ঈদ মানে আনন্দ , ঈদ মানে খুশি। ঈদ মানে বন্ধুদের সাথে আনন্দে মেতে ওঠা, হাজারো ব্যস্ততার মাঝে পরিবারকে একটু সময় দেয়া। দীর্ঘ এক মাস সিয়াম সাধনার পর দুয়ারে কড়া নাড়ে ঈদুল ফিতর। আর সেই ঈদ নিয়ে সবার অধীর আগ্রহ, তবে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের উৎসাহ-উদ্দীপনা একটু বেশিই থাকে। কারণ, ভর্তির পর থেকেই একজন শিক্ষার্থীকে বছরের বেশিরভাগ সময়ই পরিবার, বন্ধু-বান্ধব থেকে দূরে থাকতে হয়। বিভিন্ন ব্যস্ততার কারণে হর-হামেশাই বাড়ি ফেরা হয়ে ওঠে না। এত ব্যস্ততার মাঝে বছরের সবচেয়ে দীর্ঘ ছুটি মেলে এই ঈদে। আর এই ছুটিকে কাজে লাগিয়ে পরিবার, বন্ধু-বান্ধব ও আত্মীয়-স্বজনদের সাথে সময় কাটাতে বাড়ি ফিরে এসব শিক্ষার্থী। শিক্ষার্থীদের ঈদ ভাবনা তুলে ধরেছেন দৈনিক দেশচিত্রের প্রতিনিধি সাকিবুল হাছান
বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে ঈদের অনন্য মাধুর্য
বিশ্ববিদ্যালয় জীবন যখন ঈদের আলোয় আলোকিত হয়, তখন সৃষ্টি হয় এক অনন্য অনুভূতির। দেশের কোণ-কোণ থেকে আসা শিক্ষার্থীরা এই পবিত্র উৎসবে এক অপূর্ব সংহিতার অভিজ্ঞতা লাভ করে। ক্যাম্পাসের দৈনন্দিন ব্যস্ততার মধ্যে ঈদ আনে এক বিশেষ সান্ত্বনা। অনেকের বাড়ি দূরে থাকা দরুন ঈদ ক্যাম্পাসে করতে হয়। দূরে থাকা সত্ত্বেও পরিবারের সঙ্গে ভিডিও কলে দেখা, আদর-যত্ন আদান-প্রদান - এর মধ্যে লুকিয়ে আছে অসীম ভালোবাসার অনুভূতি।
বিভিন্ন ধর্ম, সংস্কৃতি এবং পটভূমিকার শিক্ষার্থীরা এক সঙ্গে ঈদ পালন করে, গড়ে তুলে পারস্পরিক শ্রদ্ধা ও ভালোবাসার এক অনন্য বন্ধন। এখানে ঈদ কেবল একটি ধর্মীয় পালন নয়, বরং এটি আত্ম-মর্যাদা, পরোপকার এবং মানবিক মূল্যবোধের এক অনন্য প্রকাশ। শিক্ষার্থীরা এই সময়ে বুঝতে পারে যে মানবতা হল সবচেয়ে বড় ধর্ম, সবচেয়ে বড় উৎসব।
ফারহানা আফসার মৌরী,
শিক্ষার্থী, ভূতত্ত্ব ও খনিবিদ্যা বিভাগ, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়
ঈদ মানেই সাম্যের শিক্ষা
দীর্ঘ এক মাস সিয়াম সাধনার পর ঈদ আসে আমাদের মাঝে আনন্দ ও উল্লাস নিয়ে। আমরা অনপকেই আছি যারা বাড়ি থেকে অনেক দূরে থাকি তাদের ঈদ সপ্তাহ খানেক আগেই চলে আসে। বিশেষ করে যখন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাড়ি যাওয়ার প্রস্তুতি। তবে বর্তমান পরিস্থিতিতে নিরাপত্তা নিয়ে কিছুটা শংকিত। কারণ দেশে হত্যা, ছিনতাই, ধর্ষণের মতো ঘটনা ঘটছে অহরহ। তবে নতুন বাংলাদেশে নিরাপদ পরিবেশে কোনো রকম অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি ছাড়াই মানুষ যেনো ঈদ উৎযাপন করতে পারে সেই প্রত্যাশা থাকবে। ঈদুল ফিতর তথা রমজান আমাদেরকে সাম্যের শিক্ষা দেয়। আমরা সবরকম হিংসা-বিদ্বেষ ভুলে গিয়ে ঈদুল ফিতর এর শিক্ষা ধারণ করে সাম্য ও সম্প্রীতির বাংলাদেশ গড়ে তুলবে তরুণ প্রজন্ম সেই প্রত্যাশা রাখছি।
