কালিগঞ্জের কৃষ্ণনগর ইউনিয়ন জামায়াত ইসলামীর ইফতার মাহফিল ও দোয়া অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত কেন্দ্রীয় বোর্ড পরীক্ষায় সারা বাংলাদেশে 'আল ইসরা মাদরাসা'র ২য় স্থান অর্জন পীরগাছায় কর্মরত সাংবাদিকদে সম্মানে জামায়াতের ইফতার ও জায়নামাজ বিতরণ শেখ হাসিনাসহ ৭৩ জনের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা আজ পবিত্র লাইলাতুল কদর রাজবাড়ীতে রাজবাড়ী জেলা বিএনপি ও রাজবাড়ী পৌর বিএনপির ইফতার ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত ঢাকা কলেজ হাফেজ শিক্ষার্থীদের রমজানে তারাবি পড়ানোর প্রশান্তিমাখা অনুভূতি বগুড়ার দুপচাচিয়া উপজেলায় আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর মাঝে ঈদ সামগ্রী বিতরণ !!! মধুপুরে বিএনপির চেয়ারপার্সনের রোগমুক্তি কামনায় দোয়া ও ইফতার মাহফিল আশাশুনিতে যথাযোগ্য মর্যাদায় মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস পালন বুধহাটায় বাস-ইঞ্জিন ভ্যান সংঘর্ষে ভ্যান চালক নিহত নড়িয়ায় চরলাউলানী সমাজ কল্যাণ ফাউন্ডেশনের ঈদ উপহার বিতরণ বানারীপাড়ার ৫ ইউনিয়নে জেলেদের মাঝে ভিজিএফ চাল বিতরন সুন্দরবন উপকূলে জেলেদের জালে মিলছেনা মাছ, নিরানন্দে কাটবে ঈদ লাখাইয়ে প্রতি বছরের ন্যায় গঙ্গাজলে (বেলেশ্বরী) পূজা অনুষ্ঠিত। এশিয়ার দেশগুলোর ভাগ্য একে অপরের সঙ্গে জড়িত : প্রধান উপদেষ্টা রেমিট্যান্সে নতুন ইতিহাস, ২৬ দিনে এলো ৩ বিলিয়ন ডলার যমুনা সেতুতে ২৪ ঘণ্টায় দুই কোটি ৭৯ লাখ টাকা টোল আদায় মেয়র ঘোষণা হলেও শপথ নিয়ে সংশয়, যা বললেন ইশরাক অসহায় আট শত পরিবারের ঈদের হাসি ফুটিয়েছে হোসাইন ইয়ুথ ফাউন্ডেশন

বিশ্বায়ন প্রক্রিয়া আশীর্বাদ না কি অভিশাপ: বাংলাদেশ প্রেক্ষিত

দেশচিত্র নিউজ ডেস্ক

প্রকাশের সময়: 09-12-2023 05:18:53 am

◾মো. আকিব হোসাইন : ‘বিশ্বায়ন’ ধারণাটি অতীতে থাকলেও বর্তমানে অর্থাৎ একবিংশ শতাব্দীর বিশ্বব্যবস্থায় এটি একটি ব্যাপক গুরুত্বপূর্ণ ও আলোচিত বিষয় হিসেবে স্থান লাভ করেছে। তবে এ বিশ্বায়ন প্রক্রিয়াটি শুধু অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে নয়, বরং তা এখন সামাজিক, রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় বিষয়ে ব্যাপক প্রভাব বিস্তার করেছে। আর তা সম্ভব হয়েছে প্রযুক্তির অবাধ বিস্তৃতির মাধ্যমে। জানা গেছে, মার্শাল ম্যাকলুহান সর্বপ্রথম ‘বিশ্বায়ন’ ধারণাটি প্রদান করেন। তিনি এটার ধারণা দিতে গিয়ে সমগ্র বিশ্বকে একটি গ্রামে পরিণত করেছিলেন। এতে করে সমগ্র বিশ্বব্যাপী তিনি মানুষের মাঝে সমাদৃত হয়েছিলেন। বিশ্বায়ন বলতে সাধারণত প্রযুক্তির অবাধ বিস্তৃতির মাধ্যমে প্রতিটি দেশের মাঝে আন্ত:যোগাযোগ বৃদ্ধি, সীমানামুক্তকরণ কিংবা আন্তর্জাতিকীকরণকে বুঝায়।


