◾ শাহাদাত হোসাইন : আপনাকে যদি জিজ্ঞেস করা হয় কোন গ্রুপের রক্ত দুর্লভ, তাহলে আপনার উত্তর হবে হয়তো যেকোনো নেগেটিভ রক্তের গ্রুপ। কিন্তু আজ এমন একটি বিরল রক্তের গ্রুপ সম্পর্কে লিখছি যার নামই হয়তো অনেকের জানা নেই।
বোম্বে ব্লাড গ্রুপ আবিষ্কৃত হয় ১৯৫২ সালে। প্রতি দশ লক্ষ মানুষের মধ্যে মাত্র চারজনের এই গ্রুপ হয়ে থাকে। “দা ল্যান্সেট” নামক এক গবেষণাপত্রে এই রক্তের গ্রুপ সম্পর্কে ধারণা প্রদান করেন ভারতীয় ডাঃ ওয়াই.এম. ভেন্ডে, ডাঃ সি.কে. দেশপান্ডে, ডাঃ এইচ.এম. ভাটিয়া। ভারতের বোম্বে শহরে প্রথম শনাক্ত হওয়ায় ডাঃ ভেন্ডে এর নামকরণ করেন বোম্বে গ্রুপ। তবে চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় একে এইচএইচ রক্তের গ্রুপে বলা হয়।
সাধারণত আমরা এবিও সিস্টেমে রক্তের গ্রুপ নির্ণয় করে থাকি। এই পদ্ধতিতে নির্ণীত গ্রুপগুলোর মধ্যে সবগুলোতেই এইচ এন্টিজেন বিদ্যমান থাকে। কিন্তু বোম্বে গ্রুপে এইচ এন্টিজেন বিদ্যমান থাকে না।
মূলত বোম্বে হলো ও পজেটিভ বা ও নেগেটিভ এর একটি বিরল রূপ। সাধারণ পদ্ধতিতে পরীক্ষা করলে বোম্বে গ্রুপ ও গ্রুপের মতো আচরণ করে। ও গ্রুপের রক্তের সাথে বোম্বের মূল পার্থক্য হচ্ছে এর মধ্যে এইচ এন্টিজেনের অনুপস্থিতি। এন্টি-এইচ লেকটিন ব্যবহারের মাধ্যমে এইচ অ্যান্টিজেনের উপস্থিতি নির্ণয় করা যায়। আরএইচ ফ্যাক্টর পজিটিভ বা নেগেটিভ হলে অন্যান্য রক্তের গ্রুপের মতো বোম্বে পজিটিভ বা বোম্বে নেগেটিভও পারে।
বোম্বে গ্রুপধারী ব্যক্তি বোম্বে ব্যতীত অন্য কোন গ্রুপের রক্ত গ্রহণ করতে পারবেন না। ভুলবশত ও গ্রুপের রক্ত মনে করে রক্ত প্রদান করা হলে রক্তগ্রহীতা হিমোলাইটিক ট্রান্সফিউশন হয়ে মৃত্যুবরণ করেন পারেন। এ কারণে ক্রস ম্যাচিংয়ের ক্ষেত্রে সতর্কতা অবলম্বন করা এবং সন্দেহ হলেই বোম্বে কি না পরীক্ষা করে নেয়া একান্ত প্রয়োজন।
বাংলাদেশের সর্ব প্রথম ১৯৭৫ সালে এই রক্তের গ্রুপ শনাক্ত হয়। ২০২২ সালের এক প্রতিবেদন অনুযায়ী বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত ৪০ জনকে শনাক্ত করা সম্ভব হয়েছে। তবে ও গ্রুপের ব্যক্তিদের পরীক্ষা করলে এর সংখ্যা আরো বৃদ্ধি পেতে পারে।
সম্প্রতি রাজধানীর অ্যাপোলো হাসপাতালে বোম্বে গ্রুপের রক্তদান সম্পন্ন হয়েছে। তানিয়া সুলতানা নামে এক রোগীর জন্য রক্তদাতার সন্ধানে দিশেহারা ছিলেন তার স্বজনেরা। খবর পেয়ে তৎক্ষনাৎ বাঁধন (স্বেচ্ছায় রক্তদাতাদের সংগঠন), ঢাকা সিটি জোনের সাধারণ সম্পাদক শাকিল আহমেদ তার পরিচিত নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন রক্তদাতা কে দিয়ে রক্তদান সম্পন্ন করান।
বিভিন্ন সময়ে এরকম বিরল গ্রুপের রক্তদানের নজির থাকলেও এখন পর্যন্ত দেশে বোম্বে গ্রুপ ভিত্তিক কোন উল্লেখযোগ্য সাংগঠনিক তৎপরতা লক্ষ্য করা যায়নি। তাই রক্তদান সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সংগঠনের এ বিষয়ে জনসচেতনতা মূলক কার্যক্রম পরিচালনা করা প্রয়োজন। জরুরী মুহূর্তে রক্তদাতা খুঁজে পেতে মজবুত নেটওয়ার্ক গড়ে তোলার কোনো বিকল্প নেই। অন্যথায় বিপদকালীন রক্তদাতা খুঁজে পাওয়া দুষ্কর হয়ে পড়বে।
লেখক: শাহাদাত হোসাইন
সভাপতি
বাঁধন (স্বেচ্ছায় রক্তদাতাদের সংগঠন)
ঢাকা কলেজ ইউনিট
১ দিন ১৬ ঘন্টা ৩৭ মিনিট আগে
১ দিন ১৬ ঘন্টা ৪৩ মিনিট আগে
৫ দিন ১৫ ঘন্টা ৫৭ মিনিট আগে
৫ দিন ২৩ ঘন্টা ৪১ মিনিট আগে
৭ দিন ৯ ঘন্টা ৪৭ মিনিট আগে
৭ দিন ২০ ঘন্টা ৩৭ মিনিট আগে
৯ দিন ১৪ ঘন্টা ২১ মিনিট আগে
১০ দিন ১ ঘন্টা ২৬ মিনিট আগে