মোমিতা আক্তার
ইডেন মহিলা কলেজ, অনার্স ৩য় বর্ষ
ঈদ: শৈশবের সরলতা থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিণতিতে
শৈশবের ঈদ ছিল আনন্দের সরলতম রূপ—নতুন জামা, ঈদসালামি, বন্ধুদের সঙ্গে আনন্দ ভাগ করে নেওয়া—এই সবই ছিল ঈদের সবচেয়ে সরল ও সরস অনুভূতি। ঈদের সকালে পরিবারের বড়দের থেকে সালামি নেওয়া, বাড়ি বাড়ি গিয়ে খুশি ভাগ করা—এগুলো ছিল ছোটবেলার ঈদের বিশেষত্ব। ঈদ তখন ছিল সরল, আনন্দমুখর এবং শুধুই খুশির উৎসব।
কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ে এসে ঈদের অনুভূতি অনেকটাই বদলে গেছে। এখন ঈদ মানে একদিকে পরিবারের সঙ্গে সময় কাটানো, অন্যদিকে কিছু দায়িত্ব অনুভব করা। ছোটবেলার সেই আনন্দের বদলে বিশ্ববিদ্যালয় ঈদ আসে কিছু চিন্তা, পরিকল্পনা এবং পরিবারকে সাহায্য করার দায়িত্ব নিয়ে। তবে শৈশবের সরল আনন্দ এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিণত অনুভূতি—দুইয়ের মিশেলে ঈদের আসল অর্থ ফুটে ওঠে। এই অনুভূতিটা সময়ের সাথে পরিণত হয়, তবে কখনো কমে না।
জোলেখা আক্তার জিনিয়া
অর্থনীতি বিভাগ (২৩-২৪)
ইডেন মহিলা কলেজ
ঈদে মিলেমিশে হোক উদযাপন
আমার কাছে ঈদ মানে একটি কোলাহল-পূর্ণ ব্যাস্ত শহর ছেড়ে বাড়িতে ফেরা । ঈদ মানে আম্মার হাতের খিচুরি আর গরুর মাংস । এলাকার সেই স্মৃতিবিজড়িত মসজিদে সবাই মিলে একসাথে নামাজ পড়া । নামাজ শেষে আব্বুকে জড়িয়ে ধরার সুযোগটাও মিস করা । আমার সেই যৌথ পরিবারের সকলের থেকে সালামি আদায় করা এরপর কাজিন'রা মিলে কে বেশি সালামি পাইলো কার ড্রেসটা বেশি সুন্দর হলো সেটা নিয়ে নানান তর্ক বিতর্ক করা ।
ঈদ মানে সমাজ , ঈদের দিন দুপুরবেলা সমাজ-প্রধানের বাড়িতে বিভিন্ন রকম শিরনি নিয়ে যাওয়া সমাজের সবাই একসাথে বসে শিরনি খাওয়া, গল্প করা এই ব্যাপারটি আমার ঈদকে অনেক বেশি স্পেশাল করে তুলে । ঈদের বিকেলে পুরনো সেই বন্ধুদের সাথে ঘুরতে বের হওয়া, আড্ডা দেওয়া । ঈদ মানেই একাডেমি প্যারা আমার জীবনে এমন কোন ঈদ আসেনি যে ঈদটা সিলেবাস, এসাইনমেন্ট আর পরীক্ষার টেনশন ছাড়া কাটিয়েছি । সবমিলিয়ে ঈদ আমার নিকট সবচেয়ে উপভোগ্য ধর্মীয় উৎসব !