বাংলাদেশ তৃতীয় বিশ্বের একটি উন্নয়নশীল দেশ। এটি এশিয়া মহাদেশের দক্ষিণাঞ্চলে অবস্থিত। এ দেশটিতেও বিশ্বায়নের ব্যাপক হাওয়া লেগেছে। ফলে দেশের অর্থনৈতিক, সামাজিক, রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় ক্ষেত্রেও কিঞ্চিৎ পরিবর্তন দৃশ্যত হয়েছে। আন্তর্জাতিকতার এ যুগে বিশ্বের প্রতিটি দেশকে অন্য দেশের সাথে তাল মিলিয়ে চলতে হয়। যার অন্যতম মাধ্যমে হলো কূটনৈতিক দক্ষতা ও বৈদেশিক নীতিতে শক্তিশালী হওয়া। মনে রাখতে হবে, যে দেশের কূটনীতি ও পররাষ্ট্রনীতি বা বৈদেশিক নীতি যত শক্তিশালী, সে দেশের সাথে বিশ্বের প্রতিটি দেশের উঠাবসাও তত সমৃদ্ধ। যাইহোক, বিশ্বায়নের এ যুগে বাংলাদেশও বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে চলছে। তবে বিশ্বায়ন প্রক্রিয়া বাংলাদেশের জন্য কি আশীর্বাদ না কি অভিশাপ? এ প্রশ্ন থেকে যায়। সত্যি কথা বলতে, বিশ্বায়নের প্রভাবে বাংলাদেশের বাণিজ্যের বিস্তৃতি ঘটেছে। বাংলাদেশের তৈরিকৃত পোশাক, কৃষিজাত পণ্য (পাট, চা, ইলিশ, হিমায়িত চিংড়ি ইত্যাদি) ও দক্ষ শ্রম বিদেশে রপ্তানি করে প্রচুর অর্থনৈতিক উন্নয়ন সাধিত হয়েছে। এতে বিদেশের বাজারে বাংলাদেশের কদর বাড়ছে। বাংলাদেশ একটি উন্নয়নশীল দেশ হলেও বিশ্বের উন্নত কিংবা সমৃদ্ধ দেশে বাংলাদেশের তৈরিকৃত দ্রব্য বা সেবা সহজে পৌঁছে যাচ্ছে। এতে আমাদের অর্থনৈতিক সক্ষমতা অর্জন হচ্ছে।


আবার, এ বিশ্বায়ন বাংলাদেশের জন্য অর্থনৈতিক সক্ষমতা অর্জনের হাতিয়ার হলেও এ প্রক্রিয়া আমাদের জন্য অভিশাপ হিসেবেও দাঁড়িয়ছে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, বিশ্বায়নের ফলে সীমানামুক্তকরণ কিংবা আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে উদারীকরণ ঘটায় উন্নত বিশ্বের পণ্য বা দ্রব্য দেশের বাজারে অনায়াসে প্রবেশ করছে। এতে দেখা গেছে, দেশের অর্থনৈতিক বাজার উন্নত বিশ্বের দখলে চলে যাচ্ছে। আর দেশের বাজারের বৃহৎ অংশে বড়ো বড়ো দেশ বা বহুজাতিক সংস্থার পণ্যগুলো সহজে সয়লাব করেছে। এতে করে আমাদের দেশে উৎপাদিত পণ্যের বাজার নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। নিজ দেশে তৈরিকৃত পণ্যের কোনো বাজার তৈরি হচ্ছে না। দেশীয় প্রতিষ্ঠানের পণ্যের বিক্রয় কমে যাওয়ায় দেশীয় উদ্যোক্তারা বার বার হতাশ হয়ে যাচ্ছেন। এতে দেখা যায়, অনেকে কর্মসংস্থান হারিয়েছে, শিল্পের উৎপাদন কমে গেছে, শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ হয়ে যাচ্ছে, দেশে বেকারত্ব চক্রবৃদ্ধি হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। তাছাড়া বিদেশি পণ্যের অবাধ প্রবেশের ফলে দেশীয় অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠানগুলো হুমকির সম্মুখীন হচ্ছেন। দেশীয় হস্তশিল্পের তৈরিকৃত পণ্যের চাহিদা কমে যাচ্ছে। বিশেষ করে, বিশ্বায়নের ফলে বিদেশি অবৈধ দ্রব্যের আমদানি বাড়ছে। এসব অপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের ছড়াছড়িও এদেশের বাজার ব্যবস্থায় এক ধরনের অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি করেছে।  


