবাসার প্রতি তিনি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন।
Tag
আরও খবর