কবি নজরুল ক্যাম্পাস
বাংলা বিভাগ
২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষ
শিক্ষার্থীদের ঈদের, স্মৃতি, প্রতিকূলতা ও বাস্তবতা
ঈদ মানে ১ মাস সাওমের ধৈর্যের প্রতিচ্ছবি। নতুন পোশাকের চেয়ে প্রিয়জনদের সান্নিধ্য, নাড়ির টানে বাড়ি ফেরার আনন্দ, আর কখনো কখনো একাকীত্বের অনুভূতিও। কারো জীবনে ঈদ নিয়ে আসে ধারুণ খুশি আবার কারো ক্ষেত্রে নিদারুণ নিষ্ঠুর বাস্তবতা। বিশেষ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জন্য বাস্তবতা সম্পূর্ণ ভিন্ন। তাদের কারো কারো নাড়ির টান নেই। রয়েছে একাডেমিক জটলা। সবাই যেখানে আনন্দে নিমজ্জিত থাকে। কেউবা প্রিয় মানুষের ভিড়ে। যারা বাস্তবতার সাথে পরাজিত তাদের কাউকে বা থাকতে হবে হলে। যেখানে নেই ১০ পদের খাবারের আয়োজন নেই। নেই সালামি দেওয়া নেওয়ার হিরিক। যেখানে হওয়ার কথা ছিলো ঈদের দিনে পরিবার,বন্ধু পাড়া-প্রতিবেশীর সঙ্গে ঈদগাহে জামাতে নামাজ পড়া যা হৃদয়ে ভিন্ন এক অনুভূতির দোলা দেয়।
মো: রোমান হোসেন
সরকারি শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ
গনিত, ৪র্থ বর্ষ
পরস্পরের শান্তি ও খুশি তে গড়ে উঠুক এবারের ঈদ!
নিসন্দেহে ঈদ মুসলিমদের জন্য একটি আনন্দের উৎসব। তবে এটি কেবল আনন্দ-উৎসবের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়; এটি শান্তি, সম্প্রীতি, বিশ্বমানবতার কল্যাণ ও সৌন্দর্যের প্রতীক। প্রতিবছর ঈদ এলে আমাদের মন ভালোবাসা ও সম্প্রীতিতে ভরে ওঠে। পরিবার, আত্মীয়স্বজন, বন্ধুবান্ধবের সঙ্গে সময় কাটানোর মাঝেই যেন ঈদের প্রকৃত সৌন্দর্য লুকিয়ে থাকে। কিন্তু সত্যি বলতে, ঈদ কি আসলেই সবার জন্য আনন্দ বয়ে আনে?
আজ ফিলিস্তিনের দিকে তাকালে আমরা দেখতে পাই, ঈদের চাঁদ ওঠে ধ্বংসস্তূপের ওপর দিয়ে ধূসর আকাশে। ছোট ছোট শিশুরা নতুন পোশাক তো দূরে থাক, তাদের শেষ আশ্রয়টুকুও গুঁড়িয়ে দিচ্ছে শাসকগোষ্ঠী। তারা হারিয়ে ফেলে স্বজনদের। ঈদের দিনের খুশির বদলে তাদের প্রার্থনা হয় বেঁচে থাকার জন্য। বোমার আঘাতে বিধ্বস্ত ঘর-পরিবার গুলির আঘাতে নিহত শিশুকে হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা মা— এই দৃশ্য বিশ্বমানবতাকে বারবার প্রশ্নবিদ্ধ করে। কোথায় গেল জাতিসংঘের শান্তিরক্ষী বাহিনী আর নিরাপত্তা পরিষদ?
ঈদের প্রকৃত শিক্ষা হলো অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানো এবং শোষিত, নিপীড়িত ও নির্যাতিতদের পাশে থাকা। তাই আসুন, ঈদের আনন্দ ভাগ করে নিই সেই সব মানুষের সঙ্গে, যারা কষ্টে আছে, বিশেষ করে মজলুমদের সঙ্গে। ফিলিস্তিনসহ পৃথিবীর প্রতিটি প্রান্তের নির্যাতিত মানুষের জন্য আমরা শান্তি কামনা করি, যেন এক দিন সত্যিকারার্থেই ঈদের খুশি সবার ঘরে পৌঁছে যায় ও প্রিয়জনমুখী ঈদ যেন এক শান্তি, মর্মিতার এক মিলনমেলার পরস্পরের সাক্ষাৎতে গড়ে ওঠে এক প্রশান্তি!
তাশফির আহমেদ শাকিল
সোহরাওয়ার্দী কলেজ
দর্শন বিভাগ (২০-২১)
২ দিন ১৩ ঘন্টা ৪৬ মিনিট আগে
৩ দিন ৬ ঘন্টা ৪৪ মিনিট আগে
৪ দিন ৪ ঘন্টা ১৬ মিনিট আগে
৫ দিন ৫ ঘন্টা ২৮ মিনিট আগে
৮ দিন ১১ ঘন্টা ৪৬ মিনিট আগে
৯ দিন ১ ঘন্টা ১৮ মিনিট আগে
৯ দিন ১৬ ঘন্টা ২৫ মিনিট আগে
১৩ দিন ৯ ঘন্টা ৪৯ মিনিট আগে