শুধু অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে নয়, দেশের সামাজিক, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রেও বিশ্বায়নের অতি প্রভাব পড়েছে। উন্নত বিশ্বের সাংস্কৃতিক প্রক্রিয়া এখন আমাদের দেশে ছড়িয়ে পড়ায়, আমাদের নিজস্ব ইতিহাস ও সংস্কৃতি ভুলে যাচ্ছি। বিদেশি সংস্কৃতির মাত্রাতিরিক্ত প্রভাবে দেশীয় সংস্কৃতি তার স্বকীয়তা হারিয়ে ফেলেছে। বিদেশি সংস্কৃতি এদেশের সংস্কৃতিকে গ্রাস করেছে। তাছাড়া এদেশের ধর্মীয় ক্ষেত্রেও বিশ্বায়ন প্রক্রিয়ার ব্যাপক প্রভাব বিস্তার করেছে। ধর্মীয় রীতিনীতিতেও পরিবর্তন আনা হচ্ছে। মানুষ এখন ধর্মীয় রীতিনীতি ভুলে গিয়ে আধুনিকতায় ভাসছে। এসব আধুনিকতা আমাদের বর্তমান প্রজন্মের জন্য আশীর্বাদ বলা হলেও সত্যিকারার্থে এদেশের ইতিহাস, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির জন্য মারাত্মক হুমকিসরূপ।


বিশ্বায়ন কিংবা আধুনিকতা যতোটা আমাদের অনূকূলে, তারচেয়ে বেশি আমাদের প্রতিকূলে। কেননা, এর প্রভাব ও প্রতিক্রিয়া আমাদের দেশের বাজার ব্যবস্থায় ও অন্যান্য ক্ষেত্রেও দৃশ্যমান। আমাদের আচার-আচরণ, রীতি-নীতি, পোশাক-আশাক কিংবা ভাষার ক্ষেত্রে বিশ্বায়ন প্রক্রিয়া নেতিবাচক প্রভাব তৈরি করছে। যদিও বিশ্বায়নের মাধ্যমে মানুষের জীবনমানের পরিবর্তন হয়েছে, তথ্য-প্রযুক্তির বিস্তৃতি ঘটেছে, ব্যবসা, বাণিজ্য ও বিনিয়োগ অধিকহারে বৃদ্ধি পেয়েছে, শ্রম দক্ষতা অর্জন হচ্ছে, সাংস্কৃতিক পরিবর্তন হয়েছে, যোগাযোগ ব্যবস্থার অসীম পরিবর্তন হয়েছে বলা যায়। কিন্তু উন্নয়নশীল বিশ্বের জন্য (বিশেষ করে বাংলাদেশের জন্য) তা অনেকটা নেতিবাচক প্রভাব হিসেবে কাজ করছে। যার ধরুন এদেশের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র শিল্পের ধ্বংসসাধন হয়েছে। বিশ্বের বড়ো বড়ো কোম্পানির উৎপাদিত পণ্যের সাথে কোনোভাবেই প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে পারছে না। নিজ দেশেই নিজেদের পণ্যের অবাধ প্রবেশে এক ধরণের বাঁধা সৃষ্টি হচ্ছে। সর্বোপরি বলা যায়, বিশ্বায়ন প্রক্রিয়ার যেমন ইতিবাচক দিক রয়েছে, ঠিক তেমনি এর ব্যাপক নেতিবাচক দিকও রয়েছে। আর তা বাংলাদেশের জন্য অনূকূলের চেয়ে প্রতিকূলে বেশি।


মো. আকিব হোসাইন

প্রাবন্ধিক ও সংগঠক

আরও খবর