আগামী ছয় মাসের মধ্যে খুব দ্রুত মূল্যস্ফীতির হার কমবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে বাংলাদেশ ব্যাংকের নেওয়া পদক্ষেপের বিষয়ে গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার বলেছেন, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে মুদ্রানীতি ও আর্থিক নীতি একসঙ্গে প্রয়োগ করছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
তিনি বলেন, এ মুহূর্তে আমরা জাতীয় চাহিদা কমানোর চেষ্টা করছি। সরকারের অনেক খরচ কমানো হয়েছে। আমরা হিসাব করে দেখেছি, তাতে চলতি বাজেটের খরচ ১৫ শতাংশ কম হবে। যে পর্যন্ত মূল্যস্ফীতি ৬ শতাংশের ঘরে নামবে না ততক্ষণ খরচ কমানোর ধারা চলবে। ইনফ্লেশন পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আনতে নন ইকোনমিক উদ্যোগ খুবই জরুরি বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
বৃহস্পতিবার (৭ মার্চ) সন্ধ্যায় রাজধানীর মিরপুরে অবস্থিত বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ব্যাংক ম্যানেজমেন্ট (বিআইবিএম) আয়োজিত তৃতীয় এ কে এন আহমেদ স্মারক বক্তৃতায় সভাপতির বক্তব্যে এসব কথা বলেন।
বিআইবিএম মিলনায়তনে আয়োজিত এ স্মারক বক্তৃতায় মূল বক্তা ছিলেন সাবেক গভর্নর মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিন। স্বাগত বক্তব্য দেন বিআইবিএমের মহাপরিচালক মো. আখতারুজ্জামান। উপস্থিত ছিলেন সাবেক গভর্নর ফজলে কবির। ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন বিআইবিএমের সহযোগী অধ্যাপক মো. শিহাব উদ্দিন খান।
গভর্নর তার বক্তৃতায় বলেন, নির্বাচনের পর দেশে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা আসছে। অর্থনীতির অন্য সূচকগুলো ইতিবাচক ধারায় ফিরতে শুরু করেছে। এবং এটি বজায় থাকবে আশাবাদ ব্যক্ত করে তিনি বলেন, বাজারে গুজব ছড়িয়েছিল, ডলারের দাম এত হবে। সে জন্য অনেকে ডলার আনছিলেন না। গত ছয় মাসে ডলারের বিপরীতে টাকার অবমূল্যায়ন হয়েছে ২ শতাংশ। এখন খুব বেশি অবমূল্যায়ন আর হচ্ছে না। একধরনের স্থিতিশীলতা চলে এসেছে।
তিনি বলেন, আগামী দুই বছরের মধ্যে আর্থিক খাতে খেলাপি ঋণ কমে আসবে ও গভর্ন্যান্স ফিরে আসবে। আর্থিক খাতে স্থিতিশীলতা আনতে পথনকশা ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। আর্থিক খাতের স্থিতিশীলতায় একটা বড় সমস্যা হচ্ছে মন্দ ঋণ। এই জায়গায় আগামী দুই বছরের মধ্যে একটা বড় ধরনের পরিবর্তন আসবে।
নানা ধরনের গুজবে মানুষ ডলার কিনে বালিশের নিচে রেখে দিয়েছে উল্লেখ করে সেই ডলার ব্যাংকে ফেরানোর জন্য একাধিক উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার। তিনি বলেন, আমরা ব্যাংকে ডলার জমার সুযোগ সহজ করে দেয়ার পর প্রতিদিন গড়ে পাঁচ লাখ নগদ ডলার জমা হচ্ছে। এতে রিজার্ভ বাড়ছে।
আব্দুর রউফ তালুকদার বলেন, বিদেশ ভ্রমণ শেষে যে কেউ দেশে এসে প্রতিবার দশ হাজার ডলার পর্যন্ত তার আরএফসিডি (রেসিডেন্ট ফরেন কারেন্সি ডিপোজিট অ্যাকাউন্ট) অ্যাকাউন্টে জমা রাখতে পারবে। এ ছাড়া যে কেউ এয়ারপোর্টে ঘোষণা দিয়ে যেকোনো পরিমাণ ডলার ব্যাংকে রাখতে পারবে প্রশ্ন ছাড়াই। এ সুযোগ দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
গভর্নর আরও বলেন, আরএফসিডি হিসাবে যে কেউ ডলার জমা রাখতে পারছে। যে জীবনে একবার বিদেশে গিয়েছে সে-ও ব্যাংকের একটি হিসাব খুলে ১০ হাজার ডলার জমা রাখতে পারবে। কেউ যদি চারবার বিদেশে যায়, তাহলে ৪০ হাজার ডলার জমা রাখার সুযোগ পাবে।
তিনি বলেন, কার্ব মার্কেট নিয়ে অনেক আলোচনা চলছে কিন্তু এ বিষয়ে আমরা খুব বেশি মনোযোগ দিতে চাই না। কারণ ব্যাংকে প্রতি বছর ২৭০ বিলিয়ন ডলার লেনদেন হয়। কিন্তু খোলাবাজারে বছরে লেনদেন হয় ৪০ থেকে ৫০ মিলিয়ন ডলার। কার্ব মার্কেটে ডলারের লেনদেন ওঠানামা করার ফলে আমাদের এক্সচেঞ্জ রেটে কোনো সমস্যা হবে না। গুজবের কারণে কার মার্কেটে ডলারের দাম বাড়ে এবং কমে।
আব্দুর রউফ তালুকদার বলেন, এখন আমাদের কারেন্ট অ্যাকাউন্ট ব্যালেন্স সারপ্লাস। ব্যাংকগুলোর হাতে চার বিলিয়ন ডলারের বেশি ডলার হোল্ডিং রয়েছে। এসব ডলার বাংলাদেশ ব্যাংকে জমা রেখে তারা তারল্য সহযোগিতা নিতে পারছে। আবার তাদের প্রয়োজন হলে এখান থেকে ডলার নিয়ে যেতে পারবে তারা। এতে করে বাজারের তারল্য সমস্যার সহজ সমাধান পাওয়া যাবে।
তিনি আরো বলেন, ২০২০-২১ অর্থবছরে চলতি হিসাবে ঘাটতি ছিল মোট দেশজ উৎপাদন বা জিডিপির ৪ শতাংশ। চলতি অর্থবছরের প্রথম সাত মাসে (জুলাই-জানুয়ারি) চলতি হিসাব উদ্বৃত্ত রয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংক বিভিন্ন ব্যবস্থা নেয়ায় বাজার থেকে উদ্বৃত্ত টাকা উঠে এসেছে। সরকারের অনেক কেনাকাটা আছে, যা বাণিজ্যিক ব্যাংক সহায়তায় করতে পারছিল না। তাদের সহায়তা দেয়ার জন্য রিজার্ভ থেকে ডলার বিক্রি করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। তাতে বাজার থেকে আরও টাকা উঠে এসেছে। তারপর আবার বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোতে টাকার সংকট দেখা দেয়। তখন বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে টাকা-ডলার অদলবদল বা সোয়াপের মাধ্যমে টাকা সরবরাহ করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
১১ ঘন্টা ৫৮ মিনিট আগে
১ দিন ৩ ঘন্টা ১১ মিনিট আগে
১ দিন ৭ ঘন্টা ৫২ মিনিট আগে
১ দিন ১৩ ঘন্টা ৩৮ মিনিট আগে
২ দিন ১০ ঘন্টা ২৪ মিনিট আগে
৩ দিন ৩ ঘন্টা ২৬ মিনিট আগে
৩ দিন ১৬ ঘন্টা ৫৪ মিনিট আগে
৩ দিন ১৭ ঘন্টা ১ মিনিট